খনি থেকে বাজার, সবক্ষেত্রেই সব কাজের দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে প্রযুক্তি। আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে রোবট। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, মানুষ প্রযুক্তির কাছে চাকরি হারাচ্ছে, আর বাড়ছে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান সংকটের আশঙ্কা।
Published : 06 May 2016, 05:30 PM
এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলস-এ মিলকেন ইনস্টিটিউট’স গ্লোবাল কনফারেন্স-এ এখন পর্যন্ত অন্তত চারটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, জানিয়েছে রয়টার্স। ম্যাককিনজি গ্লোবাল ইনস্টিটিউট-এর একজন অংশীদার মাইকেল চুই মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ‘ইজ এনি জব ট্রুলি সেইফ?’ শীর্ষক এক বক্তৃতায় বলেন, “স্বয়ংক্রিয়তার যেসব সুবিধা আমরা দেখতে পাই, তা হল উন্নততর মান এবং তুলনামূলক কম ভুল, তবে অনেক ক্ষেত্রেই এটি পরিশ্রমও কমায়।”
রবিবার শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে ৩ হাজার ৫শ' আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারী ‘দ্য ফিউচার অফ হিউম্যান কাইন্ড’ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন। প্রযুক্তি শুধু কম মজুরি এবং কম দক্ষতার চাকরিরই বিলোপ ঘটায়নি, এমন বিষয়ও তুলে ধরেছেন ৭শ’রও বেশি বক্তার মধ্যে কয়েকজন, জানিয়েছে রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়ার খনিতে রোবটচালিত ট্রাক, কর্পোরেট মামলাসংক্রান্ত সফটওয়্যারের বড় বড় ডিগ্রিধারী চাকরিজীবীর জায়গা নিয়ে নেওয়া এবং ওয়াল স্ট্রিটে এমবিএ বা পিএইচডিধারী ব্যাংকারদের চাকরিগুলোও স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো তারা উল্লেখ করেছেন।
গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড-এর আংশিক মালিকানাধীন আর্থিক সেবা বিশ্লেষণা প্রতিষ্ঠান কেনশো-এর প্রধান নির্বাহী ডেনিয়েল ন্যাডলার বলেন, “এক স্প্রেডশিট থেকে অন্য আরেকটিতে তথ্য তুলে রাখা ধরনের কাজগুলোকেই সয়ংক্রিয় করা হবে।” তিনি আরও বলেন, “দশ বছরের মধ্যে গোল্ডম্যান স্যাকস এটি চালু করবে। জেপিমরগানও করবে। তারা কর্ম সম্পাদনের উপায় এবং কর্মী সংখ্যার বিষয়ে আরও অনেক কার্যকরী হয়ে উঠবে।”
বন্ড ব্যবসার মতো ব্যবসাগুলোতে লাভ কমে যাওয়ায় বড় ব্যাংকগুলো সাম্প্রতিক সময়গুলোতে হাজার হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। বিনিয়োগকারীদের থেকে লাভ বৃদ্ধির জন্য প্রচুর চাপ এলেও সেভাবে আয় বৃদ্ধি করতে না পারায় খরচ কমানোর জন্য ব্যাংকগুলো প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকে পড়ছে। মার্চে প্রকাশিত সিটিগ্রুপ ইনকর্পোরেটেড-এর একটি প্রতিবেদনে আর্থিক শিল্পে আরও সমস্যা অপেক্ষা করছে বলে জানানো হয়েছে। সিটিগ্রুপের গবেষকরা অনুমান করছেন, আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে ব্যাংকিং খাতে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত চাকরি কমে যাবে।
লেখক এবং উদ্যোক্তা মার্টিন ফোর্ড বলেন, তথাকথিত ‘গিগ ইকোনমি’ স্বাধীন চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের অস্থায়ী চাকরি দিয়েছে, পরবর্তী পদক্ষেপটি হচ্ছে তাদের থেকে মুক্ত হওয়া। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যাত্রী পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠান উবার স্বয়ংক্রিয় গাড়ি নির্মাণে প্রচুর বিনিয়োগ করছে।
হেজ ফান্ড টু সিগমা-এর সহকারী চেয়ারম্যান ডেভিড সিজেল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংক্রান্ত একটি সভায় বলেন, “স্পষ্টভাবেই মাঝারি ধরনের চাকরিতে বেতনের ক্ষেত্রে এমন অপরিবর্তনশীলতার কারণ উন্নত কম্পিউটার প্রোগ্রাম।”
বিনিয়োগকারী ও ধনকুবের স্টিভ কোহেন বলেন, রোবটদের তার মতো শেয়ার ব্যবসায়ীদের জায়গা নিয়ে নিতে আরও অনেক সময় লাগবে। স্কেল ভেনচার পার্টনার্স এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা কেইট মিচেল বলেন, "ফ্রিল্যান্স ওয়েবসাইটগুলো কর্মীদের সম্পূরক আয়ের জন্য অনুমতি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “প্রযুক্তিকে নেতিবাচক হিসাবে উপস্থাপন করা সহজ। কিন্তু এখানে একই সঙ্গে অনেক সুযোগও রয়েছে।”