বিয়ে বাড়িতে গেছেন দারুণ খানাপিনা হবে ভেবে। মুরগির রোস্ট আর কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে সঙ্গে পরিবেশন করা টক-ঝাল বোরহানি। সেই থেকে আপনি হয়ে গেলেন বোরহানির ভক্ত। কোথাও খেতে গেলেই বোরহানি আপনার চাই। কিন্তু এক দিন দেখলেন খাবারের তালিকায় কেবল বোরহানিই রয়েছে, তাহলে?
Published : 15 Jul 2015, 07:30 PM
‘ডেসপিকেবল মি’ ফ্র্যাঞ্চাইজি দেখে মিনিয়নদের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন যারা, তাদেরও অনেকটা এমন অনুভুতি হতে পারে এর স্পিন-অফ সিনেমা ‘মিনিয়ন্স’ দেখলে। গোলগাল, চশমা পড়া খুদে খুদে ওই হলদে প্রাণিগুলোকে মূল সিনেমাগুলোয় যতোই আদুরে লাগুক, একটা আস্ত সিনেমাজুড়ে এদের কাণ্ড একঘেঁয়ে লাগতে বাধ্য।
জনপ্রিয় সিনেমার জনপ্রিয় পার্শ্ব-চরিত্রদের নিয়ে আস্ত আরেকটি সিনেমা তৈরির চল বেশ পুরোনো। কিছু কিছু স্পিন-অফ এতোটাই সফল হয়েছে যে, সেখান থেকেই যাত্রা শুরু করেছে আরেকটি নতুন সিরিজ। ‘এক্স-মেন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির স্পিন-অফ সিরিজ ‘দ্য উলভারিন’ কিংবা ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর স্পিন-অফ সিরিজ ‘দ্য হবিট’-এর কথা এখানে উদাহরণ হিসেবে টানা যায়। অ্যানিমেটেড সিনেমার দুনিয়াতেও এর নজির কম নয়। ‘উইনি দ্য পু’র স্পিন-অফ ‘টিগার’স স্টোরি’ কিংবা ‘দ্য শ্রেক’ ফ্র্যাঞ্চাইজির স্পিন-অফ ‘পুস ইন দ্য বুটস’কে সাদরে গ্রহণ করেছিল দর্শক-সমালোচক দুই মহলই।
তবে এর উল্টো দৃষ্টান্তও আছে এবং তার জন্য খুব পেছনে তাকাতে হবে না। ‘মাদাগাস্কার’ সিরিজের স্পিন-অফ ‘পেঙ্গুইন্স অফ মাদাগাস্কার’ মুক্তি পেয়েছে গত বছরেই। কিন্তু মূল সিরিজের সিনেমাগুলোয় তাদের উপস্থিতি যতোটা দাগ ফেলেছে দর্শকের মনে, তাদের নিয়ে বানানো আলাদা সিনেমা তত দ্রুতই মুছে গেছে স্মৃতি থেকে। আর তার কারণ একটাই; স্পিন-অফে নতুনত্বের স্বাদ দিতে ব্যর্থ হওয়া।
একই ঘটনা ‘মিনিয়ন্স’-এর সঙ্গেও ঘটেছে। যদিও মুক্তির দিন থেকেই হল মাতাচ্ছে দেড় ঘণ্টার এই সিনেমা। শিশুরা প্রাণ খুলে হাসছে এই খুদে হলুদ প্রাণীদের কাণ্ড দেখে। তবে এই সিনেমা আরেকবার দেখতে চাওয়ার কথা মনে হবে না কারো।
অথচ এক বছর আগে মুক্তি পাওয়া ট্রেইলার আশা জাগিয়েছিল ভাল কিছুরই। মিনিয়নদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে তৈরী হওয়া সেই ট্রেইলারই স্পিন-অফটিকে করে তুলেছিল এই সময়ের বহুল আকাঙ্ক্ষিত সিনেমায়।
এই পর্যন্ত মিনিয়নদের জীবনের ঘটনা জানা যায় ট্রেইলার থেকেই। আর এই অংশেই পৃথিবীর ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন ভয়ঙ্কর ব্যাক্তিত্বের সেবক হিসেবে মিনিয়নদের ইতিকথা ফুটিয়ে তোলার বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়াস দেখা যায়। তবে নতুনত্বের ঝলকের শেষ ওখানেই। সিনেমার বাকি অংশের একঘেঁয়েমি তৈরি করবে হতাশাই।
হতাশার শুরু আসলে মিনিয়নদের নতুন মনিব স্কারলেট ওভারকিলকে দিয়ে। অস্কারজয়ী অভিনেত্রী স্যান্ড্রা বুলকের কণ্ঠদান সত্বেও এই চরিত্রটিকে অতি অহঙ্কারী এবং বুদ্ধিহীন মনে হয়েছে।
স্কারলেট ওভারকিলকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে পৃথিবীর প্রথম সুপারভিলেইন হিসেবে। ষাটের দশকের পৃথিবীর সব বড় বড় অপরাধী স্কারলেটের কাছে নস্যি। কিন্ত পৃথিবীর প্রথম এই সুপারভিলেইন স্বয়ংসম্পূর্ণ নন। বিজ্ঞানী এবং উদ্ভাবক স্বামী হার্বের আশ্চযর্ সব প্রযুক্তির জোরেই এতদূর আসতে পেরেছেন তিনি।
‘ডেস্পিকেবল মি’ থেকেই দুর্বোধ্য এক ভাষায় কথা বলা মিনিয়নদের লোক হাসানোর সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল স্ল্যাপস্টিক কমেডি। স্বাভাবিক ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই ছোট ছোট কিন্তু অদ্ভুতুড়ে সব শরিরী ভাষা দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল মিনিয়নকূল। তাদের চাহনি, কথা বলার ভঙ্গী, হাস্যকর সব কর্মকাণ্ড দিয়ে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টায় এবারও কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু সেই একই স্ল্যাপস্টিক কমেডি এবারের সিনেমায় বহু ব্যবহারে জীর্ণ। আর সেই সঙ্গে তা গল্পকাঠামোকেও করে তোলে অনুমেয়, যার ফলে সহজেই আগ্রহ হারাবেন দর্শক।
যে কোনো অ্যানিমেটেড সিনেমার প্রধান দুই সম্পদ- ব্যাতিক্রমী চরিত্রগঠন এবং গল্প কাঠামোর নতুনত্ব। এই দুই বিভাগেই চরমভাবে ব্যর্থ হওয়ায় ‘মিনিয়ন্স’ থেকে মুগ্ধতার উপকরণ খুঁজে বের করা দুষ্কর। যে সূক্ষ্ম রসবোধের উপস্থিতি আগের দুই ‘ডেসপিকেবল মি’ সিনেমাকে করে তুলেছে অনন্য, সে সবের কিছুই না থাকায় ‘মিনিয়ন্স’কে উঁচু দরের কমেডি বলা যাচ্ছে না কিছুতেই। ব্রায়ান লিঞ্চের গল্প তো বটেই আগের দুই সিনেমার প্রসংশিত নির্মাতা পিয়েরে কফিনকেও পরিচালনার দিক থেকে ব্যর্থই বলতে হচ্ছে এবার।
পরিবারে ছোট শিশু থাকলে তাদের বিনোদনের চাহিদা অবশ্যই মেটাবে ‘মিনিয়ন্স’।