“তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হবে”, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী।
Published : 08 Mar 2025, 12:51 AM
বাধা উপেক্ষা করে রাজধানীতে মিছিল বের করা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ১৯ জনকে আটকের তথ্য দিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার হুসাইন মুহাম্মদ ফারাবী বলেন, মিছিল ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনায় তাদের আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে ফারাবী বলেন, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
"মোট ১৯ জন আটক আছে। এর মধ্যে একজনের মানসিক সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। আরেকজনের বয়স একেবারে কম। এ দুজন বাদ যেতে পারে। বাকিদের নাম-পরিচয় আমরা যাচাই করে দেখছি।"
সবকিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার রাতের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হবে বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিন দুপুরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে শুরু হওয়া হিযবুত তাহরীরের মিছিলের তোড়ে একরকম ভেসে যায় পুলিশের প্রাথমিক বাধা।
পরে মিছিলটি পল্টন হয়ে বিজয়নগরের দিকে যাওয়ার পর পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ডগ্রেনেড ছোড়া শুরু করলে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গেই সড়ক, বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সিঁড়ির উপর নামাজে দাঁড়ানো হিযবুতের কর্মীরা স্লোগান দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারা হাতে তুলে নেয় কালিমা খচিত ব্যানার।
প্রথমে পুলিশের যে দলটি তাদের বাধা দিতে যায়, তাতে গুনে গুনে ১০ জন পুলিশ ছিল। বিরাট মিছিলের তোড়ে পুলিশের দলটি পেছাতে পেছাতে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দেয়। পল্টন মোড়ে থাকা পুলিশের দলটি সামনে এগিয়ে এসে মিছিলকে ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে।
মিছিলটি বিজয়নগরে যাওয়ার পর পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও টিয়ারশেল মেরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মিছিলকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়লে লাঠি হাতে পুলিশকে তাদের তাড়া করতে দেখা যায়।
এরপর বেলা আড়াইটার দিকে হিযবুত তাহরীরের মিছিলকে 'ছত্রভঙ্গ' করা ও 'কয়েকজনকে' আটকের তথ্য দেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার শাহরিয়ার আলী।
নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুতের ‘মার্চ ফর খিলাফত’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আগের দিনই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার দুপুরে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, “হিযবুত তাহরীর একটি নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন। আইন অনুযায়ী এদের সকল কার্যক্রম শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
এর আগে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে রাজধানীর উত্তরা ১১ ও ১২ নম্বর সেক্টর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে।
ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্মভিত্তিক সংগঠন হিযবুত তাহরীর, রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ইসলামি খিলাফত প্রতিষ্ঠা এবং শরিয়া বাস্তবায়ন যাদের মূল লক্ষ্য।
দীর্ঘদিন ধরে গোপনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা সংগঠনটি এখন অনেকটা প্রকাশ্যে তাদের কাজ চালাচ্ছে। শুক্রবার তারা বায়তুল মোকারমে কর্মসূচি ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার লাগায়; বিভিন্ন জায়গায় লিফলেটও বিলি করে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই ঢাকায় মিছিল করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এরপর আরও নানা দাবিতে মিছিলের পাশাপাশি ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠকও করেছে সংগঠনটি। চট্টগ্রামেও পালন করেছে নানা কর্মসূচি।
সংগঠনটির মিডিয়া সমন্বয়ক ইমতিয়াজ সেলিম বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সরকার পতন আন্দোলনে শুরু থেকেই তাদের কর্মীরা অংশ নেন; তবে তারা কোনো ব্যানার ব্যবহার করেননি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য ‘দীপ্ত শপথ’ গুঁড়িয়ে হিযবুত তাহরীরের পোস্টারও লাগানো হয়েছিল।
২০০১ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করা হিযবুত তাহরীর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে আবেদন করলেও সরকারের তরফে কোনো বক্তব্য আসেনি।