নারায়ণগঞ্জে এক স্কুল শিক্ষককে মারধর ও কান ধরে উঠ-বস করানোর ঘটনা নিয়ে ‘বিভ্রান্তিকর’ খবর ছড়ানোর অভিযোগ এনে সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান বলেছেন, তিনি ক্ষমা চাইবেন না।
Published : 19 May 2016, 04:25 PM
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ওই ঘটনায় তার ভূমিকা নিয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি সংসদেও যাবেন না।
“যদি আমাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন, আল্লাহকে যদি কেউ কটাক্ষ করে, একজন মুসলমান হিসেবে আমি কার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব? যথেষ্ট পরিমাণ ডকুমেন্টস আছে। ক্ষমাটা কার কাছে চাইতে বলছেন আমাকে? শিক্ষকের কাছে? তার সাথে তো আমার সুসম্পর্ক আছে।”
ওই ঘটনা নিয়ে সারা দেশে ওঠা প্রতিবাদকে সেলিম ওসমান আখ্যায়িত করেন ‘বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার’ হিসেবে।
“তাতে আমি সমাজের কাছে ছোট হয়েছি। আমি লজ্জিত হতে পারি। আমি আমার মহান সংসদের কাছে লজ্জিত হতে পারি। আমি দুঃখিত হতে পারি। আমি যদি প্রথম দিন এই সংবাদ সম্মেলনটা করতাম, তাহলে হয়তো এই দুঃখিত বা লজ্জিত শব্দটা ব্যবহার করতে হতো না।”
ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার বন্দর উপজেলার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে একদল লোক মারধর করে। পরে তাকে কান ধরিয়ে উঠ-বস করান সাংসদ সেলিম ওসমান। এ সময় তার আশপাশ থেকে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শোনা যায়।
ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। শিক্ষক ও আইনজীবীরা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানসহ জড়িতদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। সমালোচনায় মুখর হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারাও।
১৪ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই কাজ করে সেলিম ওসমান সাংসদ পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কান নিজের কান ধরার ছবি দিয়ে শুরু হয় অভিনব প্রতিবাদ ‘স্যরি স্যার’।
ওই ঘটনায় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ যাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে বুধবার হাই কোর্ট একটি রুলও জারি করে।
এদিকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও দোষীদের বিচার দাবির মধ্যেই মঙ্গলবার সেই শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর দুই দিনের মাথায় শিক্ষামন্ত্রী স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে বরখাস্তের আদেশও অবৈধ ঘৈাষণা করেন।
ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন জাতীয় পার্টির টিকেটে নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের এমপি হওয়া প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্য সেলিম ওসমান।
তিনি দাবি করেন, “আল্লাহকে কটাক্ষ করার জন্য এলকার মানুষের দাবি অনুযায়ী” তিনি ওই কাজ করেছেন।
ক্ষমা চাইবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন আমি অপেক্ষায় আছি। যেহেতু আদালত একটি রুল জারি করেছেন। পুলিশ প্রশাসক, জেলা প্রশাসন যদি আমাকে দায়ী করেন, তাতে যদি আমার ফাঁসি হয়, আমি কোনো আপত্তি করব না।”
২০১৪ সালের এপ্রিলে নাসিম ওসমানের মৃত্যুর পর তার ভাই সেলিম নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজেরও সভাপতি।
নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল হক, বিকেএমইএ পরিচালক আবু আহম্মেদ সিদ্দিক, বিকেএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহা, বাংলাদেশ নিটিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু তাহের শামীম, বাংলাদেশ হোসিয়ারী অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল আলম সজল, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহাকে পাশে নিয়ে সেলিম ওসমান এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত আমার তদন্ত না হবে, ততক্ষণ আমি আর এই সমস্ত চেয়ারগুলিতে বসব না। আমি বিকেএমইএর চেয়ারে বসব না, চেম্বারে বসব না, ফোরেশনের চেয়ারে বসব না। আমি সংসদেও যাব না। ”
প্রধান শিক্ষক পদে শ্যামল কান্তি ভক্তকে পুর্নবহালের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সেলিম ওসমান। তদন্ত কমিটির কেউ তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি বলেও তিনি জানিয়েছেন।