রাষ্ট্র মানবাধিকার নিশ্চিত করবে

ড. মিজানুর রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2016, 06:39 AM
Updated : 23 Oct 2016, 02:57 PM

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম দশম বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। এর প্রাক্কালে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, আগামী দশ বছরে মানবাধিকার পরিস্থিতি আমি কোথায় দেখতে চাই।

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমি খুবই প্রাসঙ্গিক মনে করছি এটা বলা যে, গত দশ বছরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে আমরা কতটুকু এগিয়েছি। আমার সৌভাগ্য যে, সেই দশ বছরের মধ্যে ছয় বছর আমি মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলাম। তাই এই সময়কালে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে যেসব পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তা খুবই কাছ থেকে দেখার, তাতে ভূমিকা রাখার সুযোগ আমার হয়েছিল।

লক্ষ করবেন, আমাদের মানবাধিকারের যে সংগ্রাম, তা বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে আজকের এই রূপ পরিগ্রহ করেছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর, শুরুতেই আমি যেটা লক্ষ করলাম তা হল, মানবাধিকার সম্পর্কে এ দেশে আমাদের সচেতনতা ছিল খুবই একটি প্রাথমিক পর্যায়ের। নীতিনির্ধারক থেকে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট কোনো ধারণা রাখতেন না। এটা বলছি এ কারণে যে, আজ থেকে দশ বছর আগে মানবাধিকার মানে যা বোঝাত, তা হল, দেশের নাগরিকদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার। তার অর্থ ছিল এই যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছে, কী ভূমিকা পালন করছে, কিভাবে আচরণ করছে--এগুলোই যেন ছিল মানবাধিকারের একমাত্র বিষয়বস্তু।

এগুলো যে গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয়ে কেউ কোনো সন্দেহ প্রকাশ করে না। কিন্তু এর বাইরে দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারও যে সমান গুরুত্ব বহন করে, এই কথাটা কিন্তু আমরা উচ্চারিত হতে দেখিনি। আমরা নাগরিকরা যেমন এই বিষয়গুলো পাশ কাটিয়ে গিয়েছি, রাষ্ট্রও তেমনই দেখিয়ে গিয়েছে যে নাগরিকদের নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করলেই তার দায়িত্ব পালন করা হয়ে যাচ্ছে। ভাবটা ছিল এ রকম যে, এগুলো অধিকারের কোনো ব্যাপার না, এগুলো হল নাগরিকদের কল্যাণের ব্যাপার। যা পুরণ করতে পারলে ভালো হয়, তবে না করলেও ক্ষতি নেই। উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এসব কল্যাণের কিছু কিছু চুইয়ে পড়বে জনগণের উপরে, আর সেটাই যথেষ্ট।

গত দশ বছরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় যে উত্তরণটি ঘটেছে তা হল, মানবাধিকার নিয়ে এই ভ্রান্ত ধারণাটির উপর আমরা আঘাত করতে সমর্থ হয়েছি। এখন কিন্তু মানবাধিকারের ধারণায় কেবল পুলিশ- র‌্যাব কী করছে, কী করছে না, তা একমাত্র বিষয় নয়। বরং সরকারি হাসপাতালে ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে কি না, ডাক্তার আছে কি না, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ আছে কি না, আমরা দরকারি তথ্যগুলো যথাযথভাবে পাচ্ছি কি না-- এর সবগুলোই এখন মানবাধিকারের বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ছাড়াও আমি শিয়া হই বা আহমদিয়া সম্প্রদায়ের, আমি আমার ধর্মচর্চা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে করতে পারছি কি না, অর্থাৎ আমার ধর্মপালনের অধিকার আছে কি না, সংস্কৃতিচর্চার অধিকার আছে কি না-- সেগুলোও আমরা মানবাধিকারের অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি।

আমাদের গত দশ বছরে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় ফসল হল এই যে, রাষ্ট্র এখন বুঝতে পারছে, মানবাধিকার উপেক্ষা করে চলা সম্ভব না।

লক্ষণীয় যে, শুধু অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনেই না, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও আজ মানবাধিকার নিশ্চিত করাটা একটি নির্ণায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মানবাধিকার যে এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আর কোনো প্রশ্ন নেই; যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয়ে খানিকটা বিতর্ক আছে। তারপরও মানবাধিকার নিশ্চিত করাটা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখন আন্তর্জাতিকভাবেই সমাদৃত ও স্বীকৃত বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছে।

উন্নয়নের নামে এই যে যেনতেন কর্মকাণ্ড আমরা গ্রহণ করতে পারছি না, এটাও কিন্তু একটা শুভ লক্ষণ। এই যে আজ রামপাল নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে, এই বিতর্কটা করতে পারাও কিন্তু সেই শুভ লক্ষণের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এর মধ্যে দিয়ে জবাবদিহিতার সুযোগ, সংশোধনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। কোনো কিছুই যে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে  নয়, জনগণ যে প্রশ্ন করতে পারে, আর রাষ্ট্রকে যে প্রশ্ন করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে, আবার সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় যে রাষ্ট্রের আছে-- এ রকম একটা পরিস্থিতি আজ তৈরি হয়েছে। এ রকমের পরিস্থিতি কিন্তু আগে ছিল না। এটা যে মানবাধিকার পরিস্থিতির একটা উন্নতি, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ নেই।

গত এক দশকে মানবাধিকারের আরেকটা যে উন্নয়ন আমরা লক্ষ করেছি তা হল, নারীর ক্ষমতায়ন। এই ব্যাপারটা আন্তর্জাতিকভাবেও স্বীকৃত। তবে যে ব্যাপারগুলো আমরা নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে তুলে ধরি, তার সব ক্ষেত্রেই হয়তো ততটা অগ্রগতি এখনও হয়নি। এই যেমন আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদেই নারীরা অধিষ্ঠিত আছেন। এই পদ-পদবি দিয়েই যে নারীর সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন যে হয় না, সেটা বোঝা দরকার। ঠিক যেমন, হিলারি ক্লিনটন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেই যে আমেরিকার নারীদের অবস্থা সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে যাবে, এমন উপসংহার আমরা টানতে পারি না। এ রকম নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নারীর অবস্থার যে উন্নয়ন ঘটেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা প্রক্রিয়ার আজ যে নারীর সংশ্লিষ্টতা বাড়ছে, এটাও কিন্তু আমাদের পাশাপাশি স্মরণে রাখতে হচ্ছেই।

আরেকটি ক্ষেত্রে দারুন একটি সচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি হল, শিশু অধিকারের ক্ষেত্র। শিশুরা যে বিশেষ সুরক্ষার দাবিদার এবং রাষ্ট্র যে সেই অধিকার পূরণে বাধ্য, সেই জায়গাটিতেও আমরা ধীরে ধীরে পৌঁছুচ্ছি। এ ব্যাপারে অনেক কাজ হচ্ছে এবং আইনের দিক দিয়ে আমরা শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। অবশ্য সেসব আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা এখনও রয়ে গেছে।

কিছু কিছু দুর্ঘটনা ও দুঃখজনক ঘটনার পর নেওয়া পদক্ষেপের কারণে এ দেশে এখন শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় অনেক উন্নতি ঘটেছে। একসময় পোশাক শ্রমিকদের অধিকারবিহীন যে অবস্থা ছিল, দুর্ঘটনা-পরবর্তী সচেতনতা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপ ও সহায়তার কারণে তা থেকে যে উত্তরণ আমরা ঘটতে দেখলাম, তা শ্রমিকদের মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি বলা আর অত্যুক্তি হবে না।

শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত কী উন্নতি হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু সংখ্যাগত বিপুল সম্প্রসারণ যে ঘটেছে, সেটা কিন্তু ঠিক। পাশাপাশি জনগণের শিক্ষাগত অগ্রগতির জন্য রাষ্ট্রের যে সরাসরি অংশগ্রহণের দায় আছে, এটাও দাঁড় করানো গিয়েছে। রাষ্ট্র এটা মেনেও নিচ্ছে। সুতরাং এটাকেও আমরা মানবাধিকারের একটা অগ্রগতি হিসেবে চিহ্নিত করতে পারছি।

সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সম্বলিত মানবাধিকারে এত অগ্রগতির পরেও একটা বিষয়ে কিন্তু এখনও কথা বলার সুযোগ রয়েই যাচ্ছে। তা হল, এই অধিকারগুলো কিন্তু এখনও মানবাধিকার হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত নয়, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যেন রাষ্ট্রীয় চ্যারিটির অংশ। চ্যারিটি নিয়ে জনগণের বেঁচে থাকাটা সম্মানের নয়। অধিকার বলে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকাটাই হল প্রতিটি নাগরিকের চাওয়া, যা পুরণের দায় রাষ্ট্রের উপর বর্তায়।

একটা উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় বয়স্কভাতার মতো একটা প্রশংসনীয় ব্যবস্থা চালু হয়েছে। বয়স্ক হওয়ার পর একজন যে রাষ্ট্রের কাছ থেকে এ রকম ভাতাপ্রাপ্তির অধিকার অর্জন করেন, এই স্বীকৃতিটা দেওয়ার জন্য আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু যখনই স্লোগান হিসেবে লেখা দেখতে পাই-- “বয়স্কভাতা/ শেখ হাসিনার মমতা”, তখন আর এটা অধিকার থাকে না, হয়ে পড়ে দয়া-দাক্ষিণ্য। আর এ রকম দয়া-দাক্ষিণ্য পাওয়া জীবন তখন আর সম্মানের থাকে না।

গত দশ বছরে একটা ব্যাপারে মানবাধিকার প্রশ্নের মুখে পড়েছে আর তা ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা থেকেই। এটা আগে থেকে ঘটে আসছিল ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টার’-এর নামে। পরে আমরা নতুন একটা অভিজ্ঞতা পেলাম ‘গুম হওয়া’ সম্পর্কিত। দেশের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার আছে ‘ফ্রিডম ফ্রম ফিয়ার’-এর; আতংকমুক্ত জীবনযাপনের। কী একটা ভয় অনেককেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া আজ খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে, নাগরিক হিসেবে নিঃশঙ্ক চিত্তে বসবাস করতে না পারলে আমাদের অন্য অনেক অধিকারই অর্থহীন হয়ে যাবে।

আরেকটা জায়গায় উদ্বেগের কারণ রয়ে গেছে। তা হল, আইনের শাসনের দুর্বল প্রয়োগ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইনের শাসনের অনুপস্থিতি। খারাপ আইনও যদি থাকে, তার প্রয়োগ হলে কিন্তু সমাজে একটা সার্টেনিটি থাকে। কিন্তু আইন যত ভালই হোক, তার প্রয়োগ যদি না থাকে সেটা আরও খারাপ। কারণ এ থেকে যে আনসার্টেনিটির উদ্ভব হয়, তা নাগরিকের মনোবল ক্ষুণ্ন করে দেয়। নাগরিকের অন্য সব অর্জন অর্থহীন করে দেয়।

আইনের প্রয়োগ হওয়ার কথা বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে। বিচারব্যবস্থা যখন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক চাপে অথবা পেশিশক্তি বা অর্থের কাছে বন্দি হয়ে পড়ে, যথাযথভাবে আইনের প্রয়োগ করতে না পারে, সাধারণ জনগণের কাছে তখন শেষ আশা-ভরসার স্থলটি আর থাকে না। সাম্প্রতিককালেও বেশ বড় বড় ও চাঞ্চল্যকর কিছু ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেগুলোর কোনো সুরাহা যে হচ্ছে, আপাতদৃষ্টিতে তা বোঝা যাচ্ছে না। আবার এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই যে তেমন কোনো সুবিচারের মুখ দেখতে পাবে না-- এ রকম একটা উপসংহার কিন্তু টানা যায়। এ রকম একটা পরিস্থিতি গণতন্ত্রের জন্য বিরাট একটা মাথাব্যথার কারণ হওয়ার কথা। যারা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাদের এ বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

এ তো গেল প্রেক্ষাপট, এবার তাহলে বলি আগামী দশ বছরে বাংলাদেশকে আমি কোথায় দেখতে চাই।

এ বিষয়ে আমার একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। আমি যখন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জনাব জিল্লুর রহমান সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাই, উনি আমাকে বলেছিলেন, “ড. মিজান, মানবাধিকার নিয়ে যে কাজই করেন, আমি চাই একটা জিনিস আপনি সবসময় স্মরণে রাখবেন। আর তা হল, বাংলাদেশের জন্মই হয়েছে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার তাগিদ থেকে। মুক্তিযুদ্ধটা হয়েছিলই মানবাধিকার অর্জনের জন্য। বাংলাদেশটা হল মানবাধিকারের সংগ্রামের ফসল। সুতরাং বাংলাদেশে মানবাধিকারের উপরে আর কোনো কিছুর অবস্থান হতে পারে না।”

এই যে কথাটা উনি বলেছিলেন, এটা উনি বলেছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে। তা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর কাছের একজন মানুষ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে যতটা চিনেছেন, জেনেছেন, তাঁর দর্শন সম্পর্কে যতটা পরিচিত হয়েছেন, আমার মনে হয়েছে, তারই একটা প্রতিফলন এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন।

আমরা এখন ওই বাংলাদেশ দেখতে চাই, যে বাংলাদেশ হবে মানবাধিকারের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল একটি রাষ্ট্র। আর সেটা শুধু মাত্র নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকারে নয়, আমাদের অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক অধিকারে সমৃদ্ধ। এ সবগুলো অধিকার সমান গুরুত্ব যেন বহন করে আর রাষ্ট্র সেগুলো নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব ও কর্তব্য মনে করে, সে জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন তা যেন নেওয়া হয়।

লক্ষণীয় যে, মানুষ হিসেবে যে মৌলিক চাহিদাগুলোর কথা আমরা জানি, যেমন: অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ইত্যাদি সাংবিধানিকভাবে কিন্তু এখনও মৌলিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত নয়। সাংবিধানে বলা হয়েছে, এগুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। আবার সংবিধানিকভাবেই এ মূলনীতিগুলো আদালত দ্বারা বলবৎযোগ্য নয়। তার মানে, আমার মৌলিক চাহিদা বা মূলনীতির ব্যাপারে আমি আদালতের আশ্রয় পাব না। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র নেপাল যে সংবিধান গ্রহণ করল সেখানে কিন্তু খাদ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার-- এসব অধিকার তারা মৌলিক অধিকার হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর অর্থ হল, রাষ্ট্রের দায়িত্ব এখন নাগরিকের এই অধিকারগুলো নিশ্চিত করার। অথচ আমরা কিন্তু এখনও সেই চ্যারিটির জায়গায় রয়ে গেছি। আমার মনে হয়, ‘এনাফ ইজ এনাফ’। সময় এসেছে মানবাধিকার হিসেবে গণ্য হওয়ার মতো প্রতিটা বিষয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে গণ্য করার। আর আমি চাই তা-ই যেন করা হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আবার যখন নতুন দশকে পা রাখবে, আমি যদি বেঁচে থাকি, আমি যেন তখন বলতে পারি, রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তাঁর প্রতিটি নাগরিকের প্রতিটি মৌলিক অধিকার মানবাধিকার হিসেব গণ্য করছে। এ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি অন্যান্য উন্নত দেশের মতোই বিশ্বমানে উন্নীত হয়েছে। আমি জানি, একদিনে তা অর্জন সম্ভব নয়, কিন্তু নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে এমন একটা পরিবেশ যেন দৃশ্যমান হয়, যাতে করে আমরা বুঝতে পারি, মানবাধিকার পরিস্থিতির যে অগ্রগতি হচ্ছে তা একসময় সব নাগরিকের সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে।

অনুলিখন: কাজী আহমদ পারভেজ