আসাম রাজ্যকে বাদ দিয়ে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে এখনও কিছু জানায়নি ভারত।
Published : 01 May 2015, 10:59 PM
রাজ্যটিকে বাদ দিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই চুক্তি অনুসমর্থনের ভারতীয় উদ্যোগের বিষয়ে নয়া দিল্লির গণমাধ্যমগুলোতে খবর বের হওয়ার পর জানতে চাইলে এতথ্য জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদেরকে জানানো হয়নি।”
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আগামী রাজ্য নির্বাচনের বিষয়টি মাথার রেখে আসামকে বাদ দিয়ে ১৯৭৪ সালের চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়নের কথা চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
চুক্তি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে যা দেওয়া হবে তার তুলনায় রাজ্য কম পাবে বলে আসামের কোনো এলাকা ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে বিজেপির রাজ্য শাখা।
স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুটি চা বাগানসহ বাংলাদেশের কাছ থেকে ২৩১ একর জমি পাবে আসাম। অন্য দিকে নিজ নাগরিকদের আবাস ২৬৮ একর জমি পাবে বাংলাদেশ।
তবে রাজ্যটিকে বাদ দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে এর মধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আসামের এক সাংসদ। সংবিধান সংশোধনীর ওই বিলটি পাসের জন্য শিগরিরই রাজ্য সভায় তোলা হবে।
এর মধ্যেই আসামের সাংসদ আর পি শর্মা বলেন, “বাংলাদেশ সরকার স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসাম বাদ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নেবে কি না তা নিয়ে আমার সংশয় আছে।”
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চূড়ান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ওই চুক্তির বিষয়ে দুপক্ষকেই একমত হতে হবে।
তিনি বলেন, “আসলে ভারতে যা ঘটছে, তা নিতান্তই তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে উভয় পক্ষকে চূড়ান্তভাবে একমত হতে হবে।
“এটা ছিটমহলগুলো বিনিময়ের বিষয়। অবশ্যই এটা নিয়ে পর্যালোচনা হতে হবে এবং ঐকমত্যেও পৌঁছাতে হবে।”
বাংলাদেশের জমি ও ছিটমহল থাকা সব রাজ্যকে নিয়েই বরাবর স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থন চেয়ে আসছে সরকার।
এদিকে ঢাকায় সদ্যসমাপ্ত সংলাপে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘সুসম্পর্ককে’ স্বীকৃতি দিয়ে ওয়াশিংটন স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে।
জবাবে ঢাকার পক্ষ থেকে বিষয় শিগগিরই সমাধান হবে বলে আশাবাদের কথা জানানো হয়েছে।
চুক্তি অনুসমর্থনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে শিগগরিই যে কোনো সময় চুক্তিটি বাস্তবায়িত হবে বলে বিভিন্ন ঘটনায় বেশ কয়েকবার ভারতের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আশ্বাস এসেছে।
এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে দুদেশের মধ্যে ছিটমহল, বেদখল জমি ও অচিহ্নিত সীমানা সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।
স্থল সীমান্ত চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের মোট সাত হাজার ১১০ একর আয়তনের ৫১টি এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের মোট ১৭ হাজার ১৬০ একর আয়তনের ১১১টি ছিটমহল বিনিময়ের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।
বিজেপি ও অসম গণপরিষদ শুরু থেকে এই বিলের বিরোধিতা করে বলে আসছিল, ছিটমহল বিনিময় হলে যে পরিমাণ জমি হাতবদল হবে, তাতে ভারত প্রায় ৭ হাজার একর বেশি জমি হারাবে।