গত দুইদিনের চাঁদ কীভাবে লাল হলো তার ব্যাখ্যাই জানবো আজ
Published : 29 Sep 2015, 03:56 PM
গত ২৭-২৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবীব্যাপী সবাই খুব উৎসাহিত ছিল লাল একটা চাঁদ দিয়ে। গত দুইদিন তোমরা যারা রাতের আকাশে তাকিয়েছো নিশ্চয়ই সেই লাল চাঁদটি দেখেছো । এটি ছিল একটি অভাবনীয় ঐতিহাসিক মহাজাগতিক মুহূর্ত, সুপারমুন চন্দ্রগ্রহণ। এই সুপারমুন চন্দ্রগ্রহণকে ব্লাডমুন বলা হলেও এর সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হল “Lunar Eclipse Tetrad”।
সবার আগে আমাদের জানতে হবে, চন্দ্রগ্রহণ কী--
গ্রহণের ইংরেজি শব্দ Eclips। এর মানে হলো, লুকিয়ে যাওয়া বা ঢেকে যাওয়া। যখন চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্য এর গতিপথের মাঝে এসে যায় তখন সেটাকে সূর্যগ্রহণ বলে। আর যখন পৃথিবী সূর্য এবং চাঁদ এর গতিপথের মাঝে চলে আসে তখন সেটাকে বলে, চন্দ্রগ্রহণ।
চন্দ্রগ্রহণের সময়, পৃথিবীর ছায়া মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে চাঁদের কক্ষপথ ঢেকে যায়। যখন চাঁদ তার এই ছায়াবৃত কক্ষপথ পার করে সে সময়টিকেই বলে চাঁদের গ্রহণ লাগা।
মজার কথা হলো, চন্দ্রগ্রহণ সবসময় সূর্যগ্রহণের সঙ্গে দুই সপ্তাহ পর পর জোড়ায় জোড়ায় হয়ে থাকে। তুমি যখনই শুনবে একটি সূর্যগ্রহণ হয়েছে জেনে রাখবে একটি চন্দ্রগ্রহণ আসছে। তবে এই জোড়ায় জোড়ায় হওয়ার একটা সরণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।
সূর্য বা চন্দ্র যে কোনো গ্রহণ হতে পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদকে একই সরলরেখায় আসতে হয়, এবং এই সরলরৈখিক অবস্থান একটি চন্দ্রমাসে দুইবার হয়। তাই সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ জোড়ায় জোড়ায় হয়।
একটি চন্দ্রগ্রহণ এর স্থায়িত্বকাল নির্ভর করে চাঁদের পৃথিবীর ছায়ার প্রদক্ষিণ কালের উপর, এটি কয়েক ঘণ্টা জুড়েও হতে পারে। যদি চাঁদ পৃথিবীর ছায়ার কার্নিশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে তাহলে তাকে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ বলে কিন্তু চাঁদ যদি পৃথিবীর ছায়া ঢাকা সম্পূর্ণ অংশ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে তাহলে তাকে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ বলে।
এবার বলি, Tetrad চন্দ্রগ্রহণ কীভাবে হয়। যখন দুই বছরে পর্যায়ক্রমে চারটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয় তখন তাকে বলা হয় এস্ট্রোনমির ভাষায় বলা হয় Tetrad. ২০১৪-২০১৫ সালে মোট চারটি পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ হয়েছে। এই চন্দ্রগ্রহণ পর্যায়ক্রমে হয়েছে ১৫ই এপ্রিল ২০১৪, ৮ই অক্টোবর ২০১৪, ৪ঠা এপ্রিল ২০১৫ এবং ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ এ। এমন বিরল ঘটনা এরপর আবার ২০৩৩সালে দেখা যাবে।
সে তো গেলো Tetrad এর কথা। কিন্তু চাঁদটি এরকম লাল কীভাবে হয়ে গেলো জানো? কারণটি খুব সহজ। যে কারণে সূর্যাস্তের সময় আমরা আকাশকে লাল দেখি ঠিক একই কারণে এই দুই দিনের চাঁদও লাল ছিল। লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। অন্য সব রঙয়ের আলো বায়ুমণ্ডলে শোষিত হলেও লাল রঙের আলো হয় না। সূর্যগ্রহণ কালে চাঁদ পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলে। এই ছায়ার সবচেয়ে গাঢ়তম প্রচ্ছায়াকে এস্ট্রোনমির ভাষায় বলা হয় দ্যা আম্ব্রা- পৃথিবীর বুকে এই প্রচ্ছায়া ১৬৬ মাইল(২৬৭ কিলোমিটার) প্রস্থে হতে পারে।
উল্লেখ্য, পৃথিবী অপেক্ষা চাঁদের কক্ষপথ ঈষৎ হেলানো বলে, প্রতি অমাবস্যায় এবং পূর্ণিমায় চন্দ্রগ্রহণ হয় না। পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যেকার এই কৌণিক চাঁদের ছায়া সাধারণত উপর বা নিচের থেকে প্রতিফলিত হয় এই সময়। শুধুমাত্র বছরে দুই বার একই সময় পৃথিবী, সূর্য এবং চাঁদ একই সরলরেখায় অবস্থান করে তার ফলেই গ্রহণ হয়।
পৃথিবীর যে সকল অঞ্চলের মানুষ যে সময় চাঁদ দেখতে পারে, তারা চন্দ্রগ্রহণ ও সে সময় দেখতে পারে, মানে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ একসঙ্গে পূর্ণ বা আংশিক চন্দ্রগ্রহণ দেখতে পারে। একটি পূর্ণ সূর্যগ্রহণে, চাঁদের ছায়া পৃথিবীর বুকের সংকীর্ণ একটি অঞ্চলের উপর পড়ে সেই অংশই কেবল মাত্র পূর্ণ গ্রহণ দেখতে পারে। কিন্তু বাকি বিস্তীর্ণ এলাকা আংশিক গ্রহণ দেখতে পারে।