শুধু একটি পরীক্ষা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার পক্ষে বলেছেন দীপু মনি।
Published : 08 Feb 2023, 04:28 PM
মহামারীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যেভাবে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতেও তাদের পরীক্ষা তেমন সিলেবাসে নেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এবারের এইচএসসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই মত প্রকাশ করেন তিনি।
কোভিড মহামারী আর বন্যায় বিলম্বিত শিক্ষাবর্ষ শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। উত্তীর্ণ এই শিক্ষার্থীরাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়ায় এ বছর অনুষ্ঠিত ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের সব অধ্যায় পড়তে হয়নি। বিষয়, নম্বর ও সময় কমিয়ে নেওয়া হয় পরীক্ষা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসেই হবে কি না-সাংবাদিকদের প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, “যে সিলেবাসে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা হয়েছে, ঠিক সেই সিলেবাসের উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিৎ।
“আমাদের যে মতামত, ইতোমধ্যে আমরা এই কথাগুলো বলেছি। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সঙ্গেও আমরা অতি সম্প্রতি আলাপ করেছি।”
তিনি বলেন, “সব জায়গায় পরীক্ষা কীসের উপর হয়? এসএসসিতে যে বিষয়গুলোর উপর পরীক্ষাগুলো হয়, তারই উচ্চতর পরীক্ষা এইচএসসি। সেই এইচএসসি পরীক্ষার উপর আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হয়।
“যেহেতু এখন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে বা পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে হয়েছে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা, ঠিক সেই সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিৎ।”
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭ জন পাস করেছে। এই শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে নামবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একটি পরীক্ষা?
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গুচ্ছ পদ্ধতিতে আনতে ১০ বছর লাগলেও মাত্র একটি পরীক্ষা নিয়ে ভর্তির জন্য সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়কে আনতে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
এখন দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে এলেও পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এতে আসেনি। এরমধ্যেই একটি পরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্পন্ন করার আশা করছেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের যে পরীক্ষাগুলো হয়, সেগুলো একটা পরীক্ষা হয়। সেখানে হয় তো গণিত, বিজ্ঞান বা ভাষা এই জাতীয় বিষয়গুলো এবং সাধারণ জ্ঞানের উপর পরীক্ষাগুলো হয় এবং সেই একটি পরীক্ষা দিয়ে জাতীয় একটা তালিকা তৈরি হয় এবং তার উপর ভিত্তি করে, সেই পরীক্ষার যে স্কোর, সেই স্কোরের ভিত্তিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।”
এতে ইংরেজি মাধ্যমে যারা পড়ছে, তাদেরও ভর্তির সুযোগ হওয়ার কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “এই ইংরেজি মাধ্যম যখন শুরু হয়েছিল, তখন শুধু উচ্চবিত্তরা পড়ত। এখন কিন্তু মধ্যবিত্তরা, নিম্ন মধ্যবিত্ত সন্তানেরাও এখানে পড়ে। কিন্তু তারা এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগই পায় না, যেহেতেু সিলেবাসটা অন্য রকম। তাদেরও এখানে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকা উচিৎ। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, একই জিনিস বার বার হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।”
ভর্তি পরীক্ষাকে এমন ধারায় আনতে কত সময় লাগতে পারে- এ প্রশ্নের জবাবে দীপু মনি বলেন, “গুচ্ছ পদ্ধতিতে যেতে অনেক দিন লেগেছে। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেক স্টেক হোল্ডার আছেন, আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি স্বায়ত্তশাসিত। এই ব্যবস্থাটা প্রয়োগ করতেও সময় লেগেছে।
“কিন্তু যদি একটি পরীক্ষাতে যেতে হয়, সেটি আমরা হয়তবা আরও অনেক কম সময় …. আমরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছ থেকে যে ধরনের মতামত পেয়েছি, আমাদের কাছে মনে হয় আরও কম সময় লাগবে। আশা করি সেই পরীক্ষাতে সকলেই আসবেন।”
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “একটা দেশে কত লোক আসলে অনার্স-মাস্টার্স করবে, এটাও আমাদের ভাবতে হবে। উচ্চশিক্ষা কি সবাই করবেন? নিশ্চয়ই উচ্চ মাধ্যমিকের পরে আরও কিছু পড়তে চাইবেন।
“সবচেয়ে বড় কথা হল, আমি কর্ম জগতে প্রবেশ করব। সেই কর্ম জগতে প্রবেশ করার জন্য আমি কী কী করতে পারি। যেখানে যত বেশি দেশ উন্নত সেখানে তত বেশি কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা যায়। আমাদের এখানে একটা মাইন্ড সেট আছে, সেখানে যায় না। এখন অবশ্য ১৭ ভাগের বেশি হয়েছে।”