যুক্তরাজ্যের অন্যতম ধনকুবের বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদের জীবনীগ্রন্থ ‘কিং প্রন’র প্রকাশনা উৎসব হয়েছে।
Published : 23 Feb 2017, 06:53 PM
বুধবার লন্ডনের অভিজাত ভেন্যু ইনস্টিটিউট অফ ডিরেক্টরসে বাংলাদেশের এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইকবালের ‘কিং প্রন’ বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বইটি প্রকাশিত হয়।
জন ব্লেকস পাবলিশার্স প্রকাশিত ২৪৩ পৃষ্ঠার বইটি আমাজনে পাওয়া যাচ্ছে।
বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ- রাজনীতিক লর্ড দেশাই।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি ইকবাল বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানি করে প্রক্রিয়াজাত করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশেও রপ্তানি করে বিশাল ব্যবসা গড়ে তুলেছেন।
‘সীমার্ক কোম্পানি’র সিইও ও চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ইউরোপে সর্বপ্রথম ‘ব্ল্যাক টাইগার চিংড়ি’ আমদানি করেন। ম্যানচেস্টারভিত্তিক এ প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানির জন্য ১৯৯৮ সালে ‘কুইনস অ্যাওয়ার্ড ফর এক্সপোর্ট'’ সম্মাননা জিতে নেয়।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত ফ্রোজেন সি ফুড কোম্পানি ‘সীমার্ক’- এর প্রতিষ্ঠাতা ইকবাল আহমদ ব্যবসায়ী মহলে ‘মি. কিং প্রন’ নামে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবসায় সফলতার জন্য ইকবাল আহমদ ২০০১ সালে ব্রিটেনের রানির সম্মাননা ‘ওবিই’-তে ভূষিত হন।
ইকবাল আহমদের জীবনীগ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে লর্ড দেশাই ছাড়াও বক্তব্য দেন লর্ড শেখ, ব্যারোনেস উদ্দিন, লর্ড করন বিলিমোরিয়া, বাংলাদেশের হাই কমিশনার নাজমুল কাওনাইন, বজলুর রশীদ, ইকবাল আহমদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও প্রতিবেশী ব্রিটিশ এমপি ডেভিড মসওয়াট।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দুইজন প্রাক্তন ব্রিটিশ হাই কমিশনার ডেভিড কার্টার ও স্টিফেন ইভান্সও বক্তব্যে বাংলাদেশি এ ব্যবসায়ীর ব্যবসা সম্প্রসারণের নানা দিক তুলে ধরেন।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কমনওয়েলথ জানার্লিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ইউকের প্রেসিডেন্ট রিতা পেইন।
তিনি বলেন, “বইটি পড়ে আমার উপলব্ধি হয়েছে ইকবাল আহমদ তার জীবনের প্রথম থেকেই কারও চাকরি করতে চাননি। তিনি সব সময়ই চেয়েছেন নিজে কর্তা হিসাবে থাকতে।”
লর্ড শেখ বলেন, “এটি একটি অসাধারণ বই এবং আমি তিনদিন আগে পড়েছি। অনেক সময় এ ধরনের জীবনীগ্রন্থ পড়তে কোনো আগ্রহ হয় না।
“ইকবাল আহমদ সব সময়ই তার পরিবারকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তার দুই ভাইও তার সাফল্যের পেছনে অবদান রেখেছেন। ইকবাল আহমদ বইটি উৎসর্গ করেছেন তার জীবনে আসা তিনজন অসাধারণ নারীকে।”
দাদীকে ‘অনুপ্রেরণা’, মা-কে ‘স্তম্ভ’ এবং স্ত্রীকে ‘জীবনের সবকিছু’ হিসেবে ইকবাল তার বইতে উল্লেখ করেছেন বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ৩৪টি পরিচ্ছেদে লেখা বইটির বিভিন্ন অংশ আলোচনা করেন তিনি।
লর্ড বিলিমোরিয়া জানান, তিনি যখন ব্যবসা শুরু করেন তখন ইকবাল আহমদ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময়ে ইকবাল আহমদ যখন বিলেতে চলে আসেন তখন তার বাবা জেনারেল বিলিমোরিয়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিলেন।
“হয়ত বা এই মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমাদের এখানে দেখা হওয়ার সুযোগ হত না।”
ইকবাল আহমদের ব্যবসায়িক সাফল্যের প্রশংসা করেন লর্ড বিলিমোরিয়া।
ইকবাল আহমদ সম্পর্কে তিনি বলেন, “৬০ বছর বয়সে প্রথম সংস্করণে আপনি ‘কিং প্রন’- এটা শুধু শুরু, এরপর হবে ‘এম্পেরর প্রন’ অর্থাৎ ‘চিংড়ি সম্রাট’।”
সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার ডেভিড কার্টার ইকবাল আহমদের ব্যবসায়িক দক্ষতার প্রশংসা করেন।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “ইকবাল আহমদ যখন চট্টগ্রামে একটি আধুনিক প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন করেন, তখন আমি মনে করি যে কোনোও ব্যবসায়ীই হতাশা এবং রাগে তা ফেলে আসতেন। কিন্তু ইকবাল তা করেননি। তার দৃঢ় সংকল্প এবং ব্যক্তিত্ব এখানে জয়ী হয়েছে।
“কিং প্রন একটি সাফল্যের গল্প। এ বই সমাজের জন্য একটি সাফল্যের শিক্ষা।”
১৫ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যে এসে ইকবাল আহমদ শুধু সেদেশেই বিশাল ব্যবসা গড়ে তোলেননি, বাংলাদেশেও রয়েছে তার ব্যবসায়িক সাফল্যগাঁথা। প্রায় চার হাজার মানুষ কাজ করেন বাংলাদেশে তার প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইকবাল আহমদ বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত খাবার রপ্তানিতে ছিলেন শীর্ষে। এনআরবি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ রপ্তানি ক্ষেত্রে অবদানের জন্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে একাধিকবার স্বর্ণপদক নিয়েছেন।
ইকবাল আহমদ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বলেন, “আমার সাফল্যের জন্য আমি আমার মরহুম পিতার কাছে কৃতজ্ঞ। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে আমরা ব্রিটেনে পাড়ি জমাই। আমার বাবা আসেন ষাটের দশকে। অনেকের মতোই তারও টাকা পয়সা রোজগার করে দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।”
তিনি বলেন, “অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মত আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছি এদেশে; বর্ণবাদ ও বৈষম্যের মুখোমুখি হয়েছি, অনেক চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। এসব মোকাবেলা করেই একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।”
জীবনীগ্রন্থ নিয়ে ইকবাল আহমদ বলেন, “আমার ছেলে-মেয়ে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের পুরানো দিনের কথা এবং আমার পূর্ব পুরুষদের ব্যাপারে জানানোর জন্যই লেখা। আমি মনে করি তারা অনেক কিছুই জানতে পারবে এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবে।”
প্রবাস পাতায় আপনিও লিখতে পারেন। প্রবাস জীবনে আপনার ভ্রমণ,আড্ডা,আনন্দ বেদনার গল্প,ছোট ছোট অনুভূতি,দেশের স্মৃতিচারণ,রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খবর আমাদের দিতে পারেন। লেখা পাঠানোর ঠিকানা probash.bdnews24.com। সাথে ছবি দিতে ভুলবেন না যেন! |