চীনের মোট ১৪৪ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এই হার মোট জনসংখ্যার এক থেকে দুই শতাংশ । চীনের উত্তর-পশ্চিমাংশে জিনজিয়াং প্রদেশের অবস্থান। যেখানে প্রায় দেড় কোটি মুসলমানের বাস। জিনজিয়াংয়ে বসবাসরত মুসলমানরা উইঘুর নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় সাহাবায়ে একরামের যুগে চীনে ইসলামের প্রসার ঘটে। ইসলাম বিকাশের শুরুর দিকে হজরত আবি ওয়াক্কাস রাঃ-এর নেতৃত্বে একটি দল ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে চীন পৌঁছায়। সেসময় থেকে চীনে ইসলামের যাত্রা শুরু ও মুসলমানদের বসবাস। উইঘুর মুসলমানরা মূলত পূর্ব তুর্কিস্থানের অধিবাসী। বর্তমানে উজবেকিস্থান, কাজাখাস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া, তুরস্ক, রাশিয়া ও ইউক্রেনে উইঘুর সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোকজন রয়েছে।
চীনে বসবাসরত উইঘুর মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধরে সেখনাকার সরকারের নির্যাতনের শিকার। জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ নারী পুরুষকে অনেকগুলো বন্দী শিবিরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। চীন সরকার এই বন্দী শিবিরের নাম দিয়েছে ‘চরিত্র সংশোধনাগার’। চরিত্র সংশোধনাগার নাম দেয়া হলেও এখানে চলে অঘোষিত নির্যাতন। তাদের ঠিকমতো ঘুমাতে না দেয়া, খাবার না দেয়া, ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পেটানো, শরীরে শেকল বেঁধে রাখাসহ আরো নানাবিধ উপায়ে নির্যাতনে করা হয় তাদের। বঞ্চিত করা হচ্ছে ধর্ম চর্চা থেকে, সন্তান উৎপাদন থেকে, নারীরা শিকার হচ্ছে গণধর্ষণের। জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা উইঘুররা জানিয়েছেন সেখানকার এই নির্যাতনের কথা।
দীর্ঘদিন ধরে সেখানে বসবাসরত মুসলমানরা এভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চীন সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রনের কারণে সেখানে যেতে পারছে না কোন আন্তর্জাতিক মিডিয়া কিংবা সাহায্য সংস্থা।
২০২১ সালে ভারতীয় বংশোদ্ভূত অ্যামেরিকান সাংবাদিক মেঘা রাজাগোপালান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘বাজফিড নিউজে’ উইঘুরদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেখানে উঠে আসে বিভিন্ন নির্যাতন ও নির্মমতার কথা। চলতি বছর মে মাসে বিবিসি’র হাতে আসে চীন সরকারের কম্পিউটার হ্যাক করে সংগ্রহ করা বিপুল পরিমাণ নথি। যা লক্ষ্য করলে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বন্দী নির্যাতনের নানা তথ্যচিত্র ও প্রমাণাদি। বিশেষ করে ধর্মীয় শিক্ষাগুরু কিংবা সৃজনশীল মানসিকতার কেউ হলে তার উপর নিয়ন্ত্রন ও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় আরো অধিক। দেয়া হয় কঠোর শাস্তি, পাঠানো হয় জেলে।
তবু থেমে থাকে না কবির কবিতা, লেখকের কলম কিংবা শিল্পীর গান। প্রতিবাদের ভাষা হয়ে শব্দেরা ধ্বনিত হয় মানবতার কাছে, বিবেকের মঞ্চে। প্রেম, বিষাদ আর সংগ্রামমুখর জীবনের কার্নিশ ছুঁয়ে একটু ফুরসত পেলেই কলমের ডগায় উঠে আসে মনের গহীনে জমে থাকা দুঃখ বেদনার অব্যক্ত কথাগুলি। উইঘুর কবিদের তিনটি কবিতা পাঠকদের জন্য বাংলায় অনূদিত হলো। উইঘুর ভাষা থেকে কবিতাগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন জশুয়া এল ফ্রিম্যান।
তোমাকেই ভালোবাসি
আবিদ আব্বাস নেসরিন
আমি আমার দেহের কোষের শপথ দিয়ে বলছি
আমি আমার সফেদ ঠোঁটের শপথ নিয়ে বলছি
আমি আমার অদৃশ্য আত্মার শপথ দিয়ে বলছি
আমি তুমিহীনা সূর্যোদয়ের শপথ করে বলছি-
তুমি প্রাচীর হলেও তোমাকে আমি ঠিক চিনে নিব
পাখির পালকের মতো তোমাকে অনুভব করব
যদি তুমি সাপ হয়েও পুনর্জন্ম নাও
তবু আমি তোমাকে ভালবাসবো।
ঝড়
ঘোজি মুহেম্মেদ মুহেম্মেদ
রক্তস্নাত প্রাচীন বইগুলো
যুদ্ধঘোড়ার পুচ্ছ টেনে নিয়ে যায় উপত্যকায়
এবং তাদের করুণ কান্নাকে
বলা হয় বাতাসের শব্দ।
ভূমি
সীমান্ত
যেন মাটির তৈরি নয়
কিন্তু টুকরো টুকরো একত্রিত-
বিচূর্ণ
বিক্ষিপ্ত
কোন অসম্পূর্ণ মানচিত্র।
তোমার জাগরণে আমি অন্ধকার পাঠিয়েছি
একমেতজান ওসমান
তুমিই সে যে কখনো বয়োঃপ্রাপ্ত হওনি
মুখোমুখি দাঁড়াওনি অজস্র বাসনার
এবং বাতাসে কালিপ্রতিম দূরত্বে
দিবাস্বপ্ন তোমার জীবন থেকে দূরে!
হে আমার পূর্বপুরুষগণ...
এবং তুমি যে আমার মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকবে!
ওহে ফুলেরা-
যারা রাতে প্রস্ফূটিত হও
কিন্তু তোমাদের কোন ফল হয় না!
ওহে তুমি কার মুখে
অতীত উজ্জ্বলতার জাল বুনে দাও!
তোমরা যারা দৃঢ়ভাবে দাঁড়াও
অনন্তকালে নিহিত লুকানো দরজার মতো!
তোমার পা যেন রক্তমাখা পাপোশ।
ঠিকানা না থাকলেও
তোমার পাঠানো চিঠিগুলো পেয়েছি
এবং তোমাকে খুঁজে পাওয়ার আশায়
তোমার জাগরণে আমি অন্ধকার পাঠিয়েছি।