বিপিএল থেকে আরও চারটি বই

chintaman_tusar
Published : 18 Feb 2015, 01:43 PM
Updated : 18 Feb 2015, 01:43 PM

মাশুকের দরবার
প্রেম, হাস্য- রসের গল্পের পাঠক যুগে যুগে এবং নিয়মিত তৈরি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু 'মাশুকের দরবার'-এ কী নিবেদন করা হচ্ছে, তা না চেখে কেন বলবেন ভুল আশেকের আহবান। মুখ ঘুরিয়ে কেনইবা 'গালিভারের নিদ্রাভঙ্গ'-এর দায় দেবেন প্রকাশকের ঘাড়ে; অযথা। রসশ্রেষ্ঠ হাস্যরস কাব্যরস অধিক ঘন, সর্ববিধ বিজ্ঞদের মতামত। সবার হাতে 'চাঁদের আলো'য় 'কিউপিডের দুষ্টামি'র কথা ফুল হয়ে ফোঁটে না তাই। বরং 'বসন্তের বধু'র চোখে বিরহ জাগিয়ে তোলে ক্ষেত্রবিশেষে। যুগে যুগে, বাদে-অনুবাদে হাস্যরসের রহস্য উদঘাটনে রসিক ভ্রমরাদের গুঞ্জরণে আক্রান্ত হয়েছে বইয়ের পৃষ্টা এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ।
এস. ওয়াজেদ আলীর গল্পগ্রন্থ 'মাশুকের দরবার'। প্রথম প্রকাশ ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ, ১৯৩০ ঈসায়ী সনে। লেখক হিসেবে ওয়াজেদ আলীকে তৎকালীন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমাজের একজন কর্ণধার বলা অত্যুক্তি হবে না। তার গদ্য লেখায় পরিমিতিবোধ, প্রাঞ্জলতা, আকর্ষণক্ষমতা ঈর্ষনীয়।
দুর্লভ গ্রন্থের সঙ্গে আধুনিক যুগের পাঠকদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রকাশক বিপিএল। পুণঃমুদ্রণে মূল রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে সর্বোচ্চ। আরও আছে গল্পের সঙ্গে প্রাচীন চিত্রকর্মের ছবি, যা গল্প পাঠের আবহ সৃষ্টি করবে। গ্রন্থের প্রচ্ছদ, অলঙ্করণ ও টাইপ সেটিং করেছে পি অ্যান্ড জে।
১৩৩ পৃষ্ঠার গ্রন্থের মূল্য ২৫০ টাকা।
স্টল ৫২৫-২৬
বাংলা একাডেমি পুকুরপাড়

প্রাচীন কালের যে-সব ভয়
বাংলা নামের দেশটির বর্তমান রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গঠন প্রক্রিয়ার সময় থেকেই দেশকে দেখছেন তিনি। দুটি দেশ ভাগের ইতিহাসের সাক্ষীও হয়েছেন। প্রবাসবাসেও একই গঠন-পুর্নগঠনের চিত্র দেখেছেন অধ্যাপনার সূত্রে। তাই তার গল্পে 'নদীটা রাষ্ট্র হয়ে যায়'। অথবা তিনি ঘুরে বেড়ান তার কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রের নদীতে। যে নদীর বাঁকে বাঁকে মানুষজন, নারী-পুরুষ, ইতিহাসের নানা অধ্যায়। যে নদীর গল্পে তিনিও হয়ে ওঠেন অবিচ্ছেদ্য অংশ। 'সাধারণত এমন হয় না' কিন্তু সে গল্পে 'প্রাচীনকালের যে-সব ভয়'-এর বিবরণ উঠে আসে। 'আমার চতুর্দিক বিষন্ন'; 'এই কবিতাটা কতোভাবে লিখি' জাতীয় অনুভব কী অনুতাপ উঠে আসে। 'ইতিহাসের জমজ ভাই বোন' এবং 'আমাদের চার বন্ধুর' গল্পও।
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর রচিত ১২টি সমকালীন গল্পের গ্রন্থ 'প্রাচীনকালের যে-সব ভয়'। এবারের বইমেলায় প্রকাশ করেছে বিপিএল। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন অনিন্দ্য রহমান। ১২৮ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ২৯০ টাকা।

প্রসাদ-এর কথা
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে শিল্প-সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্রকর্মীদের অবদান অবিস্মরণীয়। যুদ্ধ শুরু থেকে তার আগে ও পরের কিছুটা সময়ে যুদ্ধের মাহাত্ম্য সঠিকভাবে তুলে ধরেছে চলচ্চিত্রকর্মীরা। জহির রাহয়ান, সুভাষ দত্ত, মমতাজ আলী, হাসান ইমাম, সুজাতা, আনোয়ার হোসেন, সত্য সাহা, সমর দা, আপেল মাহমুদ, কাদেরী কিবরিয়া এমন আরও অনেক কুশীলবের নাম উঠে আসে।
কুশীলবদের অধিকাংশরাই আশ্রয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিশ্ববাসীর দরবারে পাকিস্তানি অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।
সেসময়ের পশ্চিমবঙ্গে প্রকাশিত 'প্রসাদ', 'উল্টোরথ', 'জলসা' বা 'সিনেমা জগতে'র মতো চলচ্চিত্র সাময়িকীগুলো নিছক গ্ল্যামার-পিপাসু ও গুজব-কেলেংকারি-শিকারী ছিল না; সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে গভীর আলোচনা ও মানসম্পন্ন সাহিত্যে সেগুলোর একেকটি সংখ্যার তুলনীয় কিছু আজকের দিনে পাওয়া কঠিন।
এরমধ্যে অনেকেই বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিকর্মীদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের জনমত গঠনে ভূমিকা রেখেছে। তবে 'প্রসাদ' পত্রিকাটি 'বাঙলাদেশ সংখ্যা' নামে পুরো একটি সংখ্যা বের করে ১৯৭২ সালের শীতকালে।
সংখ্যাটিতে এমনসব রচনা স্থান পেয়েছে যার অনেকগুলোই এযাবৎকালে সংকলিত হয়নি। 'প্রসাদ' সাময়িকী বিলুপ্ত হয়েছে, প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে সমসাময়িক অন্য পত্রিকাগুলোর। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে বা অ্যাকাডেমিক উদ্দেশ্যে এই পত্রিকাগুলো বাংলাদেশে অন্তত কোথায় সংরক্ষিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নাই।
বিপিএলের উদ্যোগে প্রসাদের 'বাঙলাদেশ সংখ্যা'র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনাগুলোর পাশাপাশি এক মলাটে ছাপা হল সমসাময়িক আরও কিছু সিনে ম্যাগাজিনের বাংলাদেশ বিষয়ক রচনা।
গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন রকিবুল হাসান।
১৮৯ পৃষ্ঠার সংকলনের মূল্য ৫১০ টাকা।

ধর্মনিরপেক্ষতা
'ধর্মনিপক্ষতা' শব্দটি উচ্চারণ করলে প্রথমত এবং অধিকাংশ সময়ে ধর্মবিরোধিতা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ মনোভাব লক্ষ্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য সংসদের মাধ্যমে এক সেমিনার আয়োজন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আলী আনোয়ার। ১৯৭২ সালের ১৯, ২০, ২১ অগাস্ট আয়োজিত ১১ ঘন্টার সম্মেলনটিতে বক্তৃতায় অংশ নেন ৫০ জন। তার সারসংক্ষেপ বলা যেতে পারে বর্তমান গ্রন্থটিকে। সাহিত্য সংসদের মাধ্যমে 'ধর্মনিরপেক্ষতা' নামে যা প্রকাশ হয় পরের বছর।
সম্মেলনটি আয়োজনের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দেওয়া হয় আলী আনোয়ারকে। গ্রন্থের ভূমিকায় তিনি বলেন, "বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলে বা কোন কোন প্রাগ্রসর রাজনৈতিক সংগঠনে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি নতুন কিছু নয়; কিন্তু তবু আপামর জনসমষ্টির সকল পর্যায়ে ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে ধারণা আছে এরকম ধরে নেয়াটা ভুল হবে। তা ছাড়া জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো সেক্যুলারিজমের ধারণাও আমরা পাশ্চাত্য থেকে গ্রহণ করেছি। এর মধ্যে অসংগতি কিছু নেই বরং আছে এক ধরণের ঐতিহাসিক অনিবার্যতা। তবু ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বোঝায় এবং আমাদের দেশে তা কি রূপ নেবে বা নেয়া উচিত এ নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।"
গ্রন্থে স্থান পেয়েছে সম্মেলনে অংশ নেওয়া সনৎকুমার সাহা, কাজী জোন হোসেন, রমেন্দ্রনাথ ঘোষ, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, গোলাম মুরশিদ, এবনে গোলাম সামাদ, অসিত রায় চৌধুরী, সালাহ্উদ্দীন আহমদ, আলী আনোয়ার (সম্পাদক), কাজী হাসিবুল হোসেন, মফিজ উদ্দিন আহমদের লেখা। সেসময়ের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খান সারওয়ার মুরশিদের লিখিত বক্তব্যও ছাপানো হয়েছে।
"বাংলাভাষায় ধর্মনিরপেক্ষতা সম্পর্কে এ রকম ব্যাপক ও অনুপুঙ্খ আলোচনা এই প্রথম।"– আলী আনোয়ার।
সদ্য-স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটি কেমন হবে সে-নিয়ে উৎসাহ-ঔৎসুক্য-উৎকণ্ঠা টের পাওয়া যাবে এই বইয়ে।
দীর্ঘ সময় ধরে আউট-অফ-প্রিন্ট থাকা ঐ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বইটি নতুনভাবে এনেছে বিপিএল। মুদ্রণের সময় মূল বইয়ের বানান অনুসরণ করা হয়েছে। গ্রন্থের প্রচ্ছদ করেছেন আলী মনোয়ার।
১৬৩ পৃষ্ঠার গ্রন্থটির মূল্য ৩১০ টাকা।