নির্বাচনকালীন সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেয়ার পরদিন এবার সংলাপের প্রস্তাব দিয়ে আওয়ামী লীগকে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।
Published : 22 Oct 2013, 11:30 AM
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওই চিঠি রাজধানীর মিন্টো রোডে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে পৌঁছে দেয় বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে এই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নাল আবদিন ফারুক ও সাংসদ শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
একই সময়ে গুলশানে সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানান ফখরুল।
সংবাদ সম্মেলনের মাঝেই মির্জা ফখরুলকে ফোন করে চিঠি পাওয়ার কথা জানান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আশরাফ।
তার বাসা থেকে বেরিয়ে বুলু সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের যে প্রস্তাব দিয়েছেন। তার আলোকেই দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।”
সৈয়দ আশরাফ ওই চিঠি গ্রহণ করেছেন জানিয়ে বুলু বলেন, “তিনি আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দিনাজপুর যাচ্ছেন। চিঠির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।”
দশম সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই গত শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সরকারের জন্য বিরোধী দলের কাছে নামও চান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের তিন দিন পর সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে ওই প্রস্তাব নাকচ করেন বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া। এর বদলে একজন ‘সম্মানিত নাগরিকের’ নেতৃত্বে ১৯৯৬ ও ২০০১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১০ উপদেষ্টাকে নিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের পাল্টা প্রস্তাব দেন খালেদা জিয়া।
‘শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে’ প্রধানমন্ত্রী শিগগিরই এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন বিরোধী দলীয় নেতা।
খালেদার সংবাদ সম্মেলনের পর সোমবার সন্ধ্যায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, যিনি বরাবরই সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট নিরসনের তাগিদ দিয়ে আসছেন।
বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়ে আলোচনার দরজা খুলে দিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতাও আজ বক্তব্য রেখেছেন। আমরা আশাবাদী দুই নেত্রীর বক্তব্যে আলোচনার দ্বার উন্মোচিত হবে।”
সংবিধান অনুযায়ী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। এই সময়ে সরকারে থাকবে আওয়ামী লীগ, সংসদও বহাল থাকবে, যা নিয়ে বিএনপি ও শরিকদের আপত্তি।
নির্বাচনের আগে কবে সংসদ ভেঙে দেয়া হবে এবং সংসদের অধিবেশন কবে শেষ হবে তা নিয়েও দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান বিপরীতমুখী।
তিন মাসের জন্য এসে বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রীসহ বহু রাজনীতিবিদকে জেলে পাঠানোর উদাহরণ তুলে ধরে ‘অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক’ শাসনের বিরোধিতা করে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ‘নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য’ হবে না- এই যুক্তিতে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করে আসছেন খালেদা।
এই অচলাবস্থার নিরসনে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের সংলাপ অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিয়ে আসছে।