হাবীবুল্লাহ সিরাজী: পরাজয় মানে না মানুষ

হাবীবুল্লাহসিরাজী
Published : 1 May 2020, 12:27 PM
Updated : 1 May 2020, 12:27 PM


২৬.০৩.২০২০
বৃহস্পতিবার

একা হ'য়ে কি বেঁচে থাকতে পারবো? তা হ'লে কেন বিচ্ছিন্ন করা হ'চ্ছে? কেন আমি পরিবার-সুহৃদ বঞ্চিত হ'য়ে গৃহবন্দি থাকবো? কেবলই কি তা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুভয়ের কারণে? ভয় কি আমার সঙ্গে অন্যদের নিয়েও পাশা খেলছে? এক দেশ থেকে অন্য দেশে, এক শহর থেকে অন্য শহরে, এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে, এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে– আমার ভয়, আমাদের ভয় হ'য়ে তাড়া ক'রছে! বন্দি হ'য়ে থাকা, বিচ্ছিন্ন হ'য়ে থাকা তো মানবধর্ম নয়! প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই। তারপরও আশা, তারপরও আকাক্সক্ষা, তারপরও স্বপ্ন  সর্ব বিসর্জনের মধ্যে গৃহকেই জেনে নেয়া একমাত্র বন্ধু।
হে আমার গৃহ, হে আমার প্রেমময় ঘর– বিছানা-বালিশ, চেয়ার-টেবিল, বই-খাতা, টেলিভিশন-ফোন-তোমরা জড় থেকে চৈতন্যে প্রবেশ করো। আমি আমার সর্বসসত্তায় তোমাদের ধারণ করি, লালন করি, যাপন করি — অন্ততঃ নির্দেশ অনুসারে দশদিন। দশদিন এমন কিছু নয়। কিন্তু ভয়, সে তো দিন মানে না, ঘণ্টা মানে না, মুহূর্তে-মুহূর্তে চেপে ধরে, কাঁপিয়ে দেয় হৃদপিণ্ড। ফুসফুসের শ্বাস– আশ হ'য়ে বাঁচার ইচ্ছেয় বয়স নিয়ে লোফালুফি করে।


ড. আশরাফ সিদ্দিকী, বাংলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালক, গত ১৯শে মার্চ ২০২০ দীর্ঘদিন রোগভোগের পর পরলোকগমন করেন। বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে তাঁকে অন্তিম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি। আমরা হারালাম শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, শিল্প-সমালোচক, কবি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরকে গত ২৩শে এপ্রিল ২০২০। এই করোনাকালে জানাই বিদায়ী অভিবাদন।
না, দিন ফুরোবো না সূর্য ডোবার আগেই। তারপরেও তো আছে নক্ষত্রপুঞ্জ। প্রাণের সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে– প্রকৃতির অনন্তলীলা জারি থাকুক। জড় ও চৈতন্যের বিহারে সৌহার্দ্য দেবে নতুন ভরসা; সহনশীলতা দূর ক'রবে সকল ভগ্নদশা।


২৭.০৩.২০২০
শুক্রবার

রাত ফুরোলেই একাডেমির যে টান প্রতিদিন চুল থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে প'ড়তো, তাতে বুঝি ঢিল লাগলো। কোনো তাড়া নেই, কোনো উত্তেজনা নেই– গা ঢেলে দেয়া বিছানাও বুঝি শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকে। বালিশ বলে, আরেকটু মাথা রাখো। তারপরও বেলা বাড়ে। নাস্তার টেবিলে রুটি-সব্জি-ডিম মুখ তুলে ফিক ক'রে হেসে দেয়। ভরা চায়ের কাপে দুধের পিঁপড়ে ঘুরতে-ঘুরতে মনে করিয়ে দেয় ঔষধ-ইনস্যুলিনের সেবন-গ্রহণের কথা। তারপর কি? আমাদের বদলানোর ফিরিস্তি দীর্ঘ হ'চ্ছে ক্রমশঃ। তারমধ্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সঙ্গে বসবাসের বিষয়টি দিয়ে যাচ্ছে বড়ো একটি ঝাঁকুনি। দুপুরে ছায়াছবি 'পরিণীতা' এমন প্রশ্ন সম্মুখে নিয়ে এলো– যাতে ক'রে উত্তর খুঁজতে হ'লো আহার ফাঁকে ফেলে। ছবিটিতে 'বাবাই দা' নামক চরিত্রটি হুট করে আত্মহত্যা ক'রে বসলো। কেন? ইনিয়ে-বিনিয়ে শেষাংশে কারণ হিশেবে যা দেখা গেলো– তাতে মনে হ'লো, বাংলা ছায়াছবি কোথায় যেন তার মাথাটি বন্ধক দিয়ে রেখেছে! ধ্যাৎ, বেশ কিছু কাজ করবো বলে সকাল থেকে পরিকল্পনা ছিলো, সব গুলিয়ে গেলো। আত্মহত্যা মাথা থেকে নামছেই না। এই যে দশদিনের ছুটিতে ঢাকা শহর উজার ক'রে মানুষজন গ্রামে ছুটলো– তা-ও তো অগ্নিকুণ্ডে ঝাঁপ দেবার সামিল। অপ্রতুল যানবাহনে গাদাগাদি অবস্থায় যাত্রা; ঘাম ঝরিয়ে, ট্যাঁক শূন্য ক'রে আত্মীয়-পরিজনদের কাছে ফেরা তো 'করোনাকালে' আত্মহত্যারই নামান্তর। এক থেকে বহু, বহু থেকে বহুতর প্রাণ–দুনিয়াজোড়া ভাইরাসের হুংকারে কম্পিত। সন্ধ্যা নামছে। শান্ত নগরের অচেনা পথে কি বসন্তের হাওয়া শিস্ দেয়?


২৮.০৩.২০২০
শনিবার

আলস্যের এ স্থিরতা এ বয়সে এসে বড়ো ঝুঁকি হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কালে ঘরে শুয়ে-বসা থাকা মহা গ্লানির। তবু নিজের কথা ভেবে, পরিজনের কথা ভেবে– সর্বোপরি সকলের কথা ভেবে সময়কে কেবলমাত্র সহানুভূতিতেই পরিণত ক'রতে পারছি। আর না ব'ললে অন্যায় হবে, সংস্পর্শহীন দিনগুলোয় কিছু না কিছু তো নতুন পাঠ হ'চ্ছেই; হ'চ্ছে সামান্য লেখালেখি। শিশু-কিশোর উপযোগী একটি নতুন জীবনীগ্রন্থ প্রণয়নে হাত দিয়েছিলাম– হয়তো চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত ক'রে ফেলতে পারবো। ক'টি কবিতা যেন ঘোরে-ঘোরেই লিখে ফেললাম। সামনের দিনগুলোর সকলের সঙ্গে যোগাযোগ হবে ফোনে, ফেসবুকে। আর বড়ো কথা, বাস্তবতার নিরিখে এবং আমাদের সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা ক'রেই আশায় বুক বাঁধবো–মানুষের জয় হবেই।
গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ চীন যে লাল ঝাণ্ডা তুলেছিলো– এ বছরের মার্চে এসে সে ঝাণ্ডা সারা পৃথিবীতে মহাশংকার হ'য়ে উড়ছে। প্রার্থনা করি, অচিরাৎ রক্তমাখা সে ঝাণ্ডা শাদা পতাকা হ'য়ে জগতজুড়ে হেসে উঠুক। মানুষ ফিরে পাক তার বসবাসযোগ্য পৃথিবী। প্রকৃতির সঙ্গে তার মেলবন্ধনের বাঁশি সুরে-সুরে বাজুক।

০৯.০৪.২০২০
বৃহস্পতিবার

প্রতিবছরই কোকিল ডাকে, আমের বোলে গুটি আসে, চৈত্রের পূর্ণিমায় প্লাবিত হয় বৃক্ষের আনাচে-কানাচে থেকে বাড়ির ছাদ… কিন্তু এসব কিছুই অবলীলায় চোখ এড়িয়ে যায়! যেমন প্রভাতের আহ্বান–কী বায়ুবেগে কী ঘ্রাণে কোনোটাই তো আগে এমন লাগেনি; যেমন পর্দা সরালে আকাশ তো আগে এমন ফোটেনি, চায়ের কাপেও তো পাতাদের এমন ভেজার সুযোগ মেলেনি! গত একমাসে কিন্তু এসব ঘটছে। সেই মার্চের শুরু থেকেই উলোটপালোট হ'য়ে গেছে ঋতুর রং, ভাবনার ক্ষণ, খাদ্য-বাসস্থান-পোশাক থেকে চলন-বলন ও আমোদের ধরন। 'আমরা' থেকে 'আমি' হবার বিচ্ছিন্নতায় কেমন যেন সন্দেহ ও সংশয়কে প্রশ্রয় দিতে হ'চ্ছে। আপনজনের সঙ্গ থেকে বঞ্চিত হবার মহড়ায় সপ্তাহ-পক্ষ-মাস ঢুকে প'ড়ছে অবলীলায়, সম্মুখে বছর অপেক্ষায়! কী পাচ্ছি আর কী হারাচ্ছি তার খতিয়ান করার সময় এখনো হাতছানি দিতে ভুলে গেছে। দুনিয়াজোড়া ধাক্কা যেন গায়-গায় লাগা। ছোঁয়ামাত্র হুড়মুড় ক'রে ভেঙে প'ড়েছে কাচের ঘর, অষ্টপ্রহর।
তার মধ্যেই কোকিল ডাকছে, মৌমাছি ছুটছে, জ্যোৎস্না ফুটছে… সাগরকিনারে ডলফিন লেজ নাচিয়ে খেলছে, ঝাঁকে-ঝাঁকে লালকাঁকড়া ব্যক্তিগত এ্যান্টেনা তুলে দৌড়–চ্ছে। বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন ভাই-বেরাদর হ'য়ে চিম্বুক পাহাড়ের শীর্ষে চাটি মেরে ছুটছে হিমালয় অভিমুখে। এ এক নতুন অভিযানের পাঁয়তারা, এ এক অন্য সমীকরণের সীমাহীন চিহ্নমালা।
দিনে-দিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ১লা এপ্রিল ২০২০ শুরু হয় ৩ জনকে দিয়ে, তারপর থেকে সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে। আজ একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১২ জনে। এই যে বেড়েই চলেছে– তার শেষ কোথায়?
ভালো ছিলো, বিকেল ছিলো পাশে। ছিলো ছায়ার সঙ্গে আলোর মর্মবেলা। খাতায় যে বিয়োগচিহ্ন প'ড়ছে তার থেকে মন সরিয়ে নারকেল পাতার ফাঁকে ইঁদুরের কারসাজি দেখা ছিলো ঢের ভালো। অন্ধকার নামার আগেই পশ্চিম আকাশ লাল হবে। তার মধ্যে ফুটে উঠবে নানান চিত্র: গভীর বেদনা এবং অনাবিল আনন্দের মিশ্ররূপ। দিন শেষ হোক, রাত আসুক তার মুখোশ খুলে।


আলোকচিত্র: লুৎফর রহমান রিটন
গত ৩রা এপ্রিল ২০২০ প্রিয় শিশুসাহিত্যিক নাসের মাহমুদ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁর এ যাওয়া বেশ আগেভাগেই হ'য়ে গেলো। চমৎকার ছড়া লেখার পাশাপাশি জীবনকেও দেখেছেন খুব স্বাদুভঙ্গিতে। না পরোয়া করা এই মানুষটির মুখ শেষবারের মতো দেখা হ'লো না করোনার কারণে।

১০.০৪.২০২০
শুক্রবার

শুক্রবারের সময়চিত্র পাল্টে গেছে। ছুটির দিন ব'লে আর তেমন বাড়তি যত্নআত্তি নেই। এখন তো সপ্তাহের সাতদিনই ছুটি। গরম রুটি আর ডিম ভাজার সঙ্গে আলু-পটল-ফুলকপির মিলমহব্বত হ'য়ে গেলে চায়ের কাপে সিলেটের বাগান উঁকি দেয়। কখন যে হুমায়ূন আহমেদ পাশ এসে বসেছেন, বোঝা-ই যায়নি। 'কে কথা কয়'? আজ আর পদার্থ-রসায়নের দেমাগ নয়, নয় হিমু-মিসির আলীর বারফট্টাই; আজ খোদ পাটিগণিত, গণিতের যোগ ও বিয়োগ। কমল যখন লমক হ'চ্ছে, তখন মতিন উদ্দিন তো পুরোপুরি নদ্দিউ নতিম। উলোটপালোট এ খেলায় ০(শূন্য) ও ১(এক) জীবনকে মৃত্যুর পথে ঝাঁপ দিতে আহ্বান জানায়। এক থেকে শূন্য হওয়া পর্যন্ত মৃত্যু। ভাইরাসটি ফুসফুসকে শূন্য ক'রে ফেললেই মৃত্যু।
মৃত্যুর কোনো ইজারাদার নেই, নেই কোনো জামিনদার। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই মৃত্যু শূন্য থেকে ইনফিনিটি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকলেও এখন তার আদল একে (১) ধরা প'ড়তে চাইছে। জন্ম ও মৃত্যু হাঁটছে সৃষ্টি ও ধ্বংসের সমান্তরালে।
করোনাকালে যাপনের চিত্রমালাই সম্পূর্ণ ব'দলে গেছে। গৃহবন্দি জীবনে সামাজিকতা শতভাগ শূন্য। ধর্মাচার থেকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপালন, সর্বস্থলে বিধিনিষেধের বেড়াজাল বিরাজমান। তারপরো এমন কিছু থাকে যা 'লক ডাউন'-ও ছিন্ন করে। খাদ্য-চিকিৎসা-সমস্যা তো অপেক্ষার নয়। তা মেটাতেই হয়। স্থির অবস্থানের সময়সীমা আবার বাড়লো।

১১.০৪.২০২০
শনিবার

ঘরের সামনেই পড়শীর ছাদ। চোখে পড়ে হিজিবিজি নল লাগানো চৌবাচ্চা, নেই ব'ললেও চলে লোহার জালির রেলিং, খর্খরে ছাদ ফুঁড়ে বেরুনো শিকড়সমেত ক'টা বট-পাকুড় জাতীয় গাছ আর একটা টানা তার। এ তারে কাক বসে, এ ছাদে চড়–ই ঘোরে। কবুতরেরাও কখনো-সখনো বৈকালিক ভ্রমণ সারে রেলিং-চৌবাচ্চা-ছাদ জুড়ে।
দক্ষিণ দিক হওয়ায় আমার জানালা সারাক্ষণ খোলা, আর দূরের সবুজেরা যেন চোখের পাহারা। সকালে কাক ও চড়ুই এসেছে। করোনার কারণে সব ছুটি হ'য়ে গেলেও ক্ষুধার তো ছুটি হ'তে নেই! মানুষ তার খাদ্যসন্ধানে নানা পথ জানলেও পশু-পাখি তো মানুষের উপর আংশিক নির্ভরশীল। কাকের জন্য গৃহস্থের খাদ্যবর্জ্য চাই, আর চড়ুইয়ের লাগবে মূলত দানা। ঘরবন্দি মানুষের সবকিছু ছাঁটকাট হ'য়ে গেছে, এবং তাতে ক'রে টান প'ড়েছে পশু-পাখির খানা-খদ্যেও। দাঁড়ের ময়নার যেমন শসাদানা চাই, তেমন রাস্তার কুকুরের প্রয়োজন হাড় ও কাঁটার।
খবর পাই, করোনা সাহায্যের চাল-ডালও শেয়াল-কুকুর-কাক-শকুন হ'য়ে কতিপয় মানুষ হাপিশ ক'রছে। ধিক! থু!!
চৈত্রের সূর্য দাউদাউ ক'রে জ্বলে। হাওয়ায় তার মন পড়া যায়। করোনা দাপিয়ে বেড়ায় শহরময়, দেশময় মায় বিশ্বময়। টেলিভিশনে মৃত্যুর সংবাদ কাঁপিয়ে দেয় ভেতরমহল। যে বয়স তা তো আর লড়াইয়ের অনুকূলে নয়। প্রকৃতি রুষ্ট হ'লে তছনছ হয় জগৎসংসার।
ছায়া ঘনাইছে দূরে।
সন্ধ্যা নামে। দূরে সবুজের আড়ালে পাখিদের কোলাহলে জীবনের নতুন রূপ।

১৬.০৪.২০২০
বৃহস্পতিবার

বিশ্রামে থাকা শরীরের বেগ ধরা যেমন কঠিন, তেমনি সকালের আলোর গতি নির্ণয়ও দুরূহ। গতরাতে প্রায় ভোর পর্যন্ত জেগেও তেমন ক্লান্তি সূর্যোদয়ের পর অনুভূত হ'চ্ছে না। পর্দা টানতেই পাশের বাড়ির ছাদে বসা দুটো শালিক একনজর দেখে নিলো। ভাবখানা এমন, তুমি কে হে, আলো ফুটতে না ফুটতেই আমাদের দিকে চোখ তুললে! ওরা ওদের মতো ভাবুক, আমার রয়েছে যে একফর্দ কাজ।
ইন্স্যুলিনের মাত্রা নিয়ে একটা ভজঘট লেগেই থাকে। বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি নির্ভর করে শরীরের চিনির পরিমাণের উপর। তার মানে, খানাখাদ্য এখানে একটি বড়ো চরিত্র। সকালের নাস্তার আগে উপোসকালীন রক্তের চিনির মাত্রা দেখা আজ জরুরি ছিলো। শরীরের সবকিছুই এলোমেলো হ'য়ে আছে।
আনিস, আনিসুর রহমানের ফোন এলো সুইডেন থেকে। দীর্ঘদিন ওখানে আছে। নিজের লেখালেখির পাশাপাশি সাংগঠনিক অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। শিশুদের উপযোগী কবিতা লাগবে ইংরেজি অনুবাদসমেত। সময় নিয়ে কাজটি সেরে দিতে-দিতে বেলা মাথার উপর চলে এলো। জিভে টকটক ক'রছে ঘন মসুরের ডাল আর আমের চাটনি খেতে। খুব আয়োজন ক'রে সেটা সামলানো গেলো।
মধ্যাহ্নের আহারের পর নতুন উপসর্গ জুটেছে– শরীর বিছানার জন্য ছটফট করে। এর মধ্যেই করোনা পরিস্থিতির হালনাগাদ পাওয়া গেলো টেলিভিশনে। বাংলাদেশে সর্বমোট আক্রান্ত ১৪৬৩ এবং মৃতের সংখ্যা ৬০। এ পরিসংখ্যান কেবলমাত্র সরকারিভাবে পরীক্ষার ফলাফল। বৈশাখের এ সময়ে হাঁচি-কাশি-জ্বর-সর্দি তো বাংলাদেশের সাধারণ ঘটনা। কিন্ত করোনা ভাইরাস সবকিছু তছনছ ক'রে মহা অসাধারণের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। যতো পরীক্ষা বাড়বে ততো প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন ঘটবে। লকডাউন চ'লছে, কিন্তু জীবন তো থেমে থাকার নয়। আহারের ব্যবস্থার সঙ্গে জরুরি চিকিৎসাকেও ঠেলে সরানো কঠিন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্যসাহায্য চ'লছে। কিন্তু পরিতাপের কথা, সেখানেও ঢুকে পড়েছে চোর। এই চরম সংকটকালে আমাদের বোধোদয় না হ'লে আর কবে হবে?
কালের কণ্ঠ ঈদ সংখ্যার জন্য একটি লেখা তৈরি করার ফাঁকে আমার দেখা নয়াচীনের ইংরেজি সংস্করণ 'A TRIP TO NEW CHINA' নিয়ে কিছু কাজ এগুলো।
মন ও শরীর সমানতালে চ'লতে চায় না। ভেতরের একটি উচাটন যেন যাচ্ছে না কোনোমতেই। এর মধ্যে খবর মিললো ভূমিকম্পের। বিকেলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ পার্বত্য জেলাগুলোতে মাঝারি মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হ'য়েছে। একে করোনাভীতি তারপর এই নতুন আতংক, যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা!
প্রফুল্ল কিংবা কিছুটা হালকা হবার অবলম্বন টেলিভিশন খুলতেও তো করোনা ভাইরাস চেপে ধরে। তারপরও সন্ধ্যা কেটে গেলো 'The Maze Runner'-এ, আর ঘুমুতে যাবার আগপর্যন্ত 'গোত্র'-এ।
ভালোবাসা নিয়ে যতো আয়োজন সব তো অপেক্ষায় থাকে। অপেক্ষা দীর্ঘ হ'চ্ছে, দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর!

১৭.০৪.২০২০
শুক্রবার

খাটো চোখে সকাল চাইতেই পিপাসা বাড়ে। জলতেষ্টা আড়াল ক'রতে হিমসিম খায় রোদ। এর মধ্যে একদফা ছোটঘরে ঢুকতে মাথায় আটকে যায় করোনা ভাইরাস।
শুক্রবারের কাগজ পড়া, চা খাওয়া, বিছানা তোলা সবই ছিলো অন্যরকম। কিন্তু এখন সব একাকার, করোনার ঘরসংসার। আজকের খবর কি? দুপুর পার ক'রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিশেব মিলবে। তার সঙ্গে যোগ-বিয়োগে নিজস্ব কিছু সংখ্যা দাঁড় করিয়ে নেয়া।
করোনা ভাইরাসে আজ অব্দি বাংলাদেশে আক্রান্তের সর্বমোট সংখ্যা ১৮৩৮ এবং মৃতের সংখ্যা ৭৫। পৃথিবীজোড়া এ তা-বের কোনো সমাধান কি অচিরাৎ হবার সম্ভাবনা নেই? মৃতের পারদ তো হৈ হৈ ক'রে উপরে উঠছে। এখন পর্যন্ত সংখ্যায় দেড় লক্ষ ছুঁই-ছুঁই । থামার যে কোনো লক্ষণই নেই, নিচে নামা তো দূরের কথা। কতো প্রাণ আর চাই হে মা জননী? আর কতো দেহ তুমি কবরে শোয়াবে, আগুনে পোড়াবে আর কতো শরীর হে প্রিয় পৃথিবী?
'যাত্রাপুস্তক' নামের একটি গ্রন্থ রচনায় হাত দিয়েছিলাম, তাও প্রায় বছর দশেক আগে। চল্লিশটি খণ্ড-খণ্ড কবিতার মূল বিষয় হিশেবে ভেবেছিলাম অনন্ত এক পরিধিতে বিন্দু স্থাপনের কথা। এতোদিনেও তার কূলকিনারা মিললো না। চেষ্টায় আছি। ধর্ম আর অধর্ম যে হাত ধরাধরি ক'রে একই রাস্তায় চ'লছে। প্রকৃতি ও বিশ্বাস এ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আবর্তিত হ'চ্ছে সংশয়ে। উদ্ধারের সূত্রগুলো বুঝি বড়ো জটিল।

"সিজদাহ কর যাহাতে আমার সমর্থন আছে
আমিই মালিক আর তুমি মাটিময় প্রথম মানব
হে আদম, উপভোগ কর যাবতীয় নেয়ামত
সীমালঙ্ঘনের শাস্তি অবশ্যই তোমার নসীব

যতদূর আমি জানি ততদূর তোমার অজানা"

আলস্য মুখে পুরে ধীর পায়ে বিকেল ঢুকছে। নারকেল গাছের পাতায় লাগছে শেষ রোদটুকুর ছোঁয়া। হাওয়ার মৃদু সোহাগে গতরাতে ফোঁটা বেলীর পাঁপড়িতে লেগেছে শাদার জোয়ার। এই বিকেল সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে অবসরের মুহূর্তগুলো কি মৃত্যুর ছায়া অবলোকন করে?
সুনসান চারদিক। ফ্ল্যাট বাড়িগুলোয় বাতি জ্বলা শুরু হ'য়েছে। পাখিদের ঘরে ফেরার কোলাহল আজ আর নেই।
সজীব ফোন ক'রেছিলো। গৃহবন্দি জীবনের সঙ্গীতচর্চায়ও স্বস্তি নেই। তবু কাজের মধ্যে আছে। রাত বাড়ে। অর্চির সঙ্গে কানাডায় কথা হ'লো। সবকিছুতেই শাসন-বারন। দু সপ্তাহের বেশি লকডাউনে থেকে সাবাবাও ক্লান্ত। মানসিক চাপ যে দিন-দিন বাড়ছেই। মা ও মেয়ের এই অসহায়ত্ব কেবলমাত্র অনুধাবন করা যায়! করোনা ভাইরাস যে সবকিছু গিলে ব'সে আছে।
আজ ছিলো ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ নেয়। প্রায় অগোচরে দিনটি পার হ'য়ে গেলো।


১৮.০৪.২০২০
শনিবার

আকাশের মুখ ভার। ভার মানে সূর্যকে বুঝি বেলা দশটা অব্দি চোখ মেলার অবকাশ দেবে না। কিন্তু দিনের দায় তো থেমে নেই।
অর্থী, ডাক্তার। মিরপুর থাকে। ওর স্বামী সনি-ও ডাক্তার। দুই ছেলে ইয়ার্দিন-ইয়াভিন সামলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের জন্য উদগ্রীব।
তীর্থ-আদবানা গ্রিনরোডের চার্মভিল এ্যাপার্টমেন্টসে। পহেলা বৈশাখের রান্নায় আদবানা হাত পুড়িয়েছে। তার জের টানছে এখনও। হাসপাতালে গেলো ড্রেসিং বদলাতে। বাবাকে ব্যস্ত রাখার জন্য মেয়ে অদ্রি একাই একশো। আজ করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২১৪৪ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৮৪। সারা দেশে লকডাউন-লকডাউন খেলা চ'লছে। আছে কোয়ারান্টাইন, আছে আইসোলেসান, আছে রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষার ব্যবস্থা। কিন্তু কার্যকারিতা নিয়ে কেনোমতেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে ওঠা যাচ্ছে না।
জানাযার জন্য মানুষের যে জমায়েত আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হ'লো, তারপর আর করোনা ভাইরাস নিয়ে কথা ব'লতে মন সায় দেয় না। তবু বেঁচে থাকার জন্য নানান পথ-প্রণালি দেখে নিতে হয়। বাজার করা থেকে ঔষধ কেনা পর্যন্ত মানুষের সংস্পর্শ এড়ানোর কোনো উপায় নেই।
সরকারি ছুটি চ'লছে। ভিন্ন-ভিন্ন প্রেক্ষিতে জারি আছে সাহায্য কার্যক্রম। কিন্তু সেখানেও বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো। চাল মাটির নিচে যাচ্ছে তো তেল লুকোচ্ছে খাটের তলায়। বোধ, প্রবণতা, সততা কিংবা দায়িত্ব নিয়ে আর কতো কাঠগড়ায় দাঁড়াবো?
গতরাতে একটি আহত ডলফিন নিয়ে ছবি দেখছিলাম। প্রাণীর প্রতি মানুষের ভালোবাসার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতির বিষয়টি দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। লেজে আঘাত পাওয়া ডলফিনের চিকিৎসা এবং তার সেবার প্রক্রিয়া আমাদের মনোজগতে পৃথিবীতে বসবাসের সার্থকতা তুলে ধরে। করোনা ভাইরাসে বিস্তৃত এ বিশ্বে সহমর্মিতা হোক বাঁচার প্রধান শর্ত। প্রকৃতি ও প্রাণ খুঁজে পাক জীবনের নতুন অর্থ।

২৩.০৪.২০২০
বৃহস্পতিবার

মৃদু গলাব্যথা লেগে আছে বেশ ক'দিন। ঠান্ডা পানি বাদ দিলাম, দুধ-চিনিবিহীন চা-র উপর ভরসা ক'রলাম– তাতেও কাজ দিচ্ছে না। এর মধ্যে আবার গলাব্যথার ভাই-বেরাদার হ'য়ে কানব্যথা এসে ভর ক'রলো। ফলে এখন এ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া পথ নেই। শুরু হ'লো গত মঙ্গলবার থেকে। সঙ্গে জুড়ে দেয়া গেলো প্যারাসিটামল, গা-গরম আর হাত-পা ধ'রে আসার সাময়িক উপশম। আজ থেকে থার্মোফ্লাস্ক ভর্তি আদা-লবঙ্গ-তেজপাতা দেয়া গরম পানি থাকবে। ইচ্ছে হ'লেই চা-পাতা মিশিয়ে পান করা যাবে। বারান্দায় বেলী ফুটেছে। চোখ জুড়িয়ে যায়। এই করোনাকালেও বাঁচার তীব্র ইচ্ছে সবুজ পাতারা ধ'রে রাখে। বেলা বাড়ছে। এখনো পাশের ছাদে কেউ এলো না। গতকাল শেষ বিকেলে এক বানরের দেখা মিলেছিলো। ঘরে একটিই কলা অবশিষ্ট থাকায় শুধু পাউরুটি দেয়া হ'লে তার মন উঠলো না। এক লাফে ঝুল দিলো পানির ট্যাংকের পাইপে। তারপর কিছুক্ষণ হুমতাম ক'রে হাওয়া।
দুপুরে খেতে ব'সে শাকে লবণ একটু বেশিই পেলাম। তাই মাখানো ভাত তুলে রাখতে হ'লো।
পাখিরা কি বেশি লবণ সহ্য ক'রতে পারে? থাক, ভাতগুলো ফেলে না দিয়ে আপাতত কাক-কবুতরের জন্যই থাক।
দুপুর পার ক'রে একটি দাঁড়কাক এসেছিলো ছাদে। না, আপত্তি ক'রেনি। সোনামুখ ক'রে লবণ-জ্বলা ভাত খেয়ে নিয়েছে। খিদে ব'লে কথা। করোনা যে চারদিক মরুভূমি বানিয়ে ছেড়েছে!
আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪১৮৬ এবং মৃতের সংখ্যা ১২৭। ঢাকা নগরের উপর চোটপাটটা একটু বেশি। তবে পুরো বাংলাদেশ নিয়ে তার নতুন-নতুন অভিযান ভয়ে বুক শুকিয়ে দিচ্ছে।
বিকেলের আলো পুরোপুরি মেরে দিয়ে জোর বৃষ্টি নামলো। কিন্তু বেশিক্ষণ তার থাকার সময় নেই। ফর্সা হ'লো চারদিক, পাখি উড়লো আকাশে। কবুতর ছাদে দানা খুঁটে খেলো।
রাতে 'যাত্রাপুস্তক' নিয়ে ব'সেছিলাম। কিন্তু তার যা চাহিদা তা মেটাতে জান ছারখার! পাঁচ চরণের একটি পর্বের খসড়াতেই রাতের খাবার সময় এসে গেলো। আফগানিস্তান নিয়ে যতো গলাবাজি তার শতাংশের এক ভাগও নেই কর্মক্ষেত্রে। কিছুদিন আগের কাবুল-হেরাত ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই তার পক্ষে রায় দেয়। যুদ্ধ আর কলহ দেশটিকে ছারখার ক'রে ফেলেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্য-সভ্যতা যেন ভূগর্ভে বিলীন। হাতের কাছে পাওয়া 'Afghanistan and the Silk Road ' সেকথাই মনে করিয়ে দিলো।
প্রায় মধ্যরাতে কবি সানাউল হক খানের ফোন পেয়ে মনটা ভারি হ'য়ে গেলো। এর মধ্যে ও করোনায় আক্রান্ত হ'য়ে সপ্তাহখানেকের বেশি মিটফোর্ড হাসপাতালে থেকে এসেছে। কিছুই জানি না এসবের। শরীর এখনো পুরোপুরি ভালো হয়নি। কথা বলতে পারছিলো না ঠিকমতো। বাড়িতেই আছে। আমাদের বিচ্ছিন্ন হবার যাত্রায় কি করোনা ইন্ধন জোগাচ্ছে?

২৪.০৪.২০২০
শুক্রবার

খুব সাজগোজ করা ঘুঘু। গলা থেকে লেজ পর্যন্ত যে বাহার তাতে চোখ জুড়িয়ে যায়। ছাদে হাঁটছে। সকালের রোদ ভেঙে ডানা মেলেছে চিল। দূরের সবুজ আর আকাশের মিল পেতে-পেতে চায়ে চুমুক দেয়া। দীর্ঘ সময় নিয়ে বিস্কুট ভিজিয়ে-ভিজিয়ে চা খাওয়ার বিষয় তো ভুলতেই ব'সেছিলাম। করোনা-গৃহবাস তা ফিরিয়ে দিলো।
হলুদ বিহ্বলতা মেখে বৃষ্টি এলো দুপুরে। এখন এমন কাল, কারো আর নূপুর বাঁধায় মন নেই। একলা ফোঁটা তাই বাজে ছাদে, পাতায় ও পাথরের রাস্তায়।

জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বেশ ক'দিন ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখন কিছুটা ভালো। তবে মূল সমস্যা দূর করার জন্য আবারো হাসপাতালের শরণাপন্ন হ'তে হবে। করোনার দাপট হ্রাস পেলে তেমন করা হবে ব'লে ভাবি ফোনে জানালেন। আমাদের কুশলাদি জেনে আশ্বস্ত হ'লেন। বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নেই। আকাশ ঘোলা হ'য়ে আছে, বুঝি ময়লা জ'মেছে। টেলিভিশন খুলতে ইচ্ছে করে না। কতো আর কোভিড-১৯ ভাইরাসের জ্বালাতন সহ্য করা যায়!
আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৮৮ এবং মৃতের সংখ্যা ১৩১। গত চব্বিশ ঘণ্টায় মানে একদিনে শনাক্ত ৫০৩ জন নতুন রোগী। দিনে-দিনে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সামাজিক সমস্যা প্রকট হ'চ্ছে। পরীক্ষা যতো বেশি হবে, রোগী ততো বাড়তে থাকবে। কিন্তু এরও তো একটি সমাপ্তি থাকা উচিৎ! সর্বক্ষেত্রে অসহায়ত্ব আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধ'রছে। সংকট অবর্ণনীয় এবং অনির্ণেয়। স্বাস্থ্য, খাদ্য, শিক্ষা মায় ধর্মাচরণে দিশেহারা অবস্থা।
সরকারি ছুটি বেড়েছে এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত।
কিন্তু এ বাড়া মানে তো সমাধান নয়। ঘন বসতির গরীব দেশের সমস্যা যে পদে-পদে।
আগামীকাল শনিবার থেকে রোজা শুরু। বাজারে তার প্রভাব প'ড়েছে। তারপর আছে ইফতার, তারাবি, সাহরির মতো বিষয়গুলোর প্রতি বাড়তি মনোযোগ।
সমরেশ মজুমদারের 'রক্তাক্ত আততায়ী' তেমন মনোযোগ না পেলেও রাতের কিছুটা ছুটিয়ে নিলো। এই-ই হয়, মাঝে-মাঝে খোসা না খোলা অব্দি দানার রূপ বোঝা যায় না।
যখন চমৎকার কিছু শূন্যতা সৃষ্টি হয় তখন চোখ ও মন এক করার জন্য আশ্রয়ের প্রয়োজন বিকল্প বিনোদনের। আর চলচ্চিত্র হ'তে পারে সে আশ্রয়, সে বিনোদন। নেটফ্লিক্সে বাছাই ছবি দেখার পরামর্শ দিলো অর্চি, এবং তার জন্য আনুষাঙ্গিক সব ব্যবস্থা ক'রলো সাবাবা। মা তোমরা নিরাপদে থাকো।

২৫.০৪.২০২০
শনিবার

সকালটা হুট ক'রে চ'লে এলো। বুঝি খুব তাড়া ছিলো তাই নারকেলশাখায় রোদ ফুটিয়ে জানালার পর্দায় টোকা দিলো। ঠিক এই মুহূর্তে ভুলে ছিলাম করোনার ক্রোধের কাল কিংবা সংসার-তাপের নানান উপসর্গের কথা। কাক ও কুকুর খুব বিপদে আছে। নগরের তাবৎ ভাগাড় ছিলো ওদের দখলে। কিন্তু করোনকালে তো চিত্র একদম ভিন্ন। মূল ফটকে কুকুর এবং ছাদে কাক যেন বাড়িটির শোকসংবাদ হ'য়ে আছে।
বাংলাদেশের ৬০ জেলায় ছড়িয়ে প'ড়েছে করোনার উত্তাপ। সরকারি ছুটির মধ্যেও তো জীবন-যাত্রার গতি রুদ্ধ হবার নয়। ক্ষুধার কাছে যে সবাই পরাজিত। তাই বিধিনিষেধ মেনেই সম্পাদিত হ'চ্ছে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড। এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯৯৮ এবং মৃত্যু ঘটেছে ১৪০ জনের। পরীক্ষাকেন্দ্রের পরিধি বাড়ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মী।
সরকারি ছুটি যতো বাড়ছে ততো জ'মছে দাপ্তরিক কাজ। নিত্যদিনের কাজের পাশাপাশি পরিকল্পিত কাজগুলোও প'ড়ে থাকছে। অনিশ্চয়তায় দাঁড়িয়ে সম্মুখের কোনোকিছুই ভাবনার বিষয় করা যায না। আজ বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের ৪৮ দিন কাটলো !
রমযান মাস শুরু হ'লো। করোনা ভাইরাসের কারণে একটি বাড়তি চাপ আছে, তা নিত্যদিনের বাজারেই হোক কিংবা ধর্মীয় বিধি-বিধান পালনেই হোক। অন্যদিকে মুজিববর্ষের সব আয়োজনই তো ধ'রতে গেলে স্থগিত।
মঞ্জু ভাই, খন্দকার আসাদুজ্জামান চ'লে গেলেন। হৃদরোগে ভুগছিলেন দীর্ঘদিন, আজ বিকেলে নিজের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ ক'রলেন। তাঁর কাছে অনেক স্নেহ ও সহযোগিতা পেয়েছি স্বাধীনতার পর থেকেই। মুক্তিযুদ্ধের এই মহান সংগঠককে জানাই সশ্রদ্ধ অভিবাদন।