“তারপরও কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়।”
Published : 25 Jun 2024, 05:32 PM
দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমানতকারীদের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত থাকে সেজন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালোগুলোর সঙ্গে একীভূত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
অনেকের টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, এক পর্যায়ে সেটা নেশার মত পেয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেছেন।
ব্যাংক খাতের নানা সমস্যা দূর করতে ব্যাংক সংস্কার কমিশন গঠনের কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা, সেই প্রশ্ন রাখা হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
এর উত্তেরে সরকারপ্রধান ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে কথা বলেন।
গত ৪ এপ্রিল ব্যাংক একীভূত (মার্জার) করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তার আগেই বেসরকারি পদ্মা ব্যাংককে শরিয়াভিত্তিক এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা আসে। ব্যাংক দুটি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পেয়ে সমঝোতা চুক্তিও করেছে।
নীতিমালা জারির পর রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বিডিবিএল একীভূত করার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে দুই কোম্পানির পর্ষদ। এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংককে বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে এবং ন্যাশনাল ব্যাংককে ইউসিবির সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে শোনা গেলেও ন্যাশনাল ব্যাংক পরে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
এর বাইরে রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)।
সবমিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ‘স্বেচ্ছায়’ একীভূত হতে চাওয়া দশ ব্যাংকের বাইরে নতুন করে আর কোনো ব্যাংক একীভূত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যাংকিং সেক্টর কেউ ভালো চালাচ্ছে। কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেকে ঠিকমত চালাতে পারেন না। এটা চিরাচরিত নিয়ম, যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা।
“একটা ব্যাংকের সাথে আরেকটা ব্যাংককে মার্জ করে দেয়া। এটা যাতে চালু হয় ভালোভাবে, সেখানকার আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কিন্তু সরকারের দায়িত্ব, সেটাই পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
সরকারপ্রধান বলেন, “তারপরও কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে, দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এতই অর্থ বানিয়ে ফেলল, যে শেষে আর দেশেই থাকা যায় না।
“তাহলে অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো? এটা তো মানুষ চিন্তা করে না। বোধ হয় নেশার মত পেয়ে যায়। সেখানে যেটুকু সমস্যা হচ্ছে তা সমাধানের চেষ্টা করছি।”
ভারতের সাথে ওষুধ শিল্পের চুক্তিতে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে এমন প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারত থেকে ওষুধ শিল্পের অনেক কাঁচামাল আমাদের আনতে হয়। কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো আমরা উৎপাদন করতে পারছি না। যদিও আমাদের ওষুধ শিল্প অনেক উন্নত। বিভিন্ন দেশে আমরা রপ্তানি করি। এরপরও কিছু কিছু ওষুধ থাকে যেটার শিল্প আমাদের দেশে ওইভাবে গড়ে ওঠেনি।
“সেই ক্ষেত্রে আমাদের দেশের মানুষ লাভবান হবে। আমাদের দেশের অনেকেই চিকিৎসা নিতে ভারতে যান। সেজন্য আমরা ভিসা সহজ করে দিয়েছি। আমরা কেবল উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে যত বেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে পারব, যতবেশি আদানপ্রদান হবে, ততই বাংলাদেশ বেশি লাভবান হবে।”
ভারতের কারাগারে সাজা ভোগ করার পরও মানবেতর জীবনযাপন করা হাজার হাজার বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে এসব ক্ষেত্রে টাকা ব্যয় করা হয়। একবার পাচার হওয়া কিছু শিশুকে আমরা উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। একটা ঘটনা আছে যে, স্বামী বিক্রি করে দিয়েছে বউকে। তার জায়গা হয় পতিতালয়ে। সেখান থেকেও কিন্তু আমরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছি। যখনই আমরা যেটার খবর পাই, উদ্ধার করে নিয়ে আসি।”
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত হাজার হাজার বাংলাদেশির ভারতের কারাগারে থাকার কথা আমরা শুনিনি। তবে আপনি যখন বলছেন, আমরা খোঁজ নেব। আমরা নিয়ে আসব, এটা কোনো ব্যাপার না। এজন্য আমরা টাকা খরচ করি।”
এ ক্ষেত্রে অর্থের কোনো সমস্যা নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিয়মিত আমরা যখনই খবর পাচ্ছি, সাথে সাথে তাদের ফেরত আনা হচ্ছে। আমাদের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। কোথায় কতজন আছেন, আপনার কাছে তথ্য থাকলে তালিকা দেন, আমি নিয়ে আসব, কোনো অসুবিধা নেই।”
ভারত সফরে দেশটির কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সৌজন্যমূলক নাকি অন্য কোনও অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়েছে, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান একজন সাংবাদিক।
এর জবাবে হেসে হেসে তিনি বলেন, “আমি তো বলেছি, আমার সঙ্গে ভারতের প্রত্যেকটা দল, সকলের সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।”
এ সময় বিশেষ করে সোনিয়া গান্ধী ও তার দুই সন্তান এবং প্রণব মুখার্জী ও তার সন্তানদের পারিবারিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “ইন্দিরা গান্ধীর পরিবারের সঙ্গে আমাদের পরিবারের একটা পারিবারিক বন্ধন আছে। সেটা সকল রাজনীতি, সব কিছুর ঊর্ধ্বে।”
“এটা নিয়ে এত চিন্তা করার কিছু নেই,” বলে আবারও হেসে জবাব শেষ করেন শেখ হাসিনা।