বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী ১১৭তম লেখক হিসেবে লুইস গ্লিকের নাম ঘোষণা করে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি।
অ্যাকাডেমির নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স অলসন বলেন, গ্লিকের কাব্য ভাষা অকপট, আপসহীন, সেখানে আছে কৌতুক, আবার কটাক্ষের দংশনও।
৭৭ বছর বয়সী লুইস গ্লিক হলেন নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে ষোড়শ নারী, যিনি সাহিত্যের জন্য এ সম্মাননা পাচ্ছেন। ১৯৯৩ সালে টনি মরিসনের পর সাহিত্যে নোবেল পাওয়া প্রথম আমেরিকান নারী।
১৯৪৩ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম নেওয়া এ কবি থাকেন ম্যাচুসেটসের কেমব্রিজ শহরে। জীবিকার জন্য তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন।
লুইস গ্লিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ফার্স্টবর্ন’ প্রকশিত হয় ১৯৬৮ সালে। আমেরিকান সমকালীন সাহিত্যের শীর্ষস্থানীয় কবিদের মধ্যে আসন করে নিতে খুব বেশি সময় নেননি তিনি।
১৯৯৩ সালে তিনি জিতে নেন পুলিৎজার পুরস্কার; ২০১৪ সালে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড পান এই কবি।
তার কবিতা নিয়ে এ পর্যন্ত ১২টি কাব্যগ্রন্থ এবং বেশ কিছু প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়েছে। সেসব বইয়ের কাব্যভাষা যেন সর্বক্ষণ নিজেকে প্রাঞ্জল করতে মরিয়া।
লুইস গ্লিকের কবিতা বিশ্বের কেন্দ্রে রয়েছে তার শৈশব আর পরিবার, বাবা-মা আর ভাইবোনের সঙ্গে বন্ধনের গল্প।
তাই বলে গ্লিকের কবিতাকে আত্মজৈবনিক ছাঁচের মধ্যে আটকে ফেলা যাবে না, সেসব পঙক্তিমালা আসলে সার্বজনীনতারই অন্বেষণ। আর সেই অন্বেষণ পর্বে তিনি প্রেরণ নেন মিথ থেকে, চিরায়ত মোটিফ থেকে। যার নমুনা ছড়ানো তার বেশিরভাগ কাব্যগ্রন্থের ছত্রে ছত্রে
দ্য ভয়েস অব ডিডো, পার্সিফোনি, ইউরিডাইস, কিংবা দ্য অ্যাবানডানড, দ্য পানিশড, দ্য বিট্রেইড- এর সবই হল কবির সেই আত্মরূপের মুখোশ, যে রূপ সদাই বদলে যাচ্ছে, ব্যক্তি সত্তা হয়ে যাচ্ছে সার্বজনীন।
১৯৮৫ সালে কাব্য সংকলন দ্য ট্রায়াম্ফ অব একিলিস এবং ১৯৯০ সালে আরারাত প্রকাশিত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে গ্লিকের পাঠক বাড়তে থাকে। আরারাতে তার কাব্য ভাষার ভঙ্গিতে তিনটি বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে- পারিবারিক জীবন, নিরাভরণ বৌদ্ধিক বিভা আর কবিতার জাল বুননে সূক্ষ্ম কারুকাজ।
গ্লিক নিজেও স্বীকার করেছেন, ওই কবিতাগুলোর মধ্য দিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছেন, সাধারণ ভাষাকেও কী করে কাব্যিক করে তোলা যায়।
সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলছে, গ্লিকের কবিতায় সরল সুরের সেইসব কূটাভাস পাঠককে চমকে দেয়। পরিবারের চেনা মানুষগুলোর আন্তঃসম্পর্কে চোরা বেদনার এতটা চাঁছাছোলা চিত্রায়ন রীতিমত ধাক্কা দেয়। সেখানে কোনো কাব্যিক অলঙ্কার থাকে না, সে কবিতা অকপট, যেখানে কোনো আপস চলে না।
গ্লিক যখন তার প্রবন্ধে এলিয়টের জরুরি স্বরভঙ্গি নিয়ে কথা বলেন, কিটসের লেখায় ‘নিজেকে পড়ার’ শিল্পের কথা বলেন, তাতে যেন তার নিজের কবিতারই এক ভিন্ন পাঠ পাওয়া যায়। কিন্তু নিজের ভেতরে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের যে লড়াই আর যে অসহায়ত্ব কবি ধারণ করেন, তাতে যেন অনেক বেশি মিল পাওয়া যায় এমিলি ডিকিনসনের সঙ্গে।
সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাদের বিবৃতিতে লিখেছে, কেবল যাপিত জীবনের উত্থান-পতন আর নৈরাজ্যই গ্লিকের কবিতার আধার নয়, তিনি আমূল বদলে যাওয়ার, পুনর্জন্মের কবি।
বৃহস্পতিবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের জন্য লুইস গ্লিকের নাম ঘোষণা করার আগে তার সঙ্গে যোগযোগ করেছিল রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। তার জন্য সেই খবর ছিল ‘বিস্ময়কর’, তবে অবশ্যই তা ‘আনন্দের’।
এমনিতে প্রতি বছর স্টকহোমে অনুষ্ঠান করে নোবেল পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। সেখানে তারা বক্তৃতাও দেন।
তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে রাজকীয় সেই আয়োজন থাকছে না। তার বদলে নোবেলজয়ীরা নিজের দেশে বসে ওয়েবিনারে অংশ নেবেন নোবেল পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে। আগামী বছরের পুরস্কার বিতরণীতে তাদের স্টকহোমে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
যৌন কেলেঙ্কারির জেরে ২০১৮ সালে বিরতি দিয়ে রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি গত বছর দুইবারের নোবেলজয়ীর নাম ঘোষেণা করে। পোলিশ লেখক ওলগা টোকারচুক ও অস্ট্রিয়ার পেটার হান্টক্যর সেই পুরস্কার পান।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ১২ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।