এভাবে চললে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কীভাবে: কামাল

ধানের শীষের প্রার্থীদের উপর ক্ষমতাসীনদের অব্যাহত হামলার অভিযোগ তুলে নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2018, 01:29 PM
Updated : 16 Dec 2018, 03:38 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনের ১৩ দিন আগে রোববার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই সংশয় প্রকাশ করেন তিনি।

নির্বাচনের প্রচারের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীদের উপর হামলা, গুলিবর্ষণসহ নানা ঘটনা তুলে ধরতে পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

এতে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার সোমবার সকালে হোটেল পূর্বাণীতে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।

বিএনপিকে সঙ্গী করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে নিজের পুরনো দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন গণফোরাম সভাপতি কামাল।

প্রচারের শুরু থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিরোধী জোটের প্রার্থীদের উপর হামলার অভিযোগ করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে বিএনপি জোট সহিংস পরিস্থিতি তৈরি করছে।

বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ে কোনো আশঙ্কা রয়েছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে কামাল বলেন, “আশঙ্কা তো আছেই যে নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে দেওয়া হবে না। তারা বুঝতে পারছে, মানুষের জনমত। আপনারাও (সাংবাদিক) এটা জানার চেষ্টা করলে জানতে পারবেন।

“আমরা শুধু আপনাদের তথ্যগুলো দিচ্ছি। এ ব্যাপারে (বানচাল) আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আপনারা দেখুন।”

বিএনপি নেতারা নির্বাচন কমিশনে অবিরত নালিশ জানিয়ে বলছেন, পুলিশও ইসির কথা শুনছে না। বিরোধী জোটের প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকদের গ্রেপ্তার-হয়রানি অব্যাহত রয়েছে।

কামাল বলেন, “আপনারাই তথ্য দিচ্ছেন, ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, যারা মিছিল করছেন, তাদের উপর আক্রমন করা হচ্ছে, প্রার্থীদের উপর আক্রমণ করা হচ্ছে, প্রার্থীরা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

“এসব ঘটনার পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অবাক কাণ্ড! যারা শিকার হচ্ছেন আক্রমণের, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, আর যারা আক্রমণ করছে, তারা বহাল তবিয়তে আছে।”

“অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে এসব ঘটনা  যদি ঘটতে থাকে, স্বাভাবিকভাবে আশঙ্কা হবে ভোটের দিন কী হবে,” প্রশ্ন রাখেন তিনি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে কামাল বলেন, “আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য। আপনারা (গণমাধ্যম) গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবেন, যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে।”

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “গতকাল নোয়াখালীতে মাহবুব উদ্দিন খোকনের উপর পাঁচটা গুলি করা হয়েছে, সিরাজগঞ্জে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী প্রার্থী রুমানা মাহমুদের উপর গুলি হয়েছে, ঢাকায় সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। ঢাকা-৮, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০ আসনসহ বিভিন্ন আসনে হামলা হয়েছে। আমি উত্তরাতে সেদিন মাজারে গিয়েছিলাম, সেখানে হামলা হয়েছে।

“১৩ দিন আগে যদি গুলি হয়, তাহলে এরপরে কী  চালাবে? ট্যাংক চালাবে, কামান চালাবে? এ কী অবস্থা! পৃথিবী কোথায়, জাতিসংঘ কোথায়, কমনওয়েলথ কোথায়?”

রব বলেন, “তারা (ক্ষমতাসীনরা) জনগণকে নামতে দেবে না, কর্মীদেরকে নামতে দেবে না, প্রার্থীদেরকে নামতে দেবে না, এটা কী? আমরা তো নির্বাচন করতে চাই। ভয় দেখালে ভয় পাওয়ার লোক আমরা নই। এটা ভয় না, ওরা তো গুলি চালাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের কর্মীদের সংযত থাকতে বলছি। আমরা যদি একবার জনগণকে বলি, এই হামলার মোকাবেলা কর, জনগণ যদি মোকাবেলা করতে যায়, পরিণতি কী হবে, সেটা একটু চিন্তা করুন।

“সরকারকে বলব, এখনও সময় আছে আপনারা সংযত হোন। আপনারা হামলা-মামলা বন্ধ করুন, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে দিন।”

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “নির্বাচনে যেসব সহিংসতা হচ্ছে, সব কিছু সরকারের মদদে করা হচ্ছে। ওরা সশস্ত্র-নিরস্ত্র জনগণের উপর হামলা করছে।

“আমরা শুধু বলতে চাই, আমরা একটা যুদ্ধের মধ্যে আছি। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাহলে আমরাও যুদ্ধ করব, ৩০ ডিসেম্বর আমরা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেব।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, আতাউর রহমান ঢালী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, জগলুল হায়দার আফ্রিক, নুরুল হুদা মিলু চৌধুরী, বিকল্পধারার নুরুল আমিন পাটোয়ারী উপস্থিত ছিলেন।