শিল্পী কিংবা খেলোয়াড় যাদের রয়েছে খাবারের দোকান। সেসব আস্তানায় প্রিয় শিল্পীকে সবসময় না পেলেও পেটপূজার জন্য খাবার থাকবেই।
Published : 17 Sep 2015, 03:17 PM
রাজধানীর এরকমই কিছু রেস্তোরাঁ নিয়ে এই আয়োজন।
সাকিব’স
বনানী ১১ নম্বরে সাকিব’স রেস্তোরাঁ যে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। লিফটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা নিয়ে তৈরি এই রেস্তোরাঁ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে ৮ অগাস্ট। একমাত্র লিফটের মাধ্যমেই উঠতে হবে রেস্তোরাঁয়।
দ্বিতীয় তলাকে বলা হয় স্পোর্টস লাউঞ্জ। আর তৃতীয় তলার নাম ফাইন ডাইন। সর্বসাধারণের জন্য দুটি তলাই উন্মুক্ত।
ফাইন ডাইনে মূলত পরিবার নিয়ে নিরিবিলি পরিবেশে পেটপূজার জন্য আর স্পোর্টস হলে থাকছে নিয়মিত খেলা দেখার সুযোগ। শুধু বাংলাদেশের খেলাই নয়, সবধরনের খেলাই দেখানো হয় এখানে। দুটি তলার মেন্যুও আলাদা।
রেস্তোরাঁয় ঢুকেই বোঝা যাবে এটি একটি ক্রিকেটারের রেস্তোরাঁ। রেস্তোরাঁর দেয়ালগুলো দেখে মনে হতে পারে মাঠের ঘাস তুলে এনে বসানো হয়েছে। তাতে ঝোলানো হয়েছে ক্রিকেটের গ্লাভস, বিভিন্ন দেশের জার্সি। সাকিবের ব্যবহৃত জার্সিও আছে। দেয়ালের খাঁজে রাখা হয়েছে ক্রিকেটের ব্যাট, স্ট্যাম্প। একপাশের কাঁচের দেয়ালে লাল-সবুজ রংয়ের মাঝে আঁকা আছে চে গুয়েভারার মুখ।
ছাদে নকশা করা হয়েছে বিভিন্ন আকৃতির চৌকোণা বাক্স দিয়ে। তবে তৃতীয় তলার অন্দরসজ্জায় ক্রিকেটের কোনো হাওয়া নেই।
রেস্তোরাঁর ম্যানেজার কেএম আলি হোসেন রাজু বলেন, “রেস্তোরাঁর ক্রেতা ধারণক্ষমতা ১৬০ জনের বেশি। তবে অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া করা হলে ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব।”
খাবার সম্পর্কে তিন জানান, থাই, চীনা, কন্টিনেন্টাল এবং ভারতীয় খাবার মিলবে তৃতীয় তলায়। আর দ্বিতীয় তলায় পাওয়া যাবে পিৎজা, পাস্তা, বার্গার, স্যান্ডউইচ, চিকেন ফ্রাই ইত্যাদি।
দ্বিতীয় তলায় মূলত তরূণ ত্রেতাদের ভিড় বেশি হয়। ছাত্রদের জন্য রবিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত থাকছে ১০ শতাংশ মূল্যছাড়। আর এই সেবা পেতে দেখাতে হবে স্টুডেন্ট আইডি।
এছাড়াও আছে তিনটি সেট মেন্যু। দাম— আড়াইশ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ টাকা। উপর তলায় কন্টিনেন্টাল ডিশগুলোর চাহিদাই বেশি। বেশি চলছে স্টেকগুলো।
এ রেস্তোরাঁয় চারজন মিলে তিন কোর্স খাবার খেতে খরচ পড়বে প্রায় এক হাজার টাকা।
হোয়াই নট
অভিনেত্রী রুমানা রশীদ ঈশিতার রেস্তোঁরা। বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি মোড় পেরিয়ে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভেনিউ ধরে কিছুদুর হাঁটলেই হাতের ডানে পড়বে এই খাবারের দোকান।
ঈশিতা বলেন, “ছোট পরিসরে নিজে কিছু একটা করার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন থেকেই। এই ইচ্ছা আর আমার মায়ের ১৩ বছরের রেস্তোরাঁ ব্যবসার অভিজ্ঞতার সূত্র ধরেই রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আসা।”
খাবারের মধ্যে বার্গার আর থাই সেট মেন্যুগুলো সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এছাড়াও আছে পাস্তা, স্প্যাগেটি, সুপ, সালাদ, নুডুলস, ফ্রাইড রাইস, গরু ও মুরগির মাংসের কয়েকটি পদ।
ডেজার্ট হিসেবে আছে ফালুদা ও আইসক্রিম।
ড্রিংকসের মধ্যে পাওয়া যাবে চার ধরনের মিল্কশেইক ও মকটেইল, ফ্র্যাপে, জিরা পানি, চা ও কফি।
ঈশিতা আরও বলেন, “দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে হোয়াই নট। বসার ব্যবস্থা আছে ২২ জনের। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে মধ্যবয়সি চাকরীজীবি পর্যন্ত সব বয়সের ক্রেতাই বেশি আসেন এখানে। ভিড় থাকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।”
কাবাব অন সেভেন
আট মাস বয়সি এই কাবাবের রেস্তোরাঁর মালিক সঙ্গীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ ও তার ভাই এরশাদ ওয়াহিদ। ধানমণ্ডির সাত নম্বর রোডে অরচার্ড পয়েন্ট মার্কেটের পাশে ওয়াহিদ পরিবারের পৈতৃক ভিটার উপরেই চলছে খাবারে ব্যবসা।
ম্যানেজার মোহাম্মদ সোহেল খান বলেন, “ধানমন্ডি সাত নম্বর রোডে হওয়ার কারণেই নাম রাখা হয়েছে কাবাব অন সেভেন। খোলা থাকে দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। তবে শুক্রবার খোলা হয় দুপুর ৩টা থেকে। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভিড় থাকে বেশি।”
আরও আছে আলুর দম, বটি কাবাব দিয়ে তৈরি কাবাব বার্গার, কাবাব রোল, ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইস নুডুলস, খিচুড়ি ইত্যাদি।
রেস্তোরাঁ কাবাবের হলেও বানানো হয় ব্রাউনি, কাপকেক, রেড ভেলভেট কাপকেক। ব্রাউনি ও রেড ভেলভেট কাপকেকের দাম ৭৫ টাকা আর কাপকেক ৬০ টাকা।
সোহেল খান আরও বলেন, “কারওয়ান বাজার থেকে কাবাবের কাঁচামাংস কিনে আনি আমরা। তবে মসলা, রান্না সবই আমাদের নিজস্ব রেসিপিতে।”
বসার ব্যবস্থা আছে প্রায় ৩২ জনের। ওয়াইফাই সুবিধা নেই।
টামি টাইম
টামি টাইমের তিন কর্ণধারের মধ্যে একজন অভিনেতা জিয়াউল হক অপূর্ব। মহাখালী ওয়্যারলেস মোড় থেকে গুলশান একয়ের দিকে যেতে বাঁদিকে পড়বে এই রেস্তোরাঁ।
দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম বলেন, “২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছিল। টামি টাইমের পাশাপাশি উত্তরার তিন নম্বর সেক্টরে রঙ্গিলা নামের রেস্তোরাঁর সঙ্গেও জড়িত আছেন এই তারকা।”
সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে কাঠের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে দুপাশে কাচ ঘেরা দেয়ালের ছিমছাম ঘরটি।
সাইমউল বলেন, “মূলত কন্টিনেন্টাল খাবার মিলবে আমাদের রেস্তোরাঁয়। এরমধ্যে সবচাইতে বেশি জনপ্রিয় আমাদের স্টেকগুলো। রয়েছে নিউ ইয়র্ক স্ট্রিপ, টি-বোন, ফিলেট মিগনন, রিব আই, কুইন’স ক্লাব এই পাঁচ ধরনের স্টেক। দাম ৯শ’ থেকে ১২শ’ টাকা।”
“স্টেকের মাংস আনা হয় বেঙ্গল মিট থেকে। এছাড়াও তরুণ কর্মজীবী ও আশপাশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে দুপুরে সেট লাঞ্চের ব্যবস্থা। গুণতে হবে ২শ’ থেকে শুরু হয়ে সাড়ে ৩শ’ টাকা।” বললেন তিনি।
খোলা থাকে দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। ওয়াইফাই আছে।
চেন্নাই এক্সপ্রেস
বনানী ১১ নম্বরের ভারতীয় খাবারের এই রেস্তোরাঁর তিন কর্ণধারের মধ্যে একজন অভিনেতা শাহরিয়ার নাজিম জয়। চালু হয়েছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে।
নামকরণের কারণ সম্পর্কে মালিক শাহরিয়ার নাজিম জয় বলেন, “মানুষের মনে এই প্রশ্ন জাগিয়ে তোলাই নামের মূল উদ্দেশ্য। এই প্রশ্নটার মাধ্যমেই একটা বিজ্ঞাপণ হয়ে যায় রেস্তোরাঁর। আর নামটাকে সার্থক করতে আমাদের মেন্যুতে থাকছে কয়েকটি দক্ষিণ ভারতীয় খাবার।”
পাওয়া যায় ‘চেলো কাবাব’, কলকাতার পিটার ক্যাট নামক রেস্তোরাঁর একটি বিশেষ খাবার। যাতে এক সঙ্গে মিলবে পোলাও, চিকেন রেশমি কাবাব, বিফ বা মাটন কাবাব, মিক্সড ভেজিটেবল, ডিম পোচ, বাটার লাচ্ছি আর পুদিনার পানি।
অন্যান্য খাবারের মধ্যে আছে হরেক রকমের কাবাব, দই ফুচকা, পাপড়ি চাট, বেশ কয়েক রকমের রোল ইত্যাদি।
সাত রকমের সেট মেনু আছে। দাম ৩৭৫ থেকে ৪৯৯ টাকা। হাজির বিরিয়ানিসহ সেট মেনু সাড়ে তিনশ টাকা।
বসার ব্যবস্থা আছে ৬৫ জনের, আছে ওয়াইফাই সুবিধাও।
ভর্তা ভাত
২০১৩ সালে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় আসেন সঙ্গীতশিল্পী পারভেজ সাজ্জাদ। তিনি বলেন, “প্রথম শাখাটি ছিল মগবাজারে, পরে ফকিরাপুল ও কাওরান বাজার এলাকার পূর্ণিমা সিনেমা হলের পাশে আরও দুটি শাখা খোলা হয়।”
দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে য়েতে চাইলে আয়ের একটা নির্ভরযোগ্য উৎস থাকাটা জরুরি। পাশাপাশি দেশি খাবারের প্রচার করার ইচ্ছাটাও এই ব্যবসায় আসার একটি কারণ।” বললেন এই সঙ্গীত শিল্পী।
ভর্তা ভাতের কাওরান বাজার শাখার বাবুর্চি দুলাল হাওলাদার বলেন, “খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। তবে ভিড়টা হয় দুপুরে। চাকুরীজীবি ক্রেতাই বেশি আসেন এখানে। এই শাখায় বসার ব্যবস্থা আছে প্রায় ৫০ জনের।”
রেস্তোরাঁর ভেতরের পরিবেশ ছিমছাম। ভাত, ভাজি, শাক প্রতি প্লেটের দাম ৩০ টাকা। ভর্তা মিলবে মোট ২২ ধরনের। দাম ২০ থেকে ৪৫ টাকা। মাছের মধ্যে মিলবে ইলিশ, বোয়াল, রুই, ছোট মাছ ইত্যাদি, দাম দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা। কালাভুনা দেড়শ টাকা, মুরগির মাংস ১২০ টাকা। গরুর মাংস দেড়শ টাকা।
পরিচালক গোলাম মোস্তফা বলেন, “রেস্তোরাঁর অন্দরসজ্জার অবদান তিন মালিকের। সম্প্রতি সকালের নাস্তা এবং বিকালের নাস্তার আয়োজন করা হয়েছে। মিলবে চিকেন ফ্রাই, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, শিঙ্গাড়া, সমুচা ইত্যাদি।”
আরও আছে
এগুলো ছাড়াও পুরান ঢাকার ওয়ারিতে সিচ্যুয়ান গার্ডেন নামে একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁ খুলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেটদলের সাবেক খেলোয়াড় আশরাফুল।
আর ধানমণ্ডিতে পিট গ্রিল নামে একটি কাবাবের রেস্তোরাঁ চালু করেছেন সঙ্গীতশিল্পী জেমস।
ছবি: আব্দুল মান্নান।
আরও রেস্তোরাঁর খবর: