উচ্চশিক্ষা হবে বিশ্বমানের

আব্দুল মান্নানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 12:28 PM
Updated : 26 Oct 2016, 04:24 AM

আগামী দশ বছরে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা আমি কোথায় দেখতে চাই-- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দশম বর্ষে পদার্পণের  প্রাক্কালে আমার কাছে এ প্রশ্ন রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে আমার মতামত দেওয়ার আগে আমি একটু  বর্ণনা করে নেব, স্বাধীনতার পর গত ৪৫ বছরে দেশ উচ্চশিক্ষায় কতটুকু এগিয়েছে, সেই বিষয়টি।

একটু লক্ষ করলেই আমরা সহজে অনুধাবন করতে পারব যে বাংলাদেশে কৃষির বাইরে যে গুটিকয়েক ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে গেছে, তার মধ্যে প্রথমটাই হল শিক্ষা।

স্বাধীনতার পরপরই সাত কোটি মানুষের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন অর্থাৎ, যারা নাম সই করতে পারে, সংকেত পড়তে বা বুঝতে পারে-- এ রকম মানুষের হার ছিল ৪০ শতাংশের নিচে। কিন্তু এখনকার সংজ্ঞা অনুযায়ী যদি সাক্ষর অর্থাৎ পত্রিকা পড়তে পারে, সাইনবোর্ড-লিফলেট পড়তে পারে-- এ রকম লোকের হার ছিল ওই হারের অর্ধেকের মতো। বর্তমানে এই হারটিতে নাটকীয় উন্নতি ঘটেছে।

মূলত দুটি কারণ শিক্ষায় তখন এই পিছিয়ে থাকার পেছনে  ক্রিয়াশিল ছিল: (১) মানুষের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণে তখন একটা অভ্যাসগত অনীহা কাজ করত এবং (২) মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণটা সামাজিকভাবে জরুরি বলে মনে করা হত না।

এ ছাড়া, স্কুলের সংখ্যাও ছিল নগণ্য আর সেসব স্কুলে যেতে সক্ষম এমন ছেলেদের সংখ্যা ছিল কম। যাতায়াতের অসুবিধায় মেয়েরা তো স্কুলে যেতই না, অনেক ছেলেও যেত না।

উচ্চশিক্ষা নিয়ে বলতে গেলে নিচের শিক্ষা থেকেই শুরু করতে হবে। গত ৪৫ বছরে নিম্ন পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বিপ্লব ঘটে। শুধু শহর নয়, দেখা যাচ্ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রাথমিক তো বটেই, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও আছে। আগেকার মতো, যাতায়াতের কারণে শিক্ষা শুরু না করা বা শুরু করে ঝরে পড়াটা এখন হাওর এলাকা, কিছু উপকূলীয় ও চরাঞ্চল ছাড়া মোটামুটি বিরল।

এ ছাড়া মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিয়ে একটা যুগান্তকারী ব্যাপার ঘটে গেছে। আগে তারা তো বলতে গেলে স্কুলে যেতই না, আর এখন নিয়মিত স্কুলে না যাওয়া মেয়েদের খুঁজে পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এইভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থী বাড়ার কারণে মাধ্যমিকেও তা বেড়েছে। আর এর ফলে দেখা যাচ্ছে উচ্চশিক্ষার জন্যেও শিক্ষার্থীর চাপটা আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন বেশি।

স্বাধীন বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা শুরু হয়েছিল চারটি সাধারণ ও দুটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে। বর্তমানে এটা বেড়ে পাবলিক, প্রাইভেট মিলিয়ে ১৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। এর বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে দুই হাজার ২০০ এর বেশি কলেজ। এসব উচ্চশিক্ষা বা টারশিয়ারি লেভেল এডুকেশন পাচ্ছে প্রায় ৩২ লাখ ছেলে-মেয়ে যা ইউরোপের বেশ কিছু উন্নত দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। আরও দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো তথ্য হল, আমাদের ১৬ কোটি জনগণের এক-তৃতীয়াংশই কোনো না কোনো পর্যায়ের শিক্ষায় নিয়োজিত আছে। এর অর্থ হল, উচ্চশিক্ষার উপর চাপটা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বই কমবে না। যেহেতু আমাদের ৪০ ভাগ জনসংখ্যাই ২৬ বছর বা তার নিচে, আমাদের জনগণ বিশ্বের অন্যান্য অনেক অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি কর্মক্ষম ও উৎপাদনশীল। এটা আমাদের বিরাট একটা সম্ভাবনা যা তাদের জনসম্পদে রূপান্তরিত করে বাস্তবায়ন করা যায়। আর এ জন্য শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। তবে কথা হল, সেই শিক্ষাটা কী হবে?

এই শিক্ষা যেমন ডিগ্রিনির্ভর হওয়ার দরকার আছে, আছে কারিগরী তথা পেশানির্ভর হওয়ারও। আমাদের যেমন গবেষণা ও শিক্ষকতার জন্য মাস্টার্স বা পিএইচডির দরকার আছে, একইভাবে দরকার আছে পেশাভিত্তিক, টেকনিক্যাল বা বৃত্তিভিত্তিক শিক্ষার, যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নার্স, টেকনিশিয়ান ইত্যাদির। মনে রাখতে হবে, এ দেশের যে ৮০ লাখ মানুষ মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কাজ করে, তারা যে রেমিট্যান্স পাঠায় তা ফিলিপিন্সদের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। একজন ফিলিপিনো বা ইন্ডিয়ান বা ইন্দোনেশীয় যে সময়ে দেশে ১০ ডলার পাঠায়, আমাদের শ্রমিকরা দক্ষতার অভাবে সেই সময়ে তিন ডলারের মতো পাঠাতে পারে। এখন আমরা যে ১৮-২০ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছি, এটা ৪০-৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারত যদি আমরা তাদের আরেকটু শিক্ষা দিয়ে, ‘স্কিলড’ করে পাঠাতে পারতাম।

এ জন্যই আমাদের কারিগরী শিক্ষায় জোর দিতে হবে। আশার করা হল, কিছুদিন আগেও যেখানে দেশের পাঁচ সাড়ে পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীর এক শতাংশ বা তারও কম ছিল কারিগরী শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত, এখন তা বেড়ে ১৪ শতাংশ অতিক্রম করেছে। আমরা লক্ষ নির্ধারণ করেছি, ২০২০ সালের মধ্যে এটা ২০ শতাংশে পৌঁছানোর জন্য। আমরা একদিকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কৃষিবিদ তৈরির পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষায় দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছি। এরা বিএসসি হয়তো পাস করছে না কিন্তু দক্ষতার কারণে তারা বিদেশে গিয়ে ভালো উপার্জনের জন্য সক্ষম হয়ে উঠছে। ভারতীয় বা ইন্দোনেশীয় বা ফিলিপিনো একজন নার্স মধ্যপ্রাচ্যে যে আয় করে, আমাদের একজন গৃহকর্মী তার এক-পঞ্চমাংশ আয় করছে। আমাদের শিক্ষার তাই ফোকাস থাকা দরকার কিভাবে এই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যাবে, তার উপরে।

বিশ্বায়নের এই যুগে সারা দুনিয়ায় চাকরি আছে, কিন্তু প্রশ্ন হল, সেই চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা আমাদের আছে কি না? তা যদি না থাকে, কিভাবে তা অর্জন করা যাবে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এমনকি আমরা প্রায় চার লাখ বিদেশিকে এ দেশে কাজের জন্য নিয়োগ দিয়েছি, যার অর্ধেকই অবৈধ। এরা বছরে পাঁচ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে, ট্যাক্স বা দেশের আয়ে কোনো ভূমিকা না রেখেই। আবার এর অন্তরালে ‘মানি লন্ডারিং’ও হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে গেলে, আমাদেরকে ওইসব ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে এবং তা কাজে লাগাতে হবে।

এবার আসি উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে। আমাদের উচ্চশিক্ষার পরিধি অনেক বেড়েছে সত্যি, কিন্তু মানটা এখনও কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছায়নি। এর পেছনে দায়ী প্রধান কারণ হল, দক্ষ শিক্ষকের অভাব।

দক্ষ শিক্ষকের অভাবটা সব পর্যায়েই আছে: প্রাথমিক, মাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে। দক্ষ শিক্ষক পাওয়ার কোনো শর্টকাট নেই। ভালো সুযোগ-সুবিধা না দিলে দক্ষ শিক্ষক হওয়ার মতো জনবল আকৃষ্ট করা যাবে না। পৃথিবীর দুটি দেশকে শিক্ষকদের স্বর্গ বলা হয় তা হল: ফিনল্যান্ড ও দ. কোরিয়া।

আমাদেরও খুঁজে বের করতে হবে কিভাবে আমরা ওদের মতো দক্ষ শিক্ষকবান্ধব পরিস্থিতি তৈরি করতে পারি।

যদিও শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমানে ভালো বাজেট বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এখনও বাজেটের অপ্রতুলতা আছে। গত বাজেটের ১৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ হলেও তার এক শতাংশের মতো খরচ হবে উচ্চশিক্ষায়, যা বেশ অপ্রতুলই। তবে এর বাইরেও আরও কিছু উৎস থেকে অর্থ উচ্চশিক্ষায় জোগান দেওয়া হচ্ছে। যেমন বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে যে উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্পটি চলছে, সেখান থেকে মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার জন্য অর্থায়ন হচ্ছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ।

দেশে উচ্চশিক্ষার চাহিদা যে বেড়েছে, সেটা একটা ভালো লক্ষণ। আমরা চাই, দেশে কারিগরি শিক্ষার চাহিদাও বাড়ুক। উচ্চশিক্ষার এই চাপ সামলাতে দেশে ৯৭টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে, যদিও সবগুলো এখনও কাজ শুরু করেনি। এদের মধ্যে ভালো, মন্দ দুই-ই আছে। আমরা চাই তারা মান বজায় রেখে কাজ করুক। যারা মান বজায় রাখতে ইচ্ছুক না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সেখানেও আইনি জটিলতা আছে। সেই জটিলতা নিরসন করে এ রকম একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করতে আমাদের দশ বছর লেগে গিয়েছিল। কিন্তু এই সময়কালে সেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক অপকর্ম করে ফেলেছে। আর তাতে অনেক শিক্ষার্থীর ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে আরও যে কাজটি চলছে, তা হল, একটি ‘অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল’ গঠন। এ সম্পর্কিত একটি খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। এই কাউন্সিল কাজ শুরু করলে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মান যাচাই করতে ইচ্ছুক হবে, তাদের জন্য একটা সুযোগ তৈরি হবে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণও সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারবেন। তবে কথা হল, মান নির্ধারণ ছাড়া অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল যদি অন্য কোনো কাজ করতে যায়, সে ক্ষেত্রে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

আমরা আশা করছি, প্রাইমারি শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা ইত্যাদিতে সরকার যে গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, সেটা তারা উচ্চশিক্ষার দিকেও প্রসারিত করবে। এ ছাড়াও স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষক প্রশিক্ষণের যে ব্যবস্থা আছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও প্রাতিষ্ঠানিক কিছু উদ্যোগ নেওয়া দরকার। মনে রাখতে হবে, একজন ভালো ছাত্র ভালো গবেষক হতে পারে, কিন্তু সে যে ভালো শিক্ষক হবেই, সে নিশ্চয়তা নেই। ভালো শিক্ষক হওয়ার জন্য যে মেন্টরিংয়ের দরকার, সেটার ব্যাপারেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

শিক্ষকদের কমিউনেশন স্কিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এর উন্নতি সম্ভব। কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য যেমন নায়েম আছে, স্কুল শিক্ষকদের জন্য যেমন পিটিআই স্কুল আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণেও সে রকম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা আমি অনুভব করি। সরকার চাইলে ও বাজেট বরাদ্দ দিলে মঞ্জুরি কমিশনের অবকাঠামোতেই এ রকম একটি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা সম্ভব। এখানে আরেকটা কথাও জানিয়ে রাখা জরুরি যে, সামর্থ্যবান কিছু কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল, পিএইচডি শুরু করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটা করা গেলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকগণ নিজ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় গবেষণা কর্মে আরও ভূমিকা রাখার পাশাপাশি শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানা সুবিধা ব্যবহার করতে পারি এবং সেগুলোর মাধ্যমে আমাদের উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে পারি। আমরা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সরকারের অর্থায়নে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীগণ এখন ইচ্ছা করলেই সেটা ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের যে কোনো পণ্ডিত ব্যক্তির লেকচার  শুনতে পারে। আবার তাদের লেকচার বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে শোনাতে পারে। এ ছাড়াও মঞ্জুরি কমিশন একটি ডিজিটাল লাইব্রেরির ব্যবস্থা করেছে যেখানে ২৭ হাজার বই ও সাত হাজার জার্নাল সাবসক্রাইব করা আছে। সব প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এসব বই ও জার্নালের সুবিধা নিতে পারে। এর বাইরেও মঞ্জুরি কমিশন ১০০টির মতো স্কলারশিপ দেয় এমফিল, পিএইচডি পর্যায়ে। উচ্চশিক্ষার মান রক্ষায় সংখ্যার চেয়ে গুণগত মানের দিকে নজরটা বেশি দেওয়া জরুরি।

উচ্চশিক্ষার মানটা প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। আমরা দেখি, আমাদের এখানে পড়াশুনা করা অনেকেই উন্নত বিশ্বে অনেক উচ্চমানে পৌঁছায়। সেই মানে না পৌঁছাতে পারি, ক্রমান্বয়ে আমরা যেন উন্নতি করে যেতে পারি, সে রকম একটা চেষ্টা আমাদের থাকতে হবে। আমাদের অনেক পরে শুরু করেও দ. কোরিয়া, ফিলিপিন্স, চীন যদি বিশ্বমানে পৌঁছুতে পারে, আমরাও চেষ্টা করলে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের উচ্চশিক্ষাকেও বিশ্বমানে পৌঁছাতে পারব।

এসব মাথায় রেখে আমরা সবাই যদি একটু জোর প্রচেষ্টা চালাই, আমার ধারণা, আগামী দশ বছরে এ দেশের উচ্চশিক্ষা পরিস্থিতি বিশ্বমানের কাছাকাছি পৌঁছুতে পারবে। আমি আশা করব, আমাদের বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকরাও হয়তো তখন নোবেল পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন। আমরা চাই, দশ বছর পর এই বাংলাদেশ আর যেন সেই বাংলাদেশ না থাকে, বরং একটি সত্যিকারের মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়। এখনও ৭% হতদরিদ্রের যে হার আছে তা কমে ১-২% এ যেন নেমে আসে।

আমি মনে করি, দক্ষ জনশক্তি পেতে হলে উচ্চশিক্ষাকে তো অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে, পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, ইত্যাদিতেই গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষিশিক্ষায় উন্নতি হয়েছিল বলেই আজ আমরা তিনগুণ ফসল উৎপাদন করতে পারছি। একইভাবে উচ্চশিক্ষার গুণগতমান বাড়িয়েও আমরা আগামী দশ বছরে অন্যান্য ক্ষেত্রেও উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারব।

অনুলিখন: কাজী আহমদ পারভেজ