ঘোর
প্রপাতবিসারী আলো সেরে নেয় ভোজ
বুকখোলা প্লেটে হা হা শুভ্র চাঁদের বরফী
চামচে গড়ায় দ্রুতগতি মাছের চমক।
লুপ্তরূপ ফিরে পেয়ে উড়ে আসে হাওয়া
বুকের চাতালে এসে টোকা দেয়, বলে, ‘কি হে,
দুই চোখে লবণাক্ত পীড়া
খেলাচ্ছলে রুধিরাক্ত সাজ,
ভুলে গেছ?’
ঘনঘোর ভেঙে বলে উঠি, কে?
পিঠ হতে খসে পড়ে অমাবস্যা-শাল;
‘না, না, মনে আছে
তন্নিবিড় সেই মুখে ভেঙেছিল সোনার সকাল।’
সহজকান্তি বিঁধেছে চোখের মূলে
সহজকান্তি বিঁধেছে চোখের মূলে
অনলকম্প পোড়া হৃদয়ের ধূম
উতরোল বন, সসাগরা খিল খুলে
নির্বিকল্পে মেখে রাখে তাঁর ঘুম।
জতুগৃহে দীপ্রখচিত কুমারীর সন্ন্যাস
আপতিক এই রৌদ্রের টানে হিম
সূচিমুখ আর শেকড়ের বেশবাস
ধুনট টানে বুকের তীব্র দ্রিম।
বিশ্বাবিশ্বে অলর্কের বহু বিন্যস্ত গাঁথা
চারিভিত কাঁপে, বাহুমূলে তুর্কির কুর্দন
অনন্তরথ, কৃষ্ণরাত্রি, উৎক্রান্ত মহাছায়া
নগরীর নীল অলোককুঞ্জে বিষুবীয় কুঞ্চন।
ঘুর্ণিময় জলবায়ু
ভেতর তুমুল দিশাহীন দিনরাত
স্বপ্নাস্বপ্নের দ্বিধাময় ঘরবাড়ি
রয়েছে ক্লান্ত পথখঁচিত দেহাধার
এখানে ঘূর্ণন, ধাবমান খুর, হ্রেষার বল্লম।
অধীর সাজানো আলুথালু ঘুমে জোৎস্নারচিত ভূমি
বেলাবেলি তাঁর তপ্তমথিত খেলা
শিশিরে আর্দ্র, ঘুঙুর শব্দ, শিশিরেই সন্ত্রাস
চরণচিহ্নে এঁকেছিল কাল সূর্যশাসিত বেলা।
নিমিষের কেতু, যাত্রামুগ্ধ, নিমিষেই প্রস্থান
বৃক্ষে বিস্তার, মোহময় ঘুম, বৃক্ষই বোধিমাতা।
কেবল কবি যা পারে
দৃষ্টিতে ফন্দি ছিল, তবু দেখো খুলেছি সুন্দর
ভ্রুর রেখাতে ছিল বিভ্রম বাঁকানো
আসলে তো সহাস্য নাগিনীর ঢেউ
তবু আমি বলেছি কুন্তল,
খুলে দিলে লাবণ্য কিছুই নয়
অস্থি-মাংসে সুভদ্র প্রলেপ
তাকে বলি কোমলতা, তাকে বলি প্রতিমাপ্রতিম
শুভ্র আস্তরের নীচে, স্নেহক্ষীর মজ্জার নীচে
ছিলে তো কঙ্কাল এক, মাড়ির বীভৎসতা নিয়ে
দাঁতাল ভয়ের কেউ।
তুমি তো সামান্য নারী, কেবল কবি পারে ফোটাতে সুন্দর।