বাংলাদেশের অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও দুরবস্থাকে আমলে না নিয়ে শুধু স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিদেশি কোনো ব্যক্তি থেকে এই অভিনন্দন আমার চোখে পানি এনে দিয়েছিল।
Published : 05 Nov 2024, 07:14 PM
তামপাকুকেন ডর্মিটরি থেকে ফার্মেন্টেশন টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টে যেতে কোনো যানবাহন ছিল না, হেঁটে যাতায়ত করতে হতো। সকাল আটটার ক্লাশ ধরতে পড়ি মরি করে ছুটতাম। প্রমোদ শ্রীবাস্তবের সাথে পাল্লা দিতে গিয়ে আমাকে খুব জোরে হাঁটতে হতো। দুয়েকদিন পরেই আমার পায়ের তালুতে ব্যথা শুরু হলো। ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার আগে নতুন জুতা জোড়া কিনে এনেছিলাম। ফিতা বাঁধা ও খোলার বিড়ম্বনার বাইরেও সেই জুতা যে এতো ব্যথা দেবে তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি।
একদিন ক্লাশে যাওয়ার পথে ব্যথার প্রচণ্ডতায় জুতা খুলে দেখলাম জুতার পেরেক বের হয়ে আমার ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলির নিচে গর্তের মত ফুটো করে দিয়েছে। সামান্য রক্ত বেরিয়ে আসছে। ডক্টর ঘাই বললো স্বাস্থ্যের সাথে কোন কথা নেই, আপাততঃ তুমি জুতা জোড়া হাতে নিয়ে নাও,কেউ কিছু মনে করবে না। সমমর্মতা প্রকাশ করা এই আশ্বাস বাণীতে ওর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করলাম। ডিপার্টমেন্টে পৌঁছেই মিসেস সোয়াজুমিকে বললাম আমার শীঘ্রই জুতা কিনতে হবে। তিনি বললেন, আগামীকাল আমাদের কিয়োতোর একটি বিখ্যাত উৎসবে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। সেখানে পৌঁছে প্রথমেই তোমার জুতার খোঁজ করবো। শুধুমাত্র আমার জুতা কেনার জন্যই পরদিন দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার আগে দলের সবাই কিয়োতোর ব্যস্ত বাজারে এলো। আমি যখন জুতা কেনায় ব্যস্ত তখন সাথের বন্ধুরা আশেপাশের দোকানের পণ্যের হাতছানিতে হারিয়ে গেল।
প্রায় তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। জাপানি খাবারের বোঁটকা গন্ধের জন্য আমি প্রতিদিন আধপেটা হয়ে থাকছি। একমাত্র প্রমোদের সাথে ছাড়া বাংলায় কথা বলার একটি প্রাণিও নেই। মিসেস সোয়াজুমি এবং পরিচিত সবাইকে জিজ্ঞেস করি তোমরা কি কোনো বাঙালিকে চেনো? দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে জাপানের সম্পর্ক অনেক পুরনো বলে কোরিয়া, ফিলিপিন্স, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডের অনেক লোকজনই জাপানে আছে। ফলে এসব দেশের সহপাঠিরা আমার মত এতো একা একা অনুভব করে না। কোরিয়ানরা জাপানি ভাষাতেও পারদর্শী। ফলে ওরা নিজেরা একা একাই শহরে ঘুরে বেড়াতে পারে। এক সকালে ইন্দোনেশিয়ার উদিহার্তো খুব উৎসাহের সাথে বললো গতরাতে ইবারাকি-সিটিতে একজনের সাথে দেখা হয়েছে। সে বলেছে তাদের টেকনিক্যাল ডর্মিটরিতে তিনজন বাংলাদেশি আছে। তা শুনে ক্লাশের পরই প্রমোদকে নিয়ে ছুটলাম ইবারাকি-সিটির দিকে। বাস ও ট্রেনের রাস্তা চিনতে কতজনকে যে কতভাবে জিজ্ঞেস করলাম তার ফিরিস্তি দিতে গেলে কয়েক পাতা ভরে যাবে।
যাই হোক গন্তব্যে পৌঁছে যখন তিন বাঙালির দেখা পেলাম, তখন যে কী আনন্দিত হয়েছিলাম তা বর্ণনার ভাষা আমার নেই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সেই তিনজনও আমার মত এতোই খুশি হয়েছিলেন যে মনে হচ্ছিল আমরা কত যুগ যুগান্ত থেকে পরস্পরকে চিনি। তাঁরা তিনজনই পিডাবলিওডি-র ইঞ্জিনিয়ার, এবং আমার চেয়ে চার পাঁচ বছরের বড়। এক সপ্তাহ হয় এসেছেন। ভাষা বোঝেন না বলে নিজেদের বাইরে মন খুলে কথা বলতে পারেন না। জাপানি খাবার খেতে পারেন না বলে বেআইনি হলেও একজনের শোয়ার ঘরের দরজা লাগিয়ে বাঙালি স্টাইলে তিনজনের রান্না করে খান।
তিন সপ্তাহ থেকে আধপেটা অবস্থায় আছি শুনে নিজেদের সদ্য রান্না করা খাবারের বেশিটা দিয়ে আমাকে ও প্রমোদকে আপ্যায়ন করলেন। আর বললেন যেদিনই সুযোগ পাই যেন চলে আসি। আমার ডর্মিটরির দরজা রাত দশটার মাঝে বন্ধ হয়ে যাবে বলে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হয়েছিল। কিন্তু বিদেশে সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিরা যে কীভাবে আত্মীয়ের চেয়েও বেশি আত্মীয় হয়ে উঠতে পারেন, এবং নিজ ভাষায় প্রাণ খুলে কথা বলতে পারার যে কী আনন্দ সারাটা পথে তা আলোচনা করতে করতে ফিরে এসেছিলাম। এঁদের সান্নিধ্য আমি এতোই কামনা করতাম যে এরপর একা একাই আমি সেখানে চলে গিয়েছি। শুধু সান্নিধ্য চাইতাম বলে আমার পছন্দ না থাকা সত্ত্বেও একজন থেকে একটি ব্যবহৃত রেডিও-টেপ রেকর্ডার কিনে নিয়েছিলাম অনেক দামে, কোন দামদর না করেই। আরেকজন, নাম সম্ভবতঃ ছিল বেদারউদ্দিন, অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন,সচারাচর এমন মানুষ দেখা যায় না। পরে তিনি ঢাকায় এসেও আমার সাথে দেখা করে গিয়েছিলেন।
আমাদের জাপানি ভাষা শিক্ষা শুরু হয়েছিল প্রায় দুই সপ্তাহ পরে। দুই মহিলা শিক্ষকের একজনের নাম মিতসুওকা শিমোদা, একটি গ্যাঁজা দাঁত মুখে লাজুক চেহারার কিন্তু যথেষ্ট সুন্দরী। জাপানি লিখিত ভাষায় তিন ধরণের বর্ণমালা। প্রথম দুটি বাংলার মতোই স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে। অকৃত্রিম জাপানি শব্দ লেখায় ব্যবহৃত বর্ণমালার নাম কাতাকানা বর্ণমালা, আর জাপানি ভাষার অংগীভূত বিদেশি শব্দের বেলায় ব্যবহৃত হয় হিরাগানা বর্ণমালা। এছাড়া আছে চীন থেকে ধার করা চিত্রকল্প-নির্ভর, সাংকেতিক কাঞ্জি। ক্লাশে আমরা মূলত হিরাগানা ও কাতাকানা’র ব্যবহার কিছুটা শিখেছিলাম – আ কা সা তা না, হা মা ওয়া রা ওয়া, কা কি কু কে কু, হা হি হু হে হো, ইত্যাদি। বিদেশিরা প্রথমে এসে আলাপের জন্য যেসব বাক্যের প্রয়োজন হবে আমাদের শিক্ষিকা ব্যকরণসহ সেসব বাক্য শেখালেন।
এতোটুকু শিখেই প্রমোদ মিস শিমোদা-কে বলে বসলো ‘সেন্সেই, আনাতা কিরেই দেস’ – হুজুরানি, আপনি/তুমি সুন্দরী। লজ্জার হাসি হাসতে হাসতে তিনি উত্তর দিলেন এর পরিপূরক প্রকাশটিও জেনে রাখ। আমার দিকে তাকিয়ে বললো ‘আহমেদ সান ওয়া খাসকোই দেস’ – আহমেদ সাহেব সুপুরুষ। ক্লাশের সবাই জোরে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে শিক্ষককে সমর্থন জানালো। এদেশে আসার পর জাপানি এক সুন্দরী ক্লাশে এতোগুলো দেশের ছাত্রছাত্রীর মাঝে অন্য কাউকে নয়, আমাকে সুপুরুষ বানিয়ে দেয়াতে খুশিতে বুকটি ফুলে আমার শার্টের বোতাম ছিঁড়ে দেয়ার জোগাড় হয়েছিল।
জাপানি ভাষায় ক্রিয়াপদের শেষে ‘তে’ যোগ করে খুব সহজেই বর্তমান কাল প্রকাশ করা যায়। যেমন ‘খাকু’ (লেখা) – অর্থাৎ খা’র শেষে ‘ইতে’ যোগ করলে শব্দটি হয়ে যায় ‘খাইতে’ – অর্থাৎ বাংলায় ‘লিখিতে’ হয়ে যায়। ‘খাইতে খুদাসাই’ বাংলায় হবে ‘লিখিতে আজ্ঞা হোক’। খুদাসাই মানে অনুগ্রহ করে, আজ্ঞা, অথবা প্লিজ। তেমনি ‘কিকু’ (আসা) ক্রিয়াপদ থেকে‘কিতে খুদাসাই’ এর বাংলা অর্থ ‘আসিতে আজ্ঞা হোক’, ‘সোয়াত্তে খুদাসাই’ – ‘বসিতে আজ্ঞা হোক’। ক্রিয়াপদের ‘তে’ রূপের এই ব্যকরণটির সাথে আমার কাছে বাংলার একটি সাদৃশ্য আছে বলে মনে হলো। ফলে বাংলা ও জাপানি মিলিয়ে আমি বললাম ‘খাইতে খুসদাসাই’ অর্থ হবে ‘(খাবার) খেতে আজ্ঞা হোক। তেমনি বলতে পারি বসিতে খুদাসাই, ঘুমাইতে খুদাসাই, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার এই যুক্তিটি শিক্ষক বেশ উপভোগ করেছিলন বলে মনে হয়েছিল। নিজেই এই ভাষার নাম দিলাম জাংলা ভাষা। তিন যুগ পরে এভাবে বাংলা ও জাপানি শব্দ মিশিয়ে জাংলা ভাষায় আমি একটি ছড়াও লিখেছিলাম।
কথায় কথায় আরেক জাপানি ভাষা শিক্ষক বললেন তাঁর নিয়মিত কর্মস্থল কানসাই ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই কয়েকজন করে বাঙালি ছাত্র আসে। ওরা তাঁর ছাত্র নয়, পরিচয়ও নেই, কিন্তু ওরা বাস করে মিনামি-সেনরি-তে ‘রিউ-গাকসেই কাইকান’ বা বিদেশি ছাত্রদের আবাস-এ। ক্লাশ শেষে আমি সেদিনই ছুটলাম সেদিকে। আমাদের শেষ স্টেশন কিতা-সেনরি থেকে একটি স্টেশন পরেই মিনামি-সেনরি স্টেশন। স্টেশনেই দেখা পেলাম দুইজন বিদেশি ছাত্রের। বিনাক্লেশে ইংরেজিতে বলে দিলেন কীভাবে ছাত্রাবাসে যেতে হবে। একটি বিশাল মাঠ পেরিয়ে তিন বা চারতলা বড় দালান। শনিবার বিকেল, লবিতে কেউ নেই। নাম ফলক খুঁজে দেখলাম বাংলাদেশি হওয়া সম্ভব এমন ‘সালেহ মতিন’ নামে একজন এখন তিনতলায় তাঁর কক্ষেই আছেন। অফিসে বলতে মাইক্রোফোনে তাঁকে ডাকা হলো।
আমি অপেক্ষা করছি। একজন লম্বামত সুবেশী ও সুপুরুষ ছাত্র কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা এই যে সালেহ মতিন বলে একটি নাম দেখা যাচ্ছে তিনি কোন দেশের ছাত্র তা কি জান? বললো, হ্যাঁ সে তো বাংলাদেশের, কিন্তু তুমি? আমি বাংলাদেশের শুনে মুখের হাসিটি আরো বিস্তৃত করে স্বরটি নামিয়ে কিন্তু স্লোগান দেয়ার ভঙ্গিতে ডান হাত উঁচু করে উঠিয়ে, নামিয়ে, আবার উঠিয়ে ভিনদেশি উচ্চারণে বলে চললো ‘জয় বাংলা’, ‘বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই’। আমি যুগপৎ আশ্চর্য, গর্বিত ও কৃতজ্ঞ হয়ে ফিরতি হাসি উপহার দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কোন দেশি বন্ধু গো? বললো সে গ্রিস থেকে এসেছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির ছাত্র হিসেবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় আগ্রহ ভরে আমাদের সংগ্রামটি অনুসরণ করেছে বলে সব মনে আছে। স্বাধীনতার অভিনন্দন জানিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বাংলাদেশের অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও দুরবস্থাকে আমলে না নিয়ে শুধু স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বিদেশি কোনো ব্যক্তি থেকে এই অভিনন্দন আমার চোখে পানি এনে দিয়েছিল।
এমন সময় শূন্য করিডোরের দূর থেকে ছোটখাট দেহের ঢিলেঢালা ও বিশেষত্বহীন চেহারার একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। দূর থেকেই যেন আমাকে পরখ করছেন। কিছুটা বাঙালি মনে হলেও ভারত, নেপাল, বার্মা অথবা ইন্দোনেশিয়ার কেউও হতে পারে। চেহারায় হাসি মোটে নেই। কাছে এসে আমার দিকে তাকালে সদ্য পাতানো গ্রিক বন্ধুটি বললো এই যে মতিন, ইনি তোমাকেই খুঁজছিলেন। মনে হলো মতিন সাহেব আমাকে পছন্দ করেননি, তবুও ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কি বাঙালি? হ্যাঁ বললেন, কিন্তু গম্ভীর ও সন্দেহের চোখে আমাকে ভালো করে দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেন?
এর কাছে বিশেষ সমাদর পাব না ভেবে ততোক্ষণে নিজেকে আমি সামলে নিয়েছি। বললাম নতুন এসেছি তো, তাই আশেপাশে বাঙালি আর কে আছে তা খুঁজতে এলাম। আসুন, বলে তিনি আমাকে তাঁর ঘরে নিয়ে এলেন। বললেন কিয়োতো বিশ্ববিদ্যালয়ে অংকশাস্ত্রে মাস্টার্স শেষ হতে যাচ্ছে। পিএইচডি-তে ভর্তির জন্য ঢাকার তীতুমীর কলেজ থেকে ছুটি চেয়েছিলেন। দরখাস্ত নামঞ্জুর হওয়া চিঠিটি এইমাত্র পেয়েছেন। তাই মেজাজটি খুব খারাপ হয়ে আছে, কিছু মনে করবেন না। মতিন সাহেব আমার চেয়ে পাঁচ ছয় বছরের সিনিয়র। কিছুক্ষণের মাঝে আরো দুজন বাঙালি এলেন। একজনের বয়স চল্লিশের ওপর, বিএ পাশ, সরকারের কৃষি বিভাগে চাকুরি করতেন। কৃষি-সচিব মামাশ্বশুরের সুবাদে জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়তে এসেছেন। অপরজন আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন, নাম আওলাদ হোসেন। সবাই নতুন আরেক বাঙালিকে পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হলেন। এই তিন বাঙালির আগ্রহে রাতটি আমি তাঁদের ছাত্রাবাসেই রয়ে গেলাম। বারণ থাকা সত্ত্বেও মতিন সাহেব এবং অন্যরা নিজ নিজ ঘরেই রান্না করে খান। মতিন সাহেব আমাকে বসিয়ে রেখেই রান্না চাপালেন, মুরগীর ঝাল মাংস, ডাল ও ভাত। আহা, কী সুস্বাদু সেই খাবার। কত যুগ যুগান্ত পরে যেন খেলাম।
এর পর থেকে এবং পরবর্তীতে আমি কিয়োতোয় স্থানান্তরিত হলেও প্রতি শনিবার এই তিন বাঙালি, বিশেষ করে মতিন সাহেব, অপেক্ষা করতেন আমার আগমনের। উপলব্দি করলাম বাঙালি দর্শনের জন্য কাঙাল শুধু আমি একাই নই, বিদেশে আসা সব বাঙ্গালির ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য যদিও তাঁদের অনেকটা স্থুল বা ক্রুড ঠাট্টা তামাশার বিপরীতে আমার কথাবার্তা ছিল অনেক মার্জিত এবং সীমিত। যেমন বাঙালি না হলে তাঁরা বলতেন ‘ঐ হারামজাদা (অথবা ঐ শালা) আমাকে যায়গাটা চিনিয়ে দিল’। আমি প্রতিবাদ করে বলতাম, শুধু শুধু একটি লোককে গালি দিয়ে কথা বলছেন কেন, অপর সম্পর্কে এভাবে আর বলবেন না। আমার এই ধরনের প্রতিবাদগুলো তাঁরা খুব উপভোগ করতেন। উপরন্তু এই তিনজনের প্রতিদিন দেখা হতো বলে তীতুমীর কলেজ, কৃষি বিভাগ, ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব নিয়ে মাঝে মঝেই তাদের সম্পর্কের অবনতি হতো। আমার ঠিকানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিধায় আমি তাদের মাঝে একটি বাফার বা মধ্যস্ততার কাজ করতে পারতাম বলে আমার ধারণা। তাই তাঁরা আমাকে এতো ভালোবাসতেন। দিনে দিনে মতিন সাহেবের সাথে আমার একটি আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তিনি জাপানে আমার অলিখিত মুরুব্বি বা গার্জিয়ানের দায়িত্ব পালন করলেও আমাকে যথেষ্ট সম্মানের আসনেও বসিয়েছিলেন।
চলবে