'১৭ কোটি দর্শকের নায়ক হতে চাই'

ছোট পর্দার অভিনেতারা বড় পর্দায় সাফল্য পান না - এ কথাকে মিথ্যা প্রমাণ করেই ছেড়েছেন আরেফিন শুভ। ‘জাগো’ সিনেমার মধ্য দিয়ে রূপালী পর্দায় চোখ মেললেও মাহির বিপরীতে ‘অগ্নি’ই তার পায়ের নিচে মাটি তৈরি করে দেয়। 'কিস্তিমাত' দিয়ে বাজার মাত করে এবার আসছেন রোমান্টিক সিনেমা ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ নিয়ে।

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2015, 12:04 PM
Updated : 9 April 2015, 12:05 PM

নাটক থেকে সিনেমায় পাড়ি জমানো আরেক অভিনয়শিল্পী মমর বিপরীতে সিনেমাটি আসছে শুক্রবার। আশিকুর রহমানের ‘মুসাফির’ সিনেমার সেটে কথা বললেন ক্যারিয়ারসহ নানা ইস্যুতে।

গ্লিটজ: ‘কিস্তিমাত’ এর পর আবারও আশিকুর রহমানের সঙ্গে কাজ করছেন। ‘মুসাফির’ দিয়েই কথা শুরু করা যাক।

শুভ: আশিকের সঙ্গে কাজ করতে পারার মধ্যে আলাদা মজা আছে। এই মুহূর্তে আশিক আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে মেধাবী সিনেমাটোগ্রাফার। সত্যিই তার কোনো জুড়ি নেই। তার কাজের কোয়ালিটি নিয়ে কোনো কথা হবে না। আশিকের সঙ্গে কাজ করতে আমি কমফোর্ট ফিল করি, এটা সত্যি।

‘মুসাফির’ এর কথা বলি। খুব ইন্টারেস্টিং গল্প। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে সাসপেন্স থ্রিলার মুভি তেমন একটা হয় না। মুভিগুলোতে থ্রিলার ব্যাপারটি ঠিকমতো ধরে রাখা হচ্ছে না। কিন্তু এই গল্পের অনেকগুলো মুখ। পুরো স্টোরিতেই অনেক সাসপেন্স। ধীরে ধীরে গল্পে ঢুকে পড়ে সে গল্পটি পুরোই পড়তে হবে আপনাকে। অন্যরকম একটি গল্প। আর ‘মুসাফির’ এর চরিত্রটিও আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয়।

গ্লিটজ: এ সিনেমাটির কাজ করতে অন্য সিনেমার তুলনায় বেশ স্বচ্ছন্দ্য বোধ করছেন বলেই মনে হচ্ছে...

শুভ: দেখুন, একজন পেশাদার অভিনেতা কিন্তু যে কোনো সেটেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। আমি যে কোনো ইউনিটের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। সিনেমার সেটে এসে আমি ভুলে যাই, লোকে আমাকে নায়ক আরেফিন শুভ বলে। একজন সাধারণ অভিনেতার মতোই কো-অপারেট করতে চেষ্টা করি। নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিতে চাই।

গ্লিটজ: সিনেমাতে আপনার বিপরীতে একেবারেই আনকোড়া অভিনেত্রী কাজ করছেন। ক্যারিয়ারের এ সময়ে ব্যাপারটি একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেলো না?

শুভ: দেখুন, সহ-অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রসঙ্গটি নির্ভর করে আমি কোন সময়ে কোন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। আমাদের চলচ্চিত্রের যা অবস্থা, তাতে তো সহ-অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে নিয়ে না ভেবে কাজ নিয়ে ভাবা উচিত। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সিনেমাটি বানাচ্ছেন কে। একইসঙ্গে সিনেমার গল্প ও মেকিং প্যাটার্নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আমার চরিত্রটি কেমন গুরুত্ব পাচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবি আমি। কে আমার সহ-অভিনেত্রী হলো তা নিয়ে ভাবি না আমি।

গ্লিটজ: শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে আপনার অভিনীত ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমাটি। ‘অগ্নি’, ‘কিস্তিমাত’- এর পর দর্শক আপনাকে অ্যাকশন হিরো ভাবতে শুরু করেছে। এমন সময় রোমান্টিক একটি সিনেমায় কাজ করে কেমন লেগেছে?

শুভ: ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ একেবারেই কমার্শিয়াল সিনেমা। পরিচালক শিহাব শাহীন একে ভীষণ যত্ন নিয়ে নির্মাণ করেছেন। সিনেমার এ টু জেড নিজেই তদারকি করেছেন। সিনেমাটিতে শিহাব তার সিনেমাটিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলন দেখিয়েছেন। আর মম প্রসঙ্গে নতুন করে কিছু বলার নেই। সে ভীষণ ভালো অভিনেত্রী।

বলছিলেন, চরিত্র নিয়ে। আমি আসলে সব ধারার চরিত্রেই কাজ করতে চাই। আমি আপামর দর্শকের জন্য কাজ করতে চাই।

গ্লিটজ: ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কেমন?

শুভ: প্রত্যাশা বেড়েই চলেছে। খুব টেনশনও হচ্ছে। অথচ এই আমি কখনও কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে থাকি না। আমাকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়েছে, পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে কিছু ভাবা যাবে না। ভাবতে হবে পরীক্ষার প্রস্তুতি আর পরীক্ষার সময়ে আমি কতটা ভালো করলাম তা নিয়ে। সিনেমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি ঠিক তাই।

‘মুসাফির’ সিনেমার সেটে ‘মুসাফির’ আরেফিন শুভ। ছবি-- তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

তবে ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ কেমন জানি পাল্টে দিলো আমাকে। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’ সিনেমাতে কাজ করতে গিয়ে আমি সত্যিই এত বেশি আনন্দ পেয়েছি যা অন্য কোনো সিনেমাতে আমি পাইনি।

গ্লিটজ: এর আগে গ্লিটজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কিন্তু বলেছিলেন, আপনি নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের কথাই ভাবছেন...

শুভ: আমি সতের কোটি দর্শকের জন্য কাজ করতে চাই। কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শকের নায়ক আমি হতে চাই না। এখন কিন্তু কমার্শিয়াল সিনেমার সংজ্ঞাও বদলে যাচ্ছে। এফডিসি থেকে বানানো হচ্ছে না বলে সিনেমাটি মেইনস্ট্রিমের না, এ তকমা একেবারেই ভুল। এফডিসির নিয়মিত নির্মাতাদের বাইরেও কিন্তু অনেকে বেশ ভালো করছেন।

গ্লিটজ: আপনি তাহলে কোন ধারার সিনেমাকে বেশি প্রাধান্য দেবেন, মূল ধারা না ভিন্ন ধারা?

শুভ: দেখুন, এখন যা অবস্থা তাতে আমাকে এত বেশি খুঁতখুঁতে হলে চলবে না। এখন এত যাচাই-বাছাই করার সময় না। আমাকে এখন প্রচুর কাজ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রি যখন দাঁড়িয়ে যাবে, তখন আবার বাছাই করবো। আমি সব ধরনের চরিত্রেই কাজ করতে চাই। মূল ধারার দর্শক আমাকে যে ধরনের চরিত্রে চাইবে, আমি সে ধরনের চরিত্রেই কাজ করবো।

গ্লিটজ: আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন চরিত্র মনে হয়েছে কোনটিকে?

শুভ: নিঃসন্দেহে, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’র সাকিব চরিত্রটি। আমি খুব ভালোভাবেই জানতাম, এ সিনেমাতে আমার চরিত্রটিকে সেভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে না। কিন্তু সবার দোয়ায় আমি আমার সেরা কাজটি দেখাতে পেরেছি। এরপর আর আমাকে ঘুরে তাকাতে হয়নি।

‘মুসাফির’ সিনেমার সেটে ‘মুসাফির’ আরেফিন শুভ। ছবি-- তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

গ্লিটজ: ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন দেখছেন?

শুভ:  ইন্ডাস্ট্রিতে সত্যিই পরিবর্তন আসছে। নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।

গ্লিটজ: আপনার স্ত্রী অপির্তা আপনাকে কতটা সমর্থন যোগান? বিয়ের পর জীবনধারায় নিশ্চয় পরিবর্তন এসেছে...

শুভ: বিয়ের আগের আমি যেমন ছিলাম এখনও তাই আছি। লাইফস্টাইলে কিঞ্চিৎ পরিমাণও পরিবর্তন আসেনি। আর হ্যাঁ, অর্পিতা আর আমি দুজন দুটি আলাদা পেশায় আছি। দুজনেই দুজনের ক্যারিয়ার আর কাজ নিয়ে খুব সিরিয়াস।

আর অর্পিতা আমার কাজের ব্যাপারে মোটেই সাপোর্টিভ না। সে তার ব্যাক্তিজীবন নিয়ে খুব ব্যস্ত। আমিও তাই। আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটাই এমন।