ট্যাংকার দুর্ঘটনায় ফলে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে তেল দুষণে উদ্বিগ্ন ভারতও, যে দেশটি বিশ্বের সবর্ববৃহৎ এই ম্যানগ্রোভ বনের দুই-পঞ্চমাংশের অংশীদার।
Published : 13 Dec 2014, 10:41 AM
গত সপ্তাহে সুন্দরবনের শেলা নদীতে একটি ট্যাংকার ডুবে যাওয়ার পর ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়ার পর পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর ওপর তার সরাসরি প্রভাব ইতোমধ্যে দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগর মধ্যে ভারতের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে শুক্রবার বিবিসি ও রয়টার্স জানিয়েছে।
ভারতের সুন্দরবন প্রাণিমণ্ডল সংরক্ষণ বিভাগের উপপ্রধান প্রদীপ বিশ্বাস বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায় তেল ছড়ানোর বিষয়ে পূর্ব সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা।
“আমরা সব ধরনের পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ভারতীয় উপকূলরক্ষী ও সীমান্ত রক্ষীরা (বিএসএফ) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন নদীগুলোতে নৌকাযোগে টহল দেওয়া হচ্ছে।”
সুন্দরবনের জলপথে সব ধরনের বাণিজ্যিক চলাচল নিষিদ্ধ করার জন্য বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ আহ্বান জানিয়েছে। এই দুর্ঘটনার পর শেলা নদীতে বাণিজ্যিক নৌচলাচল ইতোমধ্যে বন্ধ করেছে বাংলাদেশ সরকার।
সাড়ে তিন লাখ লিটারেরও বেশি ফার্নেস অয়েল ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারের (বাংলাদেশ অংশে ৬ হাজার) এ্ই বনের প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন।
ইরাবতী ডলফিনের অভয়াশ্রমের কাছে ওই ট্যাংকার দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় এই জলজ প্রাণীর বিচরণ দেখা যাচ্ছে না।
তেল দূষণের পর কুমিরের দেখাও মিলছে না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। কিছু মৃত কাঁকড়াও দেখা গেছে, যাদের গায়ে জমে ছিল তেলের প্রলেপ। উড়ন্ত বকের ডানায়ও দেখা গেছে তেলের ছাপ।
সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীদের ওপর এই তেলের প্রভাব ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরেও এসেছে।
তবে সুন্দরবনের প্রতীক হিসেবে পরিচিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ওপর তেল দূষণের কোনো প্রভাব পড়ার চিহ্ন এখনও পাননি বলে জানান পশ্চিমবঙ্গের বনপ্রধান উজ্জ্বল কুমার ভট্টাচার্য।
“তবে প্রভাব পড়তে পারে, তা যদি হয় তাহলে এর মোকাবেলা করতে হবে,” রয়টার্সকে বলেন তিনি।
২০০৪ সালের শুমারি অনুযায়ী, সুন্দরবনে সাড়ে চারশ’র মতো বাঘ রয়েছে, এর আড়াইশ রয়েছে ভারতীয় অংশে। এই বাঘের বিলুপ্তি ঠেকাতে বিশ্বের পরিবেশবাদী নানা গোষ্ঠী ও সংস্থা তৎপর।
তেল দূষণ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে রক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ, আর এর মধ্যেই বন্যপ্রাণীদের ওপর তার বিরূপ প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে।
এখন স্থানীয়দের হাঁড়ি-পাতিল ও স্পঞ্জ নিয়ে পানিতে ভাসমান তেল সংগ্রহে নামানো হয়েছে, যা কিনে নেওয়া হচ্ছে।
রাসায়নিক ব্যবহারের একটি প্রস্তাব এলেও তার সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় তাতে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশের বন বিভাগ।