ঢাকার র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ১৮ বছর পূর্তি উদযাপনের আনন্দ আয়োজন পরিণত হয় অতিথিদের মিলনমেলায়।
Published : 19 Nov 2024, 08:34 PM
বাংলাদেশে ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমের যে সূচনা হয়েছিল দেড় যুগ আগে, দুর্দমনীয় সেই যাত্রার ১৮ বছর পূর্তি উদযাপন করছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে ঘিরে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর র্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের বলরুম পরিণত হয় সব শ্রেণি পেশার সব বয়সী অতিথিদের মিলনমেলায়।
বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আঠারো উদযাপনের এ আনন্দ আয়োজনে সামিল হন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সব অঙ্গনের সারথীরা।
এ আনন্দানুষ্ঠানে সরকার ও রাজনৈতিক দলের নীতি-নির্ধারকরা যেমন এসেছেন, তেমনই ছিলেন আইনজীবী, ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী-সংগঠক, ক্রীড়া তারকা, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা আর নানা ক্ষেত্রে বাঁক বদলের সাক্ষীরা।
অতিথিরা উদযাপন স্থলে আসার পর পরিচিতদের দেখতে পেয়ে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি গল্পে মেতে ওঠেন।
তাদের খোশ গল্পের মধ্যে একে একে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদযাপনে সঙ্গী হতে আসেন বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুজ্জামান রিপন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
এসেছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির একদল তরুণ তুর্কি। তাদের মধ্যে ছিলেন কেন্দ্রীয় সংগঠক আতাউল্লাহ, সাইফুল্লাহ হায়দার ও মনিরা শারমিন।
অতিথিদের আসন গ্রহণ এবং তাদের সঙ্গে প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর কুশল বিনিময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শুরুর সময় ঘনিয়ে আসে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী মঞ্চে উঠে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা দেন। ১৮ বছরের পথ চলার অম্ল মধুর গল্পটা অতিথিদের শোনান তিনি। তার বক্তব্যের মধ্যে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম নিয়ে ছোট দুটি ভিডিও দেখানো হয়।
বক্তৃতা শেষে প্রধান সম্পাদক অতিথিদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে আসেন ১৮ উদযাপনের কেক কাটতে।
কেক কাটার আগে দেশের বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান জুলাই-অগাস্ট গণ আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে সবাইকে এক মিনিট নিরবতা পালনের আহ্বান করেন।
প্রধান সম্পাদক সবাইকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান। এর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হয়; পুরো অনুষ্ঠানটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ১৮ বছর পূর্তির এ আয়োজনের সঙ্গী হয়েছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ও কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান সাংবাদিক কামাল আহমেদ, বিএসএমএমইউর এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম, নিজেরা কবি’র সমন্বয়কারী খুশী কবির।
বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমান, আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মনজু, তথ্য সচিব মাহবুবা ফারজানা, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, এনটিভির বার্তা বিভাগের প্রধান জহিরুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সিএনই মোস্তফা আকমল ও প্রবাসী সাংবাদিক সৈয়দ নাহাস পাশাও ছিলেন অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে আলো ছড়ান জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও মারিয়া মান্দা।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা রকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের আয়োজনে যোগ দেন।
চিত্রনায়ক আলমগীর ও ইলিয়াস কাঞ্চন, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, যাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন, একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল আলম, সঙ্গীতশিল্পী সুজিত মুস্তাফা, সঙ্গীতশিল্পী মেহরীন মাহমুদ এসেছিলেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত মেরি মাসদুপুই, অস্ট্রেলিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার নার্ডিয়া সিম্পসন, ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রদূত লিও টিটো এল অসান জুনিয়রসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও আয়োজনে যোগ দেন।
এসেছিলেন সাবেক আইজিপি নূরুল হুদা, সাবেক সিএজি মুসলিম চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মাইনুল ইসলাম।
আয়োজনে অংশ নেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন, সন্ত্রাস বিরোধী ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নাগরিক আন্দোলনের নেতা রফিউর রাব্বি।
বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক অর্থনীতিবিদ মোস্তফা কে মুজেরী, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) নবনির্বাচিত পরিচালক মিনহাজ মান্নান, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, আনোয়ার সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজম খান, সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কর্মসংস্থান ব্যাংকের জিএম শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার হাজির হয়েছেন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ আয়োজনে।
অভিনেতা তারিক আনাম খান, আজিজুল হাকিম, মিশা সওদাগর, আহসান হাবিব নাসিম, বটতলা নাট্যগ্রুপের প্রধান আলী হায়দার সিদ্দিকী, নাট্যকার মাসুম রেজা, নাট্য গবেষক কামালউদ্দিন কবির, অভিনেতা রহমত আলী ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি, চিত্রশিল্পী রশীদ আমিন হাজির হয়েছেন ১৮ উদযাপনে।
যোগ দিয়েছেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু ও মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বন্ধু খেতাবে ভূষিত ব্রিটিশ নাগরিক জুলিয়ান ফ্রান্সিস, ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরন, ক্রীড়াবিদ নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
উদযাপন স্থল বলরুমের প্রবেশ পথেই ডিজিটাল স্ক্রিনে অডিও-ভিজ্যুয়াল আর বিলবোর্ডে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হার না মানা পথ-পরিক্রমার অংশবিশেষ তুলে ধরা হয়।
অডিও-ভিজ্যুয়ালে উঠে আসে বহু বাধার মুখেও বিগত দিনে পাঠক-দর্শকদের ভরসা জায়গা হয়ে ‘সবার আগে সঠিক সংবাদ’ দেওয়ার যাত্রা।
বিলবোর্ডের উপস্থাপনায় উঠে আসে ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর ডিজিটাল মাধ্যমে প্রথম সংবাদ সেবা থেকে শুরু করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনেক প্রথমের জন্ম দেওয়ার সচিত্র ঘটনা বলি।
২০০৭ সালে মোবাইল ফোনে দেশের প্রথম অ্যালার্ট সার্ভিস থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়্যাপ সাইট চালু, নাগরিক সাংবাদিকতার প্রথম বাংলাদেশি সাইট, শিশুদের জন্য প্রথম সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট, বাংলায় খবরের প্রথম এসএমএস সার্ভিস রয়েছে এই তালিকায়।
তুলে ধরা হয় কেবল সংবাদ প্রকাশের কারণে কীভাবে বহু বার বহু অজুহাতে ওয়েবসাইট বন্ধ করা হয়েছিল; চেষ্টা করা হয়েছিল সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধের।
ডিজিটাল বিলবোর্ডের উপস্থাপনায় উঠে আসে ২০১৯ সালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে বিনিয়োগের খবরের পর দুদকের মামলা আর নানা হয়রানির চিত্র।
ওই বিনিয়োগকে কেন্দ্র করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের যে অভিযোগ দুদক করেছে, সেটাকে ‘ভিত্তিহীন ও মিথ্যা’ হিসাবে অভিহিত করে আসছিলেন বিডিনিউজে টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।
এর মধ্যে ২০২১ সালে পূর্বে প্রকাশিত খবর ওয়েবসাইট থেকে সরানোর দাবি নিয়ে আসে প্রভাবশালী একটি ব্যবসায়িক গোষ্ঠী। তাদের কাছে মাথানত না করায় ‘মিথ্যা অভিযোগে’ জেলায় জেলায় মামলার আশ্রয় নেয় ওই প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠরা।
বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের প্রধান সম্পাদক তৌফিক খালিদীর বিরুদ্ধে দুদক মামলা প্রত্যাহার করে নিলে ধারাবাহিক সেই হয়রানির আপাত অবসান হওয়ার চিত্র উঠে আসে উপস্থাপনায়।