তুলার মতো ছড়িয়ে থাকা তুষারের শুভ্র চাদরে ঢেকে গেছে নগরীর পথঘাট, সবুজ চত্বর। শীতের আগমনের এমন বার্তায় বারবার মনে পড়ে যায় আমার শিউলি ফুল ঝরা সেই দিনগুলো।
Published : 02 Nov 2016, 04:06 PM
শেষ কবে যে সূর্যের দেখা মিলেছিল এখানে ঠিক মনে পড়ে না। তাইতো বিচ্ছেদ উদযাপনে কাটে ফিনল্যান্ডের অউলুতে আমার এইসব দিনরাত্রি;বরফস্নাত ভোর, বিকেলের সুনশান নীরবতা।
চার ঋতুর বৈচিত্রময় এই দেশের আবহাওয়া এমনই। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে যা শুরু হয় সেটাকে কোন সূত্রে যে 'শীত' না বলে 'শরৎ' বলে তা অবশ্য আমার জ্ঞানের বাইরে। গ্রীষ্ম বাদে বছরের নয় মাসই শীত ঘুরেফিরে আসে।
যদি কেউ বলে দেশটা ছবির মতো আঁকা, তাহলে ঠিক ভুল হবে না। যে পথেই এগোন- রেল কিংবা বাস,যেতে যেতে শুধু চোখে পড়ে একের পর এক শান বাঁধানো হ্রদ আর তা ঘিরে বিস্তীর্ণ সবুজ। আসলে এই দেশটিতে না এলে জানাই হতো না এতো পরিকল্পিতভাবে জলাধার সংরক্ষণ সম্ভব।
মাত্র ৫৫ লাখ জনসংখ্যা এই দেশটিতে। যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে তাতে করে আগামী ৫০ বছরে খুব বেশি হলে পাঁচ লাখ মানুষ বাড়তে পারে বলে সরকারের পূর্বাভাস।
ভাবছেন বরফের এই দেশের এসব জলাধারে আদৌ মাছের দেখা মেলে কি না ! তেমনটি আমারও মনে হয়েছিল। কম-বেশি ৬১ প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এই ছোট জনসংখ্যার মাঝারি আয়তনের দেশটিতে।
মজার ব্যাপার হলো, শীতের শুরু থেকেই এসব বরফ হয়ে পড়া হ্রদ হয়ে ওঠে স্কেটিংয়ের ক্ষেত্র। হবে না আবার ! ফিনিশদের ছোট-বড় প্রায় সবারই শখের জায়গা দখল করে রয়েছে আইস স্কেটিং।
আর একটা তথ্য না দিলেই নয়; প্রায় ৫৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটিতে শুধু কুকুরের সংখ্যা তারও বেশি ! তাই বলে কি বিড়ালের সংখ্যা কম ? প্রায় সমান সমান। সে হিসেবে ফিনল্যান্ডে যে সংখ্যক মানুষ রয়েছে তারও বেশি রয়েছে কুকুর-বিড়াল। মানে, এক কোটিরও বেশি রয়েছে কুকুর-বিড়াল। শপিং মল থেকে শুরু করে সব জায়গায়ই গাড়ির পার্কিয়ের মতো কুকুর রাখারও বেশ অভিজাত ব্যবস্থা রয়েছে পুরো ফিনল্যান্ডে। মজার তথ্য না ?
যাক, শুরু করেছিলাম বরফশীতল সকালের বর্ণনা। যে যাই বলুক, ফিনল্যান্ডের এই বরফময় আবহাওয়া আমার বাংলার ‘হাড় কাঁপানো’ শীতের তুলনায় কিন্তু কিছুই না। অবাক হলেও এ পর্যন্ত অভিজ্ঞতা তাই বলে। আমাদের উত্তরের ঠাণ্ডা একেবারে হাড়ে গিয়ে বিঁধে। এখানে মাইনাসের আগে শীতের ছোঁয়া তেমন ভোগায় বলে আমার জানা নেই।
তবুও খুব মিস করি আমার শহরের রাস্তার ধারের শীতের ভাপা পিঠা, আর সর্ষে বাটার ঝাঁঝ মাখা চিতই। আমার চোখ খোঁজে বাংলার সুখী মানুষগুলোর দল বেঁধে আগুন পোহানোর দৃশ্য; গাদাগাদি করে বসে আড্ডা। আহা, কত যে হৃদয়ের টান !
লেখক: সাংবাদিক, ফিনল্যান্ডের অউলু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ প্রকৌশল (ক্লিন প্রোডাকশন)বিষয়ে অধ্যয়নরত।
ই-মেইল: [email protected]
এই লেখকের আরও পড়ুন-