শিক্ষার্থীদের দিকে তাকান: বিএনপিকে মন্ত্রী

অবরোধে নাশকতার শঙ্কা নিয়েই এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী, যাদের দিকে তাকিয়ে বিএনপি জোটকে কর্মসূচি তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 06:10 AM
Updated : 29 Jan 2015, 07:25 AM

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমাদের আবেদেনে তারা নিশ্চয়ই সাড়া দেবেন। শিক্ষার্থীদের দিকে তাকান, তাদের কথা একবার চিন্তা করেন, যারা পুড়ে মরেছে তাদের দিকে একবার তাকান। এসব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারি বর্ষপূর্তির দিনে ঢাকায় সমাবেশ করতে না পেরে সারা দেশে লাগাতার অবরোধ ডাকেন, যার মধ্যেই বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন স্থানে হরতাল হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে প্রতিদিনই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও বোমাবাজির মতো নাশকতা ঘটছে।

২ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হচ্ছে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আগামী ১০ মার্চ তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ১১ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত ব্যবহারিক পরীক্ষার সূচি রয়েছে।

অবরোধের কারণে যে পরীক্ষা পেছানো হবে না- তা আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এর সঙ্গে হরতালের কর্মসূচি থাকলে পরীক্ষা পেছানো হবে কি না- এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, “পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলব।”

বিএনপি ও শরিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আল্লার দোহাই, মানবতার দোহাই, শিক্ষার্থীদের দোহাই দিচ্ছি... আর কীভাবে আবেদন জানাব? তারা যা করছেন তা গ্রহণযোগ্য না। আরো তিন দিন সময় আছে, আশা করছি এর মধ্যে তাদের মানবতা জাগ্রত হবে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি- আল্লাহ তাদের রহম দাও।”

শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার ২৭ হাজার ৮০৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবে।

গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৩২ হাজার ৭২৭ জন অংশ নিয়েছিল, এই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৪৬ হাজার ৫৩৯ জন।

পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এবার ছাত্র সাত লাখ ৩৩ হাজার ২২০ জন; আর ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৫২৫ জন ছাত্রী।

আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে দুই লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে এক লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন এবার মাধ্যমিক সমাপনীর এ পরীক্ষা দেবে।

এবার বাংলা দ্বিতীয় পত্র এবং ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র ছাড়া অন্য সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। গণিত ও উচ্চতর গণিতে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে এবারই প্রথম।

নাহিদ বলেন, এ বছর থেকে শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা নামে নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার পরীক্ষা সৃজনশীল প্রশ্নে হবে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন পরীক্ষার্থীরা স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। তাদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেওয়া হবে।

বিএনপি-জামায়াতের হরতালের কারণে ২০১৩ সালে এসএসসির ৩৭টি বিষয় এবং এইচএসসির ৪১টি বিষয়ের পরীক্ষা পেছাতে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

ওই বছরের জেএসসি-জেডিসির ১৭টি বিষয় এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনীর দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হরতালের কারণে পিছিয়ে দেওয়া হয়।

এছাড়া গত বছরের শেষ দিকে জেএসসি-জেডিসি এবং প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী পরীক্ষাও বিএনপির হরতালের কবলে পড়লে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা পিছিয়ে যায়।

নাহিদ বলেন, “গত বছরও পরীক্ষার সময় সঙ্কট মোকাবেলা করতে হয়েছে। এবারও সমস্যার মধ্যে আছি। আমরা উদ্বিগ্ন, শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও উদ্বিগ্ন। এর প্রভাব ভবিষ্যতে পড়বে। এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে।

“এই উদ্বেগ শিক্ষাকে, ভবিষ্যতকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য, ভবিষ্যতকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য- এটা চলতে পারে না।”

এবার প্রশ্ন ফাঁসে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, “শতভাগ সতর্ক আছি আমরা। তবে ফেইসবুকে দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির সুযোগ থেকেই যায়। ফেইসবুকে দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তা মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

অন্যদের মধ্যে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।