তারা কারা, যারা এই তীব্র শীতে লেপের তলায় শুয়ে চায় খেতে আঠা আঠা কর্নস্যুপ!
Published : 05 Jan 2024, 08:16 PM
উন্মাদের সাথে আলাপ
বলে দাও যা কিছু তুমি রেখেছো পাথরচাপা
বুকের ভেতরে রেখেছো যা কিছু কাঁপা কাঁপা
হাতে-নখে-দাঁতে— গোপন মর্মরে সব আজ
বলো, আমাকেই ভেবে নিজের বুকের ভাঁজ
আর যতো নীলিম-লালিমা কাজ রেখে সব একা
রেখে যতো ভ্রুকুঞ্চন, মুছে কপালের ভাজ- রেখা
এসো এই শীতের প্রান্তরে, নিশ্বাসের উষ্ণতাগুলি
ভাগাভাগি করে দেই খুলে ঘামের নহর, উমম বুলি-
গুলি ক্রমশ অস্ফূট হবে, কড়াইয়ে গলবে মোম
ধ্বনিরা হারাবে চিরন্তন চেহারা তাদের আর রোম-
কূপগুলি যতিচিহ্নের মতো হবে ঠায় সৈন্যের দল
পোষাকসমগ্র বটেই, একে একে খুলে সমস্ত আগল
শরীরভেতরের— বেরিয়ে আসবে তুমি, বলবে আমার নাম
উন্মাদিনী, রে নাছোড় কর্— জিভখসা ভোরকে প্রণাম।
শীতস্নান
যে পথ রথ-হীন চলে গেছে সৈকতের দিকে অমিত
সম্ভাবনাময় নোনাস্বাদের জিহ্বা-ট্রাকে চড়ে
সেই রাস্তাজুড়ে পাঁচশতো কালো ঘোড়া নামিয়ে এনেছে শীত
ধূসর রঙের শীত বিঁধে যাচ্ছে তোমার পাঁজরে, হাড়ে
ভেঙে দিচ্ছে তোমার একাকী স্নানের সাহস
এই শীতে, এই মরণ দিনের শীতে,
ঠাণ্ডা একাকিনী, ওগো দূরবর্তিনী,
চলো সকলের মুখ স্ক্যান করে সরলতা খুঁজে আনি
শীতের হাওয়াদের তাড়া করে ফের সরলতামাখা মায়া
বসন্তে বিভোর করে তোমার জানালা ভরে দেবে
উষ্ণহাসিফুলে...
উড়ন্ত রোদের ছায়ায়
বাঙ্ময় অবয়ব
আমাকে জড়িয়ে রাখে মৃতের নিঃশ্বাস, তোমার জীবন্ত হেমরঙা লাশ আর আশপাশে, যারা যারা জড়িয়ে রেখেছে, কিংবা ছিলো কোনকালে কেনো যে তারাই হাঁটছে আলোতে দীপ্যমান! ভ্রম ও ভাবনার দীর্ঘ ওপারে তাঁরা, আঁধারে আড়ালে খেলে তাস অথচ অন্ধকারের আগে শেষ কালো মেঘে দেখেছি তৃষ্ণা মেঘসংকেত—
অমীমাংসিত সে অন্বেষণে পৃথিবীর করুণা ও কৃপা চায় জন্মান্ধ দু’চোখ; প্রস্তরভাঙা সবুজ কালো তর্ক ও মদিরা ছাপিয়ে, ছাপিয়ে স্টেশনের চা-ঘ্রাণ নিয়তিকে বলে যায় বহুদূর সমুদ্রপারের হাওয়া, ‘বলো আছি হে অশোক’ নিজস্ব ক্যানভাসে দ্যাখো আপন অস্তিত্ব আঁকে মাটিপৃথিবীর উজান ভাটির টান...
যেই দেশে যে শহরে ফেরারী আসামী আমি, সেই দেশে মৃতের নিঃশ্বাস ছাড়া, শীতমাত্রঋতুছাড়া, তোমার হেমবর্ণ লাশ ও সালঙ্কারা শীৎকার, প্রসববেদনা ছাড়া, জেনো কোনো বাস্তবতা এক্সিস্ট করে না...
শীতঋতুর প্রার্থণা
তারা কারা, যারা এই তীব্র শীতে লেপের তলায় শুয়ে চায় খেতে আঠা আঠা কর্নস্যুপ!
ঠাণ্ডা পায়ের পাতা কনকনে হাত, ঘষে দিতে চায় পুরুষচুল্লীর গায়ে!
তারা কারা, এই অচেনা বাতাসে আনে
লু-হাওয়ার স্মৃতিভরা মদ, জানে সমস্ত উষ্ণতা আদতে চুল্লী নয়, উদরজাত
শীত শীত, তুমি মোর গতজনমের ভাই,
আরো জোর নেমে এসো হাইওয়ে ধরে,
অভিমানী বালিকার ক্রোড়ে আর তার শীতার্ত মজ্জ্বায় হাড়ে
যেনো সে দৌঁড়ে ছুটে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে, অকস্মাৎ ওপরে আমার।
শীতরাত ফুরাবে না
এমনই নিদঘুমে
কাটিয়ে দেয়া যদি
যায় এ শীতরাত
অপার আন্ধার
না দেয় এসে হানা
আমার ও তোমার
যুগলশয়নে
কেবল শ্বাসাঘাত
তীব্র বুকে করে
কাটিয়ে দেয়া যদি
যায় এ শীতরাত
ভোর হবে ধরে
কাটিয়ে দেয়া যদি
যায় এ নিশারাত
তোমার গণ্ডুষ
ভরিয়া দেবো মুঠো
বকুল বিছানো
ভোরের শিউলি
আকাশে পতপত
উড়বে ঝরাপাতা
বলবে তোমাকে
এ ভোর পতাকা
তীব্র করে ধরো
আমাকে আরো আরো
আমাকে বলো তুমি,
হয়না কোন ঘুমই
আমার বুক ছাড়া,
আমার উষ্ণতা
তোমাকে ঘুম দেয়
আমার যত ব্যথা
তোমাকে ধরে রাখে
আমারই বৃত্তে,
নৃত্যমঞ্জরী
বৃত্তে ঘুরে ঘুরে
জপে চলে নাম
একে অপরের
এভাবে নিদঘুমে
অবাক করে দিয়ে
তাদেরো আসে শীত,
আবার চলে যায়
এমনই নিদঘুমে
কাটিয়ে দেয় তারা
যদি এ শীতরাত
দু’মনে দুজনে
ভাবলো বলবে
‘বৃত্ত ভেঙোনা’
বৃত্ত ভেঙোনা—
তোমাকে বুকে করে
ফেলবো লিখে ঠিক,
এমনই কবিতা
কবিতা তোমাকে,
মরণবিছানায়ও
তীব্র জাগিয়ে
পাঠাবে ঠিকই এই
অসম বৃত্তে…
শীতে, সুপর্ণাকে
(ভাস্কর চক্রবর্তীকে মনে রেখে)
শীতকাল এসেছে সুপর্ণা, বুকের ভেতরে এসো
চিরউষ্ণতা ও ছদ্ম-অমরতাসহ অপেক্ষাতুর হৃদয়
পেশল আবরণদেহে সে ঝেটিয়ে তাড়াবে যাবতীয় মরা ঘাসও
মায়াখনিজের লোভে সরে যাবে ঠিক ঠাণ্ডা যত অসময়
তুমি একা চুপে, বুকের ভেতরে এসো...
জোর করে ঢুকিয়ে দেয়া ব্যাঙের রক্ত নয়,
সুপর্ণা এখন দেহে, জাগরপ্রতিভার জলকেলি
মানুষের মানবিক রক্তমাংসশ্বাসে এই আহ্বান
জানি পলকেই তাকিয়ে বুঝেছো
হাজারজীবনের চোরাচোখ ইশারা ও বুলি
বালুঘড়িদের যত ইতিহাস রবে না এমনকি ধূলিপরিমাণ
উড্ডীন ঢেউ হয়ে, সাড়া দিলে তুমি
শীতের পেলব অন্ধকারে, উৎকর্ণ রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে
সমস্ত জগৎ মহাকালে শীতমাত্ররাত, ঘুমহারা বোকা আমাদের সাথে জেগে রবে
সুপর্ণা তুমি ও একা ঊহ্য আমি, শীত ও ভাস্করের স্মৃতি লুটে ও ছিনিয়ে
দুজনে করবো শুরু একটা মরণ শীতের ভোর দেহিপদপল্লবমুদাররমে
শীতকাল এসেছে সুপর্ণা, লেপের তলায় এসো...
কবির পৃথিবীজুড়ে শীতকাল এসেছে সুপর্ণা
লেপের আদর ওমে মায়াখনিজ তুলে আনবার দিন-
এসো সুপর্ণা, তোমার জন্য অপেক্ষা করছে উষ্ণ কাঁথার কবর...