জটিল এক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে বোদ্ধা মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এক চীন যুবক, যার দিন কাটে পার্সেল ডেলিভারি করে, কলেজে পড়ার সুযোগ যার হয়নি।
Published : 18 Jul 2016, 06:58 PM
সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, য়ু জিয়ানচন নামে ওই চীনা শ্রমিকের কোনো ‘প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি’ নেই। তবে কারমাইকেল সংখ্যা শনাক্ত করার বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তা বাধা হতে পারেনি।
য়ুর প্রশংসায় জেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক কাই তিয়ানজিয়ান বলেন, “এটা সত্যিই দুর্দান্ত... সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, উচ্চতর গণিতের ক্লাস সে কখনো করেনি। তার যা আছে তা প্রকৃতিদত্ত এবং সংখ্যার প্রতি দারুণ সংবেদনশীল এক মন।”
কারমাইকেল নম্বারকে গণিতবিদরা কখনো কখনো ‘ছদ্ম মৌলিক সংখ্যা’ বলে থাকেন; প্রতি একশ মিলিয়নে এ ধরনের মাত্র ২৫৫টি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা মেলে। সত্যিকারের মৌলিক সংখ্যা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করে এসব কারমাইকেল সংখ্যা।
যে সংখ্যা ১ বা ওই সংখ্যা ছাড়া আর অন্য কোনো সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্য নয়, গণিতে তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে।
পার্সেল ডেলিভারি কোম্পানিতে কাজ করা য়ু জানান, গত বছর গ্রামে বাড়ি বানানোর কাজ করার অবসরে তিনি কারমাইকেল নম্বর শনাক্তের এ বিকল্প পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।
“আমার করা সমাধান প্রথাগত এলগরিদমের তুলনায় একেবারেই ভিন্ন। দারুণ খুশি লাগছিল আমার।”
৩৩ বছর বয়সী য়ু’র বাড়ি হেনান প্রদেশের জিনজিয়ান কাউন্টিতে, পড়াশোনা করেছেন ঝ্যাং ঝাউয়ের একটি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ স্কুলে। ছোটবেলা থেকেই সংখ্যার প্রতি এক ধরনের ‘আবেগ’ কাজ করত বলে জানিয়েছেন তিনি।
চায়না ডেইলি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, য়ু যেখানেই কাজ করতে গেছেন, সেখানেই স্থানীয় গণিতের অধ্যাপকদের সঙ্গে কারমাইকেল নম্বর নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
‘দুর্দান্ত’ আবিষ্কার
মৌলিক সংখ্যা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে য়ু’র এই বিকল্প পদ্ধতিকে ‘দুর্দান্ত আবিষ্কার’ বলছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতবিদ উইলিয়াম ব্যাঙ্কস, যিনি নিজেও গণিতের একই বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন।
য়ু’র বিকল্প পদ্ধতি ‘প্রমাণিত’ হলে তা ‘রোমাঞ্চকর’ হবে বলে মন্তব্য করেন ব্যাঙ্কস।
জেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাইয়ের আমন্ত্রণে গত ১৩ জুন য়ু এক সেমিনারে কারমাইকেল নম্বর শনাক্তের বিকল্প পদ্ধতি এবং আরও চারটি গাণিতিক সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করেন।
স্বীকৃতির জন্য গত আট বছর ধরে য়ু চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের চিঠি পাঠাচ্ছিলেন। অধ্যাপক কাই জানিয়েছেন, তিনি কারমাইকেল নম্বর নিয়ে প্রকাশিতব্য একই বইয়ে য়ু’র সমাধান যুক্ত করে নেবেন।
নিজের সম্পর্কে য়ু’র মূল্যায়ন, তিনি লাজুক ও অন্তর্মুখী স্বভাবের। ভোকেশনাল টেনিং স্কুলে প্রাণি প্রজনন বিষয়ে পড়ার সময় ক্যালকুলেটর দিয়ে হিসেব কষতে গিয়ে সংখ্যার প্রেমে পড়েন তিনি।
সিএনএনকে তিনি বলেন, জেজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারে তিনি এতোটাই নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন, যে ব্ল্যাকবোর্ডে ভুল সংখ্যা লিখে ফেলেছিলেন।
“আমার বুদ্ধিও খানিকটা কম। অন্য বিষয়ের চেয়ে গণিত বিষয়ে পড়ালেখায় আমার আরও বেশি সময় দেওয়া দরকার। সংখ্যার প্রতি আমার আকর্ষণ ছিল, তবে ক্যালকুলাস বা জ্যামিতি নিয়ে আমার তেমন ধারণা ছিল না।”
স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গণিত নিয়ে কীর্তির কথা প্রকাশিত হওয়ার পর মোটামুটি বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন য়ু। চীনের একটি সিল্ক তৈরির প্রতিষ্ঠান তাকে কম শারিরীক পরিশ্রমের কাজ দিতে চেয়েছে, যাতে তিনি গণিত শিক্ষায় আরও বেশি সময় দিতে পারেন।
য়ুর এ ঘটনাকে অনেকেই তুলনা করছেন অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র ‘গুড উইল হান্টিং’ এর সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ওই সিনেমায় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এক প্রহরীর কাহিনী বলা হয়েছিল, যার গণিতে দক্ষতা ছিল ‘অসামান্য’। পরে এক মনোবিদ তাকে ‘আবিষ্কার’ করেন এবং গণিতচর্চায় মনোনিবেশে উৎসাহিত করেন।
য়ু জানান, তিনি ‘গুড উইল হান্টিং’ দেখেননি, তবে দেখতে আগ্রহী। তবে আপাতত তার লক্ষ্য বিয়ে করা।