আর কী করেই-বা সম্ভব ন্যাংটা হওয়া ছাড়া দেহের এই দীপালি-উৎসব!
Published : 01 Nov 2024, 10:05 PM
জীবনভর আমি শুধু পোশাকই পরেছি, খুলিনি কখনও,
পোশাকিত থেকেই আমি দেখেছি চারপাশটা, যা ছিল ন্যাংটা।
এই যে উদ্ভিদেরা, নদী-সমুদ্র-ঝরনা, আর আকাশধাম
---তারা সবাই ন্যাংটা; ধুতরা ফুলের নেশার লাটিম, সেও তো ন্যাংটা,
স্বর্গ-নরক ন্যাংটা, আর পতঙ্গপ্রাণী-- তারাও, হায়,
ন্যাংটা বলেই নক্ষত্র সুন্দর, সুন্দর বতিচেল্লির ভিনাস আর পিকাসোর নারীরা।
শয়তান ন্যাংটা, ঈশ্বরও কি?
আর স্বাধীন চিন্তারা, তোমরা ন্যাংটা হলেই হও সুন্দর, হও মৌলিক,
তোমরা ন্যাংটা হলেই খসে আর ধসে পড়ে ফাতরা বুদ্ধিজীবীর শুকনা বীর্য।
আর হে নর হে নারী, আমরা তোমাদের দেখি নগ্নত্ব নিয়েই,
দেখি তোমাদের নিশীথনিবিড় সম্ভোগ---- যা ন্যাংটা,
আর কী করেই-বা সম্ভব ন্যাংটা হওয়া ছাড়া দেহের এই দীপালি-উৎসব!
এসব দেখে আনন্দ পাই আর নিজের জীবনের ন্যাংটাত্বকে খুঁজি।
কিন্তু জানো, কখনও দেখিনি নগ্নতা, মা কালীর দিব্বি, অনুভব করেছিমাত্র---
অন্ধের মতো হাতড়ে হাতড়ে।
রে পিনাকী, আমি ন্যাংটা হতে চাই---
পোশাক আমার রূপকে মেরে দিয়েছে রে, ওরে ধন আমার,
আমাকে দেয়নি অপরূপের কাছে যেতে,
রে জগদীশ, আমার জীবনকে ঢেকে ফেলেছো এক অপার্থিব আলখাল্লায়;
আলখাল্লাটি ফেলে আমি পার্থিব হতে চাই , চাই একটি হামিংবার্ড হতে যে
ন্যাংটা হয়েই উড়ে বেড়ায় আকাশের আকাশে, আমার-তোমার হলুদ অরণ্যে,
ফরফর শব্দ করে।
রে আফ্রোদিতে, আমি হতে চাই একটি অশত্থ যার লালেলাল ন্যাংটা ফলগুলো পেকে ন্যাংটা হয়েই পড়ে থাকে ন্যাংটা মাটির পর।
আমি ন্যাংটা হতে চাই একটি মান্দারিন মাছের মতো,
ঘাসের ওপর পা-ফেলা একটি ভেড়ার মতো,
বাবা ভোলানাথের মতো বনেবাদাড়ে,
কিন্তু তোমাকেও যেতে হবে যে মা পার্বতী, যেন
মানসসরোবরে একত্রে সাঁতার কাটতে পারি,
যেন বলতে পারি, আমরা ন্যাংটা হব একে অপরকে ছুঁয়ে, না হলে
ন্যাংটা পৃথিবীর কোনো মানেই যে সৃষ্টি করতে পারব না!
এসো তবে আজ, এই যে এলো সন্ধ্যা ঘনিয়ে, কিছুক্ষণ পরেই
ঝিঁঝিপোকারা শুরু করবে রাত্রির তারানা,
আজ এই সমুদ্রগোধূলিতে এসো ন্যাংটা হই, দেখি আবরণহীন--- একে অপরকে,
যেন আমরা দুই ন্যাংটা-ন্যাংটি, একটি একাকার নগ্নতায় ডুবে থাকি মহাকালকে ছুঁয়ে:
তুমি-আমি, দোঁহে দোঁহারে!