পরীক্ষাতেও অবরোধ তুলবে না বিএনপি

পনের লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী জানালেন, আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার কারণে ২০ দলের অবরোধ প্রত্যাহার করা হচ্ছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2015, 11:10 AM
Updated : 30 Jan 2015, 12:03 PM

পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে অবরোধ প্রত্যাহারে শিক্ষামন্ত্রীর আহবান নাকচ করে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিব শুক্রবার দলীয় প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, তাদের ‘শান্তিপূর্ণ’ অবরোধ অব্যাহত থাকবে।

“শিক্ষামন্ত্রী ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর ভাগ্যের কথা বলে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করতে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। এই অবৈধ সরকার পরীক্ষার ফলাফল অস্বাভাবিক, অতিরিক্ত কৃতকার্য দেখানোর জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা ও প্রতিযোগিতার মূল দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে জাতিকে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে। তারা আবার পরীক্ষার্থীদের ভাগ্যের কথা বলে!”

‘অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে’ রেখে আওয়ামী লীগই জনগণের ‘দুর্ভাগ্যের কারণ’ হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেন রিজভী।

তিনি বলেন, “১৬ কোটি জনগণের ভাগ্যের কথা ভেবে ভোটারবিহীন সরকার পদত্যাগ করলেই তো দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। কঠিন কঠোর ব্রত নিয়ে পথে পথে গড়ে ওঠা শান্তিপূর্ণ অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে।”

২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আগামী ১০ মার্চ তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ১১ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার সূচি রয়েছে।

রিজভী বলেন, “এই অবরোধ দেশে শান্তির জন্য, নিরাপত্তার জন্য। মানুষকে তার পাপ্য সন্মান ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো চোখ রাঙ্গানি, হুমকি আর যৌথ বাহিনীর টার্গেট প্রাকটিস আন্দোলনকারীদের অদম্য পথ চলাকে থমকে দিতে পারবে না।”

গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে এই লাগাতার অবরোধ ডাকেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

এর মধ্যে দুই দফা বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিরা টঙ্গীতে আসতে ভোগান্তিতে পড়লেও ২০ দল কর্মসূচি চালিয়ে যায়। গত ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর খবর শুনেও খালেদা জিয়া অবরোধ চালিয়ে যেতে বলেন।    

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেন, “আমাদের আবেদেনে তারা নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন। শিক্ষার্থীদের দিকে তাকান, তাদের কথা একবার চিন্তা করেন, যারা পুড়ে মরেছে তাদের দিকে একবার তাকান। এসব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।”

শুক্রবার দুপুরেও রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের  সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “ ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষা সামনে রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুই দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে ১৬ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে সরকার সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে। মনে রাখবেন, সরকারেরও ধৈর্যের সীমা আছে।”

এর জবাবে রিজভী তার বিবৃতিতে বলেন, “ক্ষমতার নেশায় প্রধানমন্ত্রী মনে হয় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। শুধুমাত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি আইন, মানবতা, জনমত, শিষ্ঠাচার, দেশের বিশিষ্টজনদের পরামর্শ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগ- কোনো কিছুরই পরোয়া করছেন না। প্রধানমন্ত্রী ও তার সহযোগীরা অনর্গল শুধ ‘দমন করো’, ‘বিচার হবে’ এসব বুলি আওড়ে যাচ্ছে।”

রিজভীর ভাষায়, কেবলমাত্র এই ‘দুঃশাসনের অবসানের মধ্য দিয়েই’ বর্তমান ‘অবরুদ্ধ জনগোষ্ঠির মুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ সম্ভব হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী ‘নিজে দায় নিয়ে’ কঠোর হওয়ার কথা বলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাড়ায়-মহল্লায় ‘ঝটিকা আক্রমণ’ চালাচ্ছে এবং সরকার ‘আইন, বিচার ও শাস্তির সব দায়িত্ব’ নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনা-সমালোচনা ও সমঝোতার কোনো জায়গা সরকার রাখেনি বলেও রিজভী অভিযোগ করেন।

“আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যতদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন জনজীবনের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি থাকবে না। মানুষ স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে না। মানুষের সহায়-সম্পত্তি পদে পদে বিপন্ন হবে।”