নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট একটি দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ। নানান বৈচিত্র্যে ভরপুর এই দ্বীপ এখন বাংলাদেশের অন্যতম ভ্রমণ কেন্দ্র।
এখানকার জাতীয় উদ্যানে আছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ। নিঝুম দ্বীপের মতো দেশের অন্য কোন বনে কাছাকাছি থেকে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না। শীতে নানান রকম পরিযায়ী পাখি এই দ্বীপে বেড়াতে আসে। দ্বীপে পর্যটকদের থাকার ভালো ব্যবস্থাও আছে। এই শীতে তাই ঘুরে আসতে পারেন সুন্দর এই দ্বীপ থেকে।
বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের প্রধান চারটি দ্বীপ ও ছোট ছোট কয়েকটি চর নিয়ে এ দ্বীপ। উত্তর দক্ষিণে প্রায় নয় কিলোমিটার লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া।
নিঝুম দ্বীপে আছে বিশাল আকারের শ্বাসমূলীয় বন। ৭০’য়ের দশকে এখানে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু। ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়। ১৯৭৮ সালে এই বনে সর্বপ্রথম সুন্দরবন থেকে চার জোড়া চিত্রা হরিণ অবমুক্ত করা হয়। তাদের থেকে বংশ বিস্তার করে এ বনে বর্তমানে হরিণের সংখ্যা বিশ হাজারেরও বেশি। সুন্দরবনের মতো বন হলেও কোন হিংস্র প্রাণী না থাকায় বনে খুব কাছ থেকেই সহজে চিত্রা হরিণ দেখা যায়।
নিঝুম দ্বীপে বেড়ানোর মূল আকর্ষণ এখানকার বন। ভালোভাবে জঙ্গল দেখতে হলে ‘নামা’ বাজারের পাশের খাল ধরে নৌকায় চড়ে যেতে হবে চৌধুরীর খালে। এই খাল একেবারে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেছে। বেশি হরিণ দেখতে হলে নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে নীরবে অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া নিঝুম দ্বীপে আছে সমুদ্র সৈকত। জনমানবহীন এই সৈকতেও বেড়াতে পারেন। আর এখানকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখতে ভুলবেন না।
কীভাবে যাবেন
সদরঘাট থেকে একটি করে লঞ্চ প্রতিদিন তমরুদ্দীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এ পথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো হল এম ভি টিপু ৫ (০১৭১১৩৪৮৮১৩) ও এমভি পানামা (০১৯২৪০০৪৬০৮), এমভি ফারহান ৩ (০১৭৮৫৬৩০৩৬৬) এবং ফারহান ৪ (০১৭৮৫৬৩০৩৬৯)।
লঞ্চে ডেকে জনপ্রতি ভাড়া সাড়ে ৩শ’ টাকা। প্রথম শ্রেণীর একক কেবিন ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। দ্বৈত কেবিন ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকা।
ঢাকা থেকে বিকেল পাঁচটায় ছেড়ে তমুরুদ্দী পৌঁছাতে পরদিন সকাল হয়ে যায়। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে বন্দরটিলা ঘাট। রিজার্ভ নিলে ভাড়া ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকা। যাওয়া যাবে তিন থেকে চারজন। সেখানে ট্রলারে চ্যানেল পার হলেই বন্দরটিলা।
তারমানে সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে পরদিন দুপুরে পৌঁছানো যাবে নিঝুম দ্বীপে।
নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার অন্য রাস্তা হল সড়ক পথে। প্রথমে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুর। সেখান থেকে অটো রিকশা নিয়ে যেতে হবে চর জব্বার ঘাটে। এরপরে সি ট্রাক কিংবা ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে আবার বাস কিংবা অটো রিকশায় জাহাজমারা বাজার। জাহাজমারা বাজার থেকে আবার ইঞ্জিন নৌকায় যেতে হবে নিঝুম দ্বীপ। তবে ভ্রমণে গেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে যাওয়াই ভালো।
কোথায় থাকবেন
ঢাকা থেকে এ রিসোর্টের বুকিং দেওয়া যায়। যোগাযোগ: অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, শামসুদ্দিন ম্যানশন, ১০ম তলা, ১৭ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা। ফোন: ০২-৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ০১৫৫২৪২০৬০২।
প্যাকেজ ভ্রমণ
যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নিঝুম দ্বীপে প্যাকেজ ট্যুরে নিঝুম দ্বীপ গেলে ঝামেলা ও খরচ দুটোই তুলনামূলক কম। ভ্রমণ সংস্থা অবকাশ পর্যটন এখানে নিয়মিত প্যাকেজ ট্যুরের আয়োজন করে থাকে।
এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শিবলুল আজম কোরেশি জানালেন, তাদের আতিথেয়তায় গেলে পর্যটকদের তারা তমরুদ্দি থেকে সরাসরি নিজস্ব ইঞ্জিন বোটে নিঝুম দ্বীপ নিয়ে যান। দুই ধরণের প্যাকেজ রয়েছে।
প্যাকেজ ট্যুরের জন্য যোগাযোগ করতে হবে অবকাশ পর্যটনের ঠিকানায়।
প্রয়োজনীয় তথ্য
নিঝুম দ্বীপে প্রচুর হরিণ। তারপরেও হরিণ দেখতে হলে ভ্রমণকালীন কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা উচিত। বনের ভেতরে চলতে হবে নিঃশব্দে। সামান্য হৈচৈ করলে এখানে হরিণের দেখা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। জঙ্গলে ট্রেকিংয়ের সময় যথা সম্ভব সবাই হালকা রংয়ের সুতি পোশাক পরবেন। বন্য প্রাণীদের দৃষ্টি খুব প্রখর। অতি উজ্জ্বল পোশাকের কারণে দূর থেকে দেখে ফেলে বন্যপ্রাণীরা।
নিঝুম দ্বীপে বিদ্যুৎ নেই। নামা বাজার এলাকায় রাত এগারোটা পর্যন্ত জেনাটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ থাকে।
সঙ্গে যা নেবেন
শীত মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে সঙ্গে নিতে হবে পর্যাপ্ত শীতের কাপড়, কান টুপি, রোদ টুপি, জঙ্গল শু, হেড ল্যাম্প কিংবা টর্চ, বাইনোকুলার, ক্যামেরা, দরকারি ওষুধ, ওরস্যালাইন, পতঙ্গনাশক ক্রীম ইত্যাদি।