বহুল আলোচিত নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে, যাতে ’৯০ পরবর্তী প্রতিটি সংসদে সরকারি অথবা বিরোধী দলে থাকা বিএনপি নেই।
Published : 29 Jan 2014, 05:08 PM
বুধবার প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই নবগঠিত সংসদের স্পিকার হিসেবে শিরীন শারমিন চৌধুরী পুনর্নির্বাচিত হন। ডেপুটি স্পিকার পদে নতুন এসেছেন প্রবীণ সাংসদ ফজলে রাব্বী মিয়া।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে ভোট বর্জনকারী বিএনপিকে সরকারের সঙ্গে সংলাপে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়াবিহীন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে অধিষ্ঠিত রওশন এরশাদ কার্যকর বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তার পাশের আসনেই ছিলেন তার দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর সংসদ অধিবেশন ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন।
ভোট বর্জনকারী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯ দল নতুন আইনসভাকে ‘সঙদের সংসদ’ আখ্যায়িত করেছে। এদিন তাদের কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি থাকলেও বিভিন্ন স্থানে তাতে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জনের অন্যতম টাঙ্গাইলের শওকত মোমেন সংসদে বসার আগে মারা যান।
নবম সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবারো ওই পদে প্রার্থী হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তিনি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেননি। তাই সভাপতির আসন নেন শওকত আলী।
বিধান অনুযায়ী প্রথমেই আসে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পালা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ দুই পদে শিরীন শারমিন ও ফজলে রাব্বীর নাম প্রস্তাব করলে তা ভোটে দেয়া হয়।
ভোটে সর্বসম্মতভাবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন সংসদের সাফল্য কামনা করে শপথের জন্য বিদায় নেন শওকত আলী।
বিএনপিবিহীন নির্বাচন নিয়ে সমালোচনার মধ্যে বিদায়বেলায় প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেণন, “গণতন্ত্রের বিকল্প কেবলই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে নির্বাচনের বিকল্প নেই।
“তাই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন আমাদের গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।”
এরপর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে শপথ নিয়ে সংসদে ফেরেন শিরীন শারমিন এবং সভাপতির আসনে।
সভাপতিমণ্ডলী ঠিক করার পর প্রথমে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়, যাতে শওকত মোমেন শাহজাহানের স্মৃতিচারণ করেন সংসদ নেতা শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য।
এরপর স্পিকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ,প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের কার্যকরি সভাপতি মঈনুদ্দিন খান বাদল, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।
অভিনন্দিত শিরীন শারমিন বলেন, ““দ্বিতীয়বারের মতো আমি স্পিকার নির্বাচিত হয়েছি। এ বিজয় বাংলাদেশের সকল নারীর।”
আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় নবম সংসদের শেষ পর্যায়ে দেশের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব নেন শিরীন শারমিন।
সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পরের আসনগুলোতে বসেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, আবুল মাল আবদুল মুহিত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, রহমত আলী, মোহাম্মদ নাসিম, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, মহীউদ্দীন খান আলমগীর, আলী আশরাফ, সাহারা খাতুন, ইমাজউদ্দিন প্রমানিক, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু।
সামনের সারিতে দুটি আসন ফাঁকা ছিল। নবম সংসদের প্রথম সারিতে থাকা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত দশম সংসদের প্রথম অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
দশম সংসদে উপনেতার দায়িত্ব পালন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাজেদা চৌধুরী। প্রধান হুইপ হয়েছেন আওয়ামী লীগের আ স ম ফিরোজ। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন জাতীয় পার্টির তাজুল ইসলাম চৌধুরী।
এদিকে চলতি সংসদে পাসের জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র একটি বিল জমা পড়েছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট বিল-২০১৪ নামের এই বিলটি সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের জবাব দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক প্রশ্ন জমা পড়েছে। তবে কোনো মুলতবি প্রস্তাব জমা পড়েনি।
গত ২৪ জানুয়ারি নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি এই সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
দশম সংসদে এ পর্যন্ত ২৯৭ জন সদস্য শপথ নিয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ২৩১ জন, জাতীয় পার্টির ৩৪ জন, ওয়ার্কার্স পার্টির ছয়জন, জাসদের (ইনু) পাঁচ জন, তরীকত ফেডারেশনের দুই জন, জেপি (মঞ্জুর) দুই জন এবং বিএনফের একজন সদস্য রয়েছেন।