আগ্রা এবং ভোপালের পর এবার দিল্লি, হায়দ্রাবাদ এবং মধ্যপ্রদেশেও উগ্রবাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বাজরাঙ্গ দলের হামলার শিকার হল ‘পিকে’ সিনেমাটি প্রদর্শনকারী সিনেমাহলগুলো।
Published : 31 Dec 2014, 02:27 PM
বিক্ষোভ মিছিলসহ হলের সামনে সিনেমাটির পোস্টার পোড়ায় সংগঠনগুলো। হিন্দু ধর্মকে অবমাননাকারী এমন একটি সিনেমা কী করে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেল - এমন প্রশ্ন তুলছেন বিক্ষোভকারীরা।
‘পিকে’কে হিন্দুধর্মের ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মুখপাত্র ভিনোদ বানসাল বলেন, “সিনেমাটি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে সবদিক থেকেই বিদ্রুপ করেছে। যারা দাবি করছেন, হিন্দু ধর্ম বাদে অন্য ধর্মগুলোকেও সিনেমাটি আক্রমণ করে, তাদেরকে বলছি, খৃষ্ট ধর্ম এবং ইসলামকে হেয় করে দৃশ্য আছে কেবল দুই মিনিটের। বাকি আড়াই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ‘পিকে’তে হেয় করা হয় কেবল হিন্দু ধর্মকেই।”
‘পিকে’কে ছাড়পত্র দেওয়ার বিরোধিতা করে ভারতের সেন্সরবোর্ডকেও এক হাত দেখে নেন বানসাল। তিনি বলেন, “আমরা চাই এই মুহূর্তে ‘পিকে’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক এবং সরকার যেন সেন্সরবোর্ডের গঠনেও একটা বড় পরিবর্তন আনে। সবাই প্রশ্ন তুলছে, সেন্সরের ছাড়পত্র থাকলে আমাদের এত সমস্যা কেন সিনেমাটি নিয়ে। আমাদের প্রশ্ন হল, এই সেন্সরবোর্ড আসলে চালাচ্ছে কে?”
ভারতের সেন্সর বোর্ডের সভাপতি লিলা স্যামসন এর উত্তরে বলেছেন, “আমাদের কাজ কেবল ছাড়পত্র দেওয়া। আমরা সেটাই করেছি। আমরা সেন্সরশিপ বোর্ড নই। রাজনৈতিক ধর কিংবা আদর্শবাদীদের যদি সমস্যা থাকে, তাহলে তারা তাদের সমর্থকদের সিনেমা দেখতে না করুক।”
মঙ্গলবার সকাল থেকে দিল্লির বেশ কয়েকটি হলের সামনে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বাজরাঙ্গ দলের সমর্থকেরা। দুই সংগঠনের সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ জন সমর্থককে এসময় পোস্টার পুড়িয়ে স্লোগান দিয়ে মিছিল করতে দেখা যায় ডিলাইট থিয়েটার, দারিয়াগঞ্জ এবং পিভিআর প্রিয়া সিনেমা হলের সামনে।
একইদিনে হায়াদ্রাবাদের দিলসুকনগরের মেঘা সিনেমা হলে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এর ফলে বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখতে হয় সিনেমাটির প্রদর্শনী।
দুই ক্ষেত্রেই পুলিশের হস্তক্ষেপে বিক্ষোভকারীদের সরাতে হয়েছে হলের সামনে থেকে। পুলিশ বলছে, এসব ঘটনার পর সিনেমা হলগুলোর নিরাপত্তা তারা আরও জোরদার করেছেন।
এদিকে হিন্দু উগ্রবাদী দলগুলোর দাবীর প্রেক্ষিতে, ‘পিকে’কে নিষিদ্ধ করার কোনো এখতিয়ার ভারতের তথ্য এবং গণমাধ্যম মন্ত্রনালয়ের নেই বলে জানিয়েছেন এই বিভাগের মন্ত্রী রাজ্যভার্ধান সিং রাঠৌর।
তিনি বলেন, “তথ্য এবং গণমাধ্যম মন্ত্রণালয়ের কোন আইনি অধিকার নেই কোন ধরনের সিনেমার প্রদর্শনী নিষিদ্ধ ঘোষণা করার। আমাদের সংবিধানেই বাকস্বাধীনতার অধিকারকে সুরক্ষিত করা হয়েছে।”
রাজকুমার হিরানি পরিচালিত বিদ্রুপাত্মক কমেডি ‘পিকে’ মুক্তি পায় ১৯শে ডিসেম্বর । মুক্তির পর থেকেই ‘ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানা’র অভিযোগে বিভিন্ন উগ্রবাদী সংগঠনের সমালোচনার শিকার হয়ে আসছে সিনেমাটি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বাজরাঙ্গ দলের পাশাপাশি সিনেমাটির সমালোচনা করেছে জামায়াতে ইসলাম হিন্দ, ধর্মগুরু বাবা রামদেভ, সোয়ামি সোয়ারুপানান্দ শাঙ্কারাচারিয়া এবং মাওলানা ফিরাঙ্গি মাহাল।