'চিন্ময়-দর্পণে' শঙ্খ ঘোষ ও সত্যের চর্যা

চারিদিকে তো পুরস্কার বা সম্মান প্রত্যাশীর ভিড়ই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অতএব, 'বাংলার বিবেক' শঙ্খ ঘোষের জন্য বিলাপ করার আগে আমাদের যথেষ্ট 'আত্মদর্শন' করতে হবে!

পাভেল আখতারপাভেল আখতার
Published : 26 Feb 2024, 05:57 PM
Updated : 26 Feb 2024, 05:57 PM

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের পর সম্ভবত শঙ্খ ঘোষই একমাত্র কবি, যাঁর কবিতার পংক্তি প্রায় প্রবাদসম হয়ে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়। কবি যে নিছক 'নিজের ভিতরেই' বাস করেন না, তারও যে একটি প্রখর সামাজিক সত্তা আছে, সমাজের সঙ্গে যার নিবিড় যোগসূত্রতা জরুরি, এই সত্য শঙ্খ ঘোষ তাঁর যাপিত জীবনে প্রমাণ করেছেন। এ ব্যাপারে আরেক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত 'পদাতিক কবি' সুভাষ মুখোপাধ্যায়। শঙ্খ ঘোষ কবির 'সামাজিক সত্তা'-কে কবিতায় ও যাপনে মূর্ত করে তুলতে পেরেছিলেন। একজন কবি বৃহত্তর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীব নন। সমাজের মানুষের সঙ্গে একজন কবির নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক থাকা বাঞ্ছনীয়। কবিতা হোক, অথবা গদ্য, সমূহ লেখালেখির মূল কথাটি বহু প্রতিষ্ঠিত লেখকও আজ বুঝতে ব্যর্থ। সত্যকে উচ্চকিত করা, সত্যের অনুরণন, মানুষ ও সমাজকে সংবেদনশীল অন্তর-উৎসারিত গভীর কল্যাণকামনায় পথ বা পথের দিশা দেখানোই 'লেখালেখির' মূল উদ্দেশ্য। এই 'দুর্দিনে' বলা যায়, এক অপার্থিব 'শুদ্ধতা' ছিল শঙ্খ ঘোষের দ্যুতিময় ভূষণ, যা অন্তিমেও ছিল অক্ষত, অমলিন! তিনি যে বাংলার এক জাগ্রত 'বিবেকী কণ্ঠ' ছিলেন অভিভাবকের মমত্বে যার ধ্রুপদী নির্মাণ, সেখান থেকে নির্গত 'আলো'টিও সেজন্যেই ছিল অপরূপ ও শুদ্ধ। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, তাঁর জীবনবোধ ও জীবনচর্যা এবং সমগ্র সৃষ্টিশীল ধ্রুপদী কবিতার জগৎ--সবকিছু থেকেই বহু যোজন দূরে অবস্থান আজকের সমাজবিচ্যুত, সমাজের আর্তনাদে অ-কম্পিত অনেক কবির, যাঁদের অবস্থান মাটিতে নয়, আকাশে! আসলে মূল সমস্যার ভূত লুকিয়ে আছে বৃহত্তর ও সজীব 'আমরা'র সত্য অনুধাবনে। যতক্ষণ পর্যন্ত 'আমরা'র সঙ্গে 'আমি'-কে সংযুক্ত করতে পারা না যাচ্ছে ততক্ষণ 'সত্য উচ্চারণ' যে কবিদের আরাধ্য বস্তু হবে না, কেবল 'অসামাজিক আমি'র কর্কশ উদযাপনই হতে থাকবে তা আমরা নিদারুণ বাস্তবেই দেখতে পাচ্ছি!

অপরূপ প্রকৃতি আদিকাল থেকেই আমাদের চোখের সামনে অপার রূপসৌন্দর্যের উপচার নিয়ে বিদ্যমান ছিল। চোখের সামনে শুধু নয়, চেতনায়, বোধে, অনুভবে ও মননে। এখন রূঢ়, রুক্ষ বাস্তব ভীষণ কঠিন ও কঠোর হয়েছে। প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধ হওয়ার অবসর, তাকে নিয়ে রোমান্টিকতায়, গাঢ় প্রেম-অনুরাগে বিভোর হওয়া এসবের সময় মানুষের নেই! আটপৌরে সাধারণ মানুষের এই চিন্তা-প্রক্রিয়ার মধ্যে ফাঁক ও দীনতা কোথায় সেটা ঠিকঠাক বুঝতে না-পারলে চিরকালের এক শ্রেষ্ঠ প্রকৃতিপ্রেমিক, রোমান্টিক কবিকে সম্পূর্ণরূপে বোঝাও সম্ভব নয়। তিনি তাঁর সময়েও বড্ড একাই ছিলেন। তাঁর মতো মানুষদের সেটাই বোধহয় অনিবার্য ললাটলিখন। তিনি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ। 'ওয়ার্ডসওয়ার্থ : নগ্ন, নির্জন পথচারী' প্রবন্ধে ৯৭ থেকে ১০৫ পৃষ্ঠায় সম্পূর্ণ প্রবন্ধটির এক জায়গায় চিন্ময় গুহ লিখছেন : ''...শুরুতেই তিনি এই নতুন কবিতাকে 'পরীক্ষামূলক' বলে দাবি করেছেন। সেখানে তিনি নম্র অথচ স্পষ্ট ভাষায় লিখেছিলেন, কবি সাধারণ মানুষের জীবনের কথা সাধারণ মানুষের দৈনন্দিনের ভাষায় লিখবে। কবিতা যে শুধু কবির জন্য নয়, কবিও যে মানুষের জন্য, ইংরেজিতে এই ঘোষণার সম্মান ঐতিহাসিকভাবে ওয়ার্ডসওয়ার্থের প্রাপ্য। সাধারণ মানুষ থেকে কবির বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে এই রায়। কোলরিজ পরে এ-বিষয়ে ওয়ার্ডসওয়ার্থের সাফল্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও এই মূলনীতির সত্যতাকে অস্বীকার করবে কে?" ( 'বিন্দু থেকে বিন্দুতে'। পৃষ্ঠা : ১০২ ) । আরেকটি উজ্জ্বল বাক্য উদ্ধৃত করি। "আত্মোপলব্ধি ও আত্মজিজ্ঞাসা তাঁকে করেছে সকলের চেয়ে আলাদা। তাঁর কবিতার গোধূলি শুধু রং-রেখা নয়, সেখানে লেগে থাকে মরালশুভ্র এক দার্শনিক আভা।" (পৃষ্ঠা : ৯৭) এই প্রজ্ঞাদীপিত, স্বাদু প্রবন্ধটি বিশেষত কবিদের জন্য অবশ্য পাঠ্য ; যা পড়লে হয়তো তাঁদের অনুসৃত যান্ত্রিক, সমাজবৃন্তচ্যুত কাব্যচর্চার অভিমুখ বদলে যেতে পারে, যা প্রত্যাশিত।

বস্তুত, খণ্ডিত, ভাসাভাসা উপলব্ধি দিয়ে বিরাট কিছু লেখা হচ্ছে এখন এই ধারণার যুগ! এই ফাঁকিসর্বস্ব চালিয়াতির জন্যেই হয়তো বুদ্ধদেব বসু, আবু সয়ীদ আইয়ুব, শঙ্খ ঘোষের পর উল্লেখযোগ্য সাহিত্য বা কাব্য আলোচক বা ভাষ্যকার আমরা আর তেমন একটা পাইনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্যই বটে! উপরিউক্ত অগ্রজদের যোগ্য উত্তরাধিকার বহন করে বর্তমান সময়ে বিরাজ করছেন অধ্যাপক চিন্ময় গুহ। সাহিত্য বা কাব্য আলোচককে হতে হয় ডুবুরির মতো ; অতল সমুদ্রে যে নামে জলকে ভালবেসে। আর, তুলে আনে মহার্ঘ সব মণিমুক্তো। অধ্যাপক চিন্ময় গুহ'র কবিতায়িত গদ্যে লিখিত ভাষ্য যেন 'মহাসিন্ধুর ওপার থেকে কী সঙ্গীত' ভাসিয়ে নিয়ে আসে! তিনি 'সত্য'-কে চিনিয়ে দেন--কবির সত্য, সব লেখকের সত্য, শিল্পীর সত্য। 'সত্য বলা ছাড়া কবির আর কোনও কাজ নেই'--এমন কথাই তো বলেছিলেন শঙ্খ ঘোষও। 

গড় বাঙালি যে বহমান ঐতিহ্যের উপাসক তার মূলে আছে চারটি বস্তু--আলস্য, ফাঁকি, ভীরুতা ও কপটতায় আসক্তি। সন্দীপকে বাদ দিয়ে নিখিলেশকে রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক 'গরিমা' দেওয়ার বৈধতা নিয়ে কূট তর্ক, সত্যজিৎ রায়ের 'চারুলতা'-কে 'ওইভাবে' নির্মাণ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা ইত্যাদি বহু 'অসহ্য উদাহরণ' আছে! চিন্ময় গুহ বরাবর ওই চারটি বস্তু থেকে বহু দূরে অবস্থান করেছেন! তাই তিনিও যে স্বয়ং কথিত ওই 'অসহ্য উদাহরণ'-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই! কিন্তু, 'সত্য উচ্চারক'-কে তো অত কিছু ভাবলে চলে না। চিন্ময় গুহ-ও ভাবেন না। তাঁর শাণিত কলম তাই ঝলসে ওঠে বিদ্যুৎ-এর মতো বারবার! 'এই সময়' দৈনিকে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে তাঁর অপার সত্যদীপিত বলিষ্ঠ ভাষ্য যদি আমাদের সন্দীপকে নয়, নিখিলেশকে সম্যক বুঝতে সাহায্য করে তাহলে সব 'বিপদ' কেটে যেতে বাধ্য। "ধর্ম ও মর্ম নিয়ে খেলা করা যায় না"--নিবন্ধটির মূল নির্যাস ধৃত চিন্ময় গুহ'র এই অমোঘ বাক্য-নির্মাণে!

একজন আদর্শ শিক্ষক শুধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নয়, তাঁর সত্তাকে সমাজের সঙ্গেও গ্রথিত করেন গভীরভাবে। প্রকৃতপক্ষে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর প্রতি তার মমত্বের অনুশীলন হয়, যে মমত্ব তিনি পরে বাইরের সমাজের বৃহত্তর জনসমাজের প্রতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হন। কবি শঙ্খ ঘোষ অত্যন্ত ছাত্রপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন। সেই তাঁকেই আমরা বারবার দেখেছি সামাজিক সংকটে, মানবতার লাঞ্ছনায় ঝলসে উঠতে, তাঁর স্বকীয় শৈলীতে। যে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে ভালবাসেন না, তার অন্তরাত্মার জাগরণ ঘটাতে সচেষ্ট থাকেন না, বৃহৎ সমাজের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে তোলার প্রেরণা সঞ্চার করেন না ; সেই শিক্ষক বাইরের সমাজে যাবতীয় অন্যায়ে কীভাবে মুখর হবেন, মানুষের ব্যথায় ব্যথিত হবেন, গোষ্ঠীগত বা প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রিয়তা সত্ত্বেও 'সত্য' উচ্চারণে নির্ভীক হবেন? তিনি তো মমত্বের অনুশীলনেই ফাঁকি দিয়েছেন! তিনি তো শ্রেণিকক্ষেই 'নির্জীব' ছিলেন! যে আদর্শ শিক্ষকের স্বরূপ ও মহিমা বর্ণিত হ'ল তার নিরিখে শঙ্খ ঘোষের যোগ্যতম উত্তরসূরি হলেন চিন্ময় গুহ!

শঙ্খ ঘোষ-এর মৃত্যুর পর তাঁর স্মরণে আয়োজিত হয়েছিল একটি মনোজ্ঞ 'শঙ্খ-তর্পণ'। আয়োজন করেছিল : 'Intercultural Poetry and Performance Library'. চিন্ময় গুহ তাঁর অসামান্য বিশ্লেষণে শঙ্খ ঘোষ সম্পর্কে যা বলেছিলেন তার নির্যাস সংক্ষেপে এভাবে বলতে পারা যায়---

শব্দ থেকে নৈঃশব্দ্যের দিকে, শব্দ-উত্তরের দিকে যাত্রা, সত্যের প্রবাহকে মিশিয়ে দেওয়া, কবির শব্দ যেখানে শেষ হয় আলোর সেখান থেকে শুরু--এই স্বতন্ত্র চর্যা শঙ্খ ঘোষকে আলাদা করে চেনায়। আত্মখনন, আত্মতা, সেখান থেকে 'সমগ্র'-কে স্পর্শ করা--এই ছিল তাঁর বিশেষত্ব। মুখরতা নয়, নিভৃতি। দিনে দিনে 'কবির নিভৃতি' কিংবা 'নিভৃতচারী কবি' শব্দবন্ধগুলি বোধহয় লুপ্ত হয়ে যাবে এই আশঙ্কা হয়! কবি ভিড়ে মিশতে চান না, বরং ভিড় থেকে পালাতে পছন্দ করেন। কিন্তু, এখন চলছে সবই উল্টো পুরাণ। কবিরা 'মঞ্চ' পছন্দ করছেন। যে-কোনও মঞ্চ। কবিরা 'বিজ্ঞাপন' ভালবাসছেন। প্রবল ও সোচ্চার সেই 'বিজ্ঞাপন'। ভিড়ে, শব্দের জঙ্গলে, আলোর বন্যায় তাঁরা নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন। অথচ, সেই পাওয়া আসলে নিজেকে হারিয়ে ফেলা! গভীর নির্জনতা কবিদের যেন আর প্রিয় অনুষঙ্গ নয়। শঙ্খ ঘোষ অদৃশ্য আজকের কবিদের যাপনে, চর্যায়! কালের ধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান ও অনাগত ভবিষ্যত যেন বারবারই বলছে--কবিতার জন্য 'সুখের সময়' নয়! মানুষের সঙ্গপ্রিয়, কিন্তু সৃষ্টির ভুবনে নিভৃতচারী, 'নিঃশব্দের তর্জনী'র প্রতি আমৃত্যু অভিনিবিষ্ট মিতবাক কবি শঙ্খ ঘোষ একথা কি তবে একটি দুর্বোধ্য কুহক হয়ে থেকে গেল?

'নীরবতার আলো : শঙ্খ ঘোষের কবিতাদর্শন ও একটি অনুবাদ' শীর্ষক একটি গভীর চিন্তা-উদ্দীপক প্রবন্ধে চিন্ময় গুহ লিখছেন : "চারপাশের 'কলরোলময়, বার্তাবিহীন, অভ্যাসতাড়িত' শব্দস্রোতের মাঝখানে এই অর্ধ-অনুমিত, সাংকেতিক, অর্ধ-উপলব্ধ ইঙ্গিতময়তাকেই তো কবিতার প্রাণ বলে বুঝতে চেয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, যা মিলিয়ে দেবে সময় ও মহাসময়ের সংযোগবিন্দুকে ( "The point of intersection of the timeless/With time")। তাঁর মতে, এভাবেই হতে পারে শব্দ ও নৈঃশব্দ্যের নতুন সৃষ্টি।" বস্তুত, অনিঃশেষ ও অনিয়ন্ত্রিত শব্দের ভিতর অহর্নিশ ক্রীড়ারত আমরা ভুলে যাই অথবা ভাবতেই চাই না যে, নৈঃশব্দ্যের মধ্যে কী গভীর, স্নিগ্ধ এক 'আলো' অন্তর্লীন হয়ে আছে। ধ্বনিহীনতার মধ্যে আছে অব্যক্ত ধ্বনি অথবা সঙ্গীতময়তা। নীরবতা বা নৈঃশব্দ্যকে ছুঁতে পারার অর্থ জীবনের অনেক গূঢ়-গহন সত্যকেই স্পর্শ করতে পারা। চারপাশের মুখর শব্দের জগৎ থেকে তাই মাঝেমধ্যে 'ছুটি' নেওয়ারও প্রয়োজন আছে। এই শৈলীর মধ্যে আবর্তিত হওয়া সত্ত্বেও কবি শঙ্খ ঘোষ কিন্তু সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছেন না, বরং নিবিড়ভাবে তার সঙ্গেই 'লগ্ন' হয়ে থাকছেন। এই 'শিল্প' খুব কম কবিই তাঁদের যাপিত জীবনে সম্ভব করে তুলতে পেরেছেন। আসলে ওই নৈঃশব্দ্য, নিভৃতি, আত্মতার সমবায়িক শৈলীর ভিতর থেকে যে 'আলো' বেরিয়ে আসে তা হ'ল--'নিজেকে প্রস্তুত করা'। খুব জরুরি একটি জিনিস। 'নিজের সঙ্গে কথা বলা'--কবির আত্মশক্তি অর্জনের উপাদান। আমরা দেখতে পাই, তিনি ওই গভীর আত্মতার অনুশীলনপ্রবাহ থেকেই প্রখর সামাজিকতার দিকে যেতে পেরেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাছে ছিলেন 'ধ্রুবতারা'র মতো। তাঁর প্রভাব কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনে অনস্বীকার্য। প্রসঙ্গত, একজন প্রখ্যাত রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ হিসেবে শঙ্খ ঘোষের স্বাতন্ত্র্য চিন্ময় গুহ চিহ্নিত করেছেন এভাবে যে, তিনি আসলে প্রথাগত অর্থে রবীন্দ্রনাথের 'সমালোচক' ছিলেন না, ছিলেন রবীন্দ্রনাথের 'ভাষ্যকার'।

শঙ্খ ঘোষের মৃত্যুদিন ঘনিয়ে এলে তাঁর শূন্যতায় দুঃখ পাওয়ার চেয়ে লজ্জা পাওয়া বোধহয় বেশি উচিত। কারণ, আরেকটি শঙ্খ ঘোষ কেন বাংলার মাটিতে দেখা গেল না সেই প্রশ্ন অত্যন্ত যৌক্তিক। একই কথা অন্নদাশঙ্কর রায়কে মনে রেখেও বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ ও সার্ত্র এই দুই বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব থেকেও কি আমরা 'শিক্ষা' নিতে পেরেছি? জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনায় রবীন্দ্রনাথ নাইটহুড ত্যাগ করেছিলেন। সার্ত্র নোবেল পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এই 'বিবেক' যদি না থাকে তাহলে 'বিবেকের জয়গান' গাওয়ার অধিকারও কি জন্মায়? চারিদিকে তো পুরস্কার বা সম্মান প্রত্যাশীর ভিড়ই বেশি দেখতে পাওয়া যায়। অতএব, 'বাংলার বিবেক' শঙ্খ ঘোষের জন্য বিলাপ করার আগে আমাদের যথেষ্ট 'আত্মদর্শন' করতে হবে!