বিমান ধ্বংস নিয়ে চলছে ‘স্বার্থ হাসিলের খেলা’: পুতিন

ইউক্রেইনে মালয়েশীয় উড়োজাহাজ ভূপাতিত হয়ে প্রাণহানির পর সমালোচনার মুখে থাকা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই ঘটনা নিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে স্বার্থ হাসিলের অভিযোগ তুলেছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2014, 05:51 PM
Updated : 21 July 2014, 05:54 PM

তিনি মনে করেন, গত মাসের শেষে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলে নতুন করে সামরিক অভিযান শুরু না করলে এই বিয়োগান্তক ঘটনা এড়ানো যেত।

সোমবার এক বিবৃতিতে দিয়ে ফ্লাইট  এমএইচ-১৭ এর বিধ্বংস হওয়ার ঘটনার জন্য কার্যত ইউক্রেইন সরকারকেই দায়ী করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

বিবৃতিতে  শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিক উপায়ে ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলের সংঘাতকে সামরিক পর্যায় থেকে আলোচনার পর্যায়ে নিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে সার্বিক পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেন পুতিন।

গত ১৭ জুলাই ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২৯৮ আরোহী নিয়ে ওই বোয়িং বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তা ছোড়ার জন্য রুশপন্থি বিদ্রোহীদের দায়ী করে ইউক্রেইন সরকার। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও একই কথা বলেন।

ক্রিমিয়া প্রদেশ ইউক্রেইন থেকে আলাদা হয়ে রুশ ফেডারেশনে যোগ দেয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। ইউক্রেইন বলছে, তার দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে রুশ সরকার।   

পুতিন বলেন, “রক্তপাত বন্ধ করে আলোচনা শুরুর জন্য সংঘাতে লিপ্ত সব পক্ষকে আমরা বার বার আহ্বান জানিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, ২৮ জুন পূর্ব ইউক্রেইনে সামরিক অভিযান শুরু না হলে সম্ভবত এই বিয়োগান্তক ঘটনা এড়ানো যেত।

“একই সঙ্গে এই মর্মান্তিক ঘটনাকে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলে ব্যবহার করা কারোরই উচিত নয় এবং এই অধিকারও কারোর নেই। আমাদের বিভক্ত করার বদলে এধরনের বিয়োগান্তক ঘটনায় সব মানুষের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিৎ।”

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এই অঞ্চলে চলমান পরিস্থিতির জন্য যারাই দায়ী তাদেরকে নিজেদের দেশের জনগণের সামনে এবং এই বিপর্যয়ে নিহত নাগরিকদের দেশের জনগণের সামনে বৃহত্তর দায় বহন করতে হবে। 

উড়োজাহাজ বিধ্বস্তস্থলের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিরাপদে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছু অবশ্যই করা হবে বলে বিবৃতিতে জানান তিনি।

“দনবাস এলাকা ও দনেস্কের প্রতিনিধিরা, ইউক্রেইনের জরুরি পরিস্থিতি বিষয়ক মন্ত্রী এবং মালয়েশীয় বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যেই ঘটনাস্থলে কাজ করছেন। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।”

এজন্য তিনি ঘটনাস্থলে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) অধীনে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশেষজ্ঞ দল ও একটি আন্তর্জাতিক কমিশনের কাজ করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি।

“তাদের পূর্ণ ও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের অবশ্যই সবকিছু করতে হবে এবং তাদের প্রয়োজনীয় মানবিক তৎপরতার জন্য পথ করে দিতে হবে।”

মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার পর বিমানের ‘ব্ল্যাকবক্স’ নিয়ে যাওয়া নিয়েও রাশিয়া ও ইউক্রেইন কর্তৃপক্ষ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করে আসছে।

মস্কোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ তুলে তাদের সমর্থন করা থেকে বিরত থাকার জন্য রাশিয়ার প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন ওবামাও।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ইউক্রেইনের সহিংসতা আর অস্থিরতা দমানোর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতা আছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। পুতিন সিদ্ধান্ত নিলে ইউক্রেইনে অস্ত্র সরবরাহ ও লড়াই দুইই বন্ধ হত। কিন্তু তিনি তা করেননি।”

অন্যদিকে বিমান ভূপাতিত হওয়ার জন্য বিবৃতিতে দিয়ে কার্যত আবারো ইউক্রেইনকেই দায়ী করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

রাশিয়া সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউক্রেইনের দোনেস্ক শহরের কাছের রাবোভো গ্রামে এমএইচ১৭ বিধ্বস্ত হলে ২৯৮ জন আরোহীর সবাই নিহত হন।

আমস্টারডাম থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরগামী ওই ফ্লাইটে নেদারল্যান্ডসের অন্তত ১৮৯ জন নাগরিক ছিলেন।

মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের তথ্য অনুযায়ী,  ওই ফ্লাইটে ১৫ জন ক্রুসহ মালয়েশিয়ার ৪৪ জন নাগরিক ছিলেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ২৭ জন,  ইন্দোনেশিয়ার ১২ জন এবং যুক্তরাজ্যের নয়জন নাগরিক ছিলেন।

ঘটনা খতিয়ে দেখতে শুক্রবার ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন অর্গানাইজেশন ফর দ্য সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) তদন্ত দলের সদস্যরা।

তবে কাজ করতে তারা বাধা পেয়েছেন বলে ওসএসসিই-এর পক্ষ থেকে এই অভিযোগ করা হয়েছে। এজন্যও রুশপন্থি বিদ্রোহী ও ইউক্রেইন সরকার পরস্পরকে  দোষারোপ করছে।