সম্পর্কে যদি ভালোবাসা না থাকে তাহলে সেখানে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ কখনো সম্ভব নয়!
Published : 14 Feb 2025, 12:58 PM
ভালোবাসা আর প্রেম কি সমার্থক? নাকি দু’য়ের মধ্যে আবছায়াময় সূক্ষ্ম পার্থক্য বিদ্যমান। প্রেমে ভালোবাসার অস্তিত্ব অবধারিত থাকে কিন্তু সব ভালোবাসায় প্রেমের উপস্থিতি থাকে না। এ নিয়ে নানান মতামত ও ব্যাখ্যা রয়েছে। তেমনি প্রশ্ন আসে ভালবাসা বা প্রেম কি শরীর ছাড়া সম্ভব!
এ নিয়েও অজস্র আলোচনা ও মতামত রয়েছে। সাইকোলজি কিংবা মেডিক্যাল সায়েন্স-এর দৃষ্টিতে প্রশ্নটা তোলা হয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর উত্তর হবে ‘না’। কেননা ভালোলাগার প্রেক্ষাপটের সাথে শারীরিক একটা বিষয় জড়িত থাকে। যেহেতু ভালোলাগা থেকে ভালোবাসার সৃষ্টি সেহেতু ভালোবাসার সাথে শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টা আপনাআপনি চলে আসে।
প্রেম বলতে এখানে নারী ও পুরুষের সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে। যা মা-বাবা, ভাই-বোন এবং ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের বহির্ভূত কোন সম্পর্ক। ভিন্ন নারী ও পুরুষের মধ্যকার গড়ে ওঠা সম্পর্ক। এক কথায় যারা অন্যকোনভাবে সম্পর্কিত নয়। এই সম্পর্কটা যখন তৈরি হয় তখন মূলত এর নেপথ্যে থাকে শারীরিক আকর্ষণবোধ। ভালোবাসার অন্য পরিচয় হল ‘সেক্স’। যৌনতাকে বলা হয় ‘এক্সপ্রেশন অফ লাভ’। কে কাকে কতটা ভালবাসে সেটা পরিমাপ করার বা প্রকাশ করার অন্যতম লক্ষণ হল কারো যৌন আচার। ধরুন, আপনি কাউকে অনেক ভালবাসেন কিন্তু তার সাথে আপনি কোন যৌন সম্পর্ক করবেন না তা কিন্তু হবে না। কারো প্রতি যদি আপনার সত্যিকার ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে আপনি তাকে শারীরিকভাবে চাইতেই পারেন। এটা খুবই স্বাভাবিক ও সহজাত একটি বিষয়। এটাকে ভিন্নভাবে দেখার বা ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই। ভালোবাসার মূল স্তম্ভ হল ‘আকর্ষণবোধ’ যাকে বলা হয় ‘প্যাশান’। এই ‘প্যাশান’ জিনিসটার মধ্যে যৌনতা ভীষনভাবে রয়েছে। এই প্যাশনই আমাদেরকে যৌনতার দিকে চালিত করে।
কেউ যদি কারো সান্নিধ্য কামনা করে বা কাউকে নিজের করে পেতে চায়, সেটার অন্তরালে যে বিষয়টা দিবালোকের মত জ্বলজ্বল করে তা হল যৌন আকর্ষণবোধ। এরকম যদি হয় যে একজন পুরুষ ও একজন নারী ঠিক করে যে তারা বিয়ে করবে সংসার করার জন্য অথবা বংশ রক্ষার জন্য অথবা তাদের বাবা মাকে দেখাশোনা করার জন্য, সেখানে প্রেম বা রোমান্টিকতা তার অস্তিত্ব হারায়। সেটা তখন নিতান্তই একটা দায়িত্ব বা কর্তব্য পালনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
ভালোবাসার সম্পর্ক অনেকভাবে প্রকাশিত ও বিকশিত হতে পারে। এক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্ক বা যৌন সম্পর্কের জায়গাটা অনেক শক্তিশালী। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা অনেক বাঁধা নিষেধের মধ্যে বড় হয়। তাদের কাছে সেক্সটাই একটা ‘ট্যাবু’। সেক্স নিয়ে আলোচনা করা নিষিদ্ধ বা স্পর্শকাতর কোন বিষয়। সেক্সের ব্যাপারটা যত লুকিয়ে রাখা যায় তত উত্তম। এগুলো এক ধরনের অসুস্থ ভাবনা।
আমাদের প্রধান দুটি চাহিদা খাদ্য এবং ঘুম। এই দুটো বাদ দিলে যে জিনিসটা অন্যতম সেটা হল যৌনতা। এটা নিঃসন্দেহে একটা জরুরী চাহিদা। যৌনতা জীবনী শক্তির মত। যৌনতাই মানসিক ও শারীরিকভাবে একজন মানুষকে স্বতঃস্ফূর্ত করে তোলে। সেক্সে যার আগ্রহ নাই জীবনে তার সামনের দিকে এগুনোরও কোন আগ্রহ নাই। তবে সন্ন্যাসী, সাধু বা সমাজ সংস্কারক--এদের কথা আলাদা। উল্লেখ্য যে, সেক্সুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। একজন ছেলে ও একজন মেয়ের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দু’জনের মধ্যকার রুচি, পছন্দ ও আগ্রহ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে এর মধ্যে ভালোবাসা থাকাটাও জরুরী। সম্পর্কে যদি ভালোবাসা না থাকে তাহলে সেখানে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভ কখনো সম্ভব নয়!
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ছেলেদের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি কিন্তু মেয়েদের মধ্যে তা খুব কম। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ্যে যৌন আকাঙ্ক্ষা অনেক বেশি কিন্তু ছেলেদের মধ্যে কম। তখন সে সম্পর্ক দুজনের মধ্যে অসহ্য ও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একজনের সেক্সের প্রতি আগ্রহ থাকলে এবং অন্যজনের আগ্রহ না থাকলে দাম্পত্যবিরোধ দেখা দেয়। ফলে এর সূত্র ধরে ক্রমাগত ঝগড়া ও মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়।
সেক্স হল ‘এক্সপ্রেশন অফ লাভ’। কেউ কাউকে ভালবাসলে, ভালোবাসা সত্যি হলে, ভালবাসার সঙ্গে ‘সেক্স’ আসাটাই স্বাভাবিক। যে সেক্সের মধ্যে ভালোবাসা নেই সেখানে তৃপ্তিও নাই। সম্পর্কে যখন ভালোবাসা থাকে তখন সেক্সুয়াল বিষয়টা পরিপূর্ণ রূপ পায়। আর দুজন তখন কীভাবে একে অপরকে সুখী ও তৃপ্ত করবে সেদিকে মনোযোগী থাকে। তখন তারা একে অপরের চাহিদা কীভাবে পূরণ করবে সেটা নিয়ে ভাবে। নিজের চাহিদা পূরনের চেয়ে তখন সঙ্গী/সঙ্গীনির চাহিদা বড় হয়ে ওঠে সেখানে ভালবাসার অনেক বড় একটা ভুমিকা থাকে যার পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় ‘অর্গাজম’। এই অর্গাজম’ই হল ভালোবাসা বা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের সবচেয়ে সুন্দরতম প্রকাশ।
নারী-পুরুষের মাঝে পরস্পরের চাহিদা পূরণ যখন বড় হয়ে ওঠে তখনই ভালবাসার প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পায়। ভালোবাসা না থাকলে এই ব্যাপারটা ঘটেনা। আত্মার সাথে যখন আত্মার সম্পৃক্ততা ঘটে তখন ও প্রান্তে থাকা মানুষটিকে স্পর্শ করার কিংবা সান্নিধ্যে পাওয়ার একটা সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জন্ম নেয়। যেহেতু আত্মা আত্মাকে স্বতন্ত্রভাবে ছুঁতে পারেনা তাই শরীরী সান্নিধ্যের মাধ্যমে সে তার সংস্পর্শ খুঁজে বেড়ায়। হ্যাঁ, এটা ঠিক মন অনেক সময় শরীরের প্রতিনিধিত্ব করে। কিন্তু কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন তাকে কাছে পাওয়ার বাসনা লালন করে। যার প্রতি ভালোবাসা আছে স্বভাবগতভাবে মানুষ তার সান্নিধ্য চাইবে এটাই ভালোবাসার সহজাত প্রবৃত্তি।