দুই দিনের ব্যস্ত সফর শেষে মঙ্গলবার রাত ১২টার পর ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান তিনি।
বাংলাদেশের ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ দেখছেন কিম, তবে কাঙিক্ষত সেই সফলতা পেতে বাংলাদেশ সরকারের তিনটি খাতে কাজ করা দরকার বলে মনে করছেন তিনি।
“আমি নিজের চোখে ইতিহাস দেখেছি,” সফর শেষে মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট।
সোমবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’কিম ঢাকাতেই পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের ‘সফলতার’ প্রশংসা করেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ন কেন্দ্র তিনি পরিদর্শন করেন এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা একটি বাড়ি ঘুরে দেখেন।
বরিশাল সফরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এই ঝুঁকি মোকাবেলায় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিজের চোখে দেখার কথাও বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিশ্ব ব্যাংক প্রধান।
“বাংলাদেশে আমি যা দেখেছি তাতে আমি অভিভূত- দারিদ্র্যবিরোধী লড়াই, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উদ্ভাবনী উদ্যোগের অনেক দৃষ্টান্ত; আমাকে স্বাগত জানানো মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং এ জাতির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা অনেকেসহ সরকারের ভিতর ও বাইরের নেতৃত্বের শক্তি,” বলেন তিনি।
কাঙিক্ষত সাফল্য পেতে বাংলাদেশ সরকারের করণীয়ের তিনটি খাত চিহ্নিত করেছেন তিনি।
প্রথমত, ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করতে নীতিতে সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন কিম।
“বর্তমানে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে বাংলাদেশ প্রতিবেশী দেশগুলোর থেকে পিছিয়ে আছে। বেসরকারি খাত থেকে আরও বিনিয়োগ টানতে পারলে তা অবকাঠামো প্রকল্পে খাটানো যাবে,” বলেন তিনি।
দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তৃতীয়ত, তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়েছেন, যার মধ্যে শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সরকারি ব্যাংক, রাজস্ব সংগ্রহ ও দুর্নীতি দমন কমিশন রয়েছে।
“দুর্নীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স আমাদেরও চাওয়া, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে দরিদ্রদের থেকে চুরি করে কোনো অর্থ সুবিধাভোগীদের কাছে যায় না।”
দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য দেখতে গত রোববার রাতে ঢাকায় আসেন কিম। পদ্মা সেতুর অর্থায়নে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে টানাপড়েনের পর কিমের এই সফরকে সম্পর্কন্নোয়নের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বিশ্ব ব্যাংকের কর্মকর্তারাও।
সংবাদ সম্মেলনে কিম বলেন, “বাংলাদেশ ও বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের ঘনিষ্ঠ বন্ধন রয়েছে। আমাদের আইডিএ ফান্ডের (সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য তহবিল) সবচেয়ে বড় গ্রাহক বাংলাদেশ- গত ৪৫ বছরে ২৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশকে নতুন করে তিন বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। এর ১ বিলিয়ন ডলার শিশু অপুষ্টি দূর করতে এবং বাকিটা জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায়।
বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতার অভিজ্ঞতা বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে দিতে বিশ্ব ব্যাংক একটি ‘মাল্টি-ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন তিনি।