লাখো মানুষ পানিবন্দি, পানি বাড়ছে উত্তরেও

সিলেট অঞ্চলে কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি থাকার মধ্যেই টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে; পানি বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 July 2017, 03:45 PM
Updated : 5 July 2017, 03:46 PM

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমবে; তাতে সুরমা-কুশিয়ারার পানি কমে সিলেট বিভাগের পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

কিন্তু এ সময়ে ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানির উচ্চতা বেড়ে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

দেশের ৯০টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানির উচ্চতা পর্যবেক্ষণ করে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র যে তথ্য দিয়েছে, তাতে দেখা যায়, বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা, হালদা ও মাতামুহুরী নদীর পানি সাতটি পয়েন্টে বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছিল।

এ সপ্তাহের শুরুতে সিলেট অঞ্চলে বন্যা শুরুর পর  সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও কক্সবাজার জেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের তথ্য।

এর মধ্যে মৌলভীবাজারের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে সাত উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের ৫১ হাজার ২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছ। পানিবন্দি রয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ। 

মৌলভীবাজারে ২৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সিলেট জেলার আট উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়ন পরিষদের বিস্তীর্ণ এলাকা এরই মধ্যে প্লাবিত হয়েছে, লক্ষাধিক মানুষ দুর্গত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সেখানে বন্ধ ঘোষণা হয়েছে ২০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার বেশ কিছু এলাকাও বুধবার নতুন করে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলী সরদার উদয় রহমান জানান, দেশের ৯০টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৬৫টিতে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত পানি বাড়ার প্রবণতা দেখতে পেয়েছেন তারা।

এর মধ্যে কুশিয়ারার পানির উচ্চতা চারটি পয়েন্টে কমে এলেও বিপদ সীমার ১৬ থেকে ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। সুরমার পানির উচ্চতা সুনামগঞ্জে এক সেন্টিমিটার কমলেও বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে ছিল।

কানাইঘাটে সুরমার পানির উচ্চতা চব্বিশ ঘণ্টায় ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদ সীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

এদিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে নারায়ণহাট পয়েন্টে হালদার পানি ৪৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার এবং মাতামুহুরীর পানি চিরিঙ্গা পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদ সীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকার নদ-নদীর পানি বুধবার অধিকাংশ পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সেগুলোর কোনোটিই বিপদসীমা ছাড়ায়নি।

প্রকৌশলী সরদার উদয় রহমান বলেন, “উত্তর-পূর্বে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুরমা-কুশিয়ারা পানি কমলে দুই দিন পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা করি। তবে অন্য এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে।”

আষাঢ়ের দ্বিতীয়ার্ধে এসে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ চলছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ খোন্দকার হাফিজুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পাহাড়ি এলাকার ভূমিধসের শঙ্কা রয়েছে। সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।”