কুতুবদিয়ায় ভ্রমণ

কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া। প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ছোট্ট এই দ্বীপে আছে নানান বৈচিত্র্য।

মুস্তাফিজ মামুনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2014, 10:21 AM
Updated : 15 Nov 2014, 12:33 PM

নির্জন বেলাভূমি, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, লবণ চাষ, বাতিঘর, কুতুব আউলিয়ার মাজারসহ আছে দেখার মতো অনেক কিছু।

কুতুবদিয়া চ্যানেল

কুতুবদিয়ার চ্যানেল বেশ বড়। সারা বছর বেশ উত্তাল থাকলেও শীতে মোটামুটি শান্তই থাকে। মাগনামা ঘাট থেকে এই চ্যানেল পাড়ি দিয়েই পৌঁছতে হবে দ্বীপে।

সমুদ্র সৈকত

কুতুবদিয়ার সমুদ্র সৈকত উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। বেশিরভাগ এলাকাই বেশ নির্জন। পর্যটকের আনাগোনা নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে শুধু আছে জেলেদের কর্মব্যস্ততা। কোথাও কোথাও সৈকতের পাশে আছে ঝাউগাছের সারি। কুতুবদিয়া সৈকতের আরেকটি প্রধান বৈশিষ্ট হল প্রচুর গাংচিল ঘুরে বেড়ায় সেখানে। নির্জনতার সুযোগে সৈকতের কোথাও কোথাও লাল কাঁকড়াদের দল ঘুরে বেড়ায় নির্ভয়ে। সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য কুতুবদিয়ার সৈকত আদর্শ জায়গা।

কুতুবদিয়ার আলী অকবরের ডেল এলাকায় দেশের সবচেয়ে বড় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ছবি: মুস্তাফিজ মামুন/ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র কুতুবদিয়ায় অবস্থিত। প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে সৈকতের দক্ষিণ প্রান্তে, আলী আকবরের ডেল এলাকায়। দেখতে ভুল করবেন না দেশের বড় এই বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

বাতিঘর

সমুদ্রপথে চলাচলকারী জাহাজের নাবিকদের পথ দেখাতে বহুকাল আগে কুতুবদিয়ায় তৈরি করা হয়েছিল একটি বাতিঘর। পুরানো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে এখনও ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনও কখনও জেগে উঠতে দেখা যায়। পুরানো বাতিঘরের এলাকায় পরে যে বাতিঘর তৈরি করা হয়েছিল সেটিই এখন নাবিকদের পথ দেখায়। বড়ঘোপ বাজার থেকে সমুদ্র সৈকত ধরে উত্তর দিকে কিছু দূর গেলে বর্তমান বাতিঘরের অবস্থান।

কুতুব আউলিয়ার দরবার

দ্বীপের ধুরং এলাকায় কুতুব আউলিয়ার দরবার শরীফ। এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা শাহ আব্দুল মালেক আল কুতুবী। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন ১৯১১ সালে। ২০০০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তারিখে তিনি মারা যান। প্রতিবছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে (৭ ফাল্গুন) হাজারও ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। কথিত আছে কুতুবদিয়ার নামকরণ হয়েছে কুতুব আউলিয়ার পূর্বপুরুষদের নামানুসারেই। বর্তমানে কুতুব শরীফ দরবারের দায়িত্বে আছেন তাঁরই পুত্র শাহজাদা শেখ ফরিদ।

লবণ চাষ

শীতে কুতুবদিয়ার জমিতে চাষ হয় লবণ। এ সময়ে সেখানে গেলে দেখা যাবে মাঠে মাঠে কৃষকদের লবণ চাষের ব্যস্ততা। দ্বীপের সর্বত্রই কম-বেশি লবণের চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি লবণের মাঠ তাবলের চর, কৈয়ার বিল, আলী আকবরের ডেল-এ রয়েছে। প্রাকৃতিক উপায়ে লবণ উৎপাদনের নানান কৌশল দেখা যাবে এখানে।

কীভাবে যাবেন

কুতুদিয়া যেতে হবে কক্সবাজারের বাসে। ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস।

ভাড়া ১ হাজার ৭শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা।

এসব বাসে চড়ে নামতে হবে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পথে যাত্রা বিরতি স্থল ইনানী রিসোর্টের এক কিলোমিটার সামনে বড়ইতলি মোড়ে। সেখান থেকে সিএনজি চালিত বেবিটেক্সিতে যেতে হবে মাগনামা ঘাট। জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২শ’ টাকা। মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হতে হবে ইঞ্জিন নৌকা অথবা স্পিড বোটে।

ইঞ্জিন নৌকায় সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট, ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। আর স্পিডবোটে লাগে ১০ মিনিট, ভাড়া ৬০ টাকা। চ্যানেল পার হলেই কুতুবদিয়া।

বড়ঘোপ বাজার রিকশায় যেতে লাগবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে ও কক্সবাজার বাসস্টান্ড থেকে সরাসরি এস আলমের বাস যায় মাগনামা ঘাটে। ভাড়া চট্টগ্রাম থেকে ১৬০ টাকা, কক্সবাজার থেকে ৯০ টাকা।  

কোথায় থাকবেন

কুতুবদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য মানসম্মত একমাত্র আবাসন ব্যবস্থা হল হোটেল সমুদ্র বিলাস। সমুদ্র লাগোয়া এই হোটেলে বসে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের সৌন্দর্য। হোটেলের দুই জনের নন এসি কক্ষ ভাড়া ৮শ’ টাকা তিনজনের ১ হাজার এবং চার জনের কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ২শ’ টাকা। যোগাযোগ: হোটেল সমুদ্র বিলাস, বড়ঘোপ বাজার, কুতুবদিয়া। মোবাইল ০১৮১৯৬৪৭৩৫৫, ০১৭২২০৮৬৮৪৭।

প্রয়োজনীয় তথ্য

কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখানকার বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে।

সৈকতে জোয়ার ভাটা চিহ্নিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই নিজ দায়িত্বে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সমুদ্র স্নানে নামতে। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক।