টেকনাফের নির্জন সৈকতে

বাংলাদেশের মানচিত্রের সর্ব দক্ষিণে টেকনাফ উপজেলা। এখানকার সৈকত দেশের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর সৈকতগুলোর একটি। তবে পর্যটকদের কাছে এখনও খুব বেশি জনপ্রিয় নয়।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2014, 09:56 AM
Updated : 15 August 2017, 07:14 AM

তাই বেশিরভাগ সময় সৈকতে মানুষের আনাগোনাও খুব বেশি থাকে না। এছাড়া দেশের অন্যান্য সৈকতগুলো থেকে একেবারেই আলাদা। এত রঙিন বাহারি জেলে নৌকা বাংলাদেশের আর কোনো সাগর পাড়ে দেখা যায় না।  যারা নির্জনে সমুদ্র উপভোগ করতে চান তাদের জন্য টেকনাফ আদর্শ জায়গা।

কক্সবাজার সদর থেকে টেকনাফের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার। টেকনাফ শহর ছাড়িয়ে দক্ষিণে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে এখানকার সৈকত। খুবই পরিচ্ছন্ন এই বালুকাবেলায় পর্যটকের আনাগোনা সবময়ই কম থাকে। সৈকতের বিভিন্ন জায়গায় এখানে দেখা যায় সারিবদ্ধভাবে জেলেদের মাছ ধরার বর্ণিল সব ইঞ্জিন নৌকা। লাল, নীল, বেগুনি ইত্যাদি বাহারি রংয়ের পতাকা দিয়ে জেলেরা এখানে তাদের নৌকাগুলোতে সাজিয়ে থাকেন। নৌকাগুলোর গায়েও থাকে রংতুলির শৈল্পিক আঁচড়।

এছাড়া এ সৈকতে পাশে একটু দূরে দূরেই আছে ঘন ঝাউবন।

এখানে আছে সৈকত লাগোয়া জেলেদের বেশ কিছু বসতি। পূর্ণিমার জোয়ারের ঢেউ টেকনাফ সৈকতে বিশাল আকার ধারণ করে। এসময় সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ এসে একেবারে তীরে আছড়ে পড়ে।

টেকনাফ সমুদ্রের পাড়েমূল প্রবেশ পথ থেকে হাতের বাঁ দিকে চলে গেলে যাওয়া যায় শাহ পরীর দ্বীপের কাছাকাছি। আর হাতের ডান দিকে চলে গেলে যাওয়া যাবে হাজামপাড়া, শিলখালী কিংবা শামলাপুর সৈকতের দিকে।

এখান থেকে উত্তর দিকে সৈকতের পাশ দিয়ে আকাশ ছুঁয়েছে তৈঙ্গা পাহাড়। সাগর আর পাহাড়ের নিবিড় বন্ধুত্ব দেখা যাবে এখানে। তাছাড়া এত সুন্দর, এত সাজানো বেলাভূমি দেশের অন্য কোন সৈকতে কমই দেখা যায়।

টেকনাফ সৈকতের আরেক আকর্ষণ সকাল-বিকাল জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য উপভোগ করা। চিংড়ির পোনা শিকারীরা এ সৈকতে নিজস্ব কৌশলে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন পোনা ধরতে। আর দূর সমুদ্র থেকে নৌকা বোঝাই মাছ নিয়ে শত শত জেলে এখানেই নিয়ে আসেন সকাল-বিকাল। 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায় সড়ক পথে। এ পথে চলাচলকারী এসি বাস হল সেন্টমার্টিন সার্ভিস। ভাড়া ১ হাজার ২শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা।

এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, ইউনিক সার্ভিস, হানিফ এন্টারপ্রাইজের নন এসি বাসও চলে এই পথে। ভাড়া ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।

কক্সবাজার থেকে বাস ও মাইক্রোবাসে টেকনাফ যাওয়া যায়। বাস ভাড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা। আর  মাইক্রোবাসে ১শ’ থেকে ১৫০ টাকা।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফের বাস ছাড়ে আন্তঃজিলা বাস টার্মিনাল থেকে আর মাইক্রোবাস ছাড়ে শহরের কলাতলী এবং  টেকনাফ বাইপাস মোড় থেকে। 

টেকনাফ শহর থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়া যাবে অটো রিকশায়। সময় লাগে আধা ঘণ্টার কম।

কোথায় থাকবেন

টেকনাফে থাকার জন্য আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল নে টং (০৩৪২৬-৭৫১০৪), এসি ডবল রুম ১ হাজার ৯শ’ টাকা। এসি রুম ৩ হাজার ১শ’ টাকা এবং সাধারণ দ্বৈত কক্ষ ১ হাজার ৩শ’ টাকা।

পর্যটনের এই মোটেল টেকনাফ শহরের প্রায় আট কিলোমিটার আগে। ঢাকার পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় থেকে এই মোটেলে বুকিং করা যায়।

তবে যারা টেকনাফ সমুদ্র সৈকতের একেবারে কাছাকাছি থাকতে চান তাদের জন্য আছে সেন্ট্রাল রিসোর্ট (০১৮৩৮৩৭৯৩৭২-৭৩)।

এখানকার ‍দামি রুমের ভাড়া ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ৩শ’ টাকা। ইকনোমি রুমের ভাড়া ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা।

এছাড়া এখানে সাগরকনা, মেঘ বালিকা ও নীলাচল নামে তিনটি কটেজ আছে। প্রতিটি কটেজে আছে দুটি করে রুম। ভাড়া ২ হাজার টাকা করে।

ঢাকা থেকেও এেই রিসোর্টে আগাম বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ- সর্দার প্লাজা, ৫ম তলা, ৯৬, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, নর্থ সাউথ রোড, ঢাকা ১১০০। ফোন ০২-৭১৬৫৫২৮, ৯৫৫০৯১৪, ০১৭১১৫৩৪২০৫।

প্রয়োজনীয় তথ্য

টেকনাফ সৈকতে লাইফ গার্ডের কোনো ব্যবস্থা নেই। জোয়ার-ভাটার সাংকেতিক কোন চিহ্ন থাকেনা। এখানকার জেলেদের কাছে জোয়ার-ভাটার সময়ের সঠিক তথ্য থাকে।

তাই সমুদ্র নামতে চাইলে জোয়ার ভাটা সম্পর্কে জেনে নিন। ভাটার সময় কিংবা একা সমুদ্রে নামবেন না।