ক্রেতারা বলছেন, গতবারের তুলনায় পোশাকের দাম অনেক বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা।
Published : 12 Jul 2015, 04:49 PM
ঈদে ছেলেদের কেনাকাটার ঝোঁক মেয়েদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। রোজা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছেলেদের কেনাকাটাও বাড়ছে অনেকাংশে।
এবার শুধু পাঞ্জাবিতেই থেমে থাকছে না ঈদআনন্দ। বরং সময়োপযোগী নান্দনিক সব শার্ট, টি-শার্টও সেজে উঠছে ছেলেদের ঈদ বাজার।
এবারে চেক আর রঙিন শার্ট-প্যান্টের দিকেই ঝোঁক বেশি বলে জানায় বিক্রেতারা। অন্যদিকে ছেলেদের ফ্যাশনে পরিবর্তনের ছোঁয়া জাগিয়ে তুলতে, নতুন কাট ও ডিজাইনের ভিত্তিতে সেজে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন বিপনিবিতান, শপিং মল, মার্কেট ও বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ।
তবে রাজধানীর মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা যায়, ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, জুতা, পাঞ্জাবি এবং ফতুয়ার বিভিন্ন কালেকশন এনেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড। মেনজ ক্লাব, এক্সটেসি, ইয়োলো, রিচম্যান, ওয়েস্টেক্স, টেক্সমার্ট, ক্যাটস আই, কে-ক্রাফট, ফ্রিল্যান্ড, র্যামন্ড, প্লাস পয়েন্ট, ক্রোকোডাইলস কিংবা ইনফিনিটিতে ঈদ উপলক্ষে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট।
নিজস্ব ব্র্যান্ড ছাড়াও অ্যাডিডাস, অ্যামেরিকান ঈগল, এফোর, পুমা, ডিজেল, অ্যাডওয়ার্ডস কিংবা জকির মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডের শার্ট পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর ঈদ বাজারে। দাম ১ হাজার ২শ’ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। শার্টের মধ্যে আরও আছে- ইন্ডিয়ান জিরো, নেভারনাইন, জিংক। এগুলোর দাম ১ হাজার ৮শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়া তুলনামূলক কম দামে ভালো শার্ট পাওয়া যাচ্ছে এলিফ্যান্ট রোড এবং নিউমার্কেটে।
এ যুগের তরুণদের কাছে জিন্স প্যান্ট অন্যতম পোশাক। বসুন্ধরা সিটি, রাইফেল স্কয়ার, নিউমার্কেট, ইস্টার্ন প্লাজাসহ সব ছোট-বড় মার্কেটেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ডিজাইনের ছেলেদের জিন্স। চায়না এবং দেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি লিভাইস, ট্র রিলিজিওন, লি জিন্স, ডিজেল, ডেনিম, ব্লু ল্যাবসহ বিশ্বখ্যাত সব ব্র্যান্ডের জিন্স প্যান্ট পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের ব্র্যান্ডের শপগুলোতে। ১ হাজার ৪শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার ২শ’ টাকায় মিলছে এসব জিন্স প্যান্ট।
প্যান্টের মধ্যে পোমা বারসেলোনা, ডিজেল, ডিসকোয়াট, টাকাসি ২ হাজার ৫শ’ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায় মিলছে। এগুলো ইটালিয়ান হলেও তারা ভিয়েতনাম থেকে আনেন বলে বিক্রেতারা জানান।
এছাড়া প্যান্টের মধ্যে ছেলেদের কাছে চাহিদা আছে সেভেন পিএম। যার মূল্য সাড়ে ১০ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা।
এ প্রসঙ্গে এলিফ্যন্ট রোডের প্লাস পয়েন্ট শোরুমের ব্যবস্থাপক সাহাদাৎ হোসেন বলেন, “এবারের ঈদ ফ্যাশন হিসেবে গাঢ় রংয়ের প্যান্টগুলোর বেশিরভাগেরই হাঁটু থেকে গোড়ালির দিকে ন্যারো হয়ে এসেছে। হালফ্যাশনের এসব সুতি প্যান্ট আরামদায়ক বলে চাহিদা বেশি।”
আরও বলেন, “দাম একটু বেশি হলেও প্যান্টের গ্রাহক বেশি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বন্ধু আরিফ ও সুমনের মতে, গতবারে যে প্যান্টের দাম ছিল ২ হাজার ২শ’ টাকা, এবছর তা বেড়ে ২ হাজার ৭শ’ থেকে তিন হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া টি-শার্টের মধ্যে আছে টমি, পোলো, সুপার ড্রাই দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। নাইনটি সিক্স, স্প্রিট, নাইক আড়াই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।
বসুন্ধরা সিটিতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে। জিন্স প্যান্টের মধ্যে এক্সটেসি, রিচম্যান এবং ক্যাটস আই তাঁর পছন্দের ব্র্যান্ড।
তিনি বলেন, “এবার ঈদে একটি টি-শার্ট, দুটি শার্ট ও প্যান্টের পাশাপাশি পাঞ্জাবিও কিনেছি।”
এবাবের ঈদের গরম হওয়ায় ঈদ বাজারে পাঞ্জাবির কাপড়ে সুতি ও কিছুটা হালকা কাজের প্রাধান্য নজরে এসেছে। তবে সুতির পাশাপাশি সিল্ক, সুতি সিল্ক, খাদি ও অ্যান্ডি কটনের তৈরি পাঞ্জাবি চলছে বেশ। এবার পাঞ্জাবিতে কারচুপির কাজ এবং হাতের কাজও বেশি হয়েছে। শর্ট, সেমি লং, লং, এক্সট্রা লং পাঞ্জাবি তারুণ্যের প্রতিনিধিদের বেশি পছন্দ। রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ও বুটিক হাউসগুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা রং ও নকশার পাঞ্জাবি বিক্রি হচ্ছে। তরুণদের মধ্যে এবার ঈদে গাঢ় রংয়ের শর্ট পাঞ্জাবির চাহিদাই বেশি। বয়স্করা কিনছেন সাদা ও হালকা রংয়ের পাঞ্জাবি।
ছেলেদের কাছে ভারতীয় কাজ করা পাঞ্জাবির চাহিদাও আছে। এবার ঈদের পাঞ্জাবির কাপড়ের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী সিল্ক, মটকা, সুতি, আদি, মহিশুর সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক, তসর, শাহজাদা আদি, অ্যান্ডি কটন, ইন্ডিয়ান সিল্ক, জাপানি ইউনিটিকা, তসর, ইন্ডিয়ান চিকেন, সামু সিল্ক, ধুতিয়ান ও জয়শ্রী সিল্ক।
ঈদবাজারে পাঞ্জাবি ভেদে দাম পড়বে ৩শ’ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান চিকেন ১ হাজার ৮শ’, তসর ১ হাজার ৪শ’, জাপানি ইউনিটিকা ৩ হাজার ১শ’, জলচাপা ১ হাজার ৭শ’, শর্ট পাঞ্জাবি ৬শ’ থেকে ১ হাজার, ধুতিয়ান ২ হাজার ৯শ’ এবং লং পাঞ্জাবি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে পাকিস্তানি কাবুলি সেট। দাম ১ হাজার ৫শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা।
ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে ভালো পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে বসুন্ধরার ‘দেশীদশ’য়ে। এছাড়া অঞ্জন’স, সাদাকালো, রঙ, বিবিয়ানা, দেশাল, নিপুণ কিংবা নগরদোলায় পাওয়া যাচ্ছে বাহারি আর জমকালো সব পাঞ্জাবি।
অঞ্জন’সয়ের মহাব্যবস্থাপক শাহীন আহম্মেদ জানান, গতবারের তুলনায় এবার পাঞ্জাবির কাপড় ও ডিজাইনে পরিবর্তন এসেছে। একটু দামি কাপড় ও বেশি কাজ করা এক্সক্লুসিভ পাঞ্জাবিও রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে ফতুয়া ও শর্ট পাঞ্জাবি। কাপড় ও ডিজাইনের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারি কাজের পাঞ্জাবি ২ হাজার ৫শ’ থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং হালকা কাজের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ১ হাজার ২শ’ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।
পোশাকের পর ছেলেদের কাছে প্রিয় হচ্ছে ফ্যাশনবেল ও আরামদায়ক জুতা। এবারের ঈদে বাটা, এপেক্স, বে-ইম্পোরিয়াম, জেনিথ, রিবক, নাইকি, অ্যাডিডাস, পুমাসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের শোরুমে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের স্যান্ডেল ও জুতা। এসব জুতার দাম ২ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা এবং স্যান্ডেলের দাম সাড়ে ৭শ’ থেকে ৪ হাজার টাকা। একটু কম দামে ৫শ’ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে এলিফ্যান্ট রোডের জুতার মার্কেট, পলওয়েল কিংবা নিউমার্কেটে ভালো জুতা পাওয়া যাচ্ছে।
কেবল জামা-জুতাই নয়, ঈদের দিন পরিপাটি হয়ে বেরুতে চাই আরও কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়। এই তালিকায় রয়েছে বেল্ট, মানিব্যাগ, রোদ চশমা, টুপি, ব্রেসলেট, ঘড়ি, বডি স্প্রে, আন্ডারওয়্যার এবং মোজা।
কিছুটা বড় এবং পাথরযুক্ত বকলেসের বেল্টের চাহিদাই এখন বেশি। ‘ফরমাল লুক’য়ের সঙ্গে মানানসই চামড়ার বেল্টের বিকল্প নেই। বেল্টের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি ভাগ। ব্র্যান্ড লেদার, ফ্যাশনেবল কিংবা ডিজাইনার বেল্ট। বেল্টের ভালো ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে, বস, প্লেবয়, আরমানি, অ্যাপেক্স, গুসি এবং সিকে। ২শ’ থেকে ১ হাজর ৫শ’ টাকায় পাওয়া যাবে এসব বেল্ট।
বসুন্ধরা সিটির ঘড়ির দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে রোলেক্স, জেনিথ, টাইটান, সিকো, সুইস আর্মি, ডিজেল, সিটিজেন এবং ডিজনি ব্র্যান্ডের অ্যারিস্ট্রোকেট সব ঘড়ি। দাম একটু বেশি হলেও ঈদ উপহার হিসেবে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন হাতঘড়ি।
বডি স্প্রে আন্ডারওয়্যার এবং মোজা কিনতে ভিড় দেখা গেছে ইনফিনিটি, আলমাস, এক্সটেসি এবং মোস্তফা মার্ট শপে। বডি স্প্রের মধ্যে চলতি ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে: এক্স, চেরি ব্লসম, ওল্ড স্পাইস, ইমপালস, বন্ডএজ এবং অ্যাডিডাস। দাম সাড়ে ৩শ’ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে।
ছবির মডেল: আফসান। পোশাক: ইজি ফ্যাশন হাউজ। ছবি: আলিফ হোসেন রিফাত।