সারা দেশে নিহত হয়েছেন অন্তত ১০০ জন, কেবল সিরাজগঞ্জেই প্রাণ গেছে ১৩ পুলিশসহ ২৭ জনের।
Published : 04 Aug 2024, 12:57 PM
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাতে অন্তত একশজনের প্রাণহানির খবর এসেছে।
• সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৭ জন, ঢাকায় ১২ জন, লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে ১০ জন, ফেনীতে ৮ জন, নরসিংদীতে ৬ জন, সিলেটের গোলাপগঞ্জে ৫ জন, বগুড়ায় ৪ জন, রংপুরে যুবলীগ কর্মীসহ ৩ জন, কিশোরগঞ্জে ৩ জন, কুমিল্লায় ৩ জন, শেরপুরে ৩, পাবনায় ৩ জন, মুন্সীগঞ্জে ৩ জন, মাগুরায় ছাত্রদল নেতাসহ ২ জন, জয়পুরহাটে ২ জন, বরিশাল সদরে ১ আওয়ামী লীগ নেতা, সাভারে ১ জন, ভোলায় ১ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১ জন, কক্সবাজারে ১ জন ও হবিগঞ্জে ১ জন নিহত হয়েছেন।
• রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ ঘোষণা।
• সোম থেকে বুধবার তিন দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা।
• দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান বিজিএমইএ এর
• সব আদালতের বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা
• সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।
[আমাদের প্রতিবেদকদের পাঠানো সর্বশেষ তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি নিয়মিত হালনাগাদ করা হচ্ছে]
সিরাজগঞ্জে এমপি হেনরির বাসায় অগ্নিসংযোগ, ২ মরদেহ উদ্ধার
অসহযোগের মধ্যে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে সেই বাসা থেকে দুজনের অগ্নিদগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার রাতে শহরের মুজিব সড়কের বাসার বাথরুম থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন সংসদ সদস্য হেনরি।
তিনি বলেন, “ধারণা করছি, সংঘর্ষের সময় ভয়ে হয়তো দুজন এসে বাইরের বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিল। পরে আন্দোলনকারীদের দেওয়া আগুনে তারা মারা গেছেন।
“এদের একজন শহরের জানপুর মহল্লার ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। অপরজন পেশায় অটোরিকশা চালক। তার বাড়ি রতনকান্দিতে বলে জানা গেলেও বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তার স্বজনদের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। দেহাবশেষ ঘটনাস্থলেই রয়েছে। আমরা অন্য জায়গায় আছি।”
তিনি বলেন, “দুপুরের দিকে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীসহ আন্দোলনকারীরা আমার বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার সময় আমি বাসায় ছিলাম না। ঘটনার পর থেকে বাড়িতে আগুন জ্বলতে থাকে। রাত ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নেভায়।”
হামলায় বাড়ির গ্যারেজ ও বাইরের গ্যারেজে রাখা জাতীয় সংসদ সদস্যের সিলযুক্ত গাড়িসহ চারটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও জানান সংসদ সদস্য।
নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ না করার পরামর্শ ভারতের
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ ভ্রমণ না করার জন্য ভারতীয় নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে দেশটির সরকার।
রোববার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, “সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণ না করার জোরালো পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
“সব ভারতীয় নাগরিককে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন, চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ এবং ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনের জরুরি নম্বরগুলোতে যোগাযোগ থাকতে বলা হচ্ছে।”
জরুরি নম্বরগুলো হচ্ছে-
+8801958383679
+8801958383680
+8801937400591
ভোলায় সংঘর্ষে ‘মাথায় গুলিতে’ যুবক নিহত
অসহযোগের মধ্যে ভোলা শহরে গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
রোববার দুপুর পৌনে ২টার দিকে শহরের খলিফাপট্টি মসজিদের সামনে থেকে স্বজনরা ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করেন।
নিহত মো. জসিম উদ্দিন (৪০) ভোলা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর নবীপুর এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। তিনি নতুন বাজারে পুরাতন ছাতি সারাই করতেন।
নিহতের ছোট ভাই মো. সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, “সংঘর্ষ চলাকালে দোকান বন্ধ করার সময় ভাইয়ের মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। সেখানেই তিনি মারা যান।”
এদিকে জসিম নিহত হওয়ার পর আন্দোলনকারীরা তার লাশ নিয়ে শহরে মিছিল করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুল কাদের মজনু মোল্লা দাবি করেন, যুবলীগ কর্মী মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
বাধ্য হলে ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগের হুঁশিয়ারি ডিএমপির
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় থানা ও পুলিশের স্থাপনায় হামলা এবং সহিংসতায় প্রাণহানির পরিপ্রেক্ষিতে বাধ্য হলে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে আইনের ‘সর্বোচ্চ ক্ষমতা’ প্রয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপি।
রোববার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকার পতনের একদফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯টি থানাসহ পুলিশের ২৬টি স্থপনায় হামলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্যসহ রোববারের হামলায় বাহিনীটির ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। দেশজুড়ে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে।
নাশকতাকারী, অগ্নিসংযোগকারী ও পুলিশ হত্যাকারীদের বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “বাধ্য হলে তাদের বিরুদ্ধে ডিএমপি আইনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে।”
সংঘর্ষে রণক্ষেত্র কক্সবাজার, যুবক নিহত
দিনভর শান্ত থাকলেও সন্ধ্যায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে কক্সবাজার শহর। এতে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
সন্ধ্যা ৭টায় শহরের শহীদ স্মরণী সড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
এতে আন্দোলনকারী যুবক নিহত হয়। এ সময় ১০ জন আহত হয়েছে। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, নিহতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
সংঘর্ষ চলাকালে শহীদ স্মরণী সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।
এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে।
নেত্রকোণায় পুলিশের অস্ত্র ছিনতাই
নেত্রকোণার শ্যামগঞ্জে পুলিশের গাড়ি থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
রবিবার দুপুরে পূর্বধলার শ্যামগঞ্জ বাজারে পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ৯টি পিস্তল ছিনিয়ে নেয় আন্দোলনকারীরা। পরে অভিযান চালিয়ে তিনটি পিস্তল উদ্ধার করে পুলিশ।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে নেত্রকোণা পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, “পূর্বধলা থানার পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্র বদলের জন্যে জেলা সদর থেকে একটি গাড়িতে করে নতুন আগ্নেয়াস্ত্র আনা হচ্ছিল।
“দুপুরের দিকে গাড়িটি শ্যামগঞ্জ বাজারে পৌঁছলে আন্দোলনকারীদের মিছিলের মধ্যে পড়ে। এসময় আন্দোলনকারীরা গাড়িতে থাকা ৯টি পিস্তল ছিনিয়ে নেয়।”
পরে অভিযান চালিয়ে তিনটি পিস্তল উদ্ধার করার তথ্য দিয়ে ফয়েজ আহমেদ বলেন, বাকি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
হবিগঞ্জে সংঘর্ষে ‘বুকে গুলিবিদ্ধ’ যুবক নিহত
অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে হবিগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন আরও শতাধিক।
রোববার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। এতে হবিগঞ্জ শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
নিহত রিপন শীল (২৭) সদর উপজেলার রিচি গ্রামের রতন শীলের ছেলে।
হবিগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মুমিন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে রিপনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
১ সাংবাদিক নিহত, আহত অনেক
সরকার পতনের ‘এক দফা’ কর্মসূচি চলাকালে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাওয়া সিরাজগঞ্জে দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
হামলার শিকার হয়েছেন আরও অনেক সাংবাদিক। গণমাধ্যমের ভবন, গাড়ি ও ক্যামেরা ভাঙচুরেরও অভিযোগ উঠেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ জনে।
সোমবার শোক মিছিল করবে না আওয়ামী লীগ
অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি হওয়ায় পূর্বনির্ধারিত শোক মিছিলের কর্মসূচি স্থগিত করেছে আওয়ামী লীগ।
সোমবার এ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল আওয়ামী লীগের। তবে রোববার সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউয়ের ঘোষণা আসে সরকারের পক্ষ থেকে।
রোববার রাতে দলটির উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শোক মিছিল স্থগিতের তথ্য দেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কারফিউ এর কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আগামীকালের (সোমবার) পূর্ব নির্ধারিত শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হবে না। একই সঙ্গে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের জন্মবার্ষিকীর কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকতা স্থগিত করা হয়েছে।”
১৯ থানাসহ পুলিশের ২৬ স্থাপনায় হামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকার পতনের একদফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকার ১৯টি থানাসহ পুলিশের ২৬টি স্থপনায় হামলা হয়েছে।
থানা ছাড়া অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে চার জেলার এসপি অফিস, ময়মনসিহে রেঞ্জ ডিআইজির অফিস ও দুটি পুলিশ ফাঁড়ি।
রোববার পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এসব হামলার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হামলাটি হয়েছে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায়। সেখানে হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ১৩ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
কুমিল্লায় হাইওয়ে পুলিশের এক সদস্যসহ রোববারের হামলায় বাহিনীটির ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। এক দিনেই দেশজুড়ে আহত পুলিশ সদস্যের সংখ্যা তিনশ ছাড়িয়ে গেছে।
পুলিশের বার্তায় আক্রান্ত থানাগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছে দুই থানা- যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও।
ঢাকার বাইরে টাঙ্গাইলের গোড়াই হাইওয়ে থানা, বগুড়া সদর থানা, দুপচাঁচিয়া, শেরপুর, নারুলি পুলিশ ফাঁড়ি, জয়পুরহাট সদর থানা, কুমিল্লা ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশুগঞ্জ থানা, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর থানা, দিনাজপুর সদর থানা, হবিগঞ্জের মাধবপুর ফাঁড়ি।
আক্রান্ত অন্যান্য স্থাপনার মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহের রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয় এবং নারায়ণগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এসপি অফিস।
কুমিল্লায় কনস্টেবলকে পিটিয়ে হত্যা, সংঘাতে নিহত ৩
কুমিল্লায় দিনভর সংঘর্ষ চলাকালে হাইওয়ে থানার এক কনস্টেবল ও এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিন গুলিবিদ্ধ ও মাথায় আঘাত পেয়ে নিহত হয়েছেন এক গাড়িচালক।
এদিন দুপুরে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় হামলা চালায় আন্দোলনরতরা। সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম সরদার বলেন, আন্দোলনরতরা মিছিল নিয়ে দুপুরে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় ঢুকে প্রথমে নিচতলা ভাংচুর করে এবং পরে দ্বিতীয় তলায় ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে থানায় অগ্নিসংযোগ করে কনস্টেবল এরশাদকে টেনেহিঁচড়ে বাহিরে নিয়ে আসে এবং পরে তাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে হত্যা করে।
নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম মো. এরশাদ আলী।
অপরদিকে দুপুর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংষর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় অজ্ঞাত এক যুবক আহত হন। তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর বিকাল সাড়ে ৩টায় মারা যান তিনি।
এছাড়া আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে দেবিদ্বারে আবদুল্লাহ রুবেল (৩৩) নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। তার মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার বারেরা এলাকার ইউনুছ মিয়ার ছেলে। তিনি প্রান্তিক নামের একটি পরিবহনের বাসচালক ছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন।
দুপুর দেড়টার দিকে দেবিদ্বার পৌর এলাকার বানিয়াপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন দেবিদ্বার থানার ওসি নয়ন মিয়া।
ঠাকুরগাঁওয়ে কিশোর নিহত, আওয়ামী লীগ ও সরকারি অফিসে ভাঙচুর
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার সকাল ১১টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এই সংঘর্ষের ঘটনা।
এসময় আন্দোলনকারীরা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জেলা জজের কার্যালয়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করার সময় বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, শহরের চৌরাস্তা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এ সময় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের ছাদ থেকে এক কিশোর লোহার একটি পাইপ নিচে ফেলতে গেলে সেটি হাইভোল্টেজের কারেন্টের তারের সঙ্গে লাগে; এতে ঘটনাস্থলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ওই কিশোরের মৃত্যু হয়। এ সময় রাস্তায় দাঁড় করানো বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলও তারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে যুবলীগের ৬ জনসহ নিহত ১০
লক্ষ্মীপুরে আন্দোলনকারী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় ১০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।
রোববার দিনভর শহরে বিক্ষোভ সমাবেশের মধ্যে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী এবং ছয়জন যুবলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। তবে প্রাথমিকভাবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
ফেনী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল সাংবাদিকদের বলেন, “তিন শিক্ষার্থীর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। একজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। সে পথে মারা গেছে।”
এ ছাড়া সংবাদমাধ্যমকর্মীরা শহরের শাখারিপাড়ায় তিন যুবলীগ নেতাকর্মীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেছেন।
বাকি তিন যুবলীগ নেতাকর্মীর লাশ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর বাসার সামনে রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল ১১টায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহরের উত্তর তেমোহনী এলাকায় অবস্থান নেন। আর আন্দোলনকারীরা ডিসি অফিসের সামনে ঝুমুর এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে ঝুমুর এলাকার দিকে আসার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর সারাদিনই আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকে।
আন্দোলনকারীরা এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নূর উদ্দিন চৌধুরী নুরু, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপু এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুন নবী সোহেলের বাসায় অগ্নিসংযোগ করে। সন্ধ্যার পরও তাদের বাড়িঘর জ্বলতে দেখা গেছে।
সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে বলল বিজিএমইএ
সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে বলেছে এ খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ তথ্য জানান।
সংগঠনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক কর্মচারী ভাইবোনদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশের সকল পোশাক শিল্প কারখানা বন্ধ রাখার জন্য মালিক ভাইবোনদের অনুরোধ করা হল।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত মাসেও এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল পোশাক কারখানা।
দীপু মনির চাঁদপুরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর
চাঁদপুরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনির বাসভবনে হামলা হয়েছে। এসময় বাসার নিচে মোটরসাইকেল ও ভবনের পাইপ ভাঙচুর করা হয়।
রোববার দুপুর ২টার দিকে শহরের নতুন বাজার এলাকায় তার বাসভবনের সামনে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা জড়ো হয়ে এ হামলা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
ঘটনার সময় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি ঢাকায় ছিলেন। তবে তার স্বজনরা বাড়িতে ছিলেন বলে দলের কর্মীরা জানিয়েছেন।
ওই ভবনের নিচে দৈনিক চাঁদপুর বার্তা নামের স্থানীয় একটি পত্রিকার কার্যালয় রয়েছে। ওই পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদ পাটোয়ারি বলেন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা ভবনের নিচে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ভবনের পাইপ ভাঙচুর করে। তারা দৈনিক চাঁদপুর বার্তার কার্যালয়েও হামলা চালায়।
সৈয়দ আশরাফের চাচাত ভাইয়ের বাড়িতে আগুন, পুড়ে মৃত ২
কিশোরগঞ্জে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় দুটি মরদেহ নেওয়া হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালে। অন্য এক তরুণের মরদেহ নেওয়া হয়েছে সৈয়দ নজরুল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সকালে পুরানথানা এলাকায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়। দুপুর ১২ টার দিকে মিছিল নিয়ে গৌরাঙ্গ বাজার আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে পৌঁছলে দুই পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরে আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। অফিসের সামনে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
পরে খরমপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ।
আশফাক আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাত ভাই। টিটু গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। তিনি সৈয়দ আশরাফের ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলামকে সমর্থন জানিয়ে সরে যান।
ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসার আগেই বাড়িটি পুড়ে যায়। স্থানীয় সংবাদকর্মী রকিবুল হাসান রোকেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এই বাড়ি থেকে একজন নারীসহ দুইজনের মরদেহ নিয়ে যেতে দেখেছি।”
আন্দোলনকারীরা বেলা ১১টায় বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্টে এসে জড়ো হন। এরপর সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। তখন আন্দোলনকারীদের একটি অংশ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওই সময় সংসদ সদস্য সামছুল আলম দুদুসহ আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এরপর আগুন দেওয়া হয় ছাত্রলীগ অফিস; ভাঙচুর করা হয় শ্রমিক লীগ অফিস।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করেন। এতে আন্দোলনকারী ও পথচারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তাদের মধ্যে কলেজ শিক্ষার্থী বিশালকে বগুড়া নিয়ে যাওয়ার পথে সে অচেতন হয়ে যায়। পরে তাকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরি বিভাগেরর কর্তব্যরত চিকিৎসক নাজনীন নাহার ডেইজী বিশালকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে রাতে জেলায় আরও একজনের মৃত্যুর খবর এসেছে।
বগুড়ায় গুলিতে চারজনের মৃত্যু
সরকারবিরোধী অসহযোগের সময় বগুড়ায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষের সময় গুলিতে চারজন নিহত হয়েছেন।
রোববার বগুড়া সদর ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় এসব নিহতের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
নিহতদের মধ্যে একজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন- দুপচাঁচিয়া উপজেলার বীরকেদার গ্রামের মনিরুল ইসলাম (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল ১১টা থেকে বগুড়া শহরের সাতমাথা মোড়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তখন একই স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগের লোকজন সরে যায়।
তখন পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা সারা শহরেই ছড়িয়ে পড়ে। শহরের তিন নম্বর রেল ঘুণ্টি ও কাঁঠালবাড়ী এলাকায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থানার ওসি সনাতন চক্রবর্তী বলেন, “দুপুরে আন্দোলনকারীরা থানার দিকে মিছিল নিয়ে আসে। তখন আমরা তাদের বাধা দেই। এ সময় তাদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন নিহত হয়।
ঢাকায় শিক্ষার্থীসহ ১২ জনের মৃত্যু
ঢাকায় তিন শিক্ষার্থীসহ ১২ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সংঘর্ষের সময় আহত ১১৩ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।
রোববার সকালের পর থেকে রাত পর্যন্ত সংঘর্ষে এসব মানুষের মৃত্যু হয়।
তাদের মধ্যে রোববার বিকালের পর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নয়জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে একজন, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে একজন এবং উত্তরায় একজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে।
এদিন বিকাল পৌনে ৪টার দিকে প্রথমে রাজধানীর জিগাতলা এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ এক তরুণকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই তরুণের নাম আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী (২৩)। তিনি হাবিবুউল্লাহ বাহার কলেজের বিবিএ এর শিক্ষার্থী। তিনি পুরান ঢাকার রায় সাহেব বাজার এলাকায় থাকতেন, তার বাবার নাম আবু বক্কর সিদ্দিকী।
এরপর কয়েক ঘণ্টায় আরও ছয়জনকে এ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়, যাদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
এছাড়া যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কিশোর রেজাউল করিমকে (১৬) ঢাকা মেডিকেলে আনা হলে তারা মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
এর বাইরে সকালে ইটের আঘাতে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে মারা যান মো. সেলিম নামে এক ব্যক্তি।
অপরদিকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে আরেক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জহির উদ্দিন (২৫) নামে ওই যুবককে গুলিস্তান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সেখানে অবস্থানরত এক সংবাদমাধ্যম কর্মী জানান।
রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক শফিউর রহমান বলেন, সেখানে অজ্ঞাত পরিচয় একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬০ জনের মতো।
অন্যদিকে উত্তরায় আন্দোলনকারীদের মারধরে আনোয়ারুল ইসলাম নামে ৬০ বছর বয়সী এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য হাসান হাবিব।
অনির্দিষ্টকালের জন্য সব আদালত বন্ধ ঘোষণা
অসহযোগের প্রথম দিন সারাদেশে পরিস্থিতি আবারও সহিংস হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাই কোর্ট বিভাগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভুঞা স্বাক্ষরিত দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
ফের তিন দিনের সাধারণ ছুটি এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারির মধ্যে আদালত বন্ধের ঘোষণা এলো।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সান্ধ্য আইন চলাকালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারিক কার্যক্রম, সকল দপ্তর ও শাখা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। প্রধান বিচারপতি জরুরি বিষয়ে প্রয়োজন সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”
এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
রেজিস্ট্রার জেনারেল স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৫ অগাস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারিক ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতি যেকোনো সময় জরুরি বেঞ্চ গঠনপূর্বক বিচারকার্য পরিচালনার আদেশ প্রদান করবেন।”
আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী ৫ অগাস্ট থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব অধস্তন আদালত/ট্রাইব্যুনালসমূহে বিচারিক ও দাপ্তরিক কাজ বন্ধ থাকবে।
জরুরি প্রয়োজনে প্রধান বিচারপতি যেকোনো সময় যেকোনো আদালতকে বিচারকার্য পরিচালনার আদেশ দেবেন।
এ ক্ষেত্রে মুখ্য মহানগর হাকিম ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় সার্বক্ষণিক দায়িত্বরত থাকবেন।
সিরাজগঞ্জে ১৩ পুলিশসহ ২৭ জনের মৃত্যু
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় ১৩ পুলিশ সদস্য হত্যার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীর সদর দপ্তরের জনসংযোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসান।
পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক বলেন, “আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে এসে এনায়েতপুর থানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন দেয় এবং সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের পিটিয়ে হত্যা করে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারী থানার দক্ষিণে জমায়েত হয়। সেখানে ছাত্রদের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন ছিলেন।
জমায়েত থেকে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা থানার দিকে যান। থানার সামনে আসার পর পুলিশ তাদের বাধা দেয়। তখন দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাখানেক ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আন্দোলনকারীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে জবাবে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছোঁড়ে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা থানার ভেতরে ঢুকে পড়ে আগুন দেয়। এরপর পুলিশ সদস্যদের ধরে ধরে পিটিয়ে হত্যা করে।
এর বাইরে জেলার বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী এবং বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরদের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের সংঘাতে আরও ৯ জন মারা গেছেন।
নিহতরা হলেন, শহর যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু খান (৩৯), যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ (২৫), ছাত্রদল কর্মী সুমন শেখ (২৫), রায়গঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম (৩৮), রায়গঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াছ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আল আমিন (৩৯), রায়গঞ্জের ব্রহ্মগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম সরোয়ার রিপন (৪০) ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু এবং দৈনিক খবরপত্র পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিক (৫০)।
এর বাইরে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের এমপি জান্নাত আরা হেনরী, সাবেক এমপি হাবিবে মিল্লাত মুন্না, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের এমপি চয়ন ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সহ-সভাপতি বিমল কুমার দাসের বাড়িতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
রাতে আরও পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর আসে। তাদের মধ্যে তিনজন ছাত্র।
বাসা থেকে বেরিয়ে চিকিৎসা দিলেন চিকিৎসকরা
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় বাসা থেকে স্বেচ্ছায় বেরিয়ে এসে আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছেন কয়েকজন চিকিৎসক।
আমাদের প্রতিবেদক এ এস এম সাদ জানান, রোববার বিকাল ৪টার দিকে মোহাম্মদপুরে বাস স্ট্যান্ডে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন।
এ সময় আশপাশের সব দোকান, ফার্মেসি বন্ধ ছিল। আহতদের কয়েকজনকে তখন সাত গম্বুজ মসজিদের পেছনে নেওয়া হয়। সে সময় আহতদের পায়ে, হাতে, ও পিঠে ছররা গুলির ক্ষত দেখা যায়। এছাড়া পুলিশের রাবার বুলেটেও আহত হন অনেকে।
আন্দোলনকারীরা হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করলে কিছুক্ষণের মধ্যে অন্তত তিন জন চিকিৎসক আশপাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। সে সময় আহতদের রক্তপাত চলছিল।
একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “চিকিৎসা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। হঠাৎ শুনলাম একজন আহত হয়েছেন। রক্তপাত হচ্ছে অনেক। তাই দ্রুত চলে এসে চিকিৎসা দিলাম। কাওকে বাঁচাতে পারলে নিজের কাছেই ভালো লাগে।”
আরেকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আফজাল হাসান জানান, তার বন্ধু তাকে ফোন করে বলেন, একজন আহত হয়েছেন। তাই দ্রুত সেখানে চলে আসেন তিনি।
অসহযোগ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সকাল থেকে বাস স্ট্যান্ডে অবস্থান করছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে তারা বেড়িবাঁধ মোড়ের দিকে অবস্থান নেন। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবস্থান নেয় তার বিপরীত দিকে। অন্য পাশে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়।
বেলা ৩টার দিকে একটি ছোট ট্রাক এসে নেতাকর্মীদের খিচুড়ি বিতরণ করতে দেখা যায়।
পুলিশ বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে রাবার বুলেট ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময় কিছু সময় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে।
সোম থেকে বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা
রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জনসংযোগ কর্মকর্তা সিবলি সাদিক। অনির্দিষ্টকালের কারফিউর ঘোষণার মধ্যে এ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
তিনি জানান, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত ও প্রাণহানির খবর আসছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করেছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. শরীফ মাহমুদ অপু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সকল বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হল।”
নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের ৬ জনকে পিটিয়ে-কুপিয়ে হত্যা
নরসিংদী শহরের মাধবদী পৌরসভা মোড়ে আওয়ামী লীগের ছয় নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার খবর পাওয়া গেছে।
তারা হলেন- সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের ছোট ভাই দেলোয়ার হোসেন, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মনির হোসেন ভুঁইয়া, সদর উপজেলার চরদীঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন, ছাত্রলীগকর্মী জলিল, সজীব ও মোক্তার।
উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারের খালাত ভাই আল আমিন বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার আপন খালাত ভাই দেলোয়ার হোসেনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। আরও কয়েকজনকে ওরা হত্যা করেছে।”
সদর উপজেলা ও মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের দুই নেতা বাকি চারজনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে বলেছেন, লাশগুলো মাধবদী শহরের বড় মসজিদের অজুঘরের পাশের রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারীরা সকাল থেকেই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। হঠাৎ করেই তারা মিছিল নিয়ে শহরের ভিতরে প্রবেশ করতে থাকেন। মাধবদীতে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন।
একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। ধাওয়া খেয়ে আন্দোলনকারীরা প্রথমে সরে যায়। কিন্তু পরে তারা আরও লোক নিয়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের অন্যরা সরে যেতে পারলেও ছয়জন আটকা পড়েন। তাদেরকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা হয়।
সিলেটে আন্দোলনকারী-পুলিশ সংঘর্ষে নিহত ২
আমাদের প্রতিনিধি বাপ্পা মৈত্র জানান, রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদরের ঢাকা দক্ষিণ বাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাঁধে। তাতে দুজন মারা যান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুদর্শন সেন বলেন, “হাসপাতালে দুইজনের মৃতদেহ আনা হয়েছিল।”
মৃতদের মধ্যে একজনের নাম পাওয়া গেছে। তিনি হলেন উপজেলার ধারাবাহর গ্রামের মকবুল আলীর ছেলে ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন (৪৩)।
ফেনীতে সংঘর্ষে নিহত ৫ জন
ছাত্র-জনতার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধি নাজমুল হক শামীম জানান, রোববার দুপুরের মধ্যে শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ সড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মহীপাল মোড় এলাকায় সংঘর্ষে এসব নিহতের ঘটনা ঘটে।
ফেনী আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আসিফ ইকবাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুপুর থেকে আমাদের এখানে পাঁচটি লাশ এসেছে। এসব লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা শহরে বিক্ষোভ শুরু করে। তাদের সাধারণ মানুষকেও দেখা যায়। এ সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অবস্থান নেন। তাদের অনেককে সশস্ত্র অবস্থায়ও দেখা যায়। এর মধ্যেই উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হলে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। তার মধ্যেই পাঁচজনের মৃত্যুর সংবাদ আসে।
সোমবারই ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান এবং মঙ্গলবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল রোববার দুপুরে। তবে বিকালে এক বিবৃতিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, “পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এক জরুরি সিদ্ধান্তে আমাদের 'মার্চ টু ঢাকা' কর্মসূচি ৬ অআস্ট থেকে পরিবর্তন করে ৫ অগাস্ট করা হলো। অর্থাৎ আগামীকালই সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
সরকারকে চূড়ান্ত জবাব দেওয়ার সময় এসেছে মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “বিশেষ করে আশেপাশের জেলাগুলো থেকে সবাই ঢাকায় আসবেন এবং যারা পারবেন আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান।”
কঠোর বার্তা সরকারের
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা হচ্ছে জানিয়ে জঙ্গি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে এক বার্তায়।
পাবনায় গুলিতে নিহত ৩, আহত অর্ধশতাধিক
আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ চলাকালে সংঘর্ষের মধ্যে গুলি খেয়ে তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় আরও ৩৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আমাদের প্রতিনিধি সৈকত আফরোজ আসাদ জানান, রোববার দুপুরে শহরের ট্রাফিক মোড়ে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে।
বিক্ষোভকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বেলা ১১টার দিকে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের মেইন গেইটে এক দফা দাবিতে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী জড়ো হন। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান নেওয়ার পর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শহরের ট্রাফিক মোড় এলাকায় পৌঁছে আব্দুর হামিদ সড়কে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের বাধায় সেখানেই অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে ট্রাফিক মোড় এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় একদল ব্যক্তি আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৩৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে গুলিবিদ্ধদের উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতরা হলেন- চর বলরামপুরের বাসিন্দা পাবনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (২১), হাজিরহাট ব্রজনাথপুরের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান (২২) ও এডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন (১৭)।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমতে বলেন, “গুলিবিদ্ধ দুইজনকে হাসপাতালে আনার পর তারা মারা যান। আর একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ আরও ৩৪ জনের চিকিৎসা চলছে। এছাড়া আরও অনেকেই আহত হয়েছে।”
রংপুরে যুবলীগ কর্মীসহ ৩ জন নিহত
আমাদের প্রতিনিধি আফতাবুজ্জামান হিরু জানান, রোববার দুপুর থেকেই মহানগরীর জাহাজ কোম্পানি মোড়, সিটি বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীরা জড়ো হন। তাদের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরাও মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তা আশপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় যুবলীগকর্মীসহ তিনজন নিহত হন।
নিহতরা হলেন- রংপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হারাধন রায় হারা, যুবলীগকর্মী মাসুম মিয়া (৩১) ও নগরীর গোড়াপীপাড়ার বাসিন্দা খাইরুল (৩০)।
কালিয়াকৈরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিতে রোববার সকাল ১০টার পর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। পরে মিছিল নিয়ে তারা চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবস্থান নেন। কিছু সময়ের মধ্যে চন্দ্রা এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
এ সময়ে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কালিয়াকৈর নবীনগর সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চন্দ্রা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলে তাদের ধাওয়া করেন। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে তারা। এ সময় চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পুলিশ বক্স ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
ওসি এএফএম নাসিমের ভাষ্য, “আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছেন। পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছেন।”
সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগের প্রথম দিন সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সারাদেশে কারফিউ ঘোষণা করেছে সরকার।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. শরীফ মহামুদ অপু স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে “রোবাবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সকল বিভাগীয় সদর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে সান্ধ্য আইন বলবৎ করা হল।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতা-সংঘাত দেখা দিলে গত ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে দেশে কারফিউ জারি করা হয়। পরে পরিস্থিতির উন্নতি হলে কারফিউ শিথিল করার সময় বাড়িয়েছিল সরকার।
অন্তবর্তীকালীন সরকার চায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক
সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী-জনতার ‘অভ্যুত্থানের’ মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে, নাগরিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে পদত্যাগ করবে। আর ওই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে 'বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দেশের গণতান্ত্রিক রূপন্তরে পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
রূপান্তরের প্রস্তাবে বলা হয়, শিক্ষার্থী-জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বতীকালীন সরকারের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়। এ ধরনের ছায়া সরকার নির্বাচিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি প্রাথমিক প্রস্তাব। এ প্রস্তাবকে আরও বিস্তৃত করতে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এ“ই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না, বরং অবনতি হবে৷ যত দ্রুত পদত্যাগ করবে তা দেশের ও তাদের নিজেদের জন্যই ভালো৷ গণভবন খোলা বলা হচ্ছে, এটি ১৪ তারিখে খোলা হলে এত রক্তপাত হতো না। আমরা আশা করি, সরকার আর জটিলতা সৃষ্টি না করে দ্রুত পদত্যাগ করবে।”
আন্দোলনকারীদের নতুন কর্মসূচি
এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের পাশাপাশি সোমবার সারাদেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান এবং মঙ্গলবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রোববার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি সেখানে বলেন, সোমববার ‘শহীদ স্মরণে’ সারাদেশে নিহতের স্থানগুলোতে শহীদ স্মৃতিফলক উন্মোচন করা হবে।
ঢাকায় বেলা ১১টায় শাহবাগে শ্রমিক সমাবেশ এবং বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারী সমাবেশ হবে। পাশাপাশি সারাদেশে বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার ‘ছাড়তে হবে ক্ষমতা, ঢাকায় আসো জনতা’ স্লোগানে সারাদেশের ছাত্র, নাগরিক ও শ্রমিকদের ঢাকায় আসার আহ্বান জানিয়ে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন নাহিদ।
সেদিন দুপুর ২টায় আন্দোলনকারীদের শাহবাগে জমায়েত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বিজ্ঞপ্তিতে নাহিদ বলেন, “সকল এলাকায়, পাড়ায়, গ্রামে, উপজেলা, জেলায় ছাত্রদের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গঠন করুন।
“যদি ইন্টারনেট ক্র্যাকডাউন হয়, আমাদেরকে গুম, গ্রেপ্তার, খুনও করা হয়, যদি ঘোষণা করার কেউ নাও থাকে একদফা দাবিতে সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত সবাই রাজপথ দখলে রাখবেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন।”
এদিকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান নিয়ে শাহবাগে বিক্ষোভে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীদের জনস্রোত হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎসভবন, কাঁটাবন ও টিএসসি এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
ফরিদপুরে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আুগন
রোববার সকাল সাড়ে ১০টার সময় ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় ক্যাম্পাসে। এসময় সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশ কিছু মিছিল এসে জড়ো হয়। পরে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী সেখান থেকে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলে তাদের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়।
বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দিয়ে শহরের ভাঙা রাস্তার মোড় হয়ে মুজিব সড়ক দিয়ে লাভলু সড়কে গিয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা করে।
আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীরা তাদের পিটিয়ে-আহত করে সরিয়ে দেয়। পরে কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে দেওয়া হয় অর্ধশতাধিক মোটরসাইকেল।
পরে বিক্ষোভকারীরা মুজিব সড়কে দিয়ে ব্রহ্মসড়ক দিয়ে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র সংসদ রুকসু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে জেলখানার পেছনের সড়কে অবস্থান নেয়। এসময় তারা চকবাজারে যুবলীগের কার্যালয়েও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। আন্দোলনকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে অগাস্ট মাস উপলক্ষে নির্মিত তোরণ, বিল বোর্ড ও ব্যানার ভাঙচুর করে।
আমাদের প্রতিনিধি শেখ মফিজুর রহমান শিপন জানান, এর কিছুক্ষণ পর কোটচত্ত্বর এলাকায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের বাধা পেয়ে তারা শহরের জনতা ব্যাংক মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়।
সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম, বাইরে উত্তেজনা
সোমবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১২টার দিকে জনপ্রশাসনমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। সকাল থেকে তারা আসেননি বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক (এনএসসি) কমিটির জরুরি মিটিংয়ে বসেছেন বিদুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। সেকারণে সচিবালয়ে মন্ত্রীদের উপস্থিতি কম।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীকে তাদের নিজ নিজ দপ্তরে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, "আমি রুটিন কাজ করতে এসেছি। আমাদের কাজ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল নির্বিশেষে সবাইকে সেবা দিচ্ছি।"
আমাদের প্রতিবেদক ফয়সাল আতিক জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর থেকে নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের সবগুলো প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই সময়ে বাইরে গুলি, হাতবোমা বিস্ফোরণ ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছিলো। তাতে সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।
মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ, সঙ্গে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা না পেয়ে আবারো বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা।
সেই সঙ্গে ফেইসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটেও সামাজিক যোগাযোগের এ দুটো মাধ্যমে ঢুকতে পারছেন না ব্যবহারকারীরা।
নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা নিশাত সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে মোবাইল ডেটা দিয়েই সব কিছু চলছিল। বেলা ১টার পর আর চলছে না, মেসেজ পাঠাতে গেলাম, দেখি যাচ্ছে না। বারবার মোবাইল ডেটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে কেন? অনেক জরুরি কাজও তো আমাদের করতে হয়।”
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিটিআরসি সচিব নুরে আলম খাজা বলেন, “মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের এমন কোন নির্দেশনা আমরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাইনি। এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
আর আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বন্ধের জন্য আমাদের পর্যন্ত নির্দেশনা আসতে হয় না। আমাদের উপরে আরো দুটি লেয়ার রয়েছে, বন্ধ করার হলে তারাই বন্ধ করে দেন। আমরা তো শুধুমাত্র প্রোভাইডার। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
চট্টগ্রামে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ-আহত ৩০ জন হাসাপাতালে
চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ৩০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
আহতের মধ্যে ১২-১৩ জন ছররা গুলিতে আহত বলে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন জানান।
আমাদের প্রতিবেদক উত্তম সেন গুপ্ত জানান, রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অসহযোগ আন্দোলনে ডাক দেওয়া আন্দোলনকারীরা নগরীর নিউ মার্কেট মোড় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এ সময় তারা আশেপাশের রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে।
সাড়ে ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়, যা পরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে।
পুলিশ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার শেল এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে আন্দোলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
মাগুরা হাসপাতালে ছাত্রদল নেতাসহ দুজনের লাশ
রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের ঢাকা রোডে পুলিশ ও বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এই সংঘর্ষের পর এক ছাত্রদল নেতার গুলিবিদ্ধ লাশ নেওয়া হয়েছে হাসপাতালে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে পারনান্দুয়ালী এলাকা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে শহরে ঢুকতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, পুলিশও তাদের ধাওয়া করে রাবার বুলেট ও গুলি নিক্ষেপ করে। তখন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বী পুলিশের গুলিতে নিহত হন বলে দাবি করেছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, “পুলিশের গুলিতে রাব্বি নিহত হয়েছে। তার বুকে গুলি লেগেছে।”
মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মী আজিজুর রহমান বলেন, বেলা ১২টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একজনকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জরুরি বিভাগের চিকিৎসক অমর প্রসাদ বিশ্বাস জানান, তিন পুলিশ সদস্যসহ আহত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুরে শহরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ফরহাদ হোসেন নামের আরেক ব্যক্তি। তিনি শ্রীপুর উপজেলার রায়নগর গ্রামের গোলাম রসুলের ছেলে।
ঢাকা থেকে ছাড়ছে না দূরপাল্লার বাস
অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের মধ্যে রাজধানী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়ছে না।
বাস চালক ও কাউন্টারের কর্মীরা জানিয়েছেন ‘নাশকতার শঙ্কায়’ ঢাকা থেকে বাইরের জেলার উদ্দেশে কোনো বাস টার্মিনাল থেকে তারা বের করছেন না।
আমাদের প্রতিবেদক মাছুম কামাল রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী এবং সায়েদাবাদ টার্মিনাল ঘুরে দেখেছেন, দূরপাল্লার বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে সারিবদ্ধভাবে।
মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দূরপাল্লার বাস ছাড়ার পরিবেশ নাই। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ আছে।”
মহাখালী থেকে সিলেট, ময়মনসিংহগামী এনা ট্রান্সপোর্টের বুকিং সহকারী ইমন ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের কোনো বাস ছাড়ছে না। কিছু হলেই তো বাসে আগুন দেয়। তাই আমাদের গাড়ি ছাড়ছে না।”
এই টার্মিনাল থেকেই নওগাঁগামী একতা পরিবহনের চালকের সহকারী রাসেল হোসেন বলেন, “আমাদের বাস চলাচল বন্ধ। আগুন লাগলে তো সব গেল। এখন না চললেও আবার লস। কিছুই করার নাই। আমাদের কষ্ট কে বুঝবে?”
হানিফ পরিবহনের গাবতলী কাউন্টারের বুকিং সহকারী জিহাদুল ইসলাম বলেন, “মূলত নাশকতার শঙ্কা থেকেই বাস বন্ধ হয়েছে।”
সেনাবাহিনীর এপিসি ঘিরে বিক্ষোভ
ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া কলেজের সামনের মহাসড়কে সেনাবাহিনীর এপিসি বা আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক শেখ আবু তালেব জানান, এসময় সেনা সদস্যরা ট্যাংকের উপর দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সেখানকার পরিস্থিতি ক্যামেরায় ধারণ করেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘এই মুহূর্তে দরকার, সেনাবাহিনীর সরকার’ স্লোগান দিতে থাকেন।
মুন্সীগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ২
মুন্সীগঞ্জ শহরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
রোববার শহরের সুপার মার্কেট এলাকায় এই সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন।
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবু হেনা মোহাম্মদ জামাল বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুইজনকে তাদের হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরীক্ষা করে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধি ফারহানা মির্জা জানান, নিহতদের দুইজনই পুরুষ। তাদের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
বিক্ষোভে গুলি না চালানোর রিট খারিজ
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ সিদ্ধান্ত দেয়।
আমাদের সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদক দেবাশীষ দেব জানান, আদালত আদেশে বলেছে, সব নাগরিকের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে অংশগ্রহণের অধিকার আছে। পুলিশকেও আইনের নির্দেশনা মানতে হবে।
আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানো এবং কোটাবিরোধী আন্দোলনের ছয়জন সমন্বয়কারীর ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তির নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করেন আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি।
আহত ২০ জন ঢাকা মেডিকেলে
অসহযোগ আন্দোলনে সহিংসতার মধ্যে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আহত ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন অন্তত দুইজন। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লেগেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রোববার দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর শাহবাগ, শনির আখড়া, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। আহতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের রেকর্ড দেখে আমাদের মেডিকেল প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম জানান, শনিরআখড়া থেকে জামাল উদ্দিন (৫০) ও সাব্বিরকে (১৮) নেওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এছাড়া, মুন্সীগঞ্জ থেকে দীপ (২০) ও মঞ্জিল (৫০), ঢাকার শাহবাগ থেকে মাহিন (২৫), হাসিবুর রহমান (৩০) সুবাস (২৪), তানভীর রহমান (২০), সেলিম (৪০), রিমন (২৩), হৃদয় (২০), গুলিস্থান থেকে শাহজালালসহ (৩০) ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বাড্ডা-রামপুরা সড়ক আন্দোলনকারীদের দখলে
রোববার সকাল ১০টা থেকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পৌনে ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে বাড্ডা লিংক রোড এলাকায় যান। এসময় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তাতে যোগ দেয়।
তারা দল বেঁধে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, লিংক রোড, প্রগতি সরণি ও নতুন বাজারে অবস্থান নিয়েছে। তাদের কেউ কেউ মিছিল নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেদক আবুল বাসার সাজ্জাদ জানান, এর আগে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রামপুরা বাজার, বাড্ডা লিংক রোড ও প্রগতি সরণিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন। বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীদের দেখে তারা সটকে পড়েন।
দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুবাস্তু মার্কেট এলাকায় শতাধিক পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছিলেন। তবে আন্দোলনকারীরা সেদিকে মিছিল নিয়ে গেলে তারাও অবস্থান ত্যাগ করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ
রোববার সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যান চলাচল কম ছিল৷ পরে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইলসহ কয়েকটি অংশে অবস্থান নিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে শুরু করে৷ এছাড়া ঢাকার শনির আখড়া, মাতুয়াইলেও তারা অবরোধ করে।
আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম জানান, সকালে ছোট যানবাহন চলাচল করলেও বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সড়কটি আন্দোলনকারীদের দখলে চলে গেলে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ৷
কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, “সকাল থেকেই এ মহাসড়কে যান চলাচল কম ছিল৷ দূরপাল্লার বাস চলাচল ছিল না বললেই চলে৷ পণ্যবাহী যান চলাচলও ছিল একেবারে নগণ্য৷ বেলা বাড়ার পর আন্দোলনকারীরা মহাসড়কটি বন্ধ করে দিলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।”
সরেজমিনে মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, মৌচাক শিমরাইল মোড়ে ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান করতে দেখা যায়৷ তাদের কয়েকজনের হাতে লাঠিসোঁটা ছিল৷ তারা তাদের সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন৷ তবে কোনো যানবাহন ভাঙচুর করতে দেখা যায়নি৷
উত্তরায় সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল
অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে রাজধানী উত্তরার আজমপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক প্রশান্ত মিত্র জানান, পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রোববার বেলা ১১টার দিকে উত্তরা সাত নম্বর সেক্টরের উত্তরা হাই স্কুলের সামনে আন্দোলনকারীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনের সড়কে এসে অবস্থান নিলে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকেও মিছিলে যোগ দিতে দেখা যায়।
ওই সময় ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীদের প্রায় সবার হাতেই লাঠি, স্টিলের পাইপ ও স্ট্যাম্প দেখা যায়। সড়কে টায়ার ও কাঠ জ্বালানো হলে সেই ধোঁয়াও দেখা যায় দূর থেকে।
এরপর আজমপুরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে পৌঁছে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদেরদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই পুলিশ পুলিশ হস্তক্ষেপ করলে ত্রিমুখী সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই টিয়ার শেলেও ধোঁয়া পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে।
সড়কে আওয়ামী লীগের অবস্থান
সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন ঠেকাতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা।
রোববার সকাল ১০টার পর থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, মিরপুর ১০ নম্বর, ধানমন্ডি, ফার্মগেইট, আসাদ গেইটেরএর মোড়, পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে কয়েক হাজার নেতাকর্মীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কৃষিবিদ পরিষদ ও কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনের যৌথ আয়োজনে কৃষিবিদরা খামারবাড়ি এলাকায় জড়ো হয়ে শান্তি সমাবেশ করেন। শান্তি সমাবেশ শেষে সংসদ ভবন এলাকায় মহড়া দিয়ে আবারও খামারবাড়ি এরাকায় অবস্থান নেন তারা। বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ধানমন্ডিতে সহস্রাধিক নেতাকর্মী নিয়ে আবস্থান নেওয়া যুবলীগ নেতা তাজবিরুল হক অনু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আন্দোলনে এখন আর ছাত্ররা নেই। বিএনপি জামাত তাণ্ডব করতে নেমেছে, তাদেরকে কোনো ছাড় নয়। রাজপথে কীভাবে মোকাবেলা করতে হয় সেটা আমরা জানি।”
পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে নেতাকর্মীদের নিয়ে অবস্থান নেওয়া সুত্রাপূর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাইদ বলেন, “বিএনপি জামায়াতের কিছু লোক কোর্টে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। আমরা প্রতিহত করেছি, আর এর জন্য বেশি সময় লাগেনি। বিএনপি-জামায়াত মোকাবেলা করেইতো বড় হয়েছি।”
এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েল সামনে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী সকাল থেকেই অবস্থান নিয়ে আছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ওবায়দুর মাসুম জানান, সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হতে দেখা যায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। মিছিলকারীদের হাতে এ সময় লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
মহাখালীর তিতুমীর কলেজের আশেপাশের এলাকায় সকাল ১১টা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সড়কে নামতে দেখা যায়।
তারা মিছিল নিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। নেতাকর্মীদের লাঠিসোটাসহ মোটরসাইকেলে করে সড়কে ঘুরতে দেখা যায় এ সময়। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন– ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’।
বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে হামলা
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে একদল শ্রমিক লাঠিসোঁটা হাতে শাহবাগে জড়ো হন।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক রাসেল সরকার ও শাফাত রহমান জানান, এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সামনের দিকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এক পর্যায়ে ধাওয়া দিলে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিএসএমএমইউর ভেতরে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা বিএসএমএমইউর ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন।
তখন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়, পুড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল ও বাস। পাশাপাশি হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনে ঢিল ছুঁড়ে এবং লাঠি দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।
জনসন রোডে পুলিশের গাড়িতে আগুন
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল ওই এলাকা দিয়ে যায়। এসময় তারা শেখ হাসিনার পতন চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক প্রকাশ বিশ্বাস জানান, এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। একপর্যায়ে জনসন রোডে পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর করে তাকে আগুন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
শাহবাগে আন্দোলনকারীরা
রোববার বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শাহবাগ মোড় দখল করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এতে শাহবাগের চারপাশের রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে আমাদের প্রতিবেদক রাসেল সরকার জানান, এসময় তারা ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’, ‘অভ্যুত্থান, অভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান,’ ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে,’ ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস,’ ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত,’ ‘স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে,’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন। তাদের অনেকের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে বেলা ১১টা থেকে বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ আয়োজনের কথা জানান আন্দোলনের সমন্বয়করা। এছাড়া সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, টেকনিক্যাল, মিরপুর ১০, রামপুরা, তেজগাঁও, ফার্মগেট, পান্থপথ, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় বিক্ষোভ ও গণসমাবেশ আয়োজনের কথা রয়েছে।
যাত্রাবাড়ীতে সতর্ক পুলিশ
যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ, শনির আখাড়া, রায়েরবাজার মহাসড়কে মাঝে মধ্যে শুধু সরকারি অফিসগামী যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে সকাল বেলায়।
এই এলাকা ঘুরে প্রতিবেদক শেখ আবু তালেব জেনেছেন, গত শনিবার রাত থেকে বন্ধ হওয়া গুলিস্তান ফ্লাইওভার বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত খোলেনি।
দুই পাশের সড়কে যানবাহন, গণ পরিবহন চলাচল ছিল সামান্য। কোনো বাস চলেনি সকাল থেকে। গণপরিবহন, প্রাইভেট কার, চলাচল না করায় সড়ক ফাঁকাই দেখা গেছে।
গণপরিবহন না পেয়ে অফিসগামীরা রিকশায় চলাচল করেছেন যৌথভাবে ভাড়া দিয়ে।
ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন কম
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন রোববার সকালে রাজধানীর সড়কে গণপরিবহন চলছে একেবারেই কম। এদিন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও রাজধানীর সড়কে কোনো যানজট দেখা যায়নি।
সায়েন্স ল্যাব, এলিফেন্ট রোড, ধানমন্ডি মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, বিজয়স্মরণি, মহাখালী, বনানী, খিলক্ষেত, উত্তরা, আব্দুল্লাহপুরের সড়কজুড়ে গণ পরিবহন নেই বললেই চলে। এসব জায়গার সড়কে অল্প কিছু প্রাইভেট কার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টাফ বাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে সেই সংখ্যা হাতে গোনা। এতে পথে বের হওয়া অফিসগামীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যাও সেভাবে দেখা যায়নি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থানে।
প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি সমন্বয় ও সম্পাদনা করছেন জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক রোকন রাকিব।