Published : 24 Jul 2016, 08:12 AM
মাতামহ, বহুদিন বাদে গতরাত্তিরে আপনার দেখা পেলাম
শ্বেতবর্ণের ঐরাবত নিয়ে ঝঞ্ঝার মতন আপনি এসেছিলেন
এদিকে ক্রমাগত বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে
বেড়ে চলেছে সুরমা—কুশিয়ারার জল
সদ্য জলে ডোবা সন্তানের মা প্রস্তর যুগের পাথরের মতন স্থির, নিশ্চল
দূরদর্শনে শোকার্ত মায়ের নিশ্চলতা দেখে থেমে গেছে সমস্ত ইথার ওয়েভ।
তবুও এই নির্বেদী—নিশ্চল মৌনতা ভুলে আমি শুনেছি
রেমিট্যান্স ইকোনমি নিয়ে সহকর্মীর মতামত
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইউক্রেনে আহত মানুষের আর্তনাদ
মার্কিন ডলারের রেট নিয়ে ক্রেতাদের দর কষাকষি
কারণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর পুঁজিবাদের মরফিন অনেক আগেই মিশে গেছে আমার মজ্জায়।
শেষ সঞ্চয় নিয়ে ব্যাংকে ছুটে আসা কর্কট রোগাক্রান্ত শিশুর পিতার পাসপোর্টে ক্যাশ এনডোরস করতে করতে ভেবেছি—"জীবন দুঃখময়!"
আহা, তথাগত!
এই অমোঘ সত্য জেনেছি আমি- তবুও আমার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জল।
হে প্রগাঢ় মাতামহ,
বোধিবৃক্ষের মতন আমার আত্মায় পুঁতে দিয়েছেন ভাবনার অভিজ্ঞান!
আর 'চেরি রেড' ছিল আপনার প্রিয় রঙ
সত্যি কী 'চেরি রেড' কোনো সৌভাগ্য বয়ে এনেছিল?
এখন চিলেকোঠার নির্জন দেয়ালে থমকে আছে আপনার প্রতিকৃতি
আর পরিত্যক্ত নীল শতরঞ্জিতে লেপ্টে থাকা আমার শৈশব
বেটোফেনের সতেরো নম্বর সিম্ফনি হয়ে
কখন যেনো হারিয়ে গেছে মার্ক শাগালের রাত্রির গভীরে।
মাতামহ, আমি ঘোরের মধ্যে তলিয়ে যেতে যেতে ভাবতে থাকি
প্রতিত্যসমুৎপাদ, স্মৃতি-অনুস্মৃতি ছাড়িয়ে তথাগত কীভাবে খুঁজে পেয়েছিল ব্রহ্ম বিহার?
চল্লিশটি ধ্যেয় অতিক্রম করে বুদ্ধের মতন রোদ্দুর কুড়োতে কুড়োতে
আমিও ফিরিয়ে দিতে চাই শোকার্ত মায়ের সন্তান
ভূমি দস্যুদের শিখিয়ে যেতে চাই শ্রমণের মন্ত্র
যারা পাহাড় কেটে, শাল-অশোক-শ্বেতচন্দন
পায়ে মাড়িয়ে, বুড়িগঙ্গা-তুরাগ-বালু নদীর
টুঁটি চেপে তৈরি করেছে বহুতল।
যারা কখনও বেটোফেনের সিম্ফনি শোনেনি,
বোঝেনি কতগুলো সৌরবর্ষ রোদে পুড়ে অঙ্কিত হয় সূর্যমুখীর ল্যান্ডস্কেপ
যদিও তাদের বসবার ঘরে ঘেন্নায় সিটিয়ে থাকে ভ্যানগগ, বেটোফেন!
টেমস আর সিনের স্তুতি করতে করতে যারা বুড়িগঙ্গায় ছড়িয়ে দিয়েছিল সভ্যতার উচ্ছৃষ্ট
মাতামহ, তাদের পাপ হাতে নিয়ে আপনি
ধর্মযাজকের মতন চলে গেছেন গির্জায়।
আপনার শ্বেতবর্ণের ঐরাবত, আষঢ়ি পূর্ণিমায় লুম্বিনীর জলে ফোটা শ্বেতপদ্ম
আর শুভ্রবসন দেখে আমার কেমন যেনো ভয় হয়!
চারিদিকে আজ নারকীয় বিভৎসতা, সিরিয়া-ফিলিস্তিন-ইউক্রেন সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে আপনার পছন্দের রঙ 'চেরি রেড'
এই রঙ কোনো সৌভাগ্য বয়ে আনেনি, এনেছে নিষ্পাপ শিশুর বুলেট বিদ্ধ শরীর।
মাতামহ, আপনি বরং এইসব শিশুদের ফিরিয়ে দিন শৈশবের ঘ্রাণ—
নীল শতরঞ্জির নীচে ওরা লুকিয়ে রাখুক পক্ষীরাজ ঘোড়া।
শীতল চাঁদের চরকায় চড়ে ওরা ঘুরে আসুক রূপকথার দেশ
পৃথিবীর সমস্ত হানাহানি চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে
আবার ওরা উঠবে জ্বলে সন্ধ্যাতারায়।