আন্তর্জাতিক প্রকাশনা এসোসিয়েশনে তিন বাংলাদেশি

অলাত এহ্সান
Published : 21 April 2017, 10:56 AM
Updated : 21 April 2017, 10:56 AM

এশিয়ার প্রকাশকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন এশিয়া প্যাসিফিক পাবলিশার্স এসোসিয়েশন (এপিপিএ)-এর প্রথম সারিতে বাংলাদেশের প্রকাশক নির্বাচিত হওয়ায় প্রকাশনা শিল্পের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রথম বাংলাদেশের প্রকাশকদের নেতৃত্বের যাত্রা সূচনা হয়েছে। এ বছর এপিপিএ-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বহুজাতিক এই সংঘের ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স এন্ড স্পেশাল ইভেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে কবি ও সাংবাদিক তারিক সুজাত। সংঘের আরেকটি নির্বাহী কমিটি কো পাবলিশিং, ট্রান্সলেশন এন্ড ডিস্ট্রিবিশন-এর চেয়ারম্যান হয়েছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক।
আন্তর্জাতিক প্রকাশক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ফিলিপাইনের ডোমিনেডর বুহেইন। সেক্রেটারি জেনারেল হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার এরিক ইয়াং।
গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা শুরু হয়। হোটেল শেরাটান ডি কিউব-এ অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে ২০১৭-২০১৮ মেয়াদের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হন।

প্রকাশকদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতার জন্য ১৯৯২ সালে ১ নভেম্বর জাপানের রাজধানী টোকিওতে অনুষ্ঠিত এশিয়া ফোরামের সভায় এশিয়া প্যাসিফিক পাবালিশার্স এসোসিয়েশন (এপিপিএ) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ১৩টি দেশের বিভিন্ন ধরনের প্রকাশক ও পুস্তক সংগঠন নিয়ে গঠিত এই এসোসিয়েশন। বর্তমানে এর সদস্য ১৭। বছরে ২-৩ বার মিলিত হয়ে প্রতিটি দেশের ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক সমস্যাদি নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নিজের মধ্যে তথ্যে আদান প্রদান করেন। প্রতিবছর সদস্য দেশগুলোর মধ্য থেকে নির্বাচিত দেশ বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজক হিসেবে নির্বাচিত হয়। এই সভাগুলোতে সদস্য সংগঠন ও দেশ ছাড়াও আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত হন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বই মেলাগুলোতে এই এসোসিয়েশনের অংশগ্রহণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে।

এশিয়ার প্রতিটি দেশের জাতীয় পুস্তক প্রকাশনী সংস্থার জন্য এর সদস্য পদ উন্মুক্ত। বাংলাদেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশগুলো মধ্যে আছে ব্রুনাই, চীন, পূর্ব তিমুর, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউ গিনি, ফিলিপাইন, সিংগাপুর, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ড।
তবে জাপানে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও জাপান এতে অংশগ্রহণ করে ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে। এশিয়া মহাদেশে বই বিক্রির অগ্রগতি ও উন্নয়ন, সদস্যদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, প্রকাশনার ক্ষেত্রে নিজেদের বাস্তব অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান, প্রকাশনা-মুদ্রণ-বাঁধাই ও বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন ও সদস্য দেশগুলোতে সুযোগ বৃদ্ধি করাই এই সংগঠনের উদ্দেশ্য।

পুস্তক প্রকাশনার মান বৃদ্ধি ও প্রসারের জন্য এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে থেকে বিভিন্ন বইয়ের ওপর বার্ষিক পুরস্কার দেয়া হয়। একাডেমিক বুকস, চিলড্রেন বুকস ও জেনারেল বুকস এই তিনটি বিভাগে সংগঠনটি 'বুক এওয়ার্ড' দিয়ে থাকে। প্রতিটি বিভাগে গোল্ডেন, সিলভার ও ব্রঞ্জ পদক দেয়া হয়। তাছাড়া একটি সান্তনা পদও রয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৭টি বিভিন্ন ইভেন্ট পরিচালিত হয় এই এসোসিয়েশন থেকে। একটি ইন্টারন্যাশনাল নন-গভমেন্ট অরগানাইজেশনের (আইএনজিও) সঙ্গে যুক্ত এই এপিপিএ।

এপিপিএ-এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাজহারুল ইসলাম বর্তমানে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতৃত্ব ছাড়াও অন্যপ্রকাশ-এর প্রধান নির্বাহী এবং পাক্ষিক অন্যদিন পত্রিকার সম্পাদক। এছাড়া অন্যমেলা নামক ফ্যাশন হাউজের কর্ণধার ছাড়াও তিনি একজন টিভি নাটক নির্মাতা।
ইন্টারন্যাশনাল এফেয়ার্স এন্ড স্পেশাল ইভেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান কবি ও সাংবাদিক তারিক সুজাত বর্তমানে দৈনিক ভোরের কাগজ ও দেশ টিভির পরিচালনার সাথে যুক্ত। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচটি। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক বর্তমানে পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স লিমিটেডের পরিচালক।
এপিপিএ-তে বাংলাদেশের তিনজন নির্বাচিত হওয়ার মধ্যদিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই প্রথম বাংলাদেশের প্রকাশকদের প্রতিনিধিত্ব ঘটছে।