হলদে সবুজে রং মাখাতে

আঁকাবাঁকা মেঠো পথ, দুই পাশে দিগন্ত হারানো হলুদের সমারোহ। গ্রাম-বাংলার ফসল খেতের সর্বত্রই এখন হলুদ রংয়ের গালিচা বিছিয়েছে প্রকৃতি।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Jan 2015, 09:39 AM
Updated : 2 Jan 2015, 09:39 AM

এমন হলুদ-সবুজের মাঝে হারাতে চাইলে যেতে হবে শহর থেকে বাইরে। কাছে কিংবা দূরে সবখানেই পাওয়া যাবে হলুদে মোড়ানো নির্মল প্রকৃতি।

মানিকগঞ্জ

রাজধানী ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন জায়গার প্রকৃতি শীতে বদলে গেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠগুলো এখন সরষে ফুলের হলুদে ভরে গেছে। এই জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম সরষে খেতের জন্য বিখ্যাত। এ

ছাড়াও এই জেলার ঘিওর, শিবালয়, দৌলতপুর, হরিরামপুর ও সাটুরিয়ার সব গ্রামেই প্রচুর শরিষা চাষ হয়। এসব এলাকার বাতাসে সরষে ফুলের ঘ্রাণ।

ঢাকা থেকে যে কোন দিন খুব সকালে বেড়িয়ে পড়তে পারেন যে কোন একটি জায়গার উদ্দেশ্যে। ঢাকার গাবতলী পেরিয়ে কিছুটা সামনে আমিন বাজার হেমায়েতপুর। সেখান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ছেড়ে হাতের বাঁয়ের সড়কটি সোজা চলে গেছে সিঙ্গাইর।

তবে হলুদের রাজ্য পেতে সিঙ্গাইর পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমিন বাজার থেকে সিঙ্গাইরের দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার চললে ধলেশ্বরী নদী। সেতু পার হয়ে ওপারে বিন্নাডিঙ্গী বাজার থেকে হাতের বাঁয়ে ছোট সড়ক ধরে চলতে থাকুন, প্রকৃতিই আপনাকে সাদরে ডাকবে কাছে যেতে।

এছাড়াও মানিকগঞ্জের আরেকটি হলুদের রাজ্য ঝিটকা। এখানে গেলেও পেয়ে যাবেন হলুদ সরিষা খেতের ভেতরে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। সড়কের দুই পাশে সারি সারি খেজুর গাছ।

এ ভ্রমণে নিজস্ব বাহন নিয়ে যাওয়া ভালো। এছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে মানকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে যাওয়ার বাস সার্ভিস আছে।

মুন্সীগঞ্জ

ঢাকার কাছে সরিষা খেতে বেড়ানোর মতো আরও কিছু জায়গা আছে মুন্সিগঞ্জে। এ জেলার শ্রীনগর, টঙ্গীবাড়ী, সিরাজদিখান উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সরষে ফুলের হলুদে ভরা। শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের বিস্তীর্ণ জায়গায় হলুদের সমারোহ।

টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় সরিষা খেতের জন্য বিখ্যাত সোনারং। সিরাজদিখানের চিত্রকোট, মালখানগর, জৈনসার ইউনিয়নের ফসলের মাঠগুলো এখন হলুদে ঢাকা। যেদিকেই তাকাবেন চোখ জুড়িয়ে যাবে।

এ ভ্রমণের নিজস্ব বাহন জরুরি। তবে ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া যায়।

যশোর

সরিষা খেতে বেড়ানোর জন্য ঢাকা থেকে দূরের জায়গা যশোর। যশোর শহর থেকে পাশেই, খাজুরার বিভিন্ন গ্রামে সরিষা ফুলের রাজ্য। এই শহর থেকে মাগুরা বাইপাস ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলে খাজুরা বাজার। সেখান থেকে পূর্ব-পশ্চিমে ছোট সড়ক ধরে গ্রামের ভেতরে চলে গেলে পাওয়া যাবে শীতে সাজানো প্রকৃতি।

যশোরের সরষে খেতের ভেতরে মেঠো পথে গরুর গাড়িও দেখতে পাবেন।

ঢাকা থেকে যশোর যেতে পারেন সড়ক, রেল ও আকাশ পথে। ঢাকার গাবতলী থেকে সোহাগ, ঈগল, ইয়োলো লাইন, গ্রীন লাইন পরিবহনের এসি বাস যায় যশোর। ভাড়া ৯শ’ থেকে ১ হাজার ১শ’ টাকা।

এছাড়া হানিফ, শ্যামলী, ঈগল, সোহাগ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও যশোর যায়। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা।

যশোর শহর থেকে খাজুরা ভ্রমণের জন্য সহজ বাহন ব্যাটারি চালিত রিকশা। সারাদিনের জন্য একটি রিকশার ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। আরামদায়কভাবে চারজন ভ্রমণ করা যায় একটি রিকশায়।

চলনবিল

দেশের সবচেয়ে বড় বিল চলনবিলের পানি শুকিয়ে যায় শীতে। এ সময়ে তাই কৃষকরা পুরো বিলেই চাষ করেন সরিষা। পুরো চলনবিল এখন তাই সরষে খেতের হলুদ গালিচায় মোড়ানো। সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল মোড় থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটার সড়কের দুইপাশেই আছে বিস্তীর্ণ সরষে খেত। ভেতরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা নদী কিংবা খালও আছে এখানে।

ঢাকা থেকে ভ্রমণে গেলে যমুনা সেতু পার হওয়ার পরে সিরাজগঞ্জের মোড় ছেড়ে আরও সামনে হাটিকুমড়ুল মোড়। সেখান থেকে পশ্চিম দিকে চলনবিলের বুক চিরে চলে গেছে হাটিকুমড়ুল-বনপাড়া সড়ক।

এ ভ্রমণেও নিজস্ব বাহন হলে ভালো। ইচ্ছামতো পছন্দের জায়গায় থামা যাবে।

এছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে সিরাজগঞ্জ কিংবা নাটোরের যে কোন বাসে যেতে পারেন। সিরাজগঞ্জের বাসে আসলে হাটিকুড়ুল মোড়ে নামতে হবে। আর নাটোরের বাসে চড়লে চলনবিলের যে কোন যায়গায় নামতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য

সরিষা খেতে ভ্রমণ উপভোগ্য খুব সকাল কিংবা বিকেলে। তা যে জায়গাতেই যান না কেন,  চেষ্টা করুন খুব সকালে পৌঁছুতে।