‘অপারেশন ঈগল হান্টে’ রাতের বিরতি

সকাল থেকে ঘিরে রাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় সন্ধ্যায় শুরু করা সোয়াট সদস্যদের চূড়ান্ত অভিযান- ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ দুই ঘণ্টা পর স্থগিত করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকচাঁপাইনবাগঞ্জ প্রতিনিধি ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 April 2017, 12:19 PM
Updated : 26 April 2017, 04:38 PM

বুধবার রাত ৯টার দিকে প্রেস ব্রিফিংয়ে সোয়াতের কর্মকর্তা উপ-পুলিশ কমিশনার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার জানান, রাতের মতো অপারেশন স্থগিত করা হয়েছে। সকালে আবার চলবে।

তিনি জানান, ওই বাড়ির ভেতর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে এবং ৪/৫টি বিকট বিস্ফোরণও ঘটানো হয়েছে।

বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়ায় বাড়িটির ভেতরের অবস্থা কী তা জানা যাচ্ছে না। জেনারেটর দিয়ে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এখনও অবস্থান নিয়ে আছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের এডিসি মিডিয়া মোহাম্মদ আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাত সোয়া ৮টার দিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’ ওই বাড়ির ভেতর থেকে চারটি বিকট বিস্ফারণের শব্দ শোনা গেছে।  

বিকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসার পর উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগান ঘেরা ওই বাড়ির কাছে পৌঁছান সোয়াট সদস্যরা। সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে ওই বাড়ির দিক থেকে টানা গুলির শব্দ পান শ পাঁচেক গজ দূরে অবস্থানরত সাংবাদিকরা।

অপারেশন শুরুর পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এডিসি আবদুল মান্নান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোয়াট সদস্যরা অপারেশন শুরু করেছেন।  একতলা ওই বাড়ির ভেতরে নারী ও শিশুসহ চারজন আছে বলে আমরা ধারণা করছি। দিনে মাইকের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা সাড়া দেয়নি।”

জেলার পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম জানান, সোয়াটের এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’।

অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দুপুরে দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি এনে রাখা হয় ঘটনাস্থলের কাছে। সকালেই ওই এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। রাতে অভিযান চালানোর জন্য এনে রাখা হয় জেনারেটর। 

জঙ্গিদের অবস্থানের খবর পেয়ে বুধবার ভোরে উপজেলার শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের মালিকানাধীন ওই বাড়ি ঘিরে ফেলেন স্থানীয় পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা। 

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপ-কমিশনার মহিবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই বাসা ঘিরে ফেলা হলে ভেতর থেকে গুলি ছোড়া হয়। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে।  তবে সেখানে কী পরিমাণ বিস্ফোরক বা গোলাবারুদ আছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গোমস্তাপুর সার্কেলের এএসপি মাইনুল ইসলাম জানান, একতলা ওই বাড়িতে রফিকুল আলম আবু (৩০) নামের এক ব্যক্তি এবং তার স্ত্রী-সন্তানসহ চারজন থাকে বলে তাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে।

“সকাল থেকে কয়েক দফা মাইকে তাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। আশপাশের চারটি বাড়ির লোকজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয় পুলিশ সদস্যরা।”

জননিরাপত্তার স্বার্থে শিবগনগর ও আশপাশের এলাকায় সকালেই ১৪৪ ধারা জারি করা হয় জানিয়ে শিবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম জানান, অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সব ধরনের জমায়েত ও চলাচলে কড়াকড়ি থাকবে।

কে এই আবু

শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামে আমবাগানের মধ্যে একতলা ওই বাড়ির মালিক ৭৫ বছর বয়সী সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাস। তিনি এলাকায় ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। নিজের পরিবার নিয়ে পাশেই আরেকটি বাড়িতে তিনি থাকেন।

স্থানীয়রা জানান, মাস তিনেক আগে চাচরা গ্রামের দিনমজুর আফসার আলীর ছেলে রফিকুল আলম আবুকে ভাড়া ছাড়াই ওই বাসায় থাকতে দেন জেন্টু বিশ্বাস।

একসময় মাদ্রাসায় পড়া আবু একজন ভ্রাম্যমাণ মসলা বিক্রেতা। আট ও ছয় বছর বয়সী দুটি মেয়ে রয়েছে তার।

ত্রিমোহনীর ওই বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চাচরা গ্রামে আবুর বাবা-মা থাকেন। সকালে সাংবাদিকরা সেখানে গেলে আবুর মা ফুলছানা বেগমের সঙ্গে তাদের কথা হয়।  

তিনি বলেন, প্রায় নয় বছর আগে সুমাইয়া খাতুনের সঙ্গে বিয়ের পর একই উপজেলার আব্বাস বাজারে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন আবু। মাস তিনেক আগে তিনি জেন্টুর বাড়িতে ওঠেন।

ছেলেবেলায় আবু চাচরা গ্রামের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন বলে জানালেও কোন শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেছেন- সে বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি তার মা।

তিনি জানান, আবু দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়। বোনের বিয়ে হয়েছে। আর ছোট ভাই আবদুস সবুর রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

সকালে পুলিশ আবুর বাসা ঘিরে ফেলার আগেই কানসাট ইউনিয়নের আব্বাস বাজার এলাকার তিনটি বাড়ি ঘেরাও অভিযান চালানো হয়। তবে সেখানে কাউকে গ্রেপ্তারের কথা পুলিশ স্বীকার করেনি।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানোর পর পুলিশ গত শুক্র ও শনিবার ঝিনাইদহের একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালিয়ে ‘বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম’ উদ্ধার করে।

এরপর মঙ্গলবার দিনভর রাজশাহীর একটি এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ঘিরে ‘ব্লক রেইড’ চলে। তবে সেখানে কোনো জঙ্গি আস্তানার খোঁজ পায়নি পুলিশ।