Published : 12 Apr 2020, 09:39 PM
(মূল লেখাটি লিখেছেন এলিজাবেথ কোলবার্ট। নিবন্ধটি নিউ ইয়র্কার সাময়িকীর ৬ এপ্রিল, ২০২০ সংখ্যার মুদ্রিত সংস্করণে "দ্য স্প্রেড" শিরোনামে ছাপা হয়েছিল। এলিজাবেথ কোলবার্ট নিউ ইয়র্কার-এর স্টাফ রাইটার। এর আগে টাইমস পত্রিকার আলবেনি ব্যুরো চিফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। তাঁর গ্রন্থ দ্য সিক্সথ একস্টিংশান: অ্যান আনন্যাচারাল হিস্ট্রি ২০১৫ সালের পুলিৎজার পুরস্কারে ভূষিত হয়। তাঁর লেখা সিরিজ "দ্য ক্লাইমেট অভ ম্যান" লাভ করেছিল ২০০৬ সালের "ন্যাশনাল ম্যাগাজিন অ্যাওয়ার্ড।" এছাড়াও তিনি লাভ করেন "ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিজ কম্যুনিকেশন অ্যাওয়ার্ড", ২০১৭ সালে আমেরিকান অ্যাকাডেমি অভ আর্টস অ্যান্ড লেটারস থেকে "ব্লেক-ডড পুরস্কার" ও "হেইনজ অ্যাওয়ার্ড।" তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে দ্য প্রফেট অভ লাভ: অ্যান্ড আদার টেলস অভ পাওয়ার অ্যান্ড ডিসিট, ফিল্ড নোটস ফ্রম অ্যা ক্যাটাস্ট্রফি।)
প্রথম বৈশ্বিক মহামারী যেখানে শুরু হয়েছিল বলে প্রায়ই যা বলা হয়, সেটি ছিল উত্তর-পূর্ব মিশরের বর্তমান পোর্ট সাঈদের কাছের শহর পেলাসিয়াম, সময়টা ৫৪১ খ্রিস্টাব্দ। সেসময়ের ইতিহাসবিদ প্রকোপিয়াসের মতে মড়কটি পশ্চিমে আলেকজান্দ্রিয়া এবং পূর্বে প্যালেস্টাইনের দুদিকেই ছড়াচ্ছিল। সেখান থেকে এগোতে থাকে। তাঁর মনে হয় এটি যেন খুব বুঝেশুনেই এগোচ্ছিল- "পাছে পৃথিবীর কেনো অংশ ওটার কবল থেকে বেঁচে যায়।"
মহামারীর সর্বপ্রথম উপসর্গ হচ্ছে জ্বর। প্রকোপিয়াস লক্ষ করেছিলেন যে এটি এতই মৃদু যে প্রায়ই "কোনো ধরনের বিপদের আশঙ্কা হতো না।" কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আক্রান্তদের মধ্যে কুঁচকি বা বগলে মাংসপিণ্ডের মতো ব্যুবোনিক প্লেগের চিরায়ত লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে। এরকম অবস্থায় দুর্ভোগ ছিল মারাত্মক, কেউ কেউ অচেতন (কোমা) অবস্থায় চলে যেত, কারো মধ্যে দেখা যেত মারাত্মক প্রলাপবিকার। অনেকের হতো রক্তবমি। প্রকোপিয়াস উল্লেখ করেন, যারা আক্রান্তদের দেখাশোনা করতো তারা "সার্বক্ষণিক অবসাদের শিকার হচ্ছিল।" কেউ বলতে পারছিল না কে শেষ হয়ে যাবে আর কে যে সুস্থ হয়ে উঠবে।
৫৪২ সালে কনস্টান্টিনোপল আক্রান্ত হয় প্লেগে। সেসময় এটি ছিল সম্রাট জাস্টিনিয়ানের অধীনস্ত পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী। সাম্প্রতিক এক মূল্যায়নে জাস্টিনিয়ানকে বলা হয়েছে- "এযাবতকালের শ্রেষ্ঠতম রাষ্ট্রনায়কদের একজন।" আরেকজন ইতিহাসবিদের ভাষায় তার রাজত্বের প্রথম পর্বে "রোমান ইতিহাসে কার্যত অপ্রতিদ্বন্দ্বী কর্মব্যাকুল" সম্রাট হিসেবে প্রায় চল্লিশ বছর রাজত্ব করেছেন তিনি। মহামারীটা রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছার পনেরো বছর আগে জাস্টিনিয়ান লিপিবদ্ধ করেন রোমান আইন, পারসিকদের সাথে শান্তি স্থাপন করেন, ঢেলে সাজান পূর্ব সাম্রাজ্যের আর্থিক প্রশাসনকে এবং নির্মাণ করেন আয়া সোফিয়া।
যখন প্লেগ প্রবল হানা দেয়, সেটিকে সামাল দেওয়া বর্তায় জাস্টিনিয়ানের ওপর, প্রকোপিয়াসের ভাষায়, "সংকটের সংস্থান করার জন্য"। পরিত্যক্ত এবং দুস্থদের লাশ কবর দেওয়ার খরচ জোগানো হচ্ছিল সম্রাটের তহবিল থেকে। তারপরও মৃত্যুর হার এত বেশি ছিল যে পাল্লা দেওয়া যাচ্ছিল না। (প্রকোপিয়াসের ধারণা মৃতের সংখ্যা দৈনিক দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, যদিও কেউ জানে না এই সংখ্যা সঠিক ছিল কি না)। জাস্টিনিয়ানের সমসাময়িক ধর্মনেতা ও ইতিহাসবিদ জন অভ ইফেসাস (গ্রিস) লেখেন, হঠাৎ আক্রান্ত হতে পারে একারণে "শরীরে নিজের নাম লেখা ট্যাগ ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেত না।" শেষদিকে লাশগুলো শহরের শেষমাথায় রক্ষাপ্রাচীরের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হত।
সবল দুর্বল সবাইকেই আক্রমণ করেছিল প্লেগ। সৌভাগ্যবানদের মধ্যে জাস্টিনিয়ান বেঁচে গিয়েছিলেন। তবে তার রাজত্ব আর কখনোই এই মহামারীর ধকল থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে পারেনি। ৫৪২ সাল পর্যন্ত জাস্টিনিয়ানের সেনাপতিরা গথ (ইউরাপের নৃগোষ্ঠি), ভ্যান্ডাল এবং অন্যান্য বর্বরজাতির কাছ থেকে রোমান সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ পুনর্দখল করে নিয়েছিলেন। ৫৪২ খ্রিস্টাব্দের পর সম্রাটের পক্ষে সৈন্য সংগ্রহ এবং তাদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তার সেনাপতিরা যেসব অঞ্চলকে অবদমিত করে রেখেছিলেন, সেখানে বিদ্রোহ শুরু হয়। ৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ পৌঁছে যায় রোম পর্যন্ত এবং ৫৪৪ সালের মধ্যে সুদূর ব্রিটেন পর্যন্ত চলে যায় বলে প্রতিভাত হয়। ৫৫৮ সালে কনস্টান্টিনোপলে আবার প্লেগ হানা দেয়, তৃতীয়বার ৫৭৩ সালে এবং আবার ৫৮৬ সালে।
"জাস্টিনীয় প্লেগ" নামে পরিচিত এই রোগটি ৭৫০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত নির্মূল হয়নি। ততদিনে এসেছে এক নতুন বিশ্বব্যবস্থা। নতুন এক শক্তিশালী ধর্ম ইসলামের অভ্যুদয় ঘটেছে, এই ধর্মের অনুসারীরা আরব উপদ্বীপসহ একসময় যেটা জাস্টিনিয়ানের সাম্রাজ্য ছিল, তার বিরাট অংশ শাসন করছিল। পশ্চিম ইউরোপের অনেকটুকুই ইতিমধ্যে ফ্র্যাংকদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। রোম ছোট হতে হতে তিরিশ হাজার লোকের নগরীতে পরিণত হয়, অর্থাৎ বর্তমান মামারোনেক (নিউ ইয়র্ক) শহরের জনসংখ্যার কাছাকাছি। এই মহামারী কি আংশিক দায়ী ছিল এর জন্য? যদি তাই হয়, তাহলে ইতিহাস কেবল মানুষই রচনা করে না, জীবাণুরাও করে।
ঠিক যেমন একটা শরীরকে সংক্রমিত করার বহু রাস্তা জীবাণুদের আছে, তেমনি মহামারীরও রাষ্ট্রশরীর নিয়ে খেলা করার বহু পন্থা আছে। মহামারী হতে পারে স্বল্পস্থায়ী কিংবা দীর্ঘায়িত, কিংবা জাস্টিনীয় প্লেগের মতো নিয়মিত সংঘটনশীল। প্রায়শই এরা যুদ্ধের অংশীদার হয়, এই জুটি কখনো আক্রমণকারীর প্রতি পক্ষপাত দেখায়, কখনোবা আক্রান্তের প্রতি। মহামারী রোগ আঞ্চলিক হতে পারে কিংবা ছড়িয়ে পড়তে পারে দেশজুড়ে, যাকে বলা যায় সার্বক্ষণিকভাবে অস্তিত্বশীল, কারণ নতুন অঞ্চলে বাহিত হলে কিংবা অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে রোগটা আবার মহামারীতে পরিণত হয়।
এটির সর্বশেষ শ্রেণিতে রয়েছে 'দাগওয়ালা দানব' নামের গুটিবসন্ত, যেটি বিশ শতকের মাঝ বরাবর নির্মূল করার আগে পর্যন্ত একশ কোটিরও বেশি মানুষের প্রাণ সংহার করেছে বলে ধারণা করা হয়। গুটিবসন্ত ঠিক কোথা থেকে উৎপন্ন হয়েছিল সেটি কেউ জানে না। মনে করা হয় গোবসন্ত, উটবসন্ত এবং বানরবসন্ত জাতের বংশধর ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে প্রথম সংক্রমিত হয় তখনই, যখন থেকে মানুষ পশুদের পোষ মানিয়ে গৃহপালিত করা শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব ১১৫৭ অব্দে মারা যাওয়া পঞ্চম রামেসিসসহ অন্যান্য মিসরীয় মমিতে গুটিবসন্তের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ১৬২ খ্রিস্টাব্দে তাদের বহু শত্রুর এক পক্ষ, পার্থিয়ানদের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে রোমানরা বর্তমান বাগদাদের কাছ থেকে বসন্ত রোগটি পায় বলে মনে করা হয়। রোমান চিকিৎসক গ্যালেন জানান, যারা এই নতুন রোগে আক্রান্ত হতেন তাদের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিত যা "বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুরোপুরি শুষ্ক ঘায়ে পরিণত হতো।" (এই মহামারীটিকে কখনো কখনো "গ্যালেনের প্লেগ" হিসেবে উল্লেখ করা হয়)। তথাকথিত পাঁচজন ভালো রোমান সম্রাটের সর্বশেষ, যিনি ১৮০ খ্রিস্টাব্দে মারা যান, সেই মার্কাস অরেলিয়াস সম্ভবত গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়েছিলেন।
জশুয়া এস লুমিস তাঁর এপিডেমিকস: দ্য ইমপ্যাক্ট অভ জার্মস অ্যান্ড দেয়ার পাওয়ার ওভার হিউম্যানিটি গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে গুটিবসন্ত পুরো ইউরোপ ও এশিয়া জুড়ে দেশব্যাপ্ত মহামারীতে পরিণত হয়, যার অর্থ সম্ভবত প্রায় সব মানুষই তাদের জীবনের কোনো এক সময় অন্তত একবার এই রোগের সংস্পর্শে এসেছিল। সর্বোপরি এই রোগে মৃতের হার ছিল আতঙ্কজনক ত্রিশ শতাংশ, তবে ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল অনেক বেশি-কোথাও কোথাও নব্বই শতাংশের বেশি। পূর্ব স্ট্রাউডসবার্গ ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের প্রফেসর লুমিস লেখেন, বিপদটা এতই গুরুতর ছিল যে গুটিবসন্ত থেকে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাবামায়েরা তাদের সন্তানদের নাম রাখতেন না। যারা বেঁচে যেত তারা স্থায়ী সুরক্ষা লাভ করতো (যদিও অনেকেই হয়ে পড়তো অন্ধ, কিংবা শরীরে বয়ে বেড়াত জঘন্য ক্ষতের দাগ)। এই গতিপ্রকৃতির অর্থ, ছোট ছেলেমেয়েদের মতো সংক্রমিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছিল বলে প্রতি প্রজন্মে একটা প্রধান রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতো। লুমিস বরং যেভাবে তাৎক্ষণিকভাবে দেখান, সেটা থেকে আরো বোঝা যায় যে ইউরোপীয়রা একটা প্রধান সুবিধা ভোগ করেছিল কারণ, তারা "দূর দেশগুলো আবিষ্কার করে সেখানকার আদিবাসী মানুষদের সাথে মেলামেশা শুরু করেছিল।"
"কলম্বাসীয় বিনিময়" (the columbian exchange) শব্দসমষ্টির উদ্ভাবক ইতিহাসবিদ আলফ্রেড ডব্লিউ ক্রসবি তাঁর সৃষ্ট "অকর্ষিত জমির মহামারী" (virgin soil epidemic) শব্দগুচ্ছকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে বলেন যে যেখানে "আক্রমণকারী রোগের সাথে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠির কোনো পূর্বসংস্রব ছিল না, সেখানে রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে তারা ছিল প্রায় অরক্ষিত।" আমেরিকায় প্রথম "অকর্ষিত জমির মহামারী"- কিংবা ক্রসবির আরেকটি সূত্র ব্যবহার করে "প্রথম নতুন বৈশ্বিক মহামারী" শুরু হয় ১৫১৮ সালের শেষভাগে। সেবছর কেউ একজন সম্ভবত স্পেন থেকে গুটিবসন্ত নিয়ে এসেছিল হিস্পানিওলাতে। এটি কলম্বাসের দ্বীপটির চড়ায় পৌঁছানোর পঁচিশ বছর পরের ঘটনা, ততদিনে স্থানীয় টাইনো জনসংখ্যা অনেক কমে গিয়েছিল। যারা রয়ে গিয়েছিল দাগওয়ালা দানবটি তাদের ধ্বংস করে দেয়। দুই খ্রিস্টান যাজক ১৫১৯ সালের প্রথমদিকে স্পেনের রাজা প্রথম চার্লসের কাছে চিঠি লিখে জানান যে দ্বীপটির এক তৃতীয়াংশ অধিবাসী আক্রান্ত: "ইন্ডিয়ানদের মধ্যে গুটিবসন্তের মড়কটি আরোপ করে আমাদের প্রভু আনন্দিত, আর এটা শেষ হয় না।" হিস্পানিওলা থেকে গুটিবসন্ত পুয়ের্তো রিকোতে ছড়ায়। দুই বছরের মধ্যে এটি আজকের মেক্সিকো সিটি আজটেক রাজধানী তেনোচিতিতলান পৌঁছায়, যার কারণে ১৫২১ খ্রিস্টাব্দে হেরন্যান কোর্তেসের পক্ষে রাজধানীটি বিজয় করা সম্ভব হয়েছিল। এক স্পেনীয় যাজক লেখেন, "অনেক জায়গায় এমনও ঘটে যে একটি বাড়ির সবাই মারা গেছে, যেহেতু এতগুলো মড়াকে কবর দেওয়া অসম্ভব ছিল, তাই বাড়িগুলো ভেঙে তাদের চাপা দেওয়া হয়।" স্পেনীয়রা আসার আগেই গুটিবসন্ত ইনকা সাম্রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছিল বলে মনে করা হয়, সংক্রমণটা বিজয়ীদের চেয়ে দ্রুত এক উপনিবেশ থেকে আরেকটিতে পৌঁছে যেতে পারতো।
প্রথম নতুন বৈশ্বিক মহামারীতে কত সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল সেটা বলা অসম্ভব, কারণ, হিসাবপত্র ছিল অসম্পূর্ণ এবং ইউরোপীয়রা তাদের সাথে হাম, টাইফয়েড এবং ডিপথেরিয়া সহ অনেক "অকর্ষিত জমির" রোগ নিয়ে এসেছিল। সব মিলিয়ে সাথে নিয়ে আসা জীবাণুগুলো সম্ভবত লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। উইসকনসিন-ম্যাডিসন ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস প্রফেসর উইলিয়াম এম ডেনেভান লিখেছেন, "আমেরিকা আবিষ্কার সম্ভবত নিয়ে এসেছিল বিশ্বের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জনমিতিক বিপর্যয়।" এই বিপর্যয় কেবল ইউরোপ ও আমেরিকায় নয়, আফ্রিকাতেও ইতিহাসের গতি বদলে দেয়: শ্রমিক ঘাটতির মুখোমুখী হয়ে স্পেনীয়রা ক্রমবর্ধমান হারে দাস ব্যবসায় নেমে পড়েছিল।
'কোয়ারেন্টিন' শব্দটির উৎপত্তি লাতিন 'কোয়ারানটা' থেকে, যার অর্থ চল্লিশ। ফ্র্যাংক স্নোডেন তার এপিডেমিকস অ্যান্ড সোসাইটি: ফ্রম দ্য ব্ল্যাক ডেথ টু দ্য প্রেজেন্ট গ্রন্থে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, চল্লিশ সম্পর্কে মানুষের সঠিক ধারণার আগে থেকেই বিচ্ছিন্নতার এই চর্চাটি শুরু হয়েছিল। চল্লিশ দিনের এই সময়টুকু কিন্তু চিকিৎসার অংশ হিসেবে শুরু হয়নি, এটির মূল কারণ ছিল ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক। কারণ বাইবেলের পুরনো ও নতুন উভয় ভাষ্যেই শুদ্ধির জন্য একাধিক জায়গায় চল্লিশ সংখ্যাটির উল্লেখ রয়েছে। যেমন আদি হিব্রু বাইবেলে বর্ণিত চল্লিশ দিন ও চল্লিশ রাতের বন্যা, চল্লিশ বছর ধরে ইজরায়েলিদের বিজনমরুতে বিচরণ কিংবা ইস্টারের আগে চল্লিশ দিনের উপবাস।
১৩৪৭ এবং ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুবাহী ব্ল্যাক ডেথ, যা "দ্বিতীয় বৈশ্বিক প্লেগ মহামারী" হিসেবে গতিশীল ছিল, তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে চালু করা হয়েছিল প্রথম আনুষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন। প্রথমটি যেমন, দ্বিতীয়টিও একইরকম অনিয়মিতভাবে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এটি বিস্তৃত হতো,তারপর কমে গিয়ে একসময় আবার জ্বলে উঠতো।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে এরকম এক প্রকোপের সময় ভেনিসের মানুষ দূরস্থিত দ্বীপে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি করে, সেখানে আসা জাহাজগুলোকে ডকে ওঠাতে বাধ্য করে। ভেনিসের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতো জাহাজগুলোকে খোলা বাতাসে রেখে দিলে সেখান থেকে প্লেগ সৃষ্টিকারী বাষ্প দূর হয়ে যাবে। যদিও তত্ত্বটা ছিল ভুল, তবে এর ফলাফল ছিল স্বাস্থ্যপ্রদ। সংক্রমিত ইঁদুর আর নাবিকদের মেরে ফেলার জন্য চল্লিশ দিন যথেষ্ট সময়। ইয়েল ইউনিভার্সিটির এমিরিটাস প্রফেসর স্নোডেন এই ব্যবস্থাকে "প্রাতিষ্ঠানিক জনস্বাস্থ্য" বিষয়ে প্রথম পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করে বলেন যে, এটি "ক্ষমতার পরিবৃদ্ধি" জায়েজ করতে আধুনিক রাষ্ট্রসমূহকে সাহায্য করেছিল।
দ্বিতীয় বৈশ্বিক মহামারীটি কীভাবে শেষ হয়েছিল, তা নিয়ে যথেষ্ঠ বিতর্ক রয়েছে, এটির সর্বশেষ ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছিল ১৭২০ সালে মার্সেইতে। কিন্তু কার্যকর হোক বা না হোক, স্নোডেনের মতে এটিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার মধ্যে উসকে উঠতো "এড়িয়ে থাকা, প্রতিরোধ ও দাঙ্গা"। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ব্যবস্থাগুলো প্রয়োগ করা হতো ধর্ম ও প্রথার বিরুদ্ধে, অবশ্য এখনও সেটাই হয়। প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার আশঙ্কায় অনেক পরিবারই রোগটি গোপন রাখতো। আর, প্রকৃতপক্ষে যারা এই আইনগুলো প্রয়োগ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, জনগণকে রক্ষা করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ ছিল সামান্যই।
কলেরার বিষয়টি বিবেচনা করা যায়। ভয়ঙ্কর রোগগুলোর শ্রেণিভাগ করলে প্লেগ আর গুটিবসন্তের পর তৃতীয় স্থানে আসতে পারে কলেরা। কলেরা হয় কমা চিহ্নের মতো দেখতে ভিবরিও কলেরা জীবাণু থেকে, যা মানব ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়ে সীমাবদ্ধ ছিল গঙ্গা অববাহিকায়। তারপর ১৮০০ সাল জুড়ে বাষ্পীয় জাহাজ এবং ঔপনিবেশিকতা এই জীবাণুকে দেশভ্রমণে নিয়ে যায়। কলেরা মহামারী প্রথম দেখা দেয় ১৮১৭ সালে কলকাতার কাছে। তারপর এটি স্থলভাগ দিয়ে চলে যায় থাইল্যান্ডে এবং জাহাজে করে ওমানে, সেখান থেকে যায় জাঞ্জিবার। দ্বিতীয় কলেরা মহামারী শুরু হয় ১৮২৯ সালে, সেটি আবারও ভারতে। এটির ক্ষতচিহ্ন রাশিয়া পেরিয়ে ইউরোপে ঢুকে পড়ে, সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে।
কিছুমাত্রায় শ্রেণিভেদ রক্ষা করা প্লেগ কিংবা গুটিবসন্তের বিপরীতে দূষিত খাবার কিংবা পানিবাহিত কলেরা ছিল প্রাথমিকভাবে নগরীর বস্তি এলাকার রোগ। রাশিয়াতে যখন দ্বিতীয় মহামারীটি দেখা দেয়, তখন জার প্রথম নিকোলাস কঠোর কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু করেন। এটি রোগটি বিস্তারের গতি শ্লথ করে দিয়েছিল বটে, কিন্তু যারা ইতিমধ্যে সংক্রমিত তাদের কোনো কাজে আসেনি। লুমিসের মতে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কারণে এই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে কারণ, তারা কলেরা আক্রান্তদের নির্বিচারে অন্য রোগীদের সাথে থাকার ব্যবস্থা করে। এমন গুজবও রটে যে চিকিৎসকেরা এইসব রোগীদের ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলতে চাইছিল। ১৮৩১ সালের বসন্তে সেন্ট পিটার্সবার্গে দাঙ্গা সংঘটিত হয়। দাঙ্গাফেরত এক দাঙ্গাকারীর বর্ণনামতে, এক চিকিৎসকের "ঘাড়ে কয়েকটা পাথর তুলে দেওয়া হয়েছিল, সে বহুদিন আমাদের ভুলতে পারবে না।" পরের বসন্তে লিভারপুলে শুরু হয় কলেরা দাঙ্গা। আবারও চিকিৎসকেরা হয় হামলার প্রধান শিকার, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা কলেরা আক্রান্তদের বিষ প্রয়োগ করছে, আর তাই তারা নীল হয়ে যায়। (কলেরাকে "নীল মৃত্যু" বলা হতো, কারণ, এই রোগে আক্রান্তরা এতই পানিশূন্য হয়ে যায় যে তাদের চামড়া শ্লেটের রং ধারণ করতো)। একই রকম দাঙ্গা সংঘটিত হয় অ্যাবারডিন, গ্লাসগো ও ডাবলিনে।
পঞ্চম কলেরা মহামারীর সময় ১৮৮৩ সালে ভিবরিও কলেরা জীবাণুকে বিচ্ছিন্ন করে জার্মান চিকিৎসক রবার্ট কোচ রোগটির কারণ নির্দিষ্ট করেছিলেন। পরের বছর মহামারীটি নেপলসে আঘাত করে। নগরীর পরিদর্শকদের পাঠানো হয় সন্দেহজনক জিনিস বাজেয়াপ্ত করার জন্য। বন্দুক তাক করা জীবাণুমুক্ত করার স্কোয়াডও পাঠানো হয় নগরীর বাসাবাড়িতে। নেপলসবাসীরা বোধগম্য কারণে পরিদর্শক ও স্কোয়াড দুটো সম্পর্কেই সন্দিহান ছিল। মহামারীবিদ্যা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকলেও নাগরিকেরা চিত্তাকর্ষক রসজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছিল। বিক্ষোভকারীরা ঝুড়িভর্তি অতিরিক্ত পেকে যাওয়া ডুমুর আর তরমুজ নিয়ে নগর মিলনায়তনে হাজির হয়। স্নোডেন লেখেন, তারপর তারা "প্রচুর পরিমাণে এইসব নিষিদ্ধ ফল খেতে শুরু করে, আর যারা এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল তারা সহর্ষে হাততালি দিতে দিতে কোন খাদকটি সবচেয়ে বেশি খেতে পারে তার ওপর বাজি ধরছিল।"
আট বছর পর পঞ্চম কলেরা মহামারীর প্রবল প্রকোপের সময় সবচেয়ে হিংস্র কলেরা দাঙ্গা শুরু হয় বর্তমানের ইউক্রেনের দোনেৎস্ক শহরে। বহু দোকানপাট লুট হয়ে যায়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বাড়িঘর আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। সেন্ট পিটার্সবার্গ কর্তৃপক্ষ "অরাজকতা" উসকে দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের অভিযুক্ত করে বিক্ষোভ দমনে চড়াও হয়। লুমিসের মতে, এই অভিযানে গণঅসন্তোষ আরও বেড়ে যায়, যার প্রতিক্রিয়ায় বেড়ে যায় নিপীড়ণও। এভাবে ঘুরপথে রুশ বিপ্লবের "মঞ্চ সাজাতে" সহায়তা করেছিল কলেরা মহামারী।
সপ্তম কলেরার বৈশ্বিক মহামারী শুরু হয় ১৯৬১ সালে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি দ্বীপে। পরের দশকে এটি বিস্তৃত হয় ভারত, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে। পরবর্তী পঁচিশ বছরে আর কোনো বড় প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি, কিন্তু তার পর ১৯৯১ সালে পেরুতে আঘাত করে এটি, যাতে পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। আরেকটি ঘটে কঙ্গোতে ১৯৯৪ সালে, এবারে প্রাণ যায় বারো হাজার মানুষের।
বেশিরভাগ হিসাবে সপ্তম বৈশ্বিক মহামারীটি চলমান। ২০১০ সালে হাইতিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঘটে, তারপর দ্রুত বিস্তৃত হয় পোর্ট অব প্রিন্স এবং প্রধান শহরগুলোতে। এটি ঘটে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প দেশটিকে ধ্বংস করে ফেলার নয় মাস পর। গুজব ছড়াতে থাকে যে এই প্রাদুর্ভাবের উৎস নেপাল থেকে আসা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর একটি শিবির। ফলে ক্যাপ হেইশান শহরে দাঙ্গা সংঘটিত হয়, যাতে দুজন মারা যায়, বন্ধ হয়ে যায় দেশটিতে সাহায্য বহনকারী বিমান চলাচল। কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘ অস্বীকার করে আসছিল যে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সেনারা হাইতিতে কলেরা নিয়ে এসেছিল, অবশ্য শেষপর্যন্ত গুজবটার সত্যতা স্বীকার করে নেয় সংস্থাটি। এই প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে হাইতির আট লক্ষ নাগরিক আক্রান্ত হয়, আর মারা যায় প্রায় দশ হাজার মানুষ।
নিজস্ব প্রকৃতিতে মহামারী হয় বিভেদ সৃষ্টিকারী। যে প্রতিবেশীর কাছ থেকে সুসময়ে সাহায্যের জন্য যাওয়া হয়, সে-ই সংক্রমণের সম্ভাব্য উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে। দৈনন্দিন জীবনের আচারানুষ্ঠানের মাধ্যমেও সংক্রমণের সুযোগ ঘটে, আর কোয়ারেন্টিন কার্যকর করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ হয়ে ওঠে নিপীড়ণের মাধ্যম। ইতিহাসে যুগে যুগে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের জন্য বহিরাগতদের দায়ী করে এসেছে মানুষ (কখনো এটা সত্যিও হয়, যেমন ঘটেছিল হাইতিতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর ক্ষেত্রে)। ব্ল্যাক ডেথের সময় স্ট্রসবার্গের ইহুদিদের কী অবস্থা হয়েছিল, তার বর্ণনা দিয়েছেন স্নোডেন। স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে কুয়ার জলে বিষ মিশিয়ে ইহুদিরাই মড়কটির জন্য দায়ী- তাই তাদের দুটো বিকল্প বেছে নিতে বলা হয়: ধর্মান্তরিত হওয়া কিংবা মৃত্যু। অর্ধেকই ইহুদিই প্রথম বিকল্পটি বেছে নিয়েছিল। বাকিদের ১৩৪৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি "গ্রেপ্তার করে একসাথে ইহুদি কবরস্তানে নিয়ে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়।" পোপ ষষ্ঠ ক্লেমেন্ট এক ঘোষণায় উল্লেখ করেন যে ইহুদিরাও প্লেগে মরছে, সুতরাং বিষপ্রয়োগে তাদের নিজেদেরও হত্যা করার পেছনে কোনো যুক্তি নেই, তাঁর এই ঘোষণায় তেমন কিছু পরিবর্তন হয়েছিল বলে মনে হয় না। ১৩৪৯ সালের মধ্যে ফ্রাংফুর্ট, মেইনজ ও কলোনে ইহুদি সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এই সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্য ইউরোপের জনমিতিকে স্থায়ীভাবে বদলে দিয়ে ইহুদিরা গণহারে দেশত্যাগ করে পোল্যান্ড ও রাশিয়াতে চলে গিয়েছিল।
যখনই একটা দুর্যোগ আঘাত করে, ঠিক এখন যেমনটি ঘটছে, তখন কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয় তা দেখার জন্য পেছনের দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে। জাস্টিনীয় প্লেগের পর দেড় হাজার বছর পেরিয়ে গেছে, আর তার সাথে গুটিবসন্ত, কলেরা, ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, হাম, ম্যালেরিয়া এবং টাইফাস- সবমিলিয়ে পিছু ফিরে তাকানোর মতো ব্যাপকসংখ্যক মহামারী রয়েছে। সমস্যা হচ্ছে এগুলোর সাধারণ যে প্রবণতা উঠে আসে তার মধ্যে বিভ্রান্তিমূলক বৈচিত্র্য রয়েছে। কলেরা দাঙ্গার সময় মানুষ বহিরাগতদের নয়, ভেতরের লোকদেরই দোষারোপ করেছে, চিকিৎসক আর সরকারি কর্মকর্তারাই ছিলেন তাদের মূল লক্ষ্যবস্তু। আজটেক আর ইনকা সাম্রাজ্য জয় করার জন্য স্পেনীয়দের সহায়তা করেছিল গুটিবসন্ত, আবার অন্যান্য রোগগুলো ছিল ঔপনিবেশিক শক্তির পরাজয়ের সহায়ক। ১৮০২ সালে হাইতি বিপ্লবের সময় পঞ্চাশ হাজার সেনা নিয়ে নেপোলিয়ন ফরাসি উপনিবেশগুলো পুনর্দখলের চেষ্টা করেছিলেন। সেসময় তাঁর পক্ষের এত সৈনিক পীতজ্বরে মারা গিয়েছিল যে এক বছর পর তিনি হাল ছেড়ে দিয়ে লুইসিয়ানা অঞ্চলটি আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করে দিতে মনস্থ করেন।
এমনকি এসব মহামারীর প্রাদুর্ভাবের অংকও নাটকীয়ভাবে একটি থেকে আরেকটি আলাদা হয়। লন্ডন স্কুল অভ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রফেসর এবং দ্য রুলস অভ কন্টেইজন গ্রন্থের লেখক অ্যাডাম কুচারস্কি বলেন যে এই পার্থক্যটা নির্ভর করে সংক্রমণের ধরন, কোনো ব্যক্তির সংক্রমিত হওয়ার মেয়াদকাল এবং প্রতিটি রোগ কি রকম সামাজিক সম্পর্কের সুযোগ নেয়, তার ওপর। তিনি লেখেন, "আমার কার্যক্ষেত্রে একটা কথা চালু আছে: 'যদি তুমি একটা বৈশ্বিক মহামারী দেখে থাকো, তুমি দেখেছ . . . একটা মহামারী'।" কোভিড-১৯ বিষয়ে করা কয়েকটা ভবিষ্যদ্বাণীর মধ্যে মনে হয় এপর্যায়ে বলা নিরাপদ যে মহামারীর বহু ইতিহাসের মধ্যে এটিও নিজ থেকেই ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে পরিণত হবে।