গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য এ জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে।
Published : 06 Feb 2025, 10:48 PM
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার দাবি বিভিন্ন সময়ে উঠলেও এক জরিপের সূত্রে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বলছে, এ দুই মাধ্যমকে সরকারি নিয়ন্ত্রণেই রাখার পক্ষে অধিকাংশ মানুষ।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য ওই জরিপ পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশের ৪৫ হাজারের বেশি খানায় এটি পরিচালনা করা হয়।
জরিপে দেখা যায়, মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংষ্করণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। তবে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম হিসাবে রেডিওর প্রাসঙ্গিকতা তলানিতে।
জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত দেখার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। তবে বেশিরভাগ উত্তরদাতাই মনে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত।
এতে দেখা যায়, ৫৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ মানুষ বলেছেন, বিটিভি সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। আর বাংলাদেশ বেতারের ক্ষেত্রে এ মত দিয়েছেন ৫৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ মানুষ।
৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ মানুষ বিটিভিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। বিটিভি সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত কি-না, এমন প্রশ্নে প্রায় ২ শতাংশ ‘বলতে অনিচ্ছুক’ ছিলেন আর ১০ শতাংশ বলেছেন ‘জানা নেই’।
বাংলাদেশ বেতারকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিপক্ষে মত দিয়েছেন জরিপ অংশগ্রহণকারীদের ৩০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। ‘বাংলাদেশ বেতারকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত বলে আপনি মনে করেন কি-না’- প্রশ্নে ২ শতাংশ ‘বলতে অনিচ্ছুক’ এবং ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ ‘জানা নেই’ উত্তর দিয়েছেন।
রাষ্ট্র সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসাবে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, শক্তিশালী ও বস্তুনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ করতে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন’ গঠন করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সাংবাদিক কামাল আহমেদ ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই কমিশনের প্রধান। গত ১৮ অক্টোবর গঠিত কমিশন ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য করা জনমত জরিপের সারসংক্ষেপ তুলে ধরে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন বলছে, জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে জনমনে ক্ষোভের প্রেক্ষাপটে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরনের জরিপ দেশে এটিই প্রথম।
গণমাধ্যম বিষয়ক জাতীয় এ জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ বলেছেন, তারা মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না। কারণ হিসাবে ৪৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেছেন, খবরের কাগজ পড়ার প্রয়োজন মনে করেন না তারা।
টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এ হার ৫৩ শতাংশের বেশি। তবে জরিপে অংশ নেওয়া ৬৫ শতাংশ মানুষ টেলিভিশন দেখার কথা বলেছেন।
পরিসংখ্যানে রেডিওর অবস্থা বেশি নাজুক। ৯৪ শতাংশ বলেছেন তারা রেডিও শোনেন না। তাদের ৫৪ শতাংশ বলেছেন তারা রেডিও শোনার প্রয়োজন মনে করেন না। প্রায় ৩৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী রেডিও সেটের অপ্রাপ্যতার কথা বলেছেন।
দেশের ৬৪ জেলায় ৪৫ হাজার খানা (হাউজহোল্ড) থেকে ১০ বছরের বেশি বয়সের সদস্য থেকে উত্তর সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গণমাধ্যমের বিস্তার, মানুষের সংবাদ গ্রহণের অভ্যাসের পরিবর্তন, গণমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, মুদ্রিত খবরের কাগজ না পড়লেও ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা মোবাইল ফোনে অনলাইন সংষ্করণ দেখেন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাবে পত্রিকার অনলাইন সংষ্করণ দেখেন বলে জানিয়েছেন আড়াই শতাংশ উত্তরদাতা।
সামগ্রিকভাবে ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা গণমাধ্যমের খবরের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহারের হার ৭ শতাংশ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে খবরের জন্য ৩১ শতাংশ উত্তরদাতার আস্থা রয়েছে ফেসবুকে। এরপর ইউটিউব, ১৬.৫ শতাংশ। কোনো কিছু শেখা বা জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে শিক্ষকের ওপরই ভরসা বেশি। এক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ উত্তরদাতার কাছে শিক্ষকরাই সর্বাধিক বিশ্বাসযোগ্য।