সাফ শিরোপাজয়ী বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের বীরোচিত সংবর্ধনায় বরণ করল সংস্কৃতিজনরা।
সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে ‘জয় নারী, জয় তরুণ, জয় মানুষ' স্লোগানে সাফ জয়ী ২৩ নারী ফুটবলার ও তাদের কোচসহ সংশ্লিষ্টদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
৩০ জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও ২ জন ট্রান্সজেন্ডার প্রতিনিধি বিজয়ীদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে নারী ফুটবলাররা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মূল বেদীতে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃতিজন ও আইএফআইসি ব্যাংকের সহযোগিতায় খেলোয়াদের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কাছে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বলেন, “আসলে জয়ের পর থেকেই মনে হয়েছে- বাংলাদেশের মানুষে মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। যখন আমরা দেখছি- মানুষ উল্লাস করছে, ফুটবলকে মনের ভেতর ধারণ করছে, তখন অনেক ভালো লাগা কাজ করে।
“আজকে এখানে যে সম্মাননা দেওয়া হলো, নিঃসন্দেহে এটা আমাদের অনেক বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করব, দেশের মানুষের হাসিখুশি ধরে রাখার জন্য। আমরা আপনাদের দোয়াপ্রার্থী।”
মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেত্রী সারা যাকের বলেন, “আজকে এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমার একাত্তরের কথা মনে পড়ছে। একাত্তরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা; যখন আমি তোমাদের বয়সী ছিলাম, এই মঞ্চে তখন পরাধীন দেশে বাংলা ভাষার আন্দোলনের শেষ উৎসবটা হয়েছিল। আজকে একান্ন বছর পর আমি এই মঞ্চে তোমাদের দেখছি।
“তোমরা হলে আমাদের স্বপ্ন সারথি। তোমরা তরুণরাই এদেশ এগিয়ে নেবে। জয় হোক তোমাদের।”
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা এসেছিল। আজকে সাবিনা, কৃষ্ণা, রুপনাদের সমবেত প্রচেষ্টায় এই বাংলাদেশ আজকে বিশ্ব মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে।
“আমরা যদি এভাবে সবাই মিলে এক সাথে থাকি, অনেক অর্জন করতে পারব আমরা। আশা করি, এই বীরকন্যারা ভবিষ্যতে আরও বড় বিজয় ছিনিয়ে আনবে।”
অনুষ্ঠানে রামেন্দু মজুমদার নারী ফুটবল দলের এই সাফল্যের জন্য প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনকে ধন্যবাদ জানান।
সূচনা বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই শহীদ মিনারে বীরাঙ্গনা নারীদের সংবর্ধনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। আজকে যখন আমাদের বীরকন্যারা আমাদের জন্য সম্মান বয়ে নিয়ে আনেন, তখন আমরা নিরব থাকতে পারি না।
“আমরা নারীদের এই বিজয়কে শুধু ফুটবলের একটি প্রতিযোগিতার বিজয় মনে করি না, এটা কূপমণ্ডকতার বিরুদ্ধে, নারী অধিকারের বিরুদ্ধে সমাজকে পিছিয়ে নেওয়ার যে মধ্যযুগীয় চক্রান্ত আজও আমাদের দেশে বিদ্যমান, যারা নারীদের অন্তপুরে আবদ্ধ রাখতে চায়, তার বিরুদ্ধে আমাদের নারীদের সংগ্রামের বিজয় বলে আমরা মনে করি। ”
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মো. আহকাম উল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মফিদুল হক, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা আতাউর রহমান।