জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঘিরে রাখা ওই বাড়িতে বোম ডিসপোজাল ইউনিট তাদের কাজ শেষ করেছে। বাড়িটিতে একটা ভেস্ট ও একটা আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া গেছে।”
তবে কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তা জিজ্ঞেস করলেও তিনি বলেননি।
শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী গ্রামের আমবাগান ঘেরা জেন্টু বিশ্বাসের আধাপাকা একটি বাড়ি জঙ্গি আস্তানা হিসেবে বুধবার সকালে ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়নি। এ ঘটনায় মামলাও হয়নি এখনও।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব আলম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছেন। তাদের কাজ শেষ হলে লাশ উদ্ধার করা হবে।
সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। এলাকাবাসী বা সাংবাদিকদেরও বাড়ির কাছাকাছি যেতে দিচ্ছে না। ওই বাড়ির আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও অভিযান শুরু পর থেকে যেতে দেওয়া হয়নি বাসিন্দাদের।
বাড়ির কাছাকাছি এখনও দুটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রয়েছে।
হতাহতরা কারা
বাড়িটি ঘেরাও করার পর পুলিশ বলেছিল, সেখানে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামে এক জঙ্গি ও তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকতে পারে।
তবে অভিযান শেষে পুলিশ বলেছে, চারজনের লাশ পাওয়া গেছে। তাদের পরিচয় প্রকাশ করেনি পুলিশ।
আর আবুর স্ত্রী সুমাইয়া ও একটি মেয়েকে জীবিত ধরা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ সুমাইয়া রাজশাহীতে
পায়ে গুলিবিদ্ধ সুমাইয়াকে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে, পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রফিকুল ইসলাম বলেন, সুমাইয়াকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাত ১টা ১০ মিনিটে এ হাসপাতালে আনা হয়।
“তাকে পুলিশ হেফাজতে ১৩ নম্বর কেবিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ছাড়া তার কেবিনে অন্য কারও প্রবেশ নিষেধ।
সুমাইয়ার হাঁটুতে গুলির ক্ষত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আজ তার অপারেশন হবে।
সুমাইয়া আশঙ্কামুক্ত বলে তিনি জানান।
রাজশাহীর রাজপাড়া থানার ওসি আমান উল্লাহ বলেন, সুমাইয়াকে ভর্তির পর হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে হাসপাতালের তৃতীয় তলার কেবিনগুলোয় সাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
আবু কে?
শিবগঞ্জ উপজেলার চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবু (৩০)।
একসময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে নিজেদের বাড়িতে তার বাবা-মা থাকেন।
আবুর মা ফুলছানা বেগম বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু।
ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন - সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।
তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।
মাস তিনেক ধরে আবু স্ত্রীসহ আট ও ছয় বছরের দুই মেয়ে নিয়ে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের ওই বাড়িতে থাকছিলেন।
প্রায় ৭৫ বছর বয়সী জেন্টু বিশ্বাস এলাকার ধনী ব্যক্তি। নিজের পরিবার নিয়ে পাশের আরেকটি বাড়িতে থাকেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছে, জেন্টু বিশ্বাস তার ওই বাড়িতে আবুকে ভাড়া ছাড়াই থাকতে দিয়েছিলেন।