জাতীয় সংসদের লবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোন্দল জর্জরিত জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি এবং দলটির সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে সদ্য অপসারিত স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
Published : 11 Sep 2014, 08:29 PM
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অধিবেশন চলাকালে মাগরিবের নামাজের বিরতিতে এ ঘটনা ঘটে। বিরতির পরপরই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদসহ দলের সংসদ সদস্যরা অধিবেশন কক্ষ থেকে বের হয়ে লবিতে যান।
লবি থেকে এরশাদ বের হয়ে যাওয়ার পরপরই বাবলু ও রাঙ্গা উচ্চস্বরে কথা বলা শুরু করলে বিরোধীদলীয় সদস্যদের লবি (লবি-১) থেকে অধিবেশনকক্ষে ঢোকার এবং বাইরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধী দলীয় উপনেতা নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন রওশন এরশাদ এবং এইচ এম এরশাদ।
বুধবার দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে মশিউর রহমান রাঙ্গা ও তাজুল ইসলাম চৌধুরীকে সরিয়ে দেন দেন এইচ এম এরশাদ।
দলের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পর্যন্ত নালিশ করেছেন তারা।
বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বাবলু।
সেখানে তিনি এক পর্যায়ে বলেন, “তাজুল ইসলাম চৌধুরী একজন বিতর্কিত লোক, এটা সবাই জানেন। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের কথাও আমরা শুনেছি।’
সংসদ লবিতে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মশিউর রহমান রাঙ্গা সংসদ লবিতে যে সোফায় বসে ছিলেন। একটু দূরে অন্য একটি সোফায় বসে থাকা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে উদ্দেশ্য করে তার বহিষ্কার প্রসঙ্গে কথা বলেন।
রাঙ্গাকে উদ্বৃত করে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “কাউকে দল থেকে বের করতে হলে তার সঙ্গে কথা বলা, জিজ্ঞাসা করা উচিত। এত বছর ধরে রাজনীতি করার পর হুট করে দল থেকে বের করে দেয়া এটা কি সঠিক হয়েছে? আমার তো এলাকায় একটা অবস্থান আছে। মানুষের কাছে এভাবে ছোট করা কি ঠিক হল?”
বহিষ্কারের বিষয়ে বাবলু কিছুই জানেন না বলার পর রাঙ্গা বলেন, “আপনি চুপ করেন। এর সব কিছুর পিছনে আপনি জড়িত।”
সভাপতিমণ্ডলীর পদ থেকে বহিষ্কার হওয়া বিরোধী দলের প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম এসময় রাঙ্গাকে সমর্থন করে বলেন, “রাঙ্গা তো বাস্তব কথাই বলেছে। কাউকে জবাব দেয়ার সুযোগ না দিয়ে একটা লোককে বের করে দেয়া কেন হবে।”
তাজুল এ সময় বাবলুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি জানেন না বলে অস্বীকার করতে পারেন না। আপনি সবই জানেন। আমি নিজে টিভিতে শুনেছি এরশাদ সাহেবের ভাই এটা নিয়ে কিসব কথা বলেছেন।”
তাজুল আরও বলেন, “আপনি টিভিতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার কি এটা লাইনও সত্য? আমি ৩৭ বছর ৭ বারের এমপি। আমি আর শেখ সেলিম ছাড়া আমাদের মত এতদিন এমপি হিসেবে কেউ নেই। একদিন আমাকে নিয়ে কেউ কোন কথা বলতে পারেনি। এখন আমার বিরুদ্ধে দুর্নাম করা হচ্ছে। উপনেতা হতে না পেরে এই সব আজেবাজে কথা বলছেন। আপনারা কোন স্বার্থে দলটাকে ছোট করছেন। উপনেতা হতে চাইলে আগে বলেননি কেন? আমরা ম্যাডামকে বলতাম।”
নেতাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “প্রেসিডিয়ামের মধ্যে কে আছেন এমপি হবার মত। দলের মধ্য থেকে ৩০জনের তালিকা দিতে পারবেন এমপি হবার মত। আপনি নির্বাচন করে ১৫১টা সিট পেতে হলে সবাইকে নিয়েই তা করতে হবে।”
ঘটনার পর জাতীয় পার্টির একাধিক সংসদ সদস্যের কাছে জানতে চাইলে কেউ প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সংসদ সদস্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দলের মধ্যে কোন বিরোধ ছিল না। কাজী ফিরোজ রশীদকে উপনেতা নির্বাচন করা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। আমরা গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে ফিরোজ রশীদকে উপনেতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জিয়াউদ্দিন বাবলুও উপনেতা হতে চান।”
পার্টির গঠনতন্ত্র সংশ্লিষ্ট ধারা পড়ে শুনিয়ে তিনি বলেন, “গঠনতন্ত্র মোতাবেক তারা উপনেতা নির্বাচন করেছেন। তাছাড়া দুইজনকে যেভাবে অপসারণ করা হলো তা সঠিক হয়নি।”